Saturday, 18 February 2023

নিরঞ্জনাষ্টকম্



স্থানং মানং নাদবিন্দুরূপং

রেখা ধাতুবর্ণম্।

দ্রষ্টা দৃশ্যং শ্রবণং শ্রাব্যং

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি স্থান নন, যার পরিমাণ ( সীমা ) নাই, যিনি নাদ বিন্দু নন, যিনি রূপ নন, রেখা নন, ধাতু বর্ণ নন, দর্শক দর্শনীয় নন, শ্রবণেন্দ্রিয় শ্রবণেন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

বৃক্ষো নূলং বীজকুলং

শাখা পত্রং বল্লিপল্লবম্।

পুষ্পং গন্ধো ফলং ছায়া

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি বৃক্ষ নন, বৃক্ষের মূল বীজস্তূপ নন, শাখা পত্র নন, লতা পল্লব নন, যিনি পুষ্প গন্ধ নন, ফল নন, ছায়া নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

বেদো শাস্ত্রং শৌচসন্ধ্যে,

মন্ত্রো জাপ্যং ধানধেয়ম্

হোমো যজ্ঞো দেবপূজা

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি বেদ নন, শাস্ত্র ( ধৰ্মশাস্ত্র ) নন, শৌচ ( পবিত্রতা ) নন, সন্ধ্যা নন, যিনি মন্ত্র নন, জাপ্য নন, যিনি আধার নন, আধারে স্থাপনীয় নন, যিনি হোম নন, যজ্ঞ নন এবং দেবপূজা নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

অধো চোর্দ্ধং শিবো শক্তিঃ

পুমান্ নারী লিঙ্গমূর্ত্তিঃ।

ব্রহ্মা বিষ্ণুর্ন দেবরুদ্রঃ

তস্মৈ নমো ব্রহ্ম-নিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি নিম্ন নন, উর্দ্ধদিক নন, শক্তিও নন, পুরুষ নন, নারীও নন, যিনি লিঙ্গমূৰ্ত্তি নন, যিনি ব্রহ্মা নন, বিষ্ণু নন, রুদ্রদেবও নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

অখণ্ডখণ্ডং দন্ডদণ্ড্যং

কালোঽপি জীবো গুরুন শিষ্যঃ।

গ্রহা তারা মেঘমালা

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি অখণ্ড বা খণ্ড নন, দন্ড নন, যিনি দন্ডের যোগ্যও নন, যিনি কাল ( সময় ) নন, যিনি জীব নন, গুরু শিষ্য নন, যিনি গ্রহ তারা মেঘমালা নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

শ্বেতং পীতং রক্তরেতো

হৈমং রৌপ্যং বর্ণবর্ণম।

চন্দ্রাকবহ্নেরুদয়ো চাস্তং

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি শ্বেত নন, পীত নন, যিনি রক্ত বা রেতঃ নন, স্বর্ণময় নন, রজত নন, যিনি চতুর্বর্ণ বা যশঃ নন, যিনি চন্দ্র সূর্য্য অগ্নির উদয় বা তিরোভাব নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

স্বর্গে মৰ্ত্তে নগরে সত্রে

জাতেরতীতং ভেদভিন্নম্।

নাহং তত্ত্বং পৃথক্ পৃথক্ত্বাৎ

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি স্বর্গে নন, পৃথিবীতে নন, নগরে নন, সত্রস্থানে নন, যিনি জন্মের অতীত, যিনি ভেদ ভিন্ন নন, অহং নন, তৎ নন, ত্বং নন, যিনি পৃথক্ত্ব হতে পৃথক নন, সেই নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

গম্ভীর-ধীরং ঘনং শূন্যং

সংসারসারং পাপপূণ্যম।

ব্যক্তং চাব্যক্তমভেদভিন্নং

তস্মৈ নমো ব্রহ্মনিরঞ্জনায় ||||

অনুবাদযিনি গম্ভীর নন, ধীর নন, ঘন নন, শূন্য নন, যিনি সংসারের সার, যিনি পাপ নন, পূণ্যও নন, যিনি ব্যক্ত নন, অথচ অব্যক্তও নন সেই নির্বিশেষ নিরঞ্জন ব্রহ্মকে নমস্কার ||||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ নিরঞ্জনাষ্টকম্ সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত নিরঞ্জনাষ্টক স্তোত্র সম্পূর্ণ।




Friday, 17 February 2023

শ্রীশিবনামাবল্যষ্টকম্

 

হে চন্দ্রচূড় মদনান্তক শূলপাণে

স্থাণো গিরীশ গিরিজেশ মহেশ শম্ভো

ভূতেশ ভীতভয়সূদন মামনাথং

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে চন্দ্রমৌলে! তুমি কন্দর্পকে সংহার করেছ, হে শূলপাণে, তুমি স্থাণু। হে গিরীশ, তুমি গিরিজাপতি। হে মহেশ, শম্ভো, তুমি ভীতগণের ভয় দূর কর। হে জগদীশ্বর, তুমি অনাথ আমাকে ভবদুঃখসঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

হে পার্বতীহৃদয়বল্লভ চন্দ্রমৌলে

ভূতাধিপ প্রমথনাথ গিরীশজাপ

হে বামদেব ভব রুদ্র পিনাকপাণে

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে চন্দ্রশেখর, হে পার্বতীহৃদয়বল্লভ, হে চন্দ্রমৌলে, হে ভূতাধিপ, হে প্রমথনাথ, হে গিরীশ, হে জপ্যমন্ত্রস্বরূপ অথবা হে নগেন্দ্রতনয়াপতে, হে বামদেব, হে ভব, হে রুদ্র, হে পিনাকপাণে! হে জগদীশ্বর, তুমি আমাকে ভবদুঃখসঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

হে নীলকণ্ঠ বৃষভধ্বজ পঞ্চবক্ত্র

লোকেশ শেষবলয় প্রমথেশ শর্ব

হে ধুর্জটে পশুপতে গিরিজাপতে মাং

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে নীলকণ্ঠ, হে বৃষধ্বজ, হে পঞ্চবদন ! হে লোকেশ, তুমি অনন্তনাগকে বলয়রূপে ধারণ করেছ। হে প্রমথেশ, তুমি ব্রহ্মাণ্ড সংহার কর। হে ধূর্জটে! হে পশুপতে! হে গিরিজাপতে, আমাকে ভবদুঃখসঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

হে বিশ্বনাথ শিব শঙ্কর দেবদেব

গঙ্গাধর প্রমথনায়ক নন্দিকেশ

বাণেশ্বরান্ধকরিপো হর লোকনাথ

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে বিশ্বনাথ, তুমি মঙ্গলালয় এবং সকলের মঙ্গলবিধান করছ। হে দেবদেব, তুমি গঙ্গাকে ধারণ করেছ এবং তুমি প্রমথগণের অধিনায়ক হে নন্দিকেশ্বর! হে বাণেশ্বর! হে অন্ধকরিপো! হে হর! হে লোকনাথ! হে জগদীশ্বর ( আমাকে ) ভবদুঃখ-সঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

বারাণসীপুরপতে মণিকর্ণিকেশ

বীরেশ দক্ষমখকাল বিভো গণেশ

সর্বজ্ঞ সর্বহৃদয়ৈকনিবাস নাথ

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে বিভো, তুমি বারাণসী পুরীর অধীশ্বর, তুমি মণিকর্ণিকার অধিপতি, তুমিই বীরেশ্বর এবং তুমিই দক্ষযজ্ঞের বিনাশকারী। হে গণেশ্বর! তুমি সকল জানছ এবং তুমি নিরন্তর সকলের হৃদয়নিকেতনে অবস্থিতি কর। হে নাথ! হে জগদীশ! ( আমাকে ) ভবদুঃখ-সঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

শ্রীমন্মহেশ্বর কৃপাময় হে দয়ালো

হে ব্যোমকেশ শিতিকণ্ঠ গণাধিনাথ

ভস্মাঙ্গরাগনৃকপালকলাপমাল

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে শ্রীমন্‌! হে মহেশ্বর! তুমিই কৃপাময় অর্থাৎ তোমার কৃপাতেই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড প্রতিপালিত হচ্ছে। হে দয়ালো! হে ব্যোমকেশ! হে শিতিকণ্ঠ! হে ভূতগণের অধিপতি! তুমি ভস্ম দ্বারা অঙ্গরাগ করে থাক এবং নরকপালসমূহ নির্ম্মিত মালা ধারণ করেছ। হে জগদীশ! ( আমাকে ) ভবদুঃখ-সঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

কৈলাসশৈলবিনিবাস বৃষাকপে হে

মৃত্যুঞ্জয় ত্রিনয়ন ত্রিজগন্নিবাস

নারায়ণপ্রিয় মদাপহ শক্তিনাথ

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে ত্রিলোচন! কৈলাসশৈলোপরি তোমার বসতি, হে বৃষাকপে! হে মৃত্যুঞ্জয়! ত্রিজগৎ তোমাতে অবস্থিত, তুমি নারায়ণের অতি প্রিয়, তুমি সকলের মত্ততা অপহরণ কর এবং তুমি শক্তিনাথ, সকল শক্তিই তোমার আশ্রিত! হে জগদীশ! ( আমাকে ) ভবদুঃখ সঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

বিশ্বেশ বিশ্বভবনাশিতবিশ্বরূপ

বিশ্বাত্মক ত্রিভুবনৈকগুণাধিকেশ

হে বিশ্ববন্দ্য করুণাময় দীনবন্ধো

সংসারদুঃখগহনাজ্জগদীশ রক্ষ ||||

ভাবার্থ - হে বিশ্বেশ্বর! বিশ্বের জন্ম তোমা হতে, তুমিই বিশ্বপ্রপঞ্চরূপের বিনাশ করেছ, তুমিই বিশ্বময় এবং ত্রিভুবনে গুণসকল একমাত্র তোমাকেই আশ্রয় করে আছে। হে করুণাময়! এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড তোমাকে অভিবাদন করছে এবং তুমিই দীনজনের বন্ধু। হে জগদীশ! ( আমাকে ) ভবদুঃখ সঙ্কট হতে পরিত্রাণ কর ||||

গৌরীবিলাসভুবনায় মহেশ্বরায়

পঞ্চাননায় শরণাগতকল্পকায়

শর্বায় সর্বজগতামধিপায় তস্মৈ

দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ||||

ভাবার্থ - হে বিভো! যিনি গৌরীর বিলাসভূমি, যিনি মহেশ্বর, যিনি পঞ্চবক্ত্র, যিনি শরণাগত জনের সামর্থ্যদাতা, যিনি শর্ব অর্থাৎ প্রলয়কালে জগৎ সংহার করেন, যিনি সর্বজগতের অধিপতি, সেই দারিদ্র্যদুঃখদাহে অনলস্বরূপ শিবকে নমস্কার ||||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ শিবনামাবল্যষ্টকং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎপূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য ভগবান্ বিরচিত শিবনামাবল্যষ্টক সমাপ্ত।...


Friday, 10 February 2023

অষ্টাঙ্গযোগে ধারণা—

 


মন স্বভাবত চঞ্চল। বিভিন্ন বস্তুতে ধাবিত হয়। কিন্তু সেই সমস্ত বস্তুতে বস্তুভাবনা বর্জনপূর্বক ব্রহ্মভাবনা স্থির করাই ধারণার কার্য। ভগবান্ শঙ্করাচার্য অপরোক্ষানুভূতিতে তাই বলেছেন"যত্র যত্র মনো যাতি ব্রহ্মণস্তত্র দর্শনাৎ। মনসো ধারণং চৈব ধারণা সা পরা মতা", অর্থাৎ যেখানে যেখানে মন যায় সেখানে ব্রহ্মদর্শনহেতু মনের স্থিতিই শ্রেষ্ঠ "ধারণা" বলে জানবে।

শ্রুতিতে রয়েছে—"মনঃ সঙ্কল্পকং ধ্যাত্বা সঙ্ক্ষিপ্যাত্মনি বুদ্ধিমান্। ধারয়িত্বা তথাঽঽত্মানং ধারণা পরিকীর্তিতা॥"

-(অমৃতনাদোপনিষৎ-১৬)

অর্থাৎ বুদ্ধিমান সাধক মনকে সঙ্কল্পবিকল্পাত্মক জেনে আত্মাতে সংহৃত করে এবং আত্মাকে ধারণ করে অবস্থান করেন, তাই "ধারণা" নামে কথিত হয়। 'সকল বস্তুর সঙ্কল্পকর্তা যে মন, তা আত্মাকেই সঙ্কল্প করুক কিন্তু অন্য বস্তু নয়'—এরূপ প্রচেষ্টাই আত্মাতে 'সংগৃহীত' করা শব্দে বলা হয়েছে।

সুতরাং যখন মন শরীরের ভিতরে অথবা বাইরে কোন বস্তুতে সংলগ্ন হয় কিছুকাল ভাবে থাকে, তাকে ধারণা বলে। অর্থাৎ চিত্তকে কোন বিশেষ বস্তুতে ধরে রাখার নামধারণা যোগসূত্রের বিভূতিপাদে তাই বলা হয়েছে

"দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা"-(যোগসূত্র-/)

যোগভাষ্যকার ব্যাস এই সূত্রের ভাষ্যে বলেছেন—‘নাভিচক্রে, হৃদয়পুণ্ডরীকে, ব্রহ্মরন্ধ্রে স্থিত জ্যোতিতে, নাসিকার অগ্রভাগে, জিহ্বার অগ্রভাগে এইভাবে শরীরের ভিতরের দেশগুলিতে অথবা বাহ্য বিষয়ে (দেবতামূর্ত্তি বা ওঙ্কারে) চিত্তের বৃত্তিমাত্র সহায়ে সম্যক্ স্থিতিই ধারণা।’............

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

 

Tuesday, 7 February 2023

প্রাতঃস্মরণস্তোত্র

 


প্রাতঃস্মরামি হৃদি সংস্ফুরদাত্মতত্ত্বম্

সচ্চিৎসুখং পরমহংসগতিং তুরীয়ম্

যৎ স্বপ্ন-জাগর-সুষুপ্তমবৈতি নিত্যম্

তদ্ ব্রহ্ম নিস্কলমহং ভূতসঙ্ঘঃ ৷৷১৷৷

অনুবাদঃ- আমি হৃদয়ে স্ফুরিত, সচ্চিদানন্দ, পরমহংসগণের গতিস্বরূপ (জাগ্রৎস্বপ্ন-সুষুপ্তির অতীত বলিয়া) তুরীয়, আত্মতত্ত্ব (নিজস্বরূপ) প্রাতঃকালে স্মরণ করিতেছি,—আমি জাগ্র-স্বপ্ন-সুষুপ্তির নিত্য দ্রষ্টা, অখণ্ড ব্রহ্মচৈতন্য; ভূতসংঘ অর্থাৎ দেহাদি আমি নহি ।।১।।

প্রাতর্ভজামি মনসো বচসাম্ অগম্যম্

বাচো বিভান্তি নিখিলা যদনুগ্রহেণ

যন্‌ 'নেতি নেতি' বচনৈর নিগমাঅবোচং

তং দেবদেবমজমচ্যুৎ মাহুরগ্র্যম ৷৷২৷৷

অনুবাদঃ- মনোদ্বারা বাক্যদ্বারা যাঁহাকে জানিতে পারা যায় না, যাঁহার প্রসাদে বাক্য-সকল প্রকাশ পায়, বেদ-সকল "নেতি নেতি" বাক্যদ্বারা যাঁহার বর্ণন করেন এবং দেবদেব, অজ, অচ্যুত, সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া থাকেন, প্রভাতকালে আমি তাঁহাকে ভজনা করি ।।২।।

প্রাতর্নমামি তমসঃ পরমর্কবর্ণম্

পূর্ণং সনাতনপদম্ পুরুষোত্তমাখ্যম্

যস্মিন্ ইদং জগদশেষমশেষমূর্ত্তৌ

রজ্জ্বাং ভুজঙ্গম ইব প্রতিভাসিতং বৈ ৷৷৩৷৷

অনুবাদঃ- যিনি তমোগুণের অতীত এবং তমোগুণ যাঁহাকে আশ্রয় করিতে সমর্থ্য নহে, সূর্যের ন্যায় যাঁহার জ্যোতিঃ, যিনি পূর্ণ, সনাতনপদ পুরুষোত্তম নামে কীর্ত্তিত, রজ্জুতে সর্পের ন্যায় অশেষমূর্ত্তিধারী, যাঁহাতে এই নিখিল জগৎসংসার অবভাসিত হয়, প্রভাতকালে পুরুষোত্তম আখ্যায় আখ্যাত সেই পূর্ণ সনাতন বস্তুকে প্রণাম করি।। ৩।।

শ্লোকত্রয়মিদং পুণ্যং লোকত্রয়বিভূষণম।

প্রাতঃকালে পঠেদযস্তু গচ্ছেৎ পরমং পদম।।৪।।

অনুবাদঃ- এই পবিত্র শ্লোকত্রয় ত্রিলোকের অলংকারস্বরূপ। প্রভাতকালে যে ইহা পাঠ করিবে, তাহার পরমপদ লাভ হইবে।।৪।।

ভগবান্ শঙ্করাচার্য বিরচিত প্রাতঃস্মরণ-স্তোত্র সমাপ্ত।


শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

 

মনের 'লয় বিক্ষেপাদি' অবস্থা চতুষ্টয় কথন এবং তন্নিবৃত্তির উপায়—

 


আচার্য গৌড়পাদ্ মাণ্ডুক্য কারিকার অদ্বৈত-প্রকরণে বলছেনমন লয়াখ্য সুষুপ্তিতে লীন হলে জ্ঞানাভ্যাস বৈরাগ্য, এই দ্বিবিধ উপায়ে আত্মবিষয়ক বিবেকজ্ঞানের সহিত সংযোজিত করবে। কাম্যবিষয়ের উপভোগে মন বিক্ষিপ্ত বা চঞ্চল হলে পুনঃ পুনঃ অভ্যাস দ্বারা প্রশান্ত করবে, মনের স্থিরতা সম্পাদন করবে; বিষয়ানুরাগে সমাসক্ত হলে, বিষয়ের দোষদর্শনপূর্বক তাকে সমাধিতে নিযুক্ত করবে। কিন্তু একবার সমতা লাভ করলে, তাকে আর চঞ্চল বা বিষয়োন্মুখ করবে না। "লয়ে সম্বোধয়েচ্চিত্তং বিক্ষিপ্তং শময়েৎপুনঃ। সকষায়ং বিজানীয়াৎসমপ্রাপ্তং চালয়েৎ॥"

সমাধিসম্পাদনেচ্ছু যোগীর যে সুখ উৎপন্ন হয়, তা আস্বাদন করবে না অর্থাৎ তাতে অনুরক্ত হবে না। তবে কিপ্রকারে? এই বিবেকজ্ঞান দ্বারা নিঃসঙ্গ বা নিঃস্পৃহ হয়ে এইরূপ ভাবনা করবে যে, যে সুখ অনুভূত হচ্ছে তা অবিদ্যাকল্পিত নিশ্চয়ই মিথ্যা, অর্থাৎ সেই সুখবিষয়ক অনুরাগ হতেও মনকে নিগৃহীত করবে। মন যখন সুখানুরাগ হতেও নিবৃত্ত হয়ে পুনশ্চ বাহ্য বিষয়ে গমনোন্মুখ হয়, তখন তা হতে নিয়মিত করে উক্ত উপায়ানুসারে যত্নপূর্বক আত্মাতে একীভূত করবে, অর্থাৎ কেবলই সৎচিৎ-আত্মস্বরূপতা সম্পাদন করবে। যথোক্ত উপায়ে নিগৃহীত চিত্ত যখন সুষুপ্তিতে লীন হয় না, এবং বিষয়েও বিক্ষিপ্ত হয় না, এবং নিশ্চল, নিবাতপ্রদীপকল্প অনাভাস হয়, তখনই চিত্ত ব্রহ্মস্বরূপে অবস্থিত হয়ে থাকে।

"স্বস্থং শান্তং সনির্বাণমকথ্যং সুখমুত্তমম্। অজমজেন জ্ঞেয়েন সর্বজ্ঞং পরিচক্ষত।" অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্গণ আত্মসত্যানুবোধাত্মক যথোক্ত পারমার্থিক সুখকে স্বীয় আত্মাতে স্থিত, সর্বপ্রকার অনর্থ-প্রশমনস্বরূপ শান্ত, নির্বাণ অর্থাৎ কৈবল্যের সহিত বর্তমান; অকথ্য অবর্ণনীয় এবং অজ (অনুৎপন্ন সুখ) জ্ঞেয়স্বরূপ ব্রহ্মরূপে নিত্য সর্বজ্ঞ বলে নির্দেশ করে থাকেন। ভগবান্ শঙ্করাচার্য গৌড়পাদীয় কারিকার ভাষ্যে এভাবেই বিষয়টি নিরূপণ করেছেন।........

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

 


আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...