Saturday, 4 February 2023

মনোনিগ্রহ—



সমস্ত দ্বৈতপ্রপঞ্চই যদি অসত্য হয়, তবে এই আত্মজ্ঞান কার দ্বারা পরিজ্ঞাত হবে? এর উত্তরে আচার্য্য গৌড়পাদ্ বলেছেননিত্য ব্রহ্মজ্ঞানের সাহায্যেই ব্রহ্মকে জানতে পারা যাবে। নিত্য স্বপ্রকাশ ব্রহ্ম নিজেই নিজেকে প্রকাশ করেন। ব্রহ্মজ্ঞান ব্রহ্ম হতে ভিন্ন কিছু নয়। একনিত্য ব্রহ্মবিজ্ঞানই জ্ঞাতাও বটে জ্ঞেয়ও বটে। "অকল্পকমজং জ্ঞানং জ্ঞেয়াভিন্নং প্রচক্ষতে। ব্রহ্মজ্ঞেয়মজং নিত্যমজেনাজং বিবুধ্যতে॥"-(মাণ্ডুক্য কারিকা-৩/৩৩)

মনঃ নিগৃহীত না হলে এই অমৃত অভয় ব্রহ্মপদ লাভ করতে পারা যায় না। মনঃ নিগৃহীত হলেই দুঃখ ক্ষয় হয়, প্রবোধ ও শান্তির উদয় হয়। যাদের নিকট মন ও ইন্দ্রিয়সমূহ ব্রহ্মব্যতিরেকে কেবলই কল্পিত, পরমার্থ সত্য নয়, অর্থাৎ রজ্জুসর্পস্থলে যেমন রজ্জুই সত্য, আর দৃশ্যমান সর্প কল্পিত মাত্রঅসত্য, তেমনি যাঁরা একমাত্র ব্রহ্মকেই সত্য বলে জানেন, এবং তদতিরিক্ত সমস্তকেই কল্পিত অসত্য বলে বুঝতে পারেন, তাঁদের পক্ষে অভয় এবং মোক্ষনামক অক্ষয়া শান্তি স্বভাবতই সিদ্ধ, অন্যের অধীন নয়; কিন্তু সৎপথবর্তী এবং হীন ও মধ্যম দৃষ্টিসম্পন্ন, অপর যে সমস্ত যোগী মনকে অন্য বলে অর্থাৎ আত্মা হতে পৃথক আত্ম-সম্বন্ধী বলে দর্শন করেন, সত্যস্বরূপ আত্মার স্বরূপানভিজ্ঞ সেই সমস্ত যোগীর পক্ষে অভয়প্রাপ্তি মনোনিগ্রহের আয়ত্ত অর্থাৎ অধীন। আচার্য গৌড়পাদ্ মাণ্ডুক্য কারিকাতে তাই বলছেন "মনসো নিগ্রহায়ত্তমভয়ং সর্বযোগিনাম্। দুঃখক্ষয়ঃ প্রবোধশ্চাপ্যক্ষয়া শান্তিরেব চ॥"-(মাণ্ডুক্য কারিকা-৩/৪০)

মনের নিগ্রহ শনৈঃ শনৈঃ করতে হবে। "উৎসেক উদধের্যদ্বৎকুশাগ্রেণৈকবিন্দুনা। মনসো নিগ্রহস্তদ্বদ্ভবেদপরিখেদতঃ॥" -(মাণ্ডুক্যকারিকা-৩/৪১) অর্থাৎ কুশের অগ্রভাগ দ্বারা এক বিন্দু এক বিন্দু করে জলসেচন দ্বারা সমুদ্রশোষণ প্রয়াস যেরূপ, যোগানুষ্ঠানে যাদের অন্তঃকরণ অবসন্ন বা অনুৎসাহসম্পন্ন হয় না, উদ্যমশীল সেই সমস্ত লোকের মনোনিগ্রহও সেইরূপ সম্পন্ন হয়ে থাকে।

এই মনোনিগ্রহের উপায় কি?

কামে চিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়। কাম ভোগে সুখ নেই, এতে কেবল দুঃখ হতে দুঃখান্তর এসে উপস্থিত হয়, এটা স্মরণ করে বৈরাগ্যবলে কামনার দুঃখ পাশ ছিন্ন করতে হবে।

দুঃখং সর্বমনুস্মৃত্য কামভোগান্নিবর্তয়েৎ।

অজং সর্বমনুস্মৃত্য জাতং নৈব তু পশ্যতি॥ -(মাণ্ডুক্য কারিকা-৩/৪৩)

এই কারিকার ভাষ্যে ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বলেছেন"সেই উপায়টি কি? তাই বলা হচ্ছেঅবিদ্যা-সমুদ্ভূত সমস্ত দ্বৈতই দুঃখ-মিশ্রিত, এটা নিরন্তর স্মরণ করে কাম-ভোগের বিষয় হতে তদাসক্ত মনকে তা হতে বৈরাগ্যভাবনা দ্বারা নিবর্ত্তিত করবে; অজ ব্রহ্মই সর্ব অর্থাৎ সমস্ত দ্বৈতই ব্রহ্মস্বরূপ, শাস্ত্র ও আচার্য উপদেশ হতে অবগত হয়ে তা নিরন্তর স্মরণ করত নিশ্চয়ই দ্বৈত-সমূহ দর্শন করে না; কারণ দ্বৈত বলে কোন সত্য বস্তু নেই।"........

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments:

আত্মানাত্মবিবেকঃ-

  আত্মা ও অনাত্মা অর্থাৎ আত্মা ভিন্ন দেহের পৃথকত্বের বিবেকবোধই আত্মানাত্মবিবেক। দেহকেই আমরা ' আমি ' ভাবিয়া থাকি। ...