Tuesday, 7 February 2023

মনের 'লয় বিক্ষেপাদি' অবস্থা চতুষ্টয় কথন এবং তন্নিবৃত্তির উপায়—

 


আচার্য গৌড়পাদ্ মাণ্ডুক্য কারিকার অদ্বৈত-প্রকরণে বলছেনমন লয়াখ্য সুষুপ্তিতে লীন হলে জ্ঞানাভ্যাস বৈরাগ্য, এই দ্বিবিধ উপায়ে আত্মবিষয়ক বিবেকজ্ঞানের সহিত সংযোজিত করবে। কাম্যবিষয়ের উপভোগে মন বিক্ষিপ্ত বা চঞ্চল হলে পুনঃ পুনঃ অভ্যাস দ্বারা প্রশান্ত করবে, মনের স্থিরতা সম্পাদন করবে; বিষয়ানুরাগে সমাসক্ত হলে, বিষয়ের দোষদর্শনপূর্বক তাকে সমাধিতে নিযুক্ত করবে। কিন্তু একবার সমতা লাভ করলে, তাকে আর চঞ্চল বা বিষয়োন্মুখ করবে না। "লয়ে সম্বোধয়েচ্চিত্তং বিক্ষিপ্তং শময়েৎপুনঃ। সকষায়ং বিজানীয়াৎসমপ্রাপ্তং চালয়েৎ॥"

সমাধিসম্পাদনেচ্ছু যোগীর যে সুখ উৎপন্ন হয়, তা আস্বাদন করবে না অর্থাৎ তাতে অনুরক্ত হবে না। তবে কিপ্রকারে? এই বিবেকজ্ঞান দ্বারা নিঃসঙ্গ বা নিঃস্পৃহ হয়ে এইরূপ ভাবনা করবে যে, যে সুখ অনুভূত হচ্ছে তা অবিদ্যাকল্পিত নিশ্চয়ই মিথ্যা, অর্থাৎ সেই সুখবিষয়ক অনুরাগ হতেও মনকে নিগৃহীত করবে। মন যখন সুখানুরাগ হতেও নিবৃত্ত হয়ে পুনশ্চ বাহ্য বিষয়ে গমনোন্মুখ হয়, তখন তা হতে নিয়মিত করে উক্ত উপায়ানুসারে যত্নপূর্বক আত্মাতে একীভূত করবে, অর্থাৎ কেবলই সৎচিৎ-আত্মস্বরূপতা সম্পাদন করবে। যথোক্ত উপায়ে নিগৃহীত চিত্ত যখন সুষুপ্তিতে লীন হয় না, এবং বিষয়েও বিক্ষিপ্ত হয় না, এবং নিশ্চল, নিবাতপ্রদীপকল্প অনাভাস হয়, তখনই চিত্ত ব্রহ্মস্বরূপে অবস্থিত হয়ে থাকে।

"স্বস্থং শান্তং সনির্বাণমকথ্যং সুখমুত্তমম্। অজমজেন জ্ঞেয়েন সর্বজ্ঞং পরিচক্ষত।" অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্গণ আত্মসত্যানুবোধাত্মক যথোক্ত পারমার্থিক সুখকে স্বীয় আত্মাতে স্থিত, সর্বপ্রকার অনর্থ-প্রশমনস্বরূপ শান্ত, নির্বাণ অর্থাৎ কৈবল্যের সহিত বর্তমান; অকথ্য অবর্ণনীয় এবং অজ (অনুৎপন্ন সুখ) জ্ঞেয়স্বরূপ ব্রহ্মরূপে নিত্য সর্বজ্ঞ বলে নির্দেশ করে থাকেন। ভগবান্ শঙ্করাচার্য গৌড়পাদীয় কারিকার ভাষ্যে এভাবেই বিষয়টি নিরূপণ করেছেন।........

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

 


No comments:

আত্মানাত্মবিবেকঃ-

  আত্মা ও অনাত্মা অর্থাৎ আত্মা ভিন্ন দেহের পৃথকত্বের বিবেকবোধই আত্মানাত্মবিবেক। দেহকেই আমরা ' আমি ' ভাবিয়া থাকি। ...