Friday, 10 February 2023

অষ্টাঙ্গযোগে ধারণা—

 


মন স্বভাবত চঞ্চল। বিভিন্ন বস্তুতে ধাবিত হয়। কিন্তু সেই সমস্ত বস্তুতে বস্তুভাবনা বর্জনপূর্বক ব্রহ্মভাবনা স্থির করাই ধারণার কার্য। ভগবান্ শঙ্করাচার্য অপরোক্ষানুভূতিতে তাই বলেছেন"যত্র যত্র মনো যাতি ব্রহ্মণস্তত্র দর্শনাৎ। মনসো ধারণং চৈব ধারণা সা পরা মতা", অর্থাৎ যেখানে যেখানে মন যায় সেখানে ব্রহ্মদর্শনহেতু মনের স্থিতিই শ্রেষ্ঠ "ধারণা" বলে জানবে।

শ্রুতিতে রয়েছে—"মনঃ সঙ্কল্পকং ধ্যাত্বা সঙ্ক্ষিপ্যাত্মনি বুদ্ধিমান্। ধারয়িত্বা তথাঽঽত্মানং ধারণা পরিকীর্তিতা॥"

-(অমৃতনাদোপনিষৎ-১৬)

অর্থাৎ বুদ্ধিমান সাধক মনকে সঙ্কল্পবিকল্পাত্মক জেনে আত্মাতে সংহৃত করে এবং আত্মাকে ধারণ করে অবস্থান করেন, তাই "ধারণা" নামে কথিত হয়। 'সকল বস্তুর সঙ্কল্পকর্তা যে মন, তা আত্মাকেই সঙ্কল্প করুক কিন্তু অন্য বস্তু নয়'—এরূপ প্রচেষ্টাই আত্মাতে 'সংগৃহীত' করা শব্দে বলা হয়েছে।

সুতরাং যখন মন শরীরের ভিতরে অথবা বাইরে কোন বস্তুতে সংলগ্ন হয় কিছুকাল ভাবে থাকে, তাকে ধারণা বলে। অর্থাৎ চিত্তকে কোন বিশেষ বস্তুতে ধরে রাখার নামধারণা যোগসূত্রের বিভূতিপাদে তাই বলা হয়েছে

"দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা"-(যোগসূত্র-/)

যোগভাষ্যকার ব্যাস এই সূত্রের ভাষ্যে বলেছেন—‘নাভিচক্রে, হৃদয়পুণ্ডরীকে, ব্রহ্মরন্ধ্রে স্থিত জ্যোতিতে, নাসিকার অগ্রভাগে, জিহ্বার অগ্রভাগে এইভাবে শরীরের ভিতরের দেশগুলিতে অথবা বাহ্য বিষয়ে (দেবতামূর্ত্তি বা ওঙ্কারে) চিত্তের বৃত্তিমাত্র সহায়ে সম্যক্ স্থিতিই ধারণা।’............

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...