Thursday, 29 August 2019

ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের কিছু অমৃত বাণী, পর্ব-০৫ঃ-




২৬.'নিত্যাভ্যাস ব্যতিরেকে সচ্চিদানন্দঘন আত্মার প্রাপ্তি সম্ভব নয়, সেইহেতু তত্ত্বান্বেষী ব্যক্তি মুক্তির জন্য নিরন্তর ব্রহ্মের নিদিধ্যাসন করিবে।'
-শঙ্করাচার্য্য (অপরোক্ষানুভূতি-১০১)
২৭.'তরুর জীর্ণপত্র যেমন যেকোন স্থানে পড়িতে পারে, ব্রহ্মজ্ঞ সন্ন্যাসীর শরীরও সেইরূপ যেকোন স্থানে মৃত্যুমুখে পতিত হইতে পারে। তাঁহার দেহ পূর্বেই জ্ঞানাগ্নিতে দগ্ধ হইয়া গিয়াছে।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৫৫৬)
২৮.'যেরূপ জলের কারণে কাহারও বৃক্ষভ্রম হয় সেইরূপ অজ্ঞান প্রভাবে আত্মাতে দেহ দৃষ্ট হয়।'
-শঙ্করাচার্য্য (অপরোক্ষানুভূতি-৭৫)
২৯.'জ্ঞানময়ী দৃষ্টিদ্বারা ব্রহ্মময় জগৎকে দেখাই আদর্শ দর্শন; নাসিকাগ্রভাগ দর্শন নহে।'
-শঙ্করাচার্য্য (অপরোক্ষানুভূতি-১১৬)
৩০.করা, যাওয়া, গ্ৰহণ করা, ত্যাগ করা এ সব কোথায় ? মহা প্ৰলয়ে জল রাশি যেমন নিখিল বিশ্ব ব্যাপিয়া রাখে সেইরূপ আত্মা দ্বারাই সমস্ত পূর্ণা; পূর্ণ আত্মাই সৰ্ব্বত্র অন্য কিছুই নাই।
-শঙ্করাচার্য্য (পরাপূজা-১১)

Saturday, 24 August 2019

ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের কিছু অমৃত বাণী, পর্ব-০৪ঃ-


২১. 'দুষ্ট অহঙ্কারের সহিত জীবের যতকাল সম্বন্ধ থাকিবে, ততকাল বিলক্ষণ মুক্তিবার্তা লেশমাত্রও পাওয়া যায় না।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-২৯৯)
২২. 'অদ্বয়-আনন্দরস অনুভূতি হইলে বন্ধনের কারণ অহঙ্কারাদি নষ্ট হইয়া যায়, সেই অবস্থায় দুঃখের লেশমাত্রও থাকে না।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩১৯)
২৩. ব্রহ্মনিষ্ঠায় কখন প্রমাদ করিবে না। ব্রহ্মার মানসপুত্র ভগবান্ সনৎকুমার বলিয়াছেন,'প্রমাদই মৃত্যুতুল্য।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩২১)
২৪. 'মানুষ যতদিন শবতুল্য দেহের ভজনা করে, ততকাল অশুচি থাকে।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩৯৬)
২৫. 'সর্বাত্মতাই বন্ধন মুক্তির হেতু। সর্বাত্মভাবের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কিছু নেই।'-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩৩৯)

Thursday, 22 August 2019

শ্রীভগবানের এক নাম 'হৃষীকেশ' নামের মাহাত্ম্যঃ-



শ্রীমদ্ভদ্গীতার অর্জ্জুনবিষাদযোগের ১৫ শ্লোকে বর্ণিত আছে-'হৃষীকেশ পাঞ্চজন্য নামক শঙ্খ বাজাইলেন।' শ্রীমহাভারতের অনুশাসন পর্ব্বের ১৪৯ তম অধ্যায়ে বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্ এ শ্রীভগবানের এই 'হৃষীকেশ' নামের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে। ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য-১৯ শ্লোকে এ উল্লেখিত আছে-
"হৃষিক" অর্থাৎ পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের যিনি ঈশ অর্থাৎ ঈশ্বর তিনিই পরমাত্মা হৃষীকেশ ; ইহারই বশীভূত হয়ে ইন্দ্রিয়গণ স্ব স্ব বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়। সূর্য ও চন্দ্র তাপদান ও বস্তু প্রকাশ করে লোক সমুদায়কে আহ্লাদিত করেন বলে হৃষী নামে অভিহিত হন। ঐ সূর্য ও চন্দ্র তাঁর কেশস্বরূপ বা কেশ-সংস্থিত কিরণস্বরূপ, তাই তাঁর নাম হৃষীকেশ।
'হে পান্ডুনন্দন! যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কেশ নামক অংশুর(কিরণের) দ্বারা সর্বদা যুক্ত করে, তাঁদের দ্বারা জগৎকে জাগরিত এবং নিদ্রিত করে তা হতে পৃথকভাবে উত্থিত হন(অর্থাৎ সর্বত্র অসংগ থাকেন)। জগৎকে জাগরিত এবং নিদ্রিত করার জন্য তিনি জগতের হর্ষণ এবং আনন্দপ্রদানকারী হন। তিনি তাঁর কেশ (শক্তি)-স্বরূপ অগ্নি (এখানে অগ্নি অর্থ তেজ বা সূর্য) এবং চন্দ্রের দ্বারা জগৎকে হৃষ্ট করেন বলে হৃষীকেশ (হর্ষণ + কেশ), মহেশ্বর, বরদানকারী ও লোক (ভূঃ প্রভৃতি লোক এবং সেই লোকবাসীগনের)-পালকরূপে চরাচরে খ্যাত হন।'-(মহাভারত শান্তিপর্ব ৩৪২।৬৬-৬৭)

Sunday, 18 August 2019

ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের কিছু অমৃত বাণী, পর্ব-০২ঃ-


১১.পুত্রাদি পিতাকে ঋণ হইতে মুক্ত করিতে পারেন। কিন্তু অবিদ্যাবন্ধন হইতে মুক্তিলাভের কর্তা নিজে ছাড়া আর কেহ নহে।
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৫১)

১২.'ওম' এই অক্ষরটি পরমাত্মার সন্নিহিত অভিধান অর্থাৎ বাচক নাম;প্রিয় নাম গ্ৰহণ করিলে অর্থাৎ উচ্চারণ করিলে, যেমন সাধারণ লোক সন্তুষ্ট হয়, তেমনি সেই ওঙ্কার-নাম উপাসনায় প্ৰযুক্ত হইলে, তিনিও (পরমাত্মাও) প্ৰসন্ন হইয়া থাকেন।
-শঙ্করাচার্য্য (ছান্দোগ্য উপনিষদ্ শাঙ্করভাষ্য-১।১।১)

১৩.আত্মস্বরূপে অবিজ্ঞাত থাকিলে শাস্ত্রপাঠ নিষ্ফল হয়। আর আত্মস্বরূপ বিজ্ঞাত হওয়ার পর শাস্ত্র অধ্যয়ন নিষ্প্রয়োজন হইয়া পড়ে।
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৫৯)

১৪.ওরে ও অবোধ, আন ফিরিয়ে বোধ,
শ্রীগোবিন্দের নাম গা ।।
শেষের সময় আসবে যখন ,,
বৃথা হবে শিক্ষা- 'ব্যাকরণ '
সার হবে এক পতিতপাবন ,
সেই যে এক সাধা...
শ্রীগোবিন্দ -র নাম গা ।।
ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্
গোবিন্দম্ ভজ মূঢমতে ।
-শঙ্করাচার্য্য (ভজ গোবিন্দম্)

১৫.ঔষধ পান না করিয়া কেবল 'ঔষধ' শব্দ উচ্চারণ করিলে রোগ সারে না। অপরোক্ষানুভূতি ব্যতীত কেবল 'ব্রহ্ম' শব্দের উচ্চারণের দ্বারা মুক্তিলাভ হয় না।
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৬২)

Friday, 16 August 2019

ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের অমৃত বাণী-



১.'মনুষ্যত্ব, মুমুক্ষুত্ব ও মহাপুরুষের সঙ্গ, এই তিনটি এ জগতে দুর্লভ। কেবলমাত্র ঈশ্বরের বিশেষ অনুগ্রহে এগুলি পাওয়া যায়।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩)

২.'শাস্ত্র ও আচার্য্যের বাক্যে ভক্তি, বিশ্বাসই শ্রদ্ধা নামে প্রসিদ্ধ। এবং সৎ-লক্ষ্যে চিত্তের একাগ্রতাই সমাধান বলিয়া কথিত হয়।'
-শঙ্করাচার্য্য (অপরোক্ষানুভূতি-৮)

৩.'শাস্ত্র ও গুরুবাক্যের সত্যতায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখা ও অন্তরে সেই বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করাকে জ্ঞানীরা শ্রদ্ধা বলেন। এই শ্রদ্ধার সাহায্যে আত্মবস্তুর উপলব্ধি হয়।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-২৫)

৪.'বেদান্তের অর্থ বিচারের দ্বারা উত্তম জ্ঞান উৎপন্ন হয়। এই জ্ঞান উৎপত্তির সাথে সাথে সংসারদুঃখের সর্বতোভাবে নাশ হয়।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৪৫)

৫.'অবিদ্যা হয়েছে শবল অর্থাৎ উপাধি যাঁর এমন যে ব্রহ্ম, তিনিই বিচার্য সৎ-শব্দবাচ্য।'
-শঙ্করাচার্য্য (পঞ্চীকরণসূত্র-২)

৬.'শাস্ত্ররূপ প্রমাণ হইতেই জগতের জন্মাদির কারণরূপে ব্রহ্ম অধিগত হন।'
-শঙ্করাচার্য্য (ব্রহ্মসূত্র শাঙ্করভাষ্য-১।১।৩)

৭.'এই গীতাশাস্ত্র সমস্ত বেদাৰ্থ সারসংগ্ৰহ স্বরূপ ও দুর্বিজ্ঞেয়ার্থ।'
-শঙ্করাচার্য্য (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাঙ্করভাষ্য উপক্ৰমণিকা)

৮.'যে ব্যক্তি এই পবিত্র গীতাশাস্ত্র পাঠ করেন, তিনি ভয় ও শোকাদি শূন্য হয়ে বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হন।'
-শঙ্করাচার্য্য (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মাহাত্ম্য)

৯.'মোক্ষের সাধনসমূহের মধ্যে ভক্তিই গরীয়সী। নিজের স্বরূপের সন্ধানকেই ভক্তি বলে অভিহিত করা হয়। আবার অন্য অনেকে আত্মার ও পরমাত্মার তত্ত্ব-বিচারকেই ভক্তি বলে থাকেন।'
-শঙ্করাচার্য্য (বিবেকচূড়ামণি-৩১)

১০.'কাম, ক্রোধ, লোভ ও মোহ চেষ্টা করে পরিত্যাগ কর। নিজের আত্মাকে জানার চেষ্টা কর, তুমি কে? এই আত্মজ্ঞান না হলে তুমি মূর্খই রয়ে যাবে। এই জীবন-মৃত্যু নরকময় সংসারে জন্ম জন্মান্তর ধরে পঁচতে হবে।'
-শঙ্করাচার্য্য (মোহমুদগর-১৫)
........................................................................

Saturday, 10 August 2019

গায়ত্রী মন্ত্র (শাঙ্করভাষ্য, যোগী যাজ্ঞবল্ক্য ও গায়ত্রীতন্ত্রের ব্যাখ্যা)-


বেদে যে ঋক্ টি গায়ত্রী মন্ত্র নামে প্রসিদ্ধ সেটি ঋগ্বেদের একটি ঋক্। তৃতীয় মণ্ডলে দ্বিষষ্টিতম সূক্তের ১৮টি ঋক আছে ; তন্মধ্যে দশম ঋক্ গায়ত্রী। এই সূক্তের ঋষি বিশ্বামিত্র। ইন্দ্রাবরুণৌ (ইন্দ্র ও বরুণ একত্রে) বৃহস্পতি, পূষা, সবিতা, সোম, মিত্রাবরুণৌ (মিত্র ও বরুণ একত্রে) এই সূক্তের দেবতা। ঐ স্তুত দেবতাদিগের মধ্যে সবিতা এক জন। যে ঋক্টিকে গায়ত্রী বলা যায়, তাহা তাঁহারই স্তব। এই ৬২তম সূক্তের প্রথম তিনটি ঋক ত্রিষ্টুপ ছন্দে। আর ১৫টি গায়ত্রীচ্ছন্দে। এই ঋক্টির প্রাধান্য আছে বলিয়াই ইহাই গায়ত্রী নামে প্রচলিত। এই ঋক্ এর পূর্ব্বে পরব্রহ্মবাচ্য প্রণব ও মহাব্যাহৃতি ‘ভূ’ ‘ভুব’ ‘স্বর্’ সংযুক্ত করিয়া প্রখ্যাত গায়ত্রীমন্ত্র দ্বিজাতিদের নিত্যজপ্য।

ॐ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।

গায়ত্রী প্রাণায়াম-মন্ত্রঃ-
ॐ ভূঃ ॐ ভূবঃ ॐ স্বঃ ॐ মহঃ ॐ জনঃ ॐ তপঃ ॐ সত্যং, ॐ তত্সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ, আপো জ্যোতীরসোহমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভূবঃ স্বরোম্।
'ॐ' এই অক্ষরটি পরমাত্মার সন্নিহিত অভিধান অর্থাৎ বাচক নাম প্রণব।কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় উপনিষদের প্রথম শীক্ষাবল্লাধ্যায়ের পঞ্চম অনুবাক অনুসারে- ‘ভূ’ ‘ভুব’ ‘স্বর্’ এই তিনটি সুপ্রসিদ্ধ মহাব্যাহৃতি।পৃথিবীলোকই ভূঃ, অন্তরিক্ষলোকই ভুবঃ, ঐ দ্যুলোকই স্বর।ঋক্ সমূহই ভূঃ, সামসমূহ ভুবঃ, যজুঃসমূহ স্বর্। আর ওঙ্কারই মহঃ-কারণ ওঙ্কারের দ্বারাই সকল বেদ মহীয়ান্ হয়।
যোগী যাজ্ঞবল্ক্যের ব্যাখ্যাঃ-‘পঞ্চকর্ম্মেন্দ্রিয়, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চইন্দ্রিয়ার্থ, পঞ্চমহাভূত, মন, বুদ্ধি, আত্মা আর অব্যক্ত- এই চতুর্বিংশতি গায়ত্রীর অক্ষর। পরমপুরুষ প্রণব লইয়া পঞ্চবিংশ।’
শাঙ্করভাষ্য ও অনুবাদঃ-ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হল-
যঃ = সবিতা দেবঃ,
নঃ = অস্মাকং
ধিয়ঃ = কর্মাণি ধর্মাদিবিষয়া বা বুদ্ধীঃ,
প্রচোদয়াৎঃ = প্রেরয়েৎ,
তৎঃ = তস্য সর্বাসু শ্রুতিষু প্রসিদ্ধস্য,
দেবস্যঃ = দ্যীতমানস্য,
সবিতুঃ = সর্বান্তর্যামিতয়া প্রেরকস্য জগত্সৃষ্টুঃ পরমেশ্বরস্য আত্মভূতং,
বরেণ্যং = সর্বরূপাস্যতয়াজ্ঞেয়তয়া চ সংভজনীয়ং,
ভর্গ = অবিদ্যা তত্কার্যয়োর্ভর্জনাদ্ভর্গঃ,
স্বয়ংজ্যোতিঃ = পরমব্রহ্মাত্মক তেজঃ,
ধীমহি = তদ্যোহং সোহসো যোহসো সোহহমিতি বয়ং ধ্যায়েম।
(সামান্য অর্থ)
১. যে সবিতা দেব আমাদের বুদ্ধি অর্থাৎ কর্মকে অথবা ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষলাভ বিষয়ে অন্তঃকরণ বুদ্ধিবৃত্তি প্রেরণ করে, যিনি সকল শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ প্রকাশমান দেবতা সকলকে অন্তর্যামীরূপে প্রেরণাদানকারী জগৎ-স্রষ্টা পরমেশ্বর, অবিদ্যা এবং তার কর্মফল দূর করে শুভবুদ্ধিদানকারী , যিনি সবার আত্মা, যিনি সকলের বরণীয়, যিনি সকলের দ্বারা উপাস্য এবং জ্ঞেয় হওয়ার জন্য সাবধানের সাথে অর্চনা করার যোগ্য, স্বয়ং প্রকাশ (সকলের আত্মস্বরূপ) পরমব্রহ্মরূপ তেজ, আমরা অভেদভাবে সেই পরম জ্যোতির ধ্যান করছি।

যদ্বা তদিতি ভর্গো বিশেষণং = সবিতুর্দেবস্য তত্তাদশং ভর্গো ধীমহি।
কিং তদিত্যপেক্ষায়ামাহ = য ইতি লিংগব্যত্যয়ঃ, যদ্ভর্গো ধিয়ঃ প্রচোদয়াদিতি তদ্ভয়ায়েমেতি সমন্বয়ঃ।।

(আধ্যাত্মিক অর্থ)
২. ‘তৎ’ যা ভর্গ এর বিশেষণ। (ভর্গ শব্দের অর্থ অবিদ্যা এবং কর্মফল হতে চিত্তশুদ্ধির জন্য যে জ্ঞান), সবিতা দেবতা এর যে ভর্গ, আমরা তারই ধ্যান করি।

তিনি কে? আমরা অপেক্ষার সাথে করি ‘যঃ’ এই শব্দের প্রতীকী যা ভর্গ অর্থাৎ পরব্রহ্ম আমাদের বুদ্ধিকে প্রেরণাদান করে সেই ব্রহ্মেরই আমরা ধ্যান করছি। এভাবেই সমন্বয় করতে হবে।
যদ্বা যঃ সবিতা = সূর্য,
ধিয়ঃ = কর্মাণি,
প্রচোদয়াৎ = প্রেরয়তি,
স তস্য সবিতুঃ = সর্বস্য প্রসবিতুঃ,
দেবস্য = দ্যোতমানস্য সূর্যস্য,
তৎ = সর্বৈর্দৃশ্যতয়া প্রসিদ্ধং
বরেণ্যং = সর্বৈঃ সংভজনীয়ং,
ভর্গঃ = পাপানাং তাপক তে জোমণ্ডলং
ধীমহি = ধ্যায়েম,
মনসা ধারয়েম।।

(আধিদৈবিক অর্থ)
৩. যে সবিতা অর্থাৎ সূর্য বুদ্ধি-গত কর্মকে প্রেরণাদান করে, এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের প্রসব কর্তা সবিতাদেব অর্থাৎ প্রকাশমান সূর্যের, যিনি সবার দ্বারা দর্শনীয় হয়ে প্রসিদ্ধ এবং সবার গন্তব্য – সকলের দ্বারা সাবধানের সাথে সেবন করার যোগ্য তেজ তথা পাপকে ভষ্ম করার অগ্নিতেজ মণ্ডল, আমরা তারই ধ্যান করছি অর্থাৎ তাকে আমরা মনে মনে ধারণ করছি।
যদ্বা ভর্গঃ শব্দেনাত্রান্নমভি = ধীয়তে যঃ সবিতা দেবো ধিয়ঃ প্রচোদয়তি তস্য প্রসাদাদ্ভর্গোহন্নাদি লক্ষণং ফলং ধীমহি ধারয়ামঃ তস্যাধারভূতা ভবেমেত্যর্থঃ।।

(আধিভৌতিক অর্থ)
৪. ভর্গ শব্দে যেখানে অন্ন বলা হয়। যে সূর্যদেব বুদ্ধিকে প্রেরণাদান করে তার প্রসাদে ভর্গ অর্থাৎ অন্ন আদি লক্ষ্মণযুক্ত পূণ্যফলের ধারণকারী, তিনিই আমাদের গন্তব্য, এরূপ অর্থ।

প্রাণায়াম গায়ত্রী মহামন্ত্র এর উপাসনা-
অথ সর্বদেবাত্মনঃ সর্বশক্তেঃ সর্বাবভাসকতেজোময়স্য পরমাত্মনঃ সর্বাত্মকত্ব প্রতিপাদক গায়ত্রীমহামন্ত্রস্যোপাসনা প্রকারঃ প্রকাশ্যতে – তত্র গায়ত্রী প্রণবাদি সপ্তব্যাহত্যুপেতাং, শিরঃ সমেতাং সর্ববেদসারমিতি বদন্তি, এবংবিশিষ্টা গায়ত্রী প্রাণায়ামৈরূপাস্যা।

এখন সর্বদেবরূপ, সর্বশক্তি, সবার অভবাসক, তেজরূপ পরমাত্মার সর্বাত্মকতাকে সিদ্ধকারী গায়ত্রী মহামন্ত্রের উপাসনার প্রকারভেদ বর্ণনা করছি-
এই বিষয়ে প্রণবাদি সাত (৭) প্রকার ব্যবহৃত পদ সহিত (সপ্তব্যাহতি- ওঁকারমাদিত পুরাকল্পে সমুতপন্ন ভূঃভূবঃস্বঃ সনাতনাঃ) এবং মূখ্যমন্ত্র সহিত গায়ত্রী মন্ত্রকে ‘সকল বেদের সার’ বলছি। এভাবেই গায়ত্রীকে সর্বশাস্ত্র এবং সর্বমন্ত্রের সার হিসেবেই প্রাণায়াম দ্বারা উপাসনা করা উচিৎ।

শুদ্ধ গায়ত্রী জপ অনুযায়ী
স প্রণব ব্যাহতিত্রয়োপোতা, প্রণবান্তা, গায়ত্রী জপাদিভিরূপাস্যা। তত্র শুদ্ধা গায়ত্রী প্রত্যক্ ব্রহ্মৈক্যপ্রবোধিকা। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াদিতি – নোহস্মাকং ধিয়ো বুদ্ধির্যঃ প্রচোদয়াৎ-প্রেরয়েদিতি সর্ববুদ্ধিসংজ্ঞাহন্তঃকরণ প্রকাশক সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মেত্যুচ্যতে, তস্য প্রচোদয়াচ্শব্দনির্দিষ্টস্যাত্মনঃ স্বরূপভূতং পরমব্রহ্ম তৎসবিতুরিত্যাদিপদৌর্নির্দিশ্যতে, তত্র ॐ তৎসদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃত ইতি তচ্ছব্দেন প্রত্যগ্ভূত স্বতঃ সিদ্ধং পরং ব্রহ্মোচ্যতে।
অনুবাদঃ- এই গায়ত্রী এর উপাসনা প্রণব এর সাথে তিন ব্যাহতিয়োং এবং শেষে প্রণব মন্ত্রাদি জপ করা উচিৎ। এই বিষয়ে শুদ্ধ গায়ত্রী অর্থাৎ ব্যাহৃতিত্রয় সহিত তথা শিরোমন্ত্র সহিত যেখানে মন্ত্র ব্রহ্মের সাথে জীবকে একত্ববোধ করায়।
‘ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ’ এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের বুদ্ধিকে যিনি প্রেরিত করেন’ এর দ্বারা আমাদের বুদ্ধি সংগায়িত সব অন্তঃকরণের প্রকাশক, সকল কিছুর সাক্ষী এবং প্রত্যাগাত্মা করে। সেই ‘প্রচোদয়াৎ’ শব্দ দ্বারা নির্দেশিত আত্মার স্বরূপ যিনি পরমব্রহ্ম, ‘তৎসবিতুঃ’ পদ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। এই বিষয়ে ‘তৎসদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ’ অর্থাৎ ॐ তৎ সৎ, এমনই তিন প্রকারের সচ্চিদানন্দঘন ব্রহ্মের নাম বলা হয়, এই স্মৃতি প্রমাণ অনুসারে ‘তৎ’ শব্দ দ্বারা প্রত্যগ্ভূত তথা স্বতঃসিদ্ধ পরমব্রহ্ম বলা হয়।
সবিতুরিতি সৃষ্টিস্থিতিলয়লক্ষণকস্য সর্বপ্রপঞ্চস্য সমস্তদ্বৈতবিভ্রমস্যাধিষ্ঠানং লক্ষ্যতে।
অনুবাদঃ- ‘সবিতুঃ’ এর অর্থ হচ্ছে – যেখানে সৃষ্টি স্থিতি তথা লয় লক্ষণযুক্ত যে দ্বৈত প্রপঞ্চ (জগৎ সংসার) দেখি, সেই সকলের অধিষ্ঠান সবিতার অভেদভাব হেতু ধ্যান করছি।
বরেণ্যমিতি সর্ববরণীয় নিরতিশয়ানন্দরূপং
ভর্গ ইত্যবিদ্যাদিদোষ ভর্জনাত্মক-জ্ঞানৈকবিষয়ত্বং।

অনুবাদঃ ‘বরেণ্যং’ এর অর্থ হচ্ছে- সবার দ্বারা বরণীয় পরিপূর্ণ আনন্দ স্বরূপ,
ভর্গ’ এর অর্থ হচ্ছে- অবিদ্যাদি দোষের ভর্জনকারী কেবল জ্ঞানের বিষয়।
দেবস্যেতি সর্বদ্যোতনাত্মকাখণ্ডসদেকরকরসং সবিতুর্দেবস্যেত্যত্র ষষ্ঠয়র্থো রাহোঃ শিরোবদৌপচারিকঃ বুদ্ধয়াদি সর্বদৃশ্য সাক্ষীলক্ষণং যন্মে স্বরূপং তৎসর্বাধিষ্ঠানভূতং পরমানন্দং নিরস্তসমস্তানর্থরূপং স্বপ্রকাশচিদাত্মকং ব্রহ্মেত্যেবং ধীমহি ধ্যায়েম।

অনুবাদঃ দেবস্য’ এর অর্থ হচ্ছে- সবাইকে প্রকাশকারী অখণ্ড সৎ একরস যিনি সেই দেবতার। ‘সবিতুর্দেবস্য(ভর্গঃ)’ এই ষষ্ঠী বিভক্তির পদের ঔপচারিক (কাল্পনিক) ভেদে অভেদ অর্থ। যেমন ‘রাহুর শির’ যেখানে রাহু এবং শির (মস্তক) বস্তুতঃ দুই ব্যাক্তি নয়। মস্তকই রাহু, রাহু থেকে মস্তক ভিন্ন নয়। দুটোই অভেদ। এই জন্য সেখানে ষষ্ঠী বিভক্তির ভেদকৃত অর্থ গৌণ।
[ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস অনুযায়ী “রাহুর শির= রাহুশির” অর্থাৎ ষষ্ঠী বিভক্তি ‘র’ লোপ পায়। অতএব রাহুর শির বললে ষষ্ঠী বিভক্তি এর জন্য রাহু এবং তার শির দুটি বুঝালেও এখানে ঔপচারিক ‘র’ লুপ্ত হয়ে সমাস অনুযায়ী একই অভেদ শব্দে (রাহুশির) ভেদ বিলুপ্ত হয়ে যায়]

যথা লক্ষিত-মূখ্য-অভেদার্থ যেখানে অন্তঃকরণাদি সকল দৃশ্যমান সাক্ষী যিনি আমার স্বরূপ তিনি হিলেন সবার অধিষ্ঠান পরমানন্দ, যাতে সকল প্রকার অনর্থের নিরসন হয় এবং যিনি স্বয়ংপ্রকাশ চিদাত্মারূপ ব্রহ্ম, আমরা তার – ‘ধীমহি’ অর্থাৎ অভেদভাবে চিন্তা করি।
এবং সতি সহব্রহ্মণা (হিরণ্যগর্ভেন সহ) স্ববিবর্ত্তজড়প্রপঞ্চেন সহ রজুসর্পন্যায়েনাপবাদ সামানাধিকরণ্য রূপ্যৈকত্বন্যায়ৈন সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মনো ব্রহ্মণা সহ তাদাত্ম্যরূপমেকত্বং ভবতীতি সর্বাত্মক ব্রহ্মবোধকোহয়ং গায়ত্রী মন্ত্রঃ সংপদ্যতে।।
অনুবাদঃ- এমন ভাবেই, হিরণ্যগর্ভরূপ ব্রহ্মার সাথে নিজের স্বরূপে বিবর্ত্তভূত জড় প্রপঞ্চযুক্ত হয়ে এতে রজ্জুসর্পন্যায় আরোপ এবং শুক্তিকা-রজতের ন্যায়- রজতভাবের একতার ন্যায় সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মার সাথে তাদাত্ম্যরূপ ঐক্য স্থাপিত হয়। এভাবেই সর্বাত্মরূপ ব্রহ্মের বোধ যা গায়ত্রী মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে থাকে।
সাত ব্যাহৃতিয়াং —ॐ ভূঃ ॐ ভূবঃ ॐ স্বঃ ॐ মহঃ ॐ জনঃ ॐ তপঃ ॐ সত্যং,
সপ্তব্যাহৃতীনাময়মর্থঃ –
ভূরিতি সন্মাত্রমুচ্যতে, ভূব ইতি সর্ব ভাবং প্রকাশয়তোতি ব্যুৎপত্যা চিন্দ্রূপমুচ্যতে,
স্বরিতি সুব্রিয়ত ইতি ব্যুৎপত্যা সুবরিতি সুষ্ঠু সর্বৈব্রিয়মাণ সুখ স্বরূপমুচ্যতে,

সাত ব্যাহৃতি এর অর্থ হচ্ছে –
ভূঃ’ = থেকে সন্মাত্র (যার দ্বারা সমস্ত জগৎ উৎপন্ন হয়) এরূপ অর্থ।
ভূবঃ’ = যিনি সমস্ত সত্ত্বা এই ব্যুৎপত্তি চিদ্রূপ অর্থে বলা হয়।
স্বঃ’ = ‘ সুব্রিয়তঃ’ এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা ‘সুবঃ’ যা সকল কিছুর দ্বারা উৎকৃষ্টতার সাথে বরণ করা হয়। তাকেই সেই সুখ স্বরূপ আনন্দ বলা হয়।

মহ ইতি মহীয়তে পূজ্যতে ইতি ব্যুৎপত্যা সর্বাতিশয়ত্বমুচ্যতে,
জন ইতি জনয়তীতি জন সকলকারণত্বমুচ্যতে,
তপ ইতি সর্বতেজোরূপত্ব,
সত্যামিতি সর্ববাধারহিতং।

মহঃ’ = যাকে মহান বলা হয়, যাকে পূজা করা হয়। এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা যা সর্বাধিক তেজ স্বরূপ বুঝায়।
জনঃ’ = ‘যিনি উৎপন্ন করেন’ এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা তাকে সমস্ত কিছুর কারণ বলা হয়।
তপঃ’ = এই শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞানস্বরূপ। ‘যস্য জ্ঞানময়ং তপঃ’ অর্থাৎ যিনি সবাইকে প্রকাশিত করেন।
সত্যম্’ = যা তিন কল্পে (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অথবা সুষুপ্তি, জাগ্রত এবং স্বপ্ন অবস্থায়) সকল বাধারহিত হয়। এক কথায় যা তিন কালে বাধিত হয় না সেটাই সত্য।

এতদুক্তং ভবতি – লোকে স্বরূপং তদোংকারবাচ্যং ব্রহ্মৈবাত্মনোহস্য সচ্চিদ্রুপস্বভাবাদিতি।
অথ ভূরাদয়ঃ সর্বেলোকাঃ ওঙ্কারবাচা ব্রহ্মাত্মকাঃ ন তদ্বয়তিরিক্তং কির্চিদস্তোতি ব্যাহতয়ঃ সর্বাত্মকব্রহ্মবোধিকাঃ।

এই বিষয়ে বলা হয় – সৎ চিৎ রূপ স্বভাবযুক্ত হওয়ায় এই আত্মার স্বরূপ যা ব্রহ্মই, লোকের কাছে তিনি ওঙ্কার নামে খ্যাত। এবং ভূঃ আদিতে পুনঃ পুনঃ বলা হয়েছে প্রণব-মন্ত্র যা এই ভুবনে ব্রহ্মরূপতার প্রতিপাদন করে। এর দ্বারা ব্যাহতিয়া ব্রহ্মের সর্বাত্মকতার বোধ উপলদ্ধ করায়।

গায়ত্রী শিরোমন্ত্র – ‘ আপোজ্যোতীরসোহমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভূবঃ স্বরেম্।’
গায়ত্রীশিরসোপ্যয়মেবার্থঃ –
আপ ইতি আপ্নোতীতি ব্যুৎপত্যা ব্যাপকত্বমুচ্যতে,
জ্যোতিরিতি প্রকাশরূপত্বং (কাশ্দোপ্তৌ),
রস ইতিসর্বাতিশয়ত্বং,
অমৃতমিতি মরণাদি সংসারনির্মুক্তত্বং,
সর্বব্যাপি সর্বপ্রকাশকত্বং সর্বোৎকৃষ্টনিত্যমুক্তত্বমাত্মরূপং, সচ্চিদানন্দাত্মকং যদোংকারবাচ্যং ব্রহ্ম তদহমস্মীতি গায়ত্রীমন্ত্রস্যার্থঃ

অনুবাদঃ- গায়ত্রী শিরোমন্ত্র এর অর্থঃ-
‘আপলৃ ব্যাপ্তী’ ধাতু দ্বারা ‘আপঃ’ শব্দ নিষ্পন্ন হয়। এই ব্যুৎপত্তি শব্দে এর ব্যাপকতা বর্ণিত হয়েছে।
‘জ্যোতিঃ’ এর অর্থ প্রকাশ স্বরূপ। (কারণ ‘কাশ্’ দীপ্তির অর্থ দ্বারা এর স্বয়ং প্রকাশমানতা বুঝায়।)
সেই পরমানন্দ স্বভাবকে ‘রস’ বলা হয়। ‘রসো বৈ সঃ’
জগৎ সংসার ও মৃত্যু চক্রাদি হতে নির্মুক্ত হওয়ার জন্য সেটা ‘অমৃত’ নামে প্রসিদ্ধ।
তিনি সকল কিছুতে ব্যাপ্ত এবং সকলের প্রকাশক, সবার থেকে উৎকৃষ্ট এবং নিত্যমুক্ত আত্মরূপ, সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ ‘ব্রহ্ম’ যিনি ওঙ্কার বাচ্য, আমিই তিনি। (অহম ব্রহ্মাস্মি) এরূপ অর্থ গায়ত্রী শিরোমন্ত্র এর।

শাস্ত্র-প্রমাণ
গুহাশয়ে ব্রহ্মহুতাশনেহহং কর্ত্তিদমংশাখ্যহবির্হুতং সৎ। বিলীয়তে নেদমহং ভবানীত্যেষ প্রকারস্ত্বভিধীয়তেহত্র।। যদস্তি যদ্ভাতি তদাত্মরূপং নান্যত্ততো ভাতি ন চান্যদস্তি। স্বভাবসংবিৎপ্রতিভাতি কেবলা গ্রাহ্যং গ্রহীতেতি মৃপৈব কল্পনা।।

অনুবাদঃ- “বুদ্ধি-গুহার ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে ‘কর্তা’ এবং ‘ইদং’ অংশময় হবি হবন করায় জীবরূপ অহংভাব এর বিলয় হয়ে যায়। ‘আমি যে (দৃশ্যমান জগৎ প্রপঞ্চ) নই এই ভেবে উপাসনা করতে বলা হয়েছে। যা কিছু আছে এবং যা দৃশ্যমান সেই সমস্তই আত্মরূপ। আত্মা ভিন্ন অন্য কিছু নেই এবং না কিছু হতে পারে। স্বভাবের দ্বারাই কেবল সবিৎ প্রতিভাসিত হয়। অতঃপর গ্রাহ্য এবং গ্রহীতা (কর্তা ও ভোক্তা) কেবল মিথ্যা কল্পনা মাত্র।।
ইতি শ্রীমৎ শঙ্করভগবানঃ কৃতো গায়ত্রীভাষ্যং সমাপ্তম্।
ভগবান শঙ্করাচার্যকৃত গায়ত্রী ভাষ্য এর বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত হল।

গায়ত্রীতন্ত্রের ব্যাখ্যাঃ-'গায়ত্রীর ১ম অক্ষর অগ্নিদেবতা,২য় অক্ষর বায়ুদেবতা, ৩য় সূর্য,ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ, যম, বরুণ, বৃহস্পতি, পর্জ্জন্য, ইন্দ্র, গন্ধর্ব্ব, পূষা, মিত্রাবরুণ, ত্বষ্টা, বাসব, মরুত, সোম,আঙ্গিরস, বিশ্বদেব, অশ্বিনীকুমার, প্রজাপতি, সর্ব্বদেবতা, রুদ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু।'
সায়ণাচার্য গায়ত্রীর ব্যাখ্যা কালে “তৎসবিতুঃ” ইতি বাক্যের অর্থ করেন, “জগৎপ্রসতুঃ”। কারণ “সু” ধাতু হতে সবিতৃ শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। সবিতা অর্থে প্রসবিতা। কাহার প্রসবিতা? নিরুক্তকার যাস্কাচা্র্য্য বলেন, “সর্ব্বস্য প্রসবিতা”। যদি তাই হয়, তাহলে সবিতা, পরব্রহ্ম পরমেশ্বর। স্মার্ত্তভট্টাচার্য্য রঘুনন্দন প্রভৃতি পন্ডিতেরাও “তৎসবিতুঃ” শব্দের ব্যাখ্যা পরব্রহ্ম পক্ষে করে থাকেন। তাছাড়া ঋগ্বেদসংহিতা, ১ম মন্ডল, ১৬৪ সুক্ত, ৪৬ ঋক্ এ বলা হচ্ছে- ‘একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’ অর্থাৎ সেই এক পরব্রহ্মকেই বিপ্রগণ ইন্দ্র,মিত্র, বরুণ, অগ্নি বহুনামে অভিহিত করিয়া থাকেন।

তথ্যসূত্রঃ-
১.জ্ঞানবেদ,দুর্গাদাস লাহিড়ী।
২.বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় » প্রবন্ধ » দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম » সবিতা ও গায়ত্রী।
৩.শংকরাচার্য কৃত সংস্কৃত ভাষ্যকে হিন্দীতে ভাষ্যানুবাদ করেছেন লোকেশ্বরানন্দ,বঙ্গানুবাদে সহায়তা ও কৃতজ্ঞতায় জয় বিশ্বাস।
.........................................................................

শ্রীশুভ চৌধুরী।
আগষ্ট ১০, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

Friday, 9 August 2019

গায়ত্রী সংজ্ঞক ব্ৰহ্মের মহিমাঃ-


সামবেদীয়া ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বাদশ খন্ডে বর্ণিত আছে- 

সৈষা চতুষ্পদা ষড়্ বিধা গায়ত্রী তদেতদৃচাহভ্যনূক্তম্ ৷৷ ৫

তাবানস্য মহিমা ততো জ্যায়াংশচ পূরুষঃ । পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্ৰিপাদস্যামৃতং দিবীতি ॥ ৬

শাঙ্করভাষ্য অনুবাদঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল- সেই প্ৰসিদ্ধা এই গায়ত্রীর চারিটি পাদ, এবং বাক্, ভূত, পৃথিবী, শরীর, হৃদয় ও প্রাণ, এই ছয়টি তাহার বিধা(অক্ষরস্থানীয়) অংশ অর্থাৎ ষড়প্রকারা । উক্তার্থেরই সমর্থকরূপে এখানে গায়ত্রী অনুগত যে গায়ত্রী-নামক ব্ৰহ্ম, গায়ত্ৰী বলিয়া অভিহিত হইল, ঋক্ মন্ত্রেও তাহা প্ৰকাশিত হইয়াছে ॥

 ব্রহ্মের চতুষ্পদ ও ষড়বিধ বিকারাত্মক যে পরিমাণ একপাদ গায়ত্রী বলিয়া বর্ণিত হইল, সেই পরিমাণই অৰ্থাৎ তৎসমস্তই উক্ত গায়ত্রী সংজ্ঞক সমস্ত ব্ৰহ্মের মহিমা, অর্থাৎ বিভূতির বিস্তার ; অতএব, তদাপেক্ষা অর্থাৎ গায়ত্রী-সংজ্ঞক বাচারম্ভণমাত্ররূপী অসত্য বিকারাত্মক ব্ৰহ্ম অপেক্ষাও পরমার্থ সত্য, বিকারহীন পূরুষ (পরব্রহ্ম) অতিশয় মহৎ ; কারণ, তিনিই সর্ব জগৎকে পরিপূরণ করেন, অথবা হৃদয়রূপ পুরে অবস্থান করেন, [ এইজন্য পুরুষ-পদবাচ্য হন]। সমস্ত ভূত অর্থাৎ তেজ, জল ও পৃথিবী প্রভৃতি স্থাবর-জঙ্গম-সমূহ সেই এই পুরুষেরই একপাদ (একাংশমাত্র); এই গায়ত্র্যাত্মক সমস্ত ব্ৰহ্মের ত্রিপাদযুক্ত অমৃতস্বরূপ পূরুষ প্রকাশময় নিজ আত্মস্বরূপে অবস্থিত আছেন। [ইতি শব্দ মহিমা কথন সমাপ্তি জ্ঞাপনার্থ ] ॥

শরীরের ন্যায় হৃদয়ও গায়ত্রী-স্বরূপঃ-


সামবেদীয়া ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বাদশ খন্ডে বর্ণিত আছে-
যদ্বৈ তৎপুরুষে শরীরমিদং বাব তদ্যদিদমস্মিন্নন্তঃ পুরুষে হৃদয়ম, অস্মিন্ হীমে প্ৰাণাঃ প্রতিষ্ঠিতা এতদেব নাতিশীয়ন্তে ৷। ৪
শাঙ্করভাষ্য অনুবাদঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল-

যাহা সেই পুরুষাশ্রিত শরীররূপী গায়ত্রী, ইহাই তাহা,-যাহা এই পুরুষের (দেহের) অভ্যন্তরে অবস্থিত হৃদয় অর্থাৎ হৃৎপদ্ম-নামক বস্তু, ইহাই সেই গায়ত্রী । কি প্রকারে ? তদুত্তরে বলিতেছেন-যেহেতু এই সমস্ত প্ৰাণ ইহাতেই অবস্থিত, অতএব, শরীরের ন্যায় হৃদয়ও গায়ত্রী-স্বরূপ। বিশেষতঃ প্ৰাণ সমুদয় ইহাকেই অতিক্রম করে না। “প্রাণই পিতা, প্রাণই মাতা, এবং “কোন ভুতকেই হিংসা করিবে না’ ইত্যাদি শ্রুতি হইতেও জানা যায় যে, ভূতসমুদয়ই প্ৰাণ।


Tuesday, 6 August 2019

এই পুরুষাশ্রিত পার্থিব শরীরও পৃথিবীর ন্যায় গায়ত্রীস্বরূপাঃ-


সামবেদীয়া ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বাদশ খন্ডে বর্ণিত আছে-
যা বৈ সা পৃথিবীয়ং বাব সা, যদিদমস্মিন্ পুরুষে শরীরমস্মিন্ হীমে প্ৰাণাঃ প্ৰতিষ্ঠিতা এতদেব নাতিশীয়ন্তে ॥৩.১২.৩৷৷
শাঙ্করভাষ্য অনুবাদঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল-
যাহা সেই পৃথিবীরূপা গায়ত্রী, ইহাই তাহা । তাহা কি ? যাহা এই পুরুষে অর্থাৎ দেহেন্দ্ৰিয়াদি-সমষ্টিভূত জীবে অবস্থিত এই দৃশ্যমান শরীর; কেননা, এই শরীর-পার্থিব অর্থাৎ পৃথিবী-সম্ভূত। ভাল, শরীরেরই বা পার্থিবত্ব কি প্রকারে? হ্যাঁ, বলা হইতেছে-যেহেতু এই সমস্ত প্ৰাণ অর্থাৎ ভূতশব্দ-বাচ্য [পৃথিব্যাদি ] এই শরীরেই বিদ্যমান রহিয়াছে; অতএব, ভূতশব্দবাচ্য প্ৰাণসমূহ প্ৰতিষ্ঠিত থাকায় এই শরীরও পৃথিবীর ন্যায় গায়ত্রীস্বরূপা; যে হেতু প্ৰাণসমূহ এই শরীরকে কখনই পরিত্যাগ করে না [সেই হেতু এই শরীরও গায়ত্রীরূপা ] ॥


Saturday, 3 August 2019

গায়ত্রী পৃথিবীরূপাঃ-


সামবেদীয়া ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বাদশ খন্ডে বর্ণিত আছে-
যা বৈ সা গায়ত্রীয়ং বাব সা যেয়ং পৃথিব্যস্যাং হীদং সৰ্ব্বং ভূতং প্রতিষ্ঠিতমেতামেব নাতিশীয়তে ॥৩.১২.২

শাঙ্করভাষ্য অনুবাদঃ-
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল- যাহা সেই উক্ত লক্ষণা গায়ত্রী, ইহাই তাহা, —যাহা পৃথিবী বলিয়া প্ৰসিদ্ধ। আচ্ছা, এই পৃথিবী গায়ত্রী হয় কি প্রকারে ? [ উত্তর ] কথিত হইতেছে—যে হেতু উহার সহিত সমস্ত ভূতের সম্বন্ধ রহিয়াছে। সর্বভূতের সহিত সম্বন্ধই বা কি প্রকারে ? যে হেতু স্থাবর ও জঙ্গম ( অচেতন ও চেতন ) সমস্ত ‘ভুতই এই পৃথিবীতে অবস্থান করিতেছে। [ কেহই ] এই পৃথিবীকে অতিক্রম করে না, অর্থাৎ ছাড়িয়া থাকে না ; গান ও ত্ৰাণের সম্বন্ধনিবন্ধন গায়ত্রীর সহিত যেরূপ ভূতবর্গের সম্বন্ধ, তদ্রুপ সর্বভূতের অবস্থিতি নিবন্ধন পৃথিবীর সহিতও সর্বভূতের সম্বন্ধ [ বুঝিতে হইবে ] ; এই কারণেই গায়ত্রীকে পৃথিবীরূপা বলা হইয়াছে।


Friday, 2 August 2019

গায়ত্র্যপাধিক ব্রহ্মের উপাসনাঃ-


সামবেদীয়া ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বাদশ খন্ডে “গায়ত্রী’ রূপেও ব্ৰহ্ম অভিহিত হইয়া থাকেন ; কেন না, সর্বপ্ৰকার বিশেষ ধৰ্ম্মরহিত এবং ‘নেতি নেতি’ ( ইহা নহে-ইহা নহে ) ইত্যাকারে সৰ্ব্বপ্ৰকার বিশেষ ধৰ্ম্মের প্রতিষেধগম্য ব্ৰহ্মকে সহজে বুঝিতে পারা যায় না। আরও বহুতরাচ্ছন্দো বিদ্যমান থাকিলেও প্রাধান্য নিবন্ধনস্থ একমাত্র গায়ত্রীকে ব্ৰহ্মজ্ঞানের দ্বারভূত বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে।

উষ্ণিক্, অনুষ্টুপ্, বৃহতী, ত্রিষ্টুপ্, জগতী, গায়ত্রী প্রভৃতি বৈদিক ছন্দ রহিয়াছে। তন্মধ্যে গায়ত্রীর প্রাধান্যের হেতু এই যে-গায়ত্রী দ্বারাই যজ্ঞিয় সোমের আনয়ন করিতে হয়, অপরাপর ছন্দোমধ্যেও গায়ত্রীর অক্ষর সন্নিবিষ্ট থাকায় গায়ত্রীই অপর সমস্ত ছন্দের ব্যাপক ; বিশেষতঃ গায়ত্রীই সমস্ত সবনের ব্যাপক, অর্থাৎ প্ৰাতঃ স্নানাদি কাৰ্য্যেও গায়ত্রীর নিয়ত সম্বন্ধ রহিয়াছে ; এই সমস্ত কারণে যজ্ঞেতে গায়ত্রীচ্ছন্দের প্রাধান্য। বিশেষতঃ গায়ত্রীই ব্রাহ্মণের সারভূত। অতএব, যথোক্ত ব্রহ্মও মাতার নায় গুরুতরা গায়ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া-তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট অন্য কোনও আলম্বন লাভ করিতে পারেন না ; কারণ, লোকেও গায়ত্রীর অতিশয় গুরুত্ব সুপ্ৰসিদ্ধ রহিয়াছে। এই সকল কারণেই এখানে গায়ত্রী স্বরূপে ব্ৰহ্মের নির্দেশ করা হইতেছে-

গায়ত্রী বা ইদং সর্বং ভূতং যদিদং কিঞ্চ বাগ্বৈ গায়ত্রী বাগ্বা ইদং সর্বং ভূতং গায়তিচ ত্রায়তে চ ৷৷ ৩.১২.১ ৷৷

শাঙ্কর ভাষ্যানুবাদঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল-

“গায়ত্রী বৈ” এইস্থানে ‘বৈ’ শব্দটি অবধারণার্থক ; এই যে সমস্ত ভূত, অর্থাৎ প্রাণিসমূহ, অথবা স্থাবর-জঙ্গমাত্মক যাহা কিছু, তৎসমস্ত গায়ত্রী স্বরূপই বটে। কেবল ছন্দঃস্বরূপা গায়ত্রীর সর্বভূতাত্মভাব উপপন্ন হইতে পারে না ; এইজন্য “বাক্ বৈ” গায়ত্রী এই বলিয়া গায়ত্রীশব্দে গায়ত্রীর কারণীভূত শব্দরূপত্ব প্ৰতিপাদন করিতেছেন। বাক্ই এই সমস্ত ভূত, অর্থাৎ যে হেতু বাক্ই শব্দরূপে সমস্ত ভূতকে গান করে, অর্থাৎ ইহা গো, ইহা অশ্ব, ইত্যাকার শব্দে অভিহিত করে, এবং ত্ৰাণও করে-রক্ষাও করে, অর্থাৎ “অমুক হইতে ভীত হইও না, কি কারণে তোমার ভয় হইতেঁছে ?’ ইত্যাদি বাক্যে ভয় হইতে সৰ্বতোভাবে নিৰ্ভয় হইয়া লোক সমূহ রক্ষিত হইয়া থাকে। বাক্য যে, এইরূপে গান করে এবং ত্ৰাণ করে, প্ৰকৃত পক্ষে গায়ত্রীই তাহা গান করে এবং ত্ৰাণ করে ; কারণ, বাক্য ত আর গায়ত্রী হইতে অন্য বা পৃথক পদার্থ নহে, কেন না, গান ও ত্ৰাণ হেতুই গায়ত্রীর গায়ত্রীত্ব অর্থাৎ গান ও ত্ৰাণ গায়ত্রীর স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম ॥১৷৷

 


আত্মানাত্মবিবেকঃ-

  আত্মা ও অনাত্মা অর্থাৎ আত্মা ভিন্ন দেহের পৃথকত্বের বিবেকবোধই আত্মানাত্মবিবেক। দেহকেই আমরা ' আমি ' ভাবিয়া থাকি। ...