Friday, 27 December 2019
রূপবিহীন অমূর্ত্ত ও সর্ব্বগত ব্রহ্মের প্রতিবিম্বিত হওয়া বিষয়ে শ্রুতিসম্মতি প্রদর্শনঃ-
Friday, 20 December 2019
'কালভৈরবাষ্টকম্'
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত '#কালভৈরবাষ্টকম্'
ও এর ভাবার্থঃ-
শ্রীকালভৈরবাষ্টকং
দেবরাজসেব্যমানপাবনাঙ্ঘ্রিপঙ্কজং
ব্যালযজ্ঞসূত্রমিন্দুশেখরং কৃপাকরম্ ।
নারদাদিযোগিবৃন্দবন্দিতং দিগম্বরং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||১||
ভাবার্থ - দেবরাজ ইন্দ্র যাঁর পতিত পাবন চরণ কমল
সেবা করেন, সৰ্প যাঁর গলদেশের যজ্ঞসুত্ৰ, যিনি চন্দ্ৰশেখর, যিনি দয়া নিধান, নারদাদি
যোগিগণ যাকে বন্দনা করেন, যিনি দিগম্বর আমি সেই কাশিপুরের অধীশ্বর কালভৈরবকে ভজনা করি
||১||
ভানুকোটিভাস্বরং ভবাব্ধিতারকং পরং
নীলকণ্ঠমীপ্সিতার্থদায়কং ত্রিলোচনম্ ।
কালকালমম্বুজাক্ষমক্ষশূলমক্ষরং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||২||
ভাবার্থঃ- যিনি কোটি সুৰ্য্য প্ৰতীকাশ, যিনি সংসার
সাগরের কর্ণধার এবং পরাৎপর, যার কণ্ঠদেশ নীলবর্ণে রঞ্জিত, যিনি বাঞ্ছাকল্পতরু ও ত্ৰিলোচন,
যিনি কালসংহারকারী মহাকাল এবং পদ্মপলাশলোচন, যিনি অক্ষমালা ও শূল ধারণ করেন এবং যিনি
সনাতন, কাশীপুরীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে আমি ভজনা করি ||২||
শূলটঙ্কপাশদণ্ডপাণিমাদিকারণং
শ্যামকায়মাদিদেবমক্ষরং নিরাময়ম্ ।
ভীমবিক্রমং প্রভুং বিচিত্রতাণ্ডবপ্রিয়ং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৩||
ভাবার্থ - শূল, টঙ্ক (পাষাণভেদী অস্ত্ৰ বিশেষ),
নাগপাশ ও দণ্ড যাঁর হস্তে, যিনি এই জগতের আদি কারণ, যাঁহার দেহ শ্যামবৰ্ণ, যিনি আদি
দেব, অবিনাশী ও নিরাময়, যাঁর (অসুর-বিনাশকারী) বিক্ৰম অতি ভয়ানক, যিনি জগতের প্রভু
এবং বিচিত্র তাণ্ডবপ্রিয়, কাশিকা রাজধানীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে আমি ভজনা করি ||৩||
ভুক্তিমুক্তিদায়কং প্রশস্তচারুবিগ্রহং
ভক্তবৎসলং স্থিতং সমস্তলোকবিগ্রহম্ ।
বিনিক্বণন্মনোজ্ঞহেমকিঙ্কিণীলসৎকটিং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৪||
ভাবার্থ - যিনি ভক্তজনের ভোগ ও মোক্ষবিধান করেন,
যাঁর দেহ প্ৰশস্ত ও মনোরম, যিনি ভক্তবৎসল ও সুখাসীন, এই ত্ৰিভুবন যার মূৰ্ত্তি, যার
কটিদেশ মঝুরধ্বনিবিশিষ্ট মনোহর সুবর্ণকিঙ্কিণী দ্বারা পরিশোভিত, কাশিকা রাজধানীর অধীশ্বর
সেই কালভৈরবকে ভজনা করি ||৪||
ধর্মসেতুপালকং ত্বধর্মমার্গনাশকং
কর্মপাশমোচকং সুশর্মদায়কং বিভুম্ ।
স্বর্ণবর্ণশেষপাশশোভিতাঙ্গমণ্ডলং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৫||
ভাবার্থ - যিনি (সংসার সাগরের) ধৰ্মরূপ সেতু রক্ষা
করেন, এবং অধৰ্মপথ বিনাশ করেন, যিনি ভক্তজনের কৰ্মপাশ ছেদন করেন ও বিমল আনন্দ দান করেন,
যিনি এই সংসারের প্রভু, স্বর্ণের ন্যায় মনোহর বর্ণবিশিষ্ট অনন্ত সৰ্পরূপ রজ্জুতে যাঁর
অঙ্গ সুশোভিত, কাশিকা রাজধানীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে ভজনা করি ||৫||
রত্নপাদুকাপ্রভাভিরামপাদযুগ্মকং
নিত্যমদ্বিতীয়মিষ্টদৈবতং নিরংজনম্ ।
মৃত্যুদর্পনাশনং করালদংষ্ট্রমোক্ষদং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৬||
ভাবার্থ - রত্ননিৰ্মিত পাদুকা দ্বারা যাঁর পদযুগল
বিরাজিত, যিনি সনাতন, মনোভিরাম এবং যিনি সৰ্বতোভাবে অদ্বিতীয়, যিনি ত্ৰিজগতের ইষ্টদেব
ও নিরঞ্জন (নির্লিপ্ত), যিনি ভক্তের জন্য মৃত্যুর দিগ্বিজয়জনিত দৰ্প বিনাশ করেন, কালের
করালদংষ্ট্রার মধ্য হতে যিনি ভক্তকে উদ্ধার করেন, কাশিকা রাজধানীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে
ভজনা করি ||৬||
অট্টহাসভিন্নপদ্মজাণ্ডকোশসন্ততিং
দৃষ্টিপাতনষ্টপাপজালমুগ্রশাসনম্ ।
অষ্টসিদ্ধিদায়কং কপালমালিকাধরং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৭||
ভাবার্থ - (প্ৰলয় সময়ে) যাঁর অট্টহাসে অনন্ত
ব্ৰহ্মাণ্ডকোষ চূর্ণ বিচুর্ণ হয়, যাঁর দৃষ্টিপাতমাত্ৰে পাপজাল ভস্মীভূত হয়, যাঁর
(দেবাসুর শিরোধাৰ্য্য) শাসন নিতান্ত উগ্র, যিনি সাধকগণকে অষ্টসিদ্ধি দান করেন, এবং
যাঁর গলদেশ নরকপাল মালায় অলঙ্কৃত ; কাশিকাপুরীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে ভজনা করি
||৭||
ভূতসঙ্ঘনায়কং বিশালকীর্তিদায়কং
কাশিবাসলোকপুণ্যপাপশোধকং বিভুম্ ।
নীতিমার্গকোবিদং পুরাতনং জগৎপতিং
কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ||৮||
ভাবার্থ - যিনি (প্রমথ প্রভৃতি) ভূতগণের (জীব সমূহের)
নায়ক, যিনি কীৰ্তিলিপ্সু, জনগনকে কৰ্মানুযায়ী অসাধারণ কীৰ্ত্তি দান করেন, যাঁর প্ৰসাদে
কাশীবাসিজনগণের পুণ্যপ্ৰভাবে পাপরাশি দূরীভূত হয়, যিনি জগতের বিভু এবং নীতিপথে অভিজ্ঞ,
যিনি (সনাতন বলে) পুরাতন এবং জগৎপতি; কাশিকাপুরীর অধীশ্বর সেই কালভৈরবকে ভজনা করি
||৮||
॥ ফল শ্রুতি ॥
কালভৈরবাষ্টকং পঠন্তি যে মনোহরং
জ্ঞানমুক্তিসাধনং বিচিত্রপুণ্যবর্ধনম্ ।
শোকমোহদৈন্যলোভকোপতাপনাশনং
প্রয়ান্তি কালভৈরবাংঘ্রিসন্নিধিং নরা ধ্রুবম্
||৯||
ভাবার্থ - যাঁরা বিচিত্র পুণ্যবর্দ্ধন, জ্ঞান ও
মুক্তিসাধন, শোক, মোহ, দৈন্য, লোভ, কোপ ও তাপনাশক এই “কালভৈরবাষ্টক’ পাঠ করেন, তাঁরা
নিশ্চয় শ্ৰীকালভৈরবের পদপ্রান্তে উপনীত হন ||৯||
|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দ
ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ শ্রী কালভৈরবাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ||
ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্কর ভগবৎ বিরচিত কালভৈরবা অষ্টক স্তোত্র সমাপ্ত।
..........................................................................
শ্রীশুভ চৌধুরী
ডিসেম্বর ২০, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।
Thursday, 19 December 2019
ব্রহ্মবিন্দু শ্রুতিস্থ জলমধ্যগত সূর্য্যাদি প্রতিবিম্ববৎ উপমাবলে আত্মার নির্বিশেষতা প্রতিপাদনঃ-
Wednesday, 18 December 2019
শ্রীভগবানের 'জনার্দন' নাম মাহাত্ম্যঃ-
Tuesday, 17 December 2019
'পঞ্চীকরণ সূত্রম্' (১-৮)
অনন্ত শ্রীমৎ শঙ্কর ভগবৎপূজ্যপাদ্ বিরচিত-
সূত্রম্- অব্যক্তাৎ মহৎ।।৪
ভাবার্থঃ-অব্যাকৃতা প্রকৃতি হতে মহৎতত্ত্বের উদ্ভব হয়। ৪
সূত্রম্- মহতোহহংকারঃ।। ৫
ভাবার্থঃ-মহৎ হতে অহংকারের উৎপত্তি। ৫
সূত্রম্- অহংকারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণি।।৬
ভাবার্থঃ-অহংকার হতে পঞ্চ তন্মাত্র।৬
সূত্রম্- পঞ্চতন্মাত্রেভ্যঃ পঞ্চমহাভূতানি।।৭
ভাবার্থঃ-পঞ্চ তম্মাত্র হতে পঞ্চ স্থূল ভূতের উৎপত্তি হয়।৭
সূত্রম্- পঞ্চমহাভূতেভ্যঃ অখিলং জগৎ।।৮
ভাবার্থঃ-পঞ্চীকৃত পঞ্চ মহাভূত সকল হতে অখিল জগৎ উৎপত্তি হয়।।৮
ভগবান্ শঙ্করাচার্যের শিষ্য শ্রীমৎ সুরেশ্বরাচার্যের বার্তিক- এই ভাবে ব্রহ্মের প্রপঞ্চ-উপাদানত্ব (উপাদান কারণত্ব) প্রতিপাদন করে, এখন তাঁতে জগতের অধ্যারোপ দেখাবার জন্য তা হতে সৃষ্টি - বিবরণ বলছেন-
সেই অব্যক্তা প্রকৃতি হতে (কর্ণেন্দ্রিয়ের শব্দোৎপাদক সর্বাপকৃষ্ট শব্দ-স্পন্দ-কণারূপ) শব্দতন্মাত্ররূপ আকাশ উৎপন্ন হয়েছে, তা হতে (ত্বগেন্দ্রিয়ের স্পর্শোৎপাদক সর্বাপকৃষ্ট স্পর্শ-স্পন্দ-কণারূপ) স্পর্শতন্মাত্রাত্মক বায়ু,তা হতে (চক্ষুরিন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপোৎপাদক সর্বাপকৃষ্ট রূপ-স্পন্দ-কণারূপ) রূপতন্মাত্রাত্মক তেজের উৎপত্তি হয়েছে।।৩।।
বার্তিক- সেই তেজঃ হতে ( রসনায় রসোৎপাদক রস- স্পন্দ-কণারূপ ) রসাত্মিকা আপ (জল) এবং সেই জল-সমূহ হতে (নাসিকায় গন্ধোৎপাদক গন্ধ-স্পন্দ-কণারূপ) গন্ধতন্মাত্র-গুণবিশিষ্ট মহীর উৎপত্তি হয়। আকাশের একটি মাত্র অসাধারণ গুণ শব্দ অর্থাৎ কর্ণেন্দ্রিয়-গ্রাহ্য ধ্বনির উৎপাদক সর্বাপকৃষ্ট স্পন্দ-কণা।।৪।।
পূর্বোক্তরূপে (অস্তিত্ব, অনিত্যত্ব), শব্দ, স্পর্শ, (সাধারণ) ও রূপ (বিশেষ) গুণহেতু তেজের তিনটি গুণ। (মতান্তরে রসাকর্ষণ, ঊর্ধ্ব গতি, বেগ এই গুণত্রয় বায়ু হতে প্রাপ্ত সাধারণ গুণও তেজের আছে)। তারপর (অস্তিত্ব, অনিত্যত্ব) শব্দ, স্পর্শ, রূপ (সাধারণ) ও রস (অসাধারণ) গুণহেতু আপের চারটি গুণ। (মতান্তরে দ্রবত্ব, স্নেহত্ব, স্যন্দনত্বও জলের বিশেষ গুণ )।।৫।।
এবং পূর্বোক্তরূপে (অস্তিত্ব, অনিত্যত্ব) শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস (সাধারণ) এবং গন্ধ (বিশেষ) গুণহেতু মহী-ভূত পঞ্চগুণ-বিশিষ্ট। (মতান্তরে কঠিনত্ব, ভস্মাবশেষত্ব ক্ষিতির অপর দুটি বিশেষ গুণ)। এই (মহদব্রহ্মাখ্য, যাতে সাক্ষিচৈতন্য প্রতিবিম্বরূপ গর্ভাধান করে থাকেন) পঞ্চ মূল অপঞ্চীকৃত ভূতে অভিমানহেতু চিদাভাসরূপ সূত্রাত্মা (প্রতিবিম্ববাদীদের চিৎপ্রতিবিম্ব) সম্ভূত হলেন; অর্থাৎ মহত্তত্ত্বাভিমানী, ব্যষ্টি-সমষ্টি লিঙ্গ যাঁর সূক্ষ্মশরীর, সর্ব ব্যষ্টি-লিঙ্গশরীরে ব্যাপ্ত বলে যিনি সর্বাত্মক এবং হিরণ্যোজ্জ্বল পঞ্চীকৃত স্থূল সৃষ্টির যিনি গর্ভস্বরূপ অথবা হিরণ্যোজ্জ্বল সত্ত্ব-প্রধান মহদ্-ব্রহ্মাখ্য প্রকৃতি যাঁর গর্ভস্থান, তাঁর উৎপত্তি হলো।।৬।।
সেই পঞ্চ মূল-ভূত হতে পাঁচটি স্থূলভূতের উৎপত্তি হয় এবং তা হতে ঐ সমষ্টি স্থূলভূতাভিমানী বিরাট্-পুরুষ উৎপন্ন হন। পন্ডিতগণকর্তৃক পঞ্চীকৃত ভূত সকলই স্থূলভূত বলে কথিত হয়।।৭।।........
Wednesday, 11 December 2019
ব্রাহ্মীশ্রী প্রাপ্তির ছয়টি উপায়ঃ-
Friday, 6 December 2019
শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রে দ্বৈতপ্রপঞ্চ নিষেধের দ্বারা উপদিষ্ট হওয়ায় ব্রহ্ম নির্বিশেষঃ-
শ্রুতি বলিতেছেন ব্রহ্ম চৈতন্যমাত্র, অন্য বিশেষ রূপরহিত এবং নির্বিশেষ, যথাঃ- 'স যথা সৈন্ধবঘনোনন্তরোবাহ্যঃ কৃৎস্নো রসঘন এবৈবং বা অরেযমাত্মানন্তরোবাহ্যঃ কৃৎস্নঃ প্রজ্ঞানঘন এব'-(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ৪।৫।১৩)
'সৈন্ধবঘন অর্থাৎ লবণপিণ্ড যেমন অন্তরশূন্য ও বাহ্যশূন্য অর্থাৎ বাহিরে ও ভিতরে সর্ব্বত্রই অন্য রসবর্জ্জিত, সমগ্রভাবে রসঘনই অর্থাৎ লবণৈকরসই; এইরূপ প্রিয়ে, এই আত্মা অন্তর্বহির্ভেদশূন্য সমগ্রভাবে চৈতন্যমাত্রস্বরূপই।'
কিন্তু সবিশেষ লবণপিণ্ড দৃষ্টান্তরূপে গৃহীত হওয়ায় দার্ষ্টান্তিক ব্রহ্মও সবিশেষ হইবেন। তদুত্তরে বলিতেছেন— ইহাই কথিত হইতেছে-এই আত্মার ভিতরে ও বাহিরে চৈতন্য হইতে ভিন্ন কোনরূপ নাই, একমাত্র চৈতন্যই কিন্তু ইঁহার নিরন্তর নিরবচ্ছিন্ন স্বরূপ। যেমন লবণ পিণ্ডের বাহিরে ও ভিতরে লবণরসই নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্ত্তমান থাকে, অন্য রস থাকে না, সেইপ্রকারই; ইহাই ভাব। আর নির্বিশেষ হওয়ায় অনাত্মরূপের প্রতিষেধদ্বারাই শ্রুতি ব্রহ্মকে প্রদর্শন করিতেছেন, যথাঃ-
'অথাত আদেশো
নেতি নেতি'-(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ২।৩।৬)
'অনন্তর সত্যের স্বরূপ নির্দ্ধারণের পর, যেহেতু সত্যের সত্যব্রহ্ম অবশিষ্ট আছেন এইহেতু তাঁহার স্বরূপ নির্দ্ধারণের জন্য নেতি নেতি অর্থাৎ ইহা নহে ইহা নহে-ইহাই নির্দ্দেশ।'
'অন্যদেব তদ্বিদিতাদথো
অবিদিতাদধি'-(কেন উপনিষদ্ ১।৩)
'তিনি জ্ঞাতবস্তু হইতে অবশ্যই ভিন্ন, আবার অজ্ঞাতবস্তু হইতেও ভিন্ন।'
'যতো বাচো
নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ'-(তৈত্তিরীয় উপনিষদ্ ২।৪।১)
'যাঁহাকে প্রাপ্ত না হইয়া মনের সহিত বাগিন্দ্রিয় যাঁহা হইতে ফিরিয়া আসে', ইত্যাদি এইসকল শ্রুতি।
আবার বাষ্কলি কর্ত্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া বাধ্ব অবচনের দ্বারাই অর্থাৎ কিছু না বলিয়াই ব্রহ্মবিষয়ে বলিয়াছিলেন ইহা শ্রুতিতে বর্ণিত হইতেছে, যথা-'তিনি অর্থাৎ বাষ্কলি বলিয়াছিলেন-'হে ভগবান, ব্রহ্মবিষয়ে উপদেশ করুন, তিনি অর্থাৎ বাধ্ব নিরুত্তর ছিলেন, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বার জিজ্ঞাসিত হইলে বাধ্ব বাষ্কলিকে বলিয়াছিলেন-আমি বলিতেছি, তুমি কিন্তু বুঝিতে পারিতেছ না, এই আত্মা উপশান্ত অর্থাৎ দ্বৈতভাববিবর্জ্জিত' ইত্যাদি। এইপ্রকারে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতে বর্ণিত আছে—
'জ্ঞেয়ং যত্তত্প্রবক্ষ্যামি যজ্জ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে৷ অনাদিমত্পরং ব্রহ্ম ন সত্তন্নাসদুচ্যতে'-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৩।১২)
'যাহা জ্ঞেয়, তাহা তোমাকে বলিব, যাঁহাকে জানিয়া অমৃতত্ব লব্ধ হয়। তাহা এই অনাদি ও মৎপর অর্থাৎ আমা হইতে শ্রেষ্ঠ, আমার নির্বিশেষস্বরূপ ব্রহ্ম সদ্ রূপে অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যরূপে কথিত হন না, অসদ্ রূপে কথিত হন না।' ইত্যাদি এইসকল স্মৃতিশাস্ত্রেও অনাত্মরূপের প্রতিষেধ দ্বারাই ব্রহ্ম উপদিষ্ট হইতেছেন'।
এইরূপে
বিশ্বরূপধারী নারায়ণ নারদকে বলিয়াছিলেন—
'মায়া হ্যেষা
ময়া সৃষ্টা যন্মাং পশ্যসি নারদ ৷ সর্বভূতগুণৈর্যুক্তং নৈবং মাং
জ্ঞাতুমর্হসি।'
-(মহাভারত, শান্তিপর্ব্ব, ৩৩৯।৪৫-৪৬)
'হে নারদ, সর্ব্বভূতের গুণের দ্বারা অর্থাৎ জনকত্ব ও পালকত্বাদিরূপ সকল প্রাণীর গুণের দ্বারা, অথবা পৃথিব্যাদি ভূতের গুণ দিব্য গন্ধাদি দ্বারা যুক্ত এই যে আমাকে দর্শন করিতেছ, ইহা মৎকর্ত্তৃক সৃষ্টা অর্থাৎ অস্মদধিষ্ঠানে অভিব্যক্তা মায়া, এই প্রকারে তুমি আমার যথার্থস্বরূপ জানিতে পারিবে না, কারণ আমি বস্তুতঃ দ্বৈতাতীত।' ইত্যাদি স্মৃতিশাস্ত্রে বর্ণিত হইতেছে।....
তথ্যসূত্রঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্যের শারীরক-মীমাংসা ভাষ্য। (ব্রহ্মসূত্র ৩/২/১৬, ১৭ শাঙ্করভাষ্য দ্রষ্টব্য)
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ডিসেম্বর
৬, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।
আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্
খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...

-
"মোহমুদগর" ও ইহার ভাবার্থঃ- আচার্য্য শঙ্কর ভগবৎপাদের 'মোহমুদগর' রচনাটি একটি মোহনাশক জ্ঞানবৈরাগ্যমূলক রচনা। ...
-
" শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ " ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ একটি কৃষ্ণভক্তিমূলক স্তোত্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু...
-
কলিযুগে ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্মের পূনর্জাগরণের অগ্রপুরুষ জগৎগুরু ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য। কলিযুগের প্রারম্ভে বেদান্তবেদ্য, সচ্চিৎ-সুখস্...
-
ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ও ইহার বঙ্গানুবাদঃ- ॥ শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ॥ দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে ত...
-
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় স্তোত্রগুলির একটি হইল শিবপঞ্চাক্ষরস্তোত্র। ' নমঃ শিবায় ' এই পঞ্চাক্ষর মহ...
-
"বেদসারশিবস্তোত্রম্" ও ইহার ভাবার্থঃ- শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের এই প্রখ্যাত স্তোত্রম্ ভক্তদের নিত্যপাঠ্য। আচার্য্য এই...
-
শাঙ্করভাষ্যম্ উপক্ৰমণিকা ‘ মঙ্গলাচরণম্ ’ ॐ নারায়ণঃ পরোঽব্যক্তাত্ অণ্ডমব্যক্তসম্ভবম্ । অণ্ডস্যান্তস্ত্বিমে লোকাঃ সপ্তদ্বীপা চ ...
-
“ সাংখ্যযোগ ” সঞ্জয় উবাচ। তন্তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্। বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ || ১ || সঞ্জয় বলিলেন -...
-
পারমার্থিক দৃষ্টিতে জগৎ মিথ্যা হওয়ায় সেই কল্পিত জগতের কর্তৃত্ব ব্রহ্মে পরমার্থতঃ না থাকিলেও , ব্যবহারিক দৃষ্টিতে জগতের জন...
-
শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের ভবান্যষ্টকম্ একটি সংসার মোহনাশক শাক্ত সাধনামূলক রচনা। আচার্য্য বলছেন-কেহ পিতা নয়, কেহ মাতা নয়, কেহ বন্ধু নয়, ...