Saturday, 30 May 2020
সেই ব্রহ্ম জ্ঞাত বস্তু হইতে ভিন্নই, আবার অজ্ঞাত বস্তু হইতেও ভিন্নঃ-
Friday, 29 May 2020
ব্রহ্মই জগতের অভিন্ন নিমিত্তোপাদানঃ-
মায়াধীশ পরমেশ্বরই জগতের নিমিত্তকারণ। ঈশ্বরের অধ্যক্ষতায়ই মায়ার বিকাশ হইয়া থাকে এবং এই মায়ার সহায়তায় তিনি চরাচর জগতের সৃষ্টি করিয়া থাকেন। নির্বিশেষ পরব্রহ্ম মায়ার এবং মায়িক নাম-রূপ প্রপঞ্চের একমাত্র অধিষ্ঠান বা আশ্রয়। এক ব্রহ্মই বহু হইয়াছেন, বহু নামে বহু রূপে প্রতিভাত হইতেছেন। তাঁহার এই ভাতি বা প্রকাশের দ্বারা তিনি কিছুমাত্র রূপান্তরিত বা বিকৃত হন নাই, সম্পূর্ণ অবিকারী ভাবেই অজ্ঞানলীলার ভিত্তিরূপে বিরাজ করিতেছেন। ব্রহ্ম-ভিত্তি সদা বিদ্যমান আছে বলিয়াই মায়ার এরূপ বিচিত্র খেলা চলিতেছে এবং মায়িক জগৎ সত্য বলিয়া বোধ হইতেছে। এই অবিকারী কূটস্থ ব্রহ্মই জড় জগতের অপরিণামী উপাদান বা বিবর্ত কারণ। এই অপরিণামী উপাদানকারণকে আশ্রয় করিয়া অনির্বচনীয় অবিদ্যা বিবিধ অনির্বচনীয় নামরূপে পরিণত হইতেছে, সুতরাং অবিদ্যা জড়জগতের পরিণামী উপাদান।
ব্রহ্ম
কেবল জগতের নিমিত্তকারণই নহেন। তিনি নিমিত্তকারণও বটেন,
উপাদানকারণও বটেন। ইহাই ভগবান্ সূত্রকার
এবং ভাষ্যকার স্পষ্টবাক্যে আমাদিগকে বলিয়া দিয়াছেন। যথা—'প্রকৃতিশ্চ প্রতিজ্ঞাদৃষ্টান্তানুপরোধাৎ।'-(ব্রহ্মসূত্র-১.৪.২৩)
প্রকৃতিশ্চ উপাদানকারণঞ্চ ব্রহ্ম অভ্যুপগন্তব্যং নিমিত্তকারণঞ্চ। ন কেবলং নিমিত্তকারণমেব
(ব্রহ্মসূত্র, শঙ্করভাষ্য-১।৪।২৩)। কারণ যেহেতু
প্রতিজ্ঞা ও দৃষ্টান্তের সঙ্কোচ
হয় না। ভাষ্যকার ভগবান্
শঙ্করাচার্য তাঁহার উক্ত সিদ্ধান্তের অনুকূলে
শ্রুতিকেই প্রধান অবলম্বন হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। প্রতিজ্ঞা এই প্রকার—'উত
তমাদেশমপ্রাক্ষ্যো যেনাশ্রুতং শ্রুতং ভবত্যমতং মতমবিজ্ঞাতং বিজ্ঞাতম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৬।১।২) বেদান্তে এক ব্রহ্মকে জানিলেই
বিশ্বের তাবৎ বস্তু জানা
যায় বলিয়া (এক-বিজ্ঞানে সর্ব-বিজ্ঞান-প্ৰতিজ্ঞা) যে সিদ্ধান্ত করা
হইয়াছে, ঐরূপ সিদ্ধান্ত ব্রহ্মকে
উপাদানকারণরূপে গ্রহণ করিলেই সম্ভবপর হয়, নতুবা হয়
না। কেননা, এক উপাদানকে জানিলেই
উপাদানের বিবিধ বিকারকে জানা যায়। কারণ,
বিকারগুলি উপাদানেরই অবস্থান্তরমাত্র।
আর
দৃষ্টান্ত এই প্রকার—'যথা
সোম্যৈকেন মৃৎপিণ্ডেন সর্বং মৃন্ময়ং বিজ্ঞাতং স্যাদ্বাচারম্ভণং বিকারো নামধেয়ং মৃত্তিকেত্যেব সত্যম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৬।১।৪)
অর্থাৎ
হে সোম্য, যেমন একটী মৃৎপিণ্ডের
সমস্ত মৃন্ময় বস্তু বিজ্ঞাত হয়, কারণ যা
বিকার (—কার্য্যবস্তু), তা বাগবলম্বনে অবস্থিত
নাম মাত্র। কেবল মৃত্তিকাই সত্য",
ইত্যাদি দৃষ্টান্তও উপাদানকারণ বিষয়েই পঠিত হইতেছে।
কিন্তু
কোন হেতুবশতঃ আত্মার নিমিত্তকারণতা ও উপাদানকারণতা সিদ্ধ
হয়? ভগবান সূত্রকার বলিতেছেন—'অভিধ্যোপদেশাচ্চ৷'-(ব্রহ্মসূত্র ১.৪.২৪)
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য শারীরকভাষ্যে বলিতেছেন—অভিধ্যানের অর্থাৎ ভাবী সৃষ্টিবিষয়ক সঙ্কল্পের
উপদেশও আত্মার নিমিত্তকারণতা ও উপাদানকারণতা জ্ঞাপন
করিতেছে, যথা—
'সোকাময়ত বহু
স্যাং প্রজায়েয়'-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ ২।৬)
অর্থাৎ
তিনি কামনা করিয়াছিলেন, "আমি বহু হইব,
প্রকৃষ্টরূপে উৎপন্ন হইব", ইত্যাদি শ্রুতি। এবং
'তদৈক্ষত বহু
স্যাং প্রজায়েয়'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩)
অর্থাৎ
তাহা (-সেই সৎপদার্থ) ঈক্ষণ
করিয়াছিলেন,"আমি বহু হইব,
প্রকৃষ্টরূপে উৎপন্ন হইব", ইত্যাদি শ্রুতি। সেইস্থলে অভিধ্যানপূর্ব্বক স্বাধীনভাবে প্রবৃত্তি বর্ণিত হওয়ায় ব্রহ্ম নিমিত্তকারণ, ইহা অবগত হওয়া
যাইতেছে। "বহু হইব" এইপ্রকার
যে বহু হইবার সঙ্কল্প,
তাহা প্রত্যাগাত্মাকে বিষয় করে বলিয়া
ব্রহ্ম উপাদানকারণ, ইহা অবগত হওয়া
যাইতেছে।
'যতো বা
ইমানি ভূতানি জায়ন্তে' (তৈত্তিরীয় উপনিষদ-৩।১) ইত্যাদি তৈত্তিরীয়
শ্রুতিমূলে 'জন্মাদ্যস্য যতঃ' (ব্রহ্মসূত্র ১।১।২) এই সূত্রে যে
ব্রহ্ম হইতে জগতের উৎপত্তি,
স্থিতি, লয় বর্ণিত হইয়াছে,
সেখানেও ‘যতঃ' এই পঞ্চমী
বিভক্তি ‘জনিকর্তুঃ প্রকৃতিঃ' (পাণিনি সূত্র ১।৪।৩০) এই পাণিনীয় সূত্র
দ্বারা বিহিত হওয়ায়, 'যতঃ’ শব্দে (শ্ৰুতিস্থ
‘যৎ’, শব্দে) প্রকৃতি বা উপাদানকেই বুঝাইতেছে।
ব্রহ্মকে যে জগদ্ যোনি
বলা হইয়াছে তাহা দ্বারাও ব্রহ্ম
উপাদানকারণ এই সিদ্ধান্তই সমর্থিত
হয়।
অবশ্য
'তদৈক্ষত বহুস্যাং প্রজায়েয়'(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৬।২।৩), 'স ঈক্ষত লোকান্নু
সৃজা ইতি স ইমান্
লোকানসৃজত' (ঐতরেয় উপনিষদ্-১।১।১) এই সকল শ্রুতিবাক্যে
জগতস্রষ্টা পরমেশ্বর প্রথমতঃ দেখিলেন, পরে সৃষ্টি করিলেন,
এইরূপ যে পরমেশ্বরের বীক্ষণ
অর্থাৎ দর্শনপূর্বক সৃষ্টি করার কথা বলা
হইয়াছে, তাহা দ্বারা পরমেশ্বর
জগতের নিমিত্তকারণ ইহা মনে আসাই
স্বাভাবিক। কারণ দেখা যায়
যে, যিনি কাজ করেন,
সেই কৰ্তাই প্রথমতঃ দেখিয়া শুনিয়া, ভাবিয়া চিন্তিয়া কাজটি করেন। ঐ কর্তা কার্যের
নিমিত্তকারণ, উপাদানকারণ নহেন। জগৎসৃষ্টির ব্যাপারেও প্রথমতঃ এইরূপ বীক্ষণ বা দর্শনের কথা
আছে বলিয়া জগৎকর্তা পরমেশ্বরও কুম্ভকার প্রভৃতির ন্যায় নিমিত্তকারণই হইয়া দাঁড়ান। নিমিত্ত ও উপাদান কারণ
অভিন্ন নহে, বিভিন্ন এইরূপই
দেখা যায়। মাটি ঘটের উপাদানকারণ,
কুম্ভকার প্রভৃতি নিমিত্তকারণ। এইরূপে নিমিত্তকারণ এবং উপাদানকারণের ভেদ
যখন প্রত্যক্ষদৃষ্ট, তখন একই ব্রহ্মকে
নিমিত্ত ও উপাদান এই
উভয়বিধ কারণ বলা যায়
কিরূপে? ইহার উত্তরে অদ্বৈতবেদান্তী
বলেন যে, প্রত্যক্ষদৃষ্ট ঘটাদি
সৃষ্টিতে নিমিত্তকারণ ও উপাদানকারণ বিভিন্ন
হইলেও বিশ্বসৃষ্টির পূর্বে যখন এক বৈ
আর দ্বিতীয় কিছু ছিল না,
তখন সেই এককেই বিশ্বসৃষ্টির
উপাদানও বলিতে হইবে, নিমিত্তও বলিতে হইবে। এই দৃষ্টিতেই অদ্বৈতবেদান্তে
ব্রহ্মকে নিমিত্ত এবং উপাদান উভয়বিধ
কারণ বলা হইয়া থাকে।
......................................................................
বিঃদ্রঃ-
এই বিষয়ে লিখা চলিবে।
তথ্যসূত্রঃ-
১.
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত শারীরক মীমাংসা ভাষ্য।
২.
বেদান্তদর্শন অদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
আচার্য্য ও গুরু ভগবান সদৃশ, ইহা শাস্ত্রসিদ্ধঃ-
Monday, 18 May 2020
।।কৌপীনপঞ্চকম্।।
Saturday, 16 May 2020
অদ্বৈতবেদান্তে জগৎঃ-
গৌড়পাদাচার্য্য মাণ্ডুক্যকারিকায় বলিতেছেন-
অনিশ্চিতা য়থা রজ্জুরন্ধকারে বিকল্পিতা ।
সর্পধারাদিভির্ভাবৈস্তদ্বদাত্মা বিকল্পিতঃ ॥- (মাণ্ডুক্যকারিকা-২।১৭)
অর্থাৎ অজ্ঞাত রজ্জু যেমন সর্পরূপে প্রতীতির হেতু, অজ্ঞাত নির্বিশেষ ব্রহ্মই তদ্রূপ জগৎরূপে প্রতীতির হেতু।রজ্জুতে যেমন পরমার্থতঃ সর্প কোন কালেই থাকে না তদ্রূপ ব্রহ্মরূপ অধিষ্ঠানে পরমার্থতঃ এই জগৎ কোন কালেই নাই। ব্রহ্মসূত্রের ২।১।১৪ এর ভাষ্যে ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য তাহা স্পষ্ট করিয়াছেন-"পারমার্থিক দৃষ্টিতে শুদ্ধ চৈতন্যে ঈশ্বরত্ব ও জীবত্ব প্রভৃতি দ্বৈতবুদ্ধি উপপন্ন হয় না, সেই বিষয়ে শ্রুতি প্রমাণ-
'যত্র নান্যত্পশ্যতি নান্যচ্ছৃণোতি নান্যদ্বিজানাতি স
ভূমা' -(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৭/২৪/১)।
অর্থাৎ 'যেখানে অপর কিছু দর্শন করে না, অপর কিছু শ্রবণ
করে না, অপর কিছু জানিতে পারে না, তাহাই ভূমা।'
'যত্র ত্বস্য সর্বমাত্মৈবাভূত্তত্কেন কং পশ্যেৎ'-(বৃহদারণ্যক
উপনিষৎ-৪/৫/১৫)।
অর্থাৎ 'কিন্তু সমস্তই যখন ইহার আত্মাই হইয়া গেল, তখন
কাহার দ্বারা কাহাকে দর্শন করিবে?'
ইত্যাদি শ্রুতিবাক্যের দ্বারাও তাহাই বর্ণিত হইতেছে। এই
প্রকারে সকল উপনিষদই পরমার্থ অবস্থাতে সকলপ্রকার ব্যবহারের অভাবের কথা বলিতেছেন। সেইরূপেই
ঈশ্বর ভগবদ্গীতাতে বলিতেছেন-
'ন কর্তৃত্বং ন কর্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভুঃ৷ ন কর্মফলসংযোগং
স্বভাবস্তু প্রবর্ততে' 'নাদত্তে কস্যচিত্পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভুঃ৷ অজ্ঞানেনাবৃতং জ্ঞানং
তেন মুহ্যন্তি জন্তবঃ'।-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- ৫।১৪,১৫)
অর্থাৎ 'কারণ প্রভু আত্মা মনুষ্যের কর্তৃত্ব, কর্ম ও কর্মফলপ্রাপ্তি
সৃষ্টি করেন না; কিন্তু স্বভাব অর্থাৎ নিজ বা পরমাত্মার যে সদসদাত্মিকা ভাব অর্থাৎ
অবিদ্যালক্ষণা মায়াশক্তি কর্তৃত্বাদিরূপে প্রবর্তিত হয়। অর্থাৎ অবিদ্যাপ্রভাবে কর্তৃত্ব
ও কারয়িতৃত্বাদি আত্মাতে আরোপিত হয় । পরমার্থতঃ বিভু আত্মা কাহারও পাপ বা পূজা জপহোমাদিরূপ
পুণ্যও গ্রহণ করেন না । পূর্বোক্ত অবিদ্যা দ্বারা ‘আমি কর্তৃত্ব ও কারয়িতৃত্বাদিরহিত’
- এই বিবেকজ্ঞান আত্মজ্ঞান দ্বারা আবৃত বলিয়া প্রাণিগণ মোহগ্রস্থ হয়, অর্থাৎ মোহবশে
‘আমি করি ও করাই’, ‘আমি ভোগ করি ও করাই’ - ইত্যাদি ভ্রম করিয়া থাকে।'এইপ্রকারে পারমার্থিক
অবস্থাতে শাসক (ঈশ্বর) ও শাসিত (জীব) ইত্যাদি ব্যবহারের অভাব প্রদর্শিত হইতেছে।
জগৎ যদি চিদাত্মা হইতে ভিন্ন নহে তবে উহা ভিন্নরূপে প্রতিভাত হয় কেন? এই শঙ্কার উত্তরে বলিতেছেন-"আত্মবিষয়ক অজ্ঞানবশতই জগৎ প্রতিভাত হইয়া থাকে, অধিষ্ঠানভূত আত্মার জ্ঞান হইলে আর আত্মা হইতে পৃথকরূপে কোন জগৎ দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন রজ্জুস্বরূপের অজ্ঞানবশতই ভ্রান্তিসর্প দেখা যায়, রজ্জুর জ্ঞান হইলে আর ঐ সর্পপ্রতীতি হয় না।" -(অষ্টাবক্র গীতা, শিষ্যোক্তমাত্মানুভবোল্লাসঃ, ৭)
অদ্বৈত বেদান্তে জগতের উৎপত্ত্যাদিবোধক শ্রুতি বাক্যসকল
নিষেধ্য সমর্পণের দ্বারা নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মজ্ঞানোৎপত্তিতে সহকারিমাত্র। আচার্য্য শঙ্কর
ব্রহ্মসূত্রের (৪।৩।১৪) ভাষ্যে তাহাই স্বীকার করিয়াছেন-
"জগতের উৎপত্ত্যাদিবোধক শ্রুতি বাক্যসকলের অন্যার্থতা
অর্থাৎ প্রয়োজন সম্পাদকতা প্রত্যক্ষভাবে সম্যগ্ অবগত হওয়া যায়। যেমন দেখ-
'তত্রৈতচ্ছুঙ্গমুত্পতিতং সোম্য বিজানীহি নেদমমূলং ভবিষ্যতি'-(ছান্দোগ্য
উপনিষৎ-৬/৮/৩)।
'এই প্রকার হইলে হে সৌম্য, এই দেহরূপ অঙ্কুরকে রসাদিভাবে
পরিণত অন্ন হইতে উদ্গত বলিয়া জানিবে, ইহা অমূল অর্থাৎ কারণরহিত হইবে না।' এইপ্রকারে
দেহাদিরূপ বিশেষের উল্লেখ করিয়া উদর্কে (পরে, ছান্দোগ্য উপনিদ ৮।৬।৪ বাক্যে) জগতের
কারণস্বরূপ এক সদ্বস্তুরই বিজ্ঞেয়তা শ্রুতি প্রদর্শন করিতেছন।
আর 'যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে৷
যেন জাতানি জীবন্তি৷ যত্প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি৷ তদ্বিজিজ্ঞাসস্ব৷ তদ্ব্রহ্মেতি৷'-(তৈত্তিরীয়
উপনিষৎ-৩।১।১)
অর্থাৎ যাঁহা হইতে এই ব্রহ্মাদি তৃণপর্য্যন্ত দেহবর্গ উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন হইয়া প্রাণধারণ করে অর্থাৎ বর্ধিত হয়, আবার বিনাশকালে যাঁহাকে প্রাপ্ত হয়, যাহাতে প্রবেশ করে অর্থাৎ অভেদ হইয়া যায় অর্থাৎ উৎপত্তি,স্থিতি ও লয়কালে দেহবর্গ যৎসত্তা ত্যাগ করে না, এইরূপ যে ব্রহ্মের লক্ষণ, সেই ব্রহ্মকে স্পষ্ট করিয়া জান। ইত্যদি শ্রুতি হইতেও নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মেরই জ্ঞেয়তা অবগত হওয়া যায়।
ইহাই নির্গুণব্রহ্মবিদ্যা অনুশীলনকারীর বিবর্ত্তবাদাবলম্বী
পারমার্থিক দৃষ্টি। আবার ব্যাবহারিক দৃষ্টিতে কিন্তু মায়ারূপ উপাধিযুক্ত সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান্
পরমেশ্বর জগতের অভিন্ন নিমিত্তোপাদান কারণ। ঊর্ণনাভি (মাকড়সা) শরীরের তন্তুরূপে পরিণামের
ন্যায় মায়ারূপ উপাধির পরিণামে মায়ী মহশ্বরের অভিন্ন নিমিত্তোপাদানতা সিদ্ধ হয়। ব্যবহারিক
দৃষ্টিতে অদ্বৈতবেদান্তে পরিণামবাদও অঙ্গীকৃত হয়। শঙ্করাচার্য্যে ব্রহ্মসূত্র (২।১।১৪)
ভাষ্যে তাহা স্বীকৃত-
কিন্তু ব্যবহার অবস্থাতে শ্রুতিতেও ঈশ্বরাদি ব্যবহারের
কথা বলা হয়েছে। যথা-
'এষ সর্বেশ্বর এষ ভূতাধিপতিরেষ ভূতপাল এষ সেতুর্বিধরণ
এষাং লোকানামসংভেদায়'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪/৪/২২)।
অর্থাৎ'ইনি সকলের ঈশ্বর, ইনি ভূতসকলের অধিপতি, ইনি ভূতসকলের
পালক, এই ভূরাদি লোকসকলের অসংমিশ্রণের জন্য ইনি বিধারক সেতুস্বরূপ।'
আর ভগবদ্গীতাতেও সেইরূপ ব্যবহারাবস্থাতে জীব ও ঈশ্বরাদি
ভেদব্যবহার ঈশ্বর কর্তৃক কথিত হইয়াছে- 'ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশের্জুন
তিষ্ঠতি৷ ভ্রামযন্সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢানি মায়য়া'-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- ১৮।৬১)
অর্থাৎ 'হে অর্জুন, অন্তর্যামী ঈশ্বর সর্বজীবের হৃদয়ে
অধিষ্ঠিত হইয়া সর্বভূতকে যন্ত্রারূঢ় পুত্তলিকার ন্যায় মায়া দ্বারা চালিত করিতেছেন।
'
ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণও পরমার্থ অভিপ্রায়ে 'তদনন্যত্বম্' এবং ব্যবহারিক অভিপ্রায়ে কিন্তু 'স্যাল্লোকবতৎ' সূত্রের মাধ্যমে ব্রহ্মের মহাসমূদ্রস্থানীয়তার কথা বলিতেছেন। আর কার্য্যপ্রপঞ্চকে প্রত্যাখ্যান না করিয়া সগুণ উপাসনাতে উপযোগী হইবে, এই অভিপ্রায়ে পরিণাম প্রক্রিয়াকে আশ্রয় করিয়াছেন।
Thursday, 14 May 2020
বিদ্বানের জ্ঞান দ্বারাই মোক্ষপ্রাপ্তিঃ-
Tuesday, 12 May 2020
শ্রীকৃষ্ণাষ্টকম্ঃ-
আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্
খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...

-
"মোহমুদগর" ও ইহার ভাবার্থঃ- আচার্য্য শঙ্কর ভগবৎপাদের 'মোহমুদগর' রচনাটি একটি মোহনাশক জ্ঞানবৈরাগ্যমূলক রচনা। ...
-
" শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ " ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ একটি কৃষ্ণভক্তিমূলক স্তোত্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু...
-
কলিযুগে ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্মের পূনর্জাগরণের অগ্রপুরুষ জগৎগুরু ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য। কলিযুগের প্রারম্ভে বেদান্তবেদ্য, সচ্চিৎ-সুখস্...
-
ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ও ইহার বঙ্গানুবাদঃ- ॥ শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ॥ দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে ত...
-
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় স্তোত্রগুলির একটি হইল শিবপঞ্চাক্ষরস্তোত্র। ' নমঃ শিবায় ' এই পঞ্চাক্ষর মহ...
-
"বেদসারশিবস্তোত্রম্" ও ইহার ভাবার্থঃ- শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের এই প্রখ্যাত স্তোত্রম্ ভক্তদের নিত্যপাঠ্য। আচার্য্য এই...
-
শাঙ্করভাষ্যম্ উপক্ৰমণিকা ‘ মঙ্গলাচরণম্ ’ ॐ নারায়ণঃ পরোঽব্যক্তাত্ অণ্ডমব্যক্তসম্ভবম্ । অণ্ডস্যান্তস্ত্বিমে লোকাঃ সপ্তদ্বীপা চ ...
-
“ সাংখ্যযোগ ” সঞ্জয় উবাচ। তন্তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্। বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ || ১ || সঞ্জয় বলিলেন -...
-
পারমার্থিক দৃষ্টিতে জগৎ মিথ্যা হওয়ায় সেই কল্পিত জগতের কর্তৃত্ব ব্রহ্মে পরমার্থতঃ না থাকিলেও , ব্যবহারিক দৃষ্টিতে জগতের জন...
-
শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের ভবান্যষ্টকম্ একটি সংসার মোহনাশক শাক্ত সাধনামূলক রচনা। আচার্য্য বলছেন-কেহ পিতা নয়, কেহ মাতা নয়, কেহ বন্ধু নয়, ...