আচার্য্য যে ভগবৎসদৃশ তাহা স্বয়ং শ্রুতিতেই আছে। সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদে বর্ণিত আছে-
'শ্রুতং হ্যেব মে ভগবদ্দৃশেভ্য আচার্যাদ্ধৈব বিদ্যা বিদিতা সাধিষ্ঠং প্রাপতীতি..' -(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৪।৯।৩)
অর্থাৎ (সত্যকাম)- 'ভগবৎসদৃশ আচার্য্যগণের নিকটেই আমি ইহা বিদিত আছি যে, গুরুমুখে বিজ্ঞাত বিদ্যাই কল্যাণতম হইয়া থাকে।
তাছাড়া শ্রতিতেই অন্যত্র দৃষ্ট হয় যে মহাগৃহস্থ শৌনক ভারদ্বাজ শিষ্য আচার্য্য অঙ্গিরার নিকট আত্মজ্ঞান লাভার্থ উপস্থিত হইয়া তাহাকে 'ভগবান্' বলিয়া সম্বোধন করিয়াছিলেন-
'কস্মিন্নু ভগবো বিজ্ঞাতে সর্বমিদং বিজ্ঞাতং ভবতীতি৷৷'-(অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষৎ-১।১।৩)
অর্থাৎ হে ভগবন্! কোন বিষয়টি জানিলে পরে এই যাহা কিছু সর্ববিজ্ঞেয় পদার্থকে বিশেষরূপে জ্ঞাত অর্থাৎ অবগত হওয়া যায়?
মুখ্য উপনিষদসমূহ ছাড়াও যদি আমরা অন্য উপনিষৎসমূহে দৃষ্টিপাত করি দেখিব সর্বজায়গায় গুরুকে ভগবৎসদৃশ রূপেই আখ্যায়িত করা হইয়াছে। যথা-
'গুরুরেব হরিঃ সাক্ষানান্য ইত্যব্রবীচ্ছ্রুতিঃ।'-(ব্রহ্মবিদ্যোপনিষৎ- ৩১)
অর্থাৎ গুরুই সাক্ষাৎ হরি, অন্য কেউ নয় স্বয়ং শ্রুতিই ইহা বলিয়াছেন।
'গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণুর্গুরুদেবঃ সদাচ্যুতঃ।'-(যোগশিখোপনিষৎ-৫।৫৬)
অর্থাৎ গুরুই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু, গুরুদেব সদাচ্যুত।
'গুরুরেব পরংব্রহ্ম গুরুরেব পরাগতিঃ'--(অদ্বয়তারকোপনিষৎ-১৭)
অর্থাৎ গুরু পরব্রহ্ম, গুরুই পরমগতি।
শ্রুতির পরবর্তীতে যদি আমরা স্মৃতিশাস্ত্রে দৃষ্টিপাত করি তাহলে স্বয়ং মনুস্মৃতিতেই আচার্য্যকে পরব্রহ্মের মূর্ত্তি বলা হইয়াছে-
'আচার্যো ব্রহ্মণো মূর্তিঃ'-(মনুসংহিতা-২।২২৫)
অর্থাৎ আচার্য্য বেদান্ত নামে প্রসিদ্ধ উপনিষৎমধ্যে প্রতিপাদিত পরব্রহ্ম বা পরমাত্মার মূর্তি।
স্মৃতিতে অন্যত্র দেবতা, গুরু ও ধার্মিক ঈশ্বরপদবাচ্য। গৌতমসংহিতার নবম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
'যোগক্ষেমার্থমীশ্বরমধিগচ্ছেন্নান্যমন্যত্র দেবগুরুধার্ম্মিকেভ্যঃ...'-
অর্থাৎ 'যোগক্ষেম লাভার্থ ঈশ্বরের নিকট গমন করিবে, অন্যত্র নহে। দেবতা, গুরু এবং ধার্ম্মিক ইহারাই ঈশ্বর।'
মহাভারতের অনুশাসনপর্বের বিষ্ণুসহস্রনামস্তোত্রমেও শ্রীভগবানের নামমাহাত্মে 'গুরু' শব্দটির উল্লেখ আছে। যথা-'গুরুর্গুরুতমো ধামঃ সত্যঃ সত্যপরাক্রমঃ।'-(মহাভারত, অনুশাসনপর্ব,১২৭তম অধ্যায় বিষ্ণুসহস্রনামস্তোত্রম্-৩৬)
তাছাড়া তন্ত্রপুরাণাদি শাস্ত্রের অসংখ্য স্থানে গুরুকে ভগবৎসদৃশ রূপেই অভিহিত করা হইয়াছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ বিশ্বসার তন্ত্রের গুরুস্তোত্রমে বর্ণিত আছে-
গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণুঃ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ।
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।১
শ্রীগুরুদেবই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু, গুরুই দেব মহেশ্বর, শ্রীগুরুই পরব্রহ্ম স্বরূপ; সেই শ্রীগুরুদেবকে পুনঃ পুনঃ ভক্তিভরে প্রণাম করি।
No comments:
Post a Comment