ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত 'শ্রীরামভুজঙ্গস্তোত্র' বঙ্গানুবাদ সমেত—
বিশুদ্ধং পরং সচ্চিদানন্দরূপম্
গুণাধারমাধারহীনং বরেণ্যম্ ।
মহান্তং বিভান্তং গুহান্তং গুণান্তং
সুখান্তং স্বয়ং ধাম রামং প্রপদ্যে ।।১।।
ভাবার্থ - যিনি নিখিল গুণের আধার অথচ গুণাতীত, যিনি হৃদয়গুহায় অধিষ্ঠিত অথচ নিরাধার, বিষয়সুখের পরপারে স্থিত, সচ্চিদানন্দস্বরূপ, সেই স্বপ্রকাশ, সর্ব্বকারণ বিশুদ্ধ জ্যোতিঃরূপ শ্রীরামের প্রপন্ন হচ্ছি। ১
শিবং নিত্যমেকং বিভুং তারকাখ্যং
সুখাকারমাকারশূন্যং সুমান্যম্ ।
মহেশং কলেশং সুরেশং পরেশং
নরেশং নিরীশং মহীশং প্রপদ্যে ।।২।।
ভাবার্থ - যিনি মঙ্গলময়, অদ্বিতীয় বিভু, যাঁর নাম তারকব্রহ্ম, যিনি নিরাকার, নিত্যসুখস্বরূপ, সর্ব্বকলার অধীশ্বর ও জগন্মান্য, যাঁর
প্রভু কেউ নেই, যিনি মহেশ্বর, সুরেশ্বর ও পরমেশ্বর, সেই
নরনাথ ভূপালের প্রপন্ন হচ্ছি। ২
যদাবর্ণয়ৎকর্ণমূলেঽন্তকালে
শিবো রাম রামেতি রামেতি কাশ্যাম্ ।
তদেকং পরং তারকব্রহ্মরূপং
ভজেঽহং ভজেঽহং ভজেঽহং ভজেঽহম্ ।।৩।।
ভাবার্থ - শিব কাশীতে মৃত্যুকালে জীবের কর্ণমূলে যে 'রাম রাম রাম' এই বর্ণ প্রদান
করেন, তারকব্রহ্মস্বরূপ সেই এক সর্বশ্রেষ্ঠকে আমি
ভজনা করি, আমি ভজনা করি, আমি ভজনা করি। ৩
মহারত্নপীঠে শুভে কল্পমূলে
সুখাসীনমাদিত্যকোটিপ্রকাশম্
।
সদা জানকীলক্ষ্মণোপেতমেকং
সদা রামচন্দ্রম্ ভজেঽহং ভজেঽহম্ ।।৪।।
ভাবার্থ - শুভ কল্পবৃক্ষমূলে মহারত্মময় পীঠে সুখে আসীন, সতত জানকী এবং লক্ষ্মণ সমন্বিত, কোটিসূর্য্য সমতেজা, অদ্বিতীয় রামচন্দ্রকে আমি ভজনা করি, আমি সর্ব্বদা ভজনা করি। ৪
ক্বণদ্রত্নমঞ্জীরপাদারবিন্দম্
লসন্মেখলাচারুপীতাম্বরাঢ্যম্
।
মহারত্নহারোল্লসৎকৌস্তুভাঙ্গং
নদচ্চঞ্চরীমঞ্জরীলোলমালম্ ।।৫।।
ভাবার্থ - যাঁর চরণকমলে রত্ননুপুর বাজছে, সুশোভিত-কটি-মনোহর পীতাম্বর যাঁর পরিধানে আছে, বক্ষঃস্থলে মহারত্নহার-শোভিত কৌস্তুভমণি বিরাজমান, যাঁর দোদুল্যমান মালায় কুসুমমঞ্জরী, গুঞ্জনরত ভ্রমরা শোভিত। ৫
লসচ্চন্দ্রিকাস্মেরশোণাধরাভম্
সমুদ্যৎপতঙ্গেন্দুকোটিপ্রকাশম্
।
নমদ্ব্রহ্মরুদ্রাদিকোটীররত্ন-
স্ফুরৎকান্তিনীরাজনারাধিতান্ঘ্রিম্
।।৬।।
ভাবার্থ - যাঁর অরুণ অধরের আভা, জ্যোৎস্না সদৃশ ঈষৎ হাস্য-শোভিত হয়ে বিরাজমান, যাঁর জ্যোতি উদীয়মান কোটি সূর্য ও চন্দ্রের ন্যায়,
যাঁর চরণযুগল প্রণত ব্রহ্মা ও রুদ্র প্রমুখ
দেবগণের কিরীটরত্ন-নিঃসৃত কিরণজাল-নীরাজনায় আরাধিত হচ্ছে। ৬
পুরঃ প্রাঞ্জলীনাঞ্জনেয়াদিভক্তান্
স্বচিন্মুদ্রয়া ভদ্রয়া বোধয়ন্তম্ ।
ভজেঽহং ভজেঽহং সদা রামচন্দ্রং
তদন্যং ন মন্যে ন
মন্যে ন মন্যে ।।৭।।
ভাবার্থ - যিনি সম্মুখে কৃতাঞ্জলিপুটে অবস্থিত অঞ্জনানন্দন প্রভৃতি ভক্তবৃন্দকে কল্যাণদায়িনী স্বীয়জ্ঞানমুদ্রা দ্বারা জ্ঞানোপদেশ প্রদানে তৎপর, সেই রামচন্দ্রকে আমি ভজনা করি, আমি সদা ভজনা করি। আমি তাকে ব্যতীত কাউকেও মনে আনতে চাই না, মনে আনতে চাই না, মনে আনতে চাই না। ৭
যদা মৎসমীপং কৃতান্তঃ সমেত্য
প্রচণ্ড-প্রকোপৈর্ভটৈর্ভীষয়েন্মাম্ ।
তদাবিষ্করোষি ত্বদীয়ং স্বরূপং
সদাপৎপ্রণাশং স-কোদণ্ডবাণম্ ।।৮।।
ভাবার্থ -যখন আমার কাছে কৃতান্ত (যম) এসে ক্রোধযুক্ত নিজ যোদ্ধাগণ দ্বারা আমাকে ভয় দেখাবে, তখন
সদা-বিপত্তি-ভঞ্জন ধনুর্বাণধারী তোমার মূর্তি (নিশ্চয়ই আমার সমক্ষে) প্রাদুর্ভাব করবে। ৮
নিজে মানসে মন্দিরে সন্নিধেহি
প্রসীদ প্রসীদ প্রভো রামচন্দ্র ।
স-সৌমিত্রিণা কৈকয়ী-নন্দনেন
স্বশক্ত্যানুভক্ত্যা চ সংসেব্যমান ।।৯।।
ভাবার্থ - হে প্রভো, রামচন্দ্র!
প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও। লক্ষ্মণসহ কৈকেয়ীনন্দন নিজ শক্তি আর অনুগত ভক্তিসহকারে
তোমার সেবা করছেন, এইরূপে আমার মানমন্দিরে উপস্থিত হও। ৯
স্বভক্তাগ্রগণ্যৈঃ কপীশৈর্মহীশৈ-
রনীকৈরনেকৈশ্চ রাম প্রসীদ ।
নমস্তে নমোঽস্ত্বীশ রাম প্রসীদ
প্রশাধি প্রশাধি প্রকাশং প্রভো মাম্ ।।১০।।
ভাবার্থ - নিজভক্তাগ্রগণ্য কপিরাজ-সমূহ, ভূপালসমূহ এবং বহুসৈন্য-সমন্বিত হে রাম! আমার
প্রতি প্রসন্ন হও ; হে ঈশ্বর! তোমার
প্রতি (আমার) পুনঃ পুনঃ নমস্কার (অর্পিত) হোক। হে রাম, প্রসন্ন
হও ; হে প্রভো, আমাকে
প্রকাশ্যরূপে উপদেশ প্রদান কর, উপদেশ প্রদান কর।১০
ত্বমেবাসি দৈবং পরং মে যদেকং
সুচৈতন্যমেতৎ ত্বদন্যন্ন মন্যে ৷
যতোঽভূদমেয়ং বিয়দ্-বায়ু-তেজো-
জরোর্ব্ব্যাদিকার্যঞ্চরঞ্চাচরঞ্চ
।।১১।।
ভাবার্থ - যা হতে আকাশ,
বায়ু, তেজ, জল, পৃথিবী প্রভৃতি অপরিমিত চরাচরকার্য উৎপন্ন হয়েছে, যিনি এক নিত্য চৈতন্যস্বরূপ,
সেই তুমিই আমার পরম দেবতা, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তোমা ভিন্ন
মনে করি না। ১১
নমঃ সচ্চিদানন্দরূপায় তস্মৈ
নমো দেবদেবায় রামায় তুভ্যম্ ।
নমো জানকী-জীবিতেশায় তুভ্যং
নমঃ পুণ্ডরীকায়তাক্ষায় তুভ্যম্ ||১২||
ভাবার্থ - সেই সচ্চিদানন্দরূপকে নমস্কার, হে দেবদেব রাম,
তুমিই সেই, তোমাকে নমস্কার, জানকী-জীবিতেশ্বর, তোমাকে নমস্কার, হে পুণ্ডরীক-বিশাললোচন,
তোমাকে নমস্কার। ১২
নমো ভক্তিযুক্তানুরক্তায় তুভ্যং
নমঃ পুণ্যপুঞ্জৈকলভ্যায় তুভ্যম্ ।
নমো বেদবেদ্যায় চাদ্যায় পুংসে
নমঃ সুন্দরায়েন্দিরাবল্লভায় ||১৩||
ভাবার্থ - নিজ ভক্তগণের প্রতি অনুরক্ত, তোমাকে নমস্কার। একমাত্র পুণ্যপুঞ্জলভ্য, তোমাকে নমস্কার, বেদবেদ্য আদ্য পুরুষ (তোমাকে) নমস্কার, সুন্দরমূর্তি (শ্রীবল্লভ) তোমাকে নমস্কার। ১৩
নমো বিশ্বকর্ত্রে নমো বিশ্বহর্ত্রে
নমো বিশ্বভোক্ত্রে নমো বিশ্বমাত্রে।
নমো বিশ্বনেত্রে নমো বিশ্বজেত্রে
নমো বিশ্বপিত্রে নমো বিশ্বধাত্রে ।।১৪।।
ভাবার্থ- বিশ্বকর্তাকে নমস্কার, বিশ্বহর্তাকে নমস্কার, বিশ্বভোক্তাকে নমস্কার, বিশ্বজ্ঞাতাকে নমস্কার, বিশ্বনেতাকে নমস্কার, বিশ্বজেতাকে নমস্কার, বিশ্বপিতাকে নমস্কার, বিশ্বধাতাকে নমস্কার। ১৪
নমস্তে নমস্তে সমস্তপ্রপঞ্চ-
প্রভোগ-প্রয়াগ-প্রমাণ-প্রবীণ ।
মদীয়ং মনস্ত্বৎ-পদদ্বন্দ্বসেবাং
বিধাতুং প্রবৃত্তং সুচৈতন্যসিদ্ধ্যৈ ।।১৫।।
ভাবার্থ - হে সমস্ত জগৎপ্রপঞ্চের
অব্যাহত ভোগ, প্রয়োগ এবং যাথার্থ্য-নির্ণয়ে প্রবীণ, তোমাকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার করি। আমার মন সুচৈতন্য অর্থাৎ
তত্ত্বজ্ঞান লাভের জন্য তোমার চরণযুগল সেবা করতে প্রবৃত্ত হয়েছে। ১৫
শিলাপি ত্বদঙ্ঘ্রি ক্ষমাসঙ্গিরেণু-
প্রসাদাদ্ধি চৈতন্যমাধত্ত রাম ।
নরস্ত্বৎপদদ্বন্দ্ব-সেবাবিধানাৎ
সুচৈতন্যমেতীতি কিং চিত্রমত্র ।।১৬।।
ভাবার্থ - হে রাম! তোমার
চরণসঙ্গত পার্থিব রেণুর প্রসাদে শিলাও চৈতন্য প্রাপ্ত হয়েছিল। মানুষ তোমার চরণযুগল সেবা করলে যে সুচৈতন্য লাভ
করবে, এতে আর আশ্চর্য কি।
১৬
পবিত্রং চরিত্রং বিচিত্রং ত্বদীয়ং
নরা যে স্মরন্ত্যন্বহং রামচন্দ্র
।
ভবন্তং ভবান্তং ভরন্তং ভজন্তো
লভন্তে কৃতান্তং ন পশ্যন্ত্যতোঽন্তে ।।১৭।।
ভাবার্থ - হে রামচন্দ্র! যাঁরা
জগৎপালক তোমাকে ভজনা করতঃ প্রত্যহ তোমার পবিত্র বিচিত্র চরিত্র স্মরণ করে, তারা সংসারের পারপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, অতএব অন্তে আর কৃতান্তদর্শন করে
না। ১৭
স পুণ্যঃ স
গণ্যঃ শরণ্যো মমায়ং
নরো বেদ যো দেব-চূড়ামণিং
ত্বাম্ ।
সদাকারমেকং চিদানন্দরূপং
মনোবাগগম্যং পরং ধাম রাম ।।১৮।।
ভাবার্থ - হে রাম, তুমি
দেব-চূড়ামণি, নিত্যমূর্তি, বাক্য-মনের অতীত, চিদানন্দস্বরূপ, পরমজ্যােতিঃ, যে মানব তোমাকে
‘ইনি আমার শরণ্য' এটা উপলব্ধি করেন, তিনি পুণ্যবান্ এবং তিনি গণনীয়। ১৮
প্রচণ্ড প্রতাপ প্রভাবাভিভূত-
প্রভূতারিবীর প্রভো রামচন্দ্র ।
বলং তে কথং বর্ণ্যতেঽতীব
বাল্যে
যতোঽখণ্ডি চণ্ডীশকোদণ্ডদণ্ডঃ ।।১৯।।
ভাবার্থ - হে প্রভো রামচন্দ্র,
তোমার প্রচণ্ড প্রতাপ-প্রভাবে অগণিত অরাতি বীরগণ অভিভূত হয়েছে, তোমার এই অতীব বল
কিরূপে বর্ণনা করব, যেহেতু তুমি অল্প বয়সে হরধনু ভঙ্গ করেছিলে। ১৯
দশগ্রীবমুগ্রং সপুত্রং সমিত্রং
সরিদ্দুর্গ মধ্যস্থ রক্ষো গণেশম্ ।
ভবন্তং বিনা রাম বীরো নরো বা-
সুরো বামরো বা জয়েৎ কস্ত্রিলোক্যাম্
।।২০।।
ভাবার্থ - হে রাম! সাগর-দুর্গমধ্যস্থ রাক্ষসবৃন্দের অধিপতি সপুত্র সমিত্র উগ্র দশগ্রীবকে জয় করতে ত্রৈলোক্যমণ্ডলে
তোমা ব্যতীত কোন্ সুরাসুর-মানব-বীর সমর্থ? ২০
সদারাম রামেতি নামামৃতং তে
সদারামমানন্দ-নিষ্যন্দ-কন্দম ।
পিবন্তং নমন্তং সুদন্তং হসন্তং
হনুমন্তমন্তর্ভজে তং নিতান্তম্ ।।২১।।
ভাবার্থ - হে রাম, সজ্জনের
আরামপ্রদ আনন্দ-প্রস্রবণের মূল উৎস তোমার ‘রাম' এই নামামৃত যিনি
সদা পান করছেন, তোমার প্রণাম করছেন, শুভ্র দন্তপঙ্ক্তি বের করে হাস্য করছেন, সেই হনুমানকে আমি অন্তরে একান্ত ভজনা করি। ২১
সদারাম রামেতি নামামৃত তে
সদারামমানন্দ-নিষ্যন্দ-কন্দম্ ।
পিবন্নন্বহং নন্বহং নৈব মৃত্যো-
বিভেমি প্রসাদাদসাদাত্তবৈব ।।২২।।
ভাবার্থ - হে রাম! সজ্জনগণের
সতত আরামপ্রদ আনন্দ-প্রস্রবণের মূল উৎস তোমার ‘রাম' এই নামামৃত আমি
প্রতিদিন পান করতঃ তোমারই অব্যাহত প্রসাদে মৃত্যুকেও ভয় করি না।
২২
অ-সীতা-সমেতৈরকোদণ্ড-ভূষৈ-
রসৌমিত্রি-বন্দ্যৈরচণ্ড-প্রতাপৈঃ ।
অলঙ্কেশ কালৈরসুগ্রীব মিত্রৈ-
ররামাভিধেয়ৈরলং দৈবতৈর্নঃ ।।২৩।।
ভাবার্থ - (হে রাম!) যাঁরা
সীতা-সমন্বিত নন, কোদণ্ডভূষণ যাঁদের নেই, যাঁরা সৌমিত্রির বন্দনীয় নন, যাঁরা প্রচণ্ড প্রতাপশালী নন, লঙ্কেশ্বরের মৃত্যু যাঁরা করতে পারে নি, সুগ্রীব যাঁদের মিত্র নয়, রাম যাঁদের নাম নয়, এমন দেবতায় আমার প্রয়োজন নেই। ২৩
অ-বীরাসনস্থৈর চিন্মুদ্রিকাঢ্যৈ-
রভক্তাঞ্জনেয়াদিতত্ত্বপ্রকাশৈঃ
।
অমন্দারমূলৈরমন্দারমালৈ-
ররামাভিধেয়ৈরলং দৈবতৈর্নঃ ।।২৪।।
ভাবার্থ - যাঁরা বীরাসনে আসীন নন, জ্ঞানময়ী মুদ্রা যাঁদের হাতে (হস্তে) নেই, অঞ্জনানন্দন প্রভৃতি ভক্ত-সমক্ষে যাঁরা তত্ত্ব প্রকাশ করেন নি, মন্দারবৃক্ষমূলে যাঁদের স্থিতি (বিশ্রাম) নেই, মন্দারমালা যাঁদের নেই, রাম যাঁদের নাম নয়, এইরূপ দেবতায় আমাদের প্রয়োজন নেই। ২৪
অ-সিন্ধু-প্রকোপৈর-বন্দ্যপ্রতাপৈ-
র-বন্ধু-প্রযাণৈর-মন্দ-স্মিতাঢ্যৈঃ ।
অ-দণ্ড-প্রবাসৈর-খণ্ডপ্রবোধৈ-
র-রামাভিধেয়ৈরলং দৈবতৈর্নঃ
।।২৫।।
ভাবার্থ - সমুদ্রের প্রতি যাঁরা ক্রোধ প্রকাশ করতে পারেন নি, যাঁদের প্রতাপ বন্দনীয় হয় নি, যাঁদের
বন্ধুবিচ্ছেদ হয় নি, যাঁদের মুখে মৃদুমন্দ ঈষৎ হাস্য নেই, দণ্ডকারণ্যে যাঁরা প্রবাস করেন নি, যাঁরা আত্মবিস্মৃত নন, রাম যাঁদের নাম নয়, এইরূপ দেবতার আমাদের প্রয়োজন নেই। ২৫
হরে রাম সীতাপতে রাবণারে
খরারে মুরারেঽসুরারে পরেতি ।
লপন্তং নয়ন্তং সদাকালমেবং
সমালোকয়ালোকয়াশেষবন্ধো ।।২৬।।
ভাবার্থ - হে হরে, হে
রাম, হে সীতাপতে, হে
রাবণারে, হে খরবিনাশন্, হে
মুরারে, হে অসুররিপো, হে
পরাৎপর, এইরূপ কথায় সদাকাল যাপন করতে প্রবৃত্ত ব্যক্তিকে হে অখিলবন্ধো, অবলোকন
কর, অবলোকন কর। ২৬
নমস্তে সুমিত্রা-সুপুত্রাভিবন্দ্য
নমস্তে সদা কৈকয়ী-নন্দনেভ্য ।
নমস্তে সদা বানরাধীশবন্দ্য
নমস্তে নমস্তে সদা রামচন্দ্র ।।২৭।।
ভাবার্থ - হে সুমিত্রা-তনয়ের
অভিবাদনীয়, তোমাকে নমস্কার। হে কৈকেয়ী-নন্দের
স্তবপাত্র, সর্ব্বদা তোমাকে নমস্কার। হে বানরপতি সুগ্রীবের
বন্দনীয়, তোমাকে নিরন্তর নমস্কার। হে রামচন্দ্র, সতত
তোমার নমস্কার, তোমার নমস্কার। ২৭
প্রসীদ প্রসীদ প্রচণ্ডপ্রতাপ
প্রসীদ প্রসীদ প্রচণ্ডারিকাল ।
প্রসীদ প্রসীদ প্রপন্নানুকম্পিন্
প্রসীদ প্রসীদ প্রভো রামচন্দ্র ।।২৮।।
ভাবার্থ - হে প্রচণ্ড-প্রতাপ,
প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও। হে প্রচণ্ড-শত্রুর
কৃতান্ত, প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও। হে প্রপন্নজনের সদা
অনুকম্পাপরায়ণ, প্রসন্ন হও প্রসন্ন হও।
হে প্রভো রামচন্দ্র, প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও। ২৮
ফলশ্রুতি:-
ভুজঙ্গপ্রয়াতং পরং বেদসারং
মুদা রামচন্দ্রস্য ভক্ত্যা চ নিত্যম ।
পঠন্ সন্ততং চিন্তয়ন্ স্বান্তরঙ্গে
স এব স্বয়ং
রামচন্দ্রঃ স ধন্যঃ।।২৯।।
ভাবার্থ - (যে ব্যক্তি) ভুজঙ্গপ্রয়াতচ্ছন্দে
নির্মিত রামচন্দ্রের বেদসার পরমস্তব সানন্দে ভক্তি সহকারে পাঠ করেন এবং অন্তঃকরণে সদা চিন্তা করেন, তিনি ধন্য এবং তিনিই স্বয়ং রামচন্দ্র। ২৯
ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ শ্রীরামভুজঙ্গপ্রয়াত স্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ।।
ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য ভগবান্ শঙ্করাচার্য বিরচিত শ্রীরামভুজঙ্গপ্রয়াত স্তোত্র সমাপ্ত।
...................................................................................................................
শ্রীশুভ চৌধুরী
রামনবমী, ২০২০ খৃষ্টাব্দ।