Saturday, 8 August 2020

বাক্যবৃত্তিঃ-


ভগবৎপাদ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত 'বাক্যবৃত্তি'র গুরুশিষ্যসংবাদ- 

॥ শ্রী গণেশায় নমঃ॥

সর্গস্থিতিপ্রলয়হেতুমচিন্ত্যশক্তিং বিশ্বেশ্বরং বিদিতবিশ্বমনন্তমূর্তিম্ ।

নির্মুক্তবন্ধনমপারসুখাম্বুরাশিং শ্রীবল্লভং বিমলবোধঘনং নমামি ॥ ১॥ 

যস্য প্রসাদাদহমেব বিষ্ণুর্ময়্যেব সর্বং পরিকল্পিতং চ ।

ইত্থং বিজানামি সদাত্মরূপং তস্যাংঘ্রিপদ্মং প্রণতোঽস্মি নিত্যম্ ॥ ২॥

 

তাপত্রয়ার্কসংতপ্তঃ কশ্চিদুদ্বিগ্নমানসঃ ।

শমাদিসাধনৈর্যুক্তঃ সদ্গুরুং পরিপৃচ্ছতি ॥ ৩॥

আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক এই ত্রিবিধ দুঃখরূপ সূর্য্যের দ্বারা সন্তপ্ত, উদ্বিগ্নচিত্ত কোন শিষ্য অনন্তর শমাদি সাধন সম্পত্তিযুক্ত হইয়া সদ্গুরুকে জিজ্ঞাসা করিলেন-

অনায়াসেন যেনাস্মান্মুচ্চ্যেয়ং ভববন্ধনাৎ ।

তন্মে সংক্ষিপ্য ভগবন্কেবলং কৃপয়া বদ ॥ ৪॥

হে ভগবন! যাঁহার দ্বারা আত্মা অনায়াসে সংসার বন্ধন হইতে মুক্ত হয়, সেই মুক্তির বিষয় আমাকে কৃপাপূর্ব্বক সংক্ষেপে বলুন।

গুরুরুবাচ ।

সাধ্বীতে বচনব্যক্তিঃ প্রতিভাতি বদামি তে ।

ইদং তদিতি বিস্পষ্টং সাবধানমনাঃ শৃণু ॥ ৫॥

গুরু বলিলেন-"তোমার বাক্যের অভিব্যক্তি সমীচীন বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে। অর্থাৎ তুমি উত্তম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়াছ। আমি তোমার প্রশ্নের অতিস্পষ্ট উত্তর বলিতেছি, তুমি অবহিতচিত্তে শ্রবণ কর।"

তত্ত্বমস্যাদিবাক্যোত্থং যজ্জীবপরমাত্মনোঃ ।

তাদাত্ম্যবিষয়ং জ্ঞানং তদিদং মুক্তিসাধনম্ ॥ ৬॥

"'তত্ত্বমসি' প্রভৃতি বেদান্তের মহাবাক্য হইতে উৎপন্ন যে জীব ও পরমাত্মার তাদাত্ম্যবিষয়ক জ্ঞান (ঐক্যজ্ঞান), তাহাই মুক্তির উপায়।"

শিষ্য উবাচ ।

কো জীবঃ কঃ পরশ্চাত্মা তাদাত্ম্যং বা কথং তয়োঃ ।

তত্ত্বমস্যাদিবাক্যং বা কথং তৎপ্রতিপাদয়েৎ ॥ ৭॥

শিষ্য কহিলেন-" জীব কে? পরমাত্মাই বা কে? কিরূপে জীব ও পরমাত্মার তাদাত্ম্য হয়? তত্ত্বমসি প্রভৃতি মহাবাক্য কিরূপেই বা জীব ও পরমাত্মার ঐক্য প্রতিপাদন করিয়া থাকে?

গুরুরুবাচ ।

অত্র ব্রূমঃ সমাধানং কোঽন্যো জীবস্ত্বমেব হি ।

যস্ত্বং পৃচ্ছসি মাং কোঽহং ব্রহ্মৈবাসি ন সংশয়ঃ ॥ ৮॥

গুরু বলিলেন- আমি এই প্রশ্নের উত্তর অতি সাবধানে বলিতেছি। অন্য জীব আর কে? যেহেতু তুমিই জীব। যে তুমি 'আমি কে',-এই বলিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছ, সেই তুমিই ব্রহ্ম, ইহাতে কোনরূপ সংশয় নাই।

শিষ্য উবাচ ।

পদার্থমেব জানামি নাদ্যাপি ভগবন্স্ফুটম্ ।

অহং ব্রহ্মেতি বাক্যার্থং প্রতিপদ্যে কথং বদ ॥ ৯॥

শিষ্য বলিলেন-ভগবন! আমি অদ্যপি ত্বং ও তৎ পদার্থের অর্থ স্পষ্টরূপে জানিলাম না, 'আমিই ব্রহ্ম'-এইরূপে বাক্যার্থ কিরূপ জানিব, তাহাই বলুন।

গুরুরুবাচ ।

সত্যমাহ ভবানত্র বিজ্ঞানং নৈব বিদ্যতে ।

হেতুঃ পদার্থবোধো হি বাক্যার্থাবগতেরিহ ॥ ১০॥

অন্তঃকরণতদ্বৃত্তিসাক্ষিচৈতন্যবিগ্রহঃ ।

আনন্দরূপঃ সত্যঃ সন্কিং নাত্মানং প্রপদ্যসে ॥ ১১॥

সত্যানন্দস্বরূপং ধীসাক্ষিণং বোধবিগ্রহম্ ।

চিন্তয়াত্মতয়া নিত্যং ত্যক্ত্বা দেহাদিগাং ধিয়ম্ ॥ ১২॥

রূপাদিমান্যতঃ পিণ্ডস্ততো নাত্মা ঘটাদিবৎ ।

বিয়দাদিমহাভূতবিকারৎবাচ্চ কুম্ভবৎ ॥ ১৩॥

অনাত্মা যদি পিণ্ডোঽয়মুক্তহেতুবলান্মতঃ ।

করামলকবৎসাক্ষাদাত্মানং প্রতিপাদয় ॥ ১৪॥

গুরু বলিলেন-

তুমি এই বিষয়ে যথার্থ বলিতেছ; কারণ পদার্থজ্ঞান যে বাক্যার্থজ্ঞানের হেতু, এইবিষয়ে কোনরূপ মতভেদ নাই। যিনি অন্তঃকরণ ও অন্তঃকরণবৃত্তির সাক্ষী, যিনি জ্ঞানমূর্ত্তি, যিনি আনন্দস্বরূপ ও সত্য, তুমি সেইরূপ হইয়া কেন আত্মাকে জানিতেছ না? তুমি দেহাশ্রিত বুদ্ধিকে পরিত্যাগ করিয়া যিনি সত্য ও আনন্দস্বরূপ, বুদ্ধিবৃত্তির সাক্ষী, জ্ঞানমূর্ত্তি, তাহাকেই সর্ব্বদা আত্মা ভাবিয়া ধ্যান কর। দেহ আত্মা নহে, কারণ, দেহের রূপরসাদি আছে, যেমন ঘট আত্মা নহে, যেহেতু সে রূপাদিবিশিষ্ট। যেমন ঘট আকাশাদি মহাভূতের বিকার, দেহও সেইরূপ। যদি উক্ত হেতুবশতঃ দেহ অনাত্মা হইল, তাহা হইলে করস্থিত আমলকের ন্যায় প্রত্যক্ষভাবে আত্মাকে প্রতিপাদন কর। 

ঘটদ্রষ্টা ঘটাদ্ভিন্নঃ সর্বথা ন ঘটো যথা ।

দেহদ্রষ্টা তথা দেহো নাহমিত্যবধারয় ॥ ১৫॥

যেরূপ ঘটের দ্রষ্টা সর্বকালে ঘট থেকে ভিন্ন, কিন্তু ঘট নয়; সেরূপ আমি দেহের দ্রষ্টা কিন্তু দেহ নই-এরূপ অবধারণ করো।

এবমিন্দ্রিয়দৃঙ্নাহমিন্দ্রিয়াণীতি নিশ্চিনু ।

মনোবুদ্ধিস্তথা প্রাণো নাহমিত্যবধারয় ॥ ১৬॥ 

এরূপে আমি ইন্দ্রিয় সকল নই, পরন্তু ইন্দ্রিয়ের দ্রষ্টা- এ নিশ্চয় করো; সেরূপ মন, বুদ্ধি, প্রাণও আমি নই- এরূপে অবধারণ করো। ১৬


No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...