ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি অদ্বৈতবেদান্তে পরমার্থতঃ ব্রহ্মভিন্ন জীব নামক কিছুই নাই। জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্মই, বুদ্ধিরূপ উপাধিসম্বন্ধই জীবের জীবত্ব। সেই সম্বন্ধ ব্রহ্মাত্মজ্ঞানোদয় পর্য্যন্ত বর্তমান থাকে। এখন একপ্রকার ভ্রান্তি দেখা যায় যে -জীবেরও জন্মমৃত্যু আছে, যেহেতু 'অমুকের জন্ম হইয়াছে', 'অমুকের মৃত্যু হইয়াছে' এইরূপ লৌকিক কথন দেখা যায়, আবার যেহেতু জাতকর্ম্ম, চূড়াকরণ, অন্নপ্রাশন প্রভৃতি সংস্কারের বিধান আছে, এইপ্রকার ভ্রান্তির উত্তরে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ বলিতেছেন-
চরাচরব্যপাশ্রয়স্তু স্যাত্তদ্ব্যপদেশো ভাক্তস্তদ্ভাবভাবিত্বাৎ৷৷-(ব্রহ্মসূত্র ২.৩.১৬)
কিন্তু এখন আবার শঙ্কা হইল জীবের জন্মমৃত্যুবিষয়ক লৌকিক কথন যেমন- 'অমুকের জন্ম হইয়াছে', 'অমুকের মৃত্যু হইয়াছে' প্রদর্শিত হয়। সমাধান হইল সত্য প্রদর্শিত হইয়াছে, কিন্তু জীবের এই জন্মমৃত্যু কথন গৌণ। আচ্ছা কাহাকে আশ্রয় করিয়া ইহা মূখ্য, যাহার অপেক্ষায় জীবের জন্মমৃত্যুকথন গৌণ হবে? সমাধানে তাহা বলা হইতেছে-
সেই কথন চরাচরকে আশ্রয় করে। জন্ম ও মরণ, এই শব্দদ্বয় স্থাবর জঙ্গমাত্মক শরীরকে বিষয় করে। স্থাবর ও জঙ্গমাত্মক ভূতসকল জন্মগ্রহণ করে ও মৃত হয়, সেইহেতু জন্ম ও মরণ, এই শব্দদ্বয় সেই বিষয়ে মূখ্য হইয়া তাহাতে অবস্থিত জীবাত্মাতে গৌণভাবে প্রযুক্ত হয়, যেহেতু তাহা থাকিলেই তাহা থাকে। যেহেতু শরীরের উৎপত্তি ও বিনাশ হইলে তাহাতে জন্ম ও মরণ শব্দদ্বয় প্রযুক্ত হয়, কিন্তু অসৎদ্বয়ের হয় না অর্থাৎ উৎপত্তি ও বিনাশ না হইলে উক্ত শব্দদ্বয় প্রযুক্ত হয় না। শরীরের সহিতে সম্বন্ধ হইতে ভিন্নস্থলে জীব জন্মগ্রহণ করে অথবা মৃত হয়, ইহা কদাপি কেহ দর্শন করে না। এই বিষয়ে শ্রুতি বলিতেছে-
আর জাতকর্ম্মাদি সংস্কার বিধানও দেহের উৎপত্তিকে অপেক্ষা করিয়া হইয়াছে বুঝিতে হইবে, যেহেতু জীবের জন্ম হয় না। .........জীবের দেহাশ্রিত স্থুল (শরীরোৎপত্তিতে জীবের জন্ম, শরীর নাশে জীবের নাশ, এইপ্রকার লোকবুদ্ধি-সিদ্ধ) জন্মমৃত্যু হয় না, ইহা এই সূত্রের দ্বারা আচার্য্য বলিয়াছেন।............
No comments:
Post a Comment