Friday, 21 August 2020

দেহেরই জন্মমরণ, জীবের তাহা ঔপাধিকঃ-


ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি অদ্বৈতবেদান্তে পরমার্থতঃ ব্রহ্মভিন্ন জীব নামক কিছুই নাই। জীব স্বরূপতঃ ব্রহ্মই, বুদ্ধিরূপ উপাধিসম্বন্ধই জীবের জীবত্ব। সেই সম্বন্ধ ব্রহ্মাত্মজ্ঞানোদয় পর্য্যন্ত বর্তমান থাকে। এখন একপ্রকার ভ্রান্তি দেখা যায় যে -জীবেরও জন্মমৃত্যু আছে, যেহেতু 'অমুকের জন্ম হইয়াছে', 'অমুকের মৃত্যু হইয়াছে' এইরূপ লৌকিক কথন দেখা যায়, আবার যেহেতু জাতকর্ম্ম, চূড়াকরণ, অন্নপ্রাশন প্রভৃতি সংস্কারের বিধান আছে, এইপ্রকার ভ্রান্তির উত্তরে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ বলিতেছেন-

চরাচরব্যপাশ্রয়স্তু স্যাত্তদ্ব্যপদেশো ভাক্তস্তদ্ভাবভাবিত্বাৎ৷৷-(ব্রহ্মসূত্র ২.৩.১৬)

শারীরকভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ-ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য ভাষ্যে বলিতেছেন-
(সিদ্ধান্ত)-আমরা তাহা অপনোদন করিতেছি। জীবের জন্মমরণ নাই, যেহেতু তাহা হইলেই শাস্ত্রপ্রতিপাদিত কর্ম্মফলের সহিত জীবের সম্বন্ধ হয় যুক্তিসঙ্গত। যেহেতু শরীরের বিনাশে জীবের বিনাশ হইলে জন্মান্তরে অন্য শরীরগত ইষ্ট ও অনিষ্টের (-সুখ ও দুঃখের) প্রাপ্তি ও পরিহারের জন্য শ্রুতিপ্রতিপাদিত বিধি ও নিষেধ অনর্থক হইয়া পড়িবে। আর শ্রুতিতে বর্ণিত হইতেছে-

'জীবাপেতং বাব কিলেদং ম্রিয়তে ন জীবো ম্রিয়তে'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৬।১১।৩)
অর্থাৎ "জীববিযুক্ত ইহা (-শরীর) অবশ্যই মৃত হয়, জীব কিন্তু মৃত হয় না" ইত্যাদি।

কিন্তু এখন আবার শঙ্কা হইল জীবের জন্মমৃত্যুবিষয়ক লৌকিক কথন যেমন- 'অমুকের জন্ম হইয়াছে', 'অমুকের মৃত্যু হইয়াছে' প্রদর্শিত হয়। সমাধান হইল সত্য প্রদর্শিত হইয়াছে, কিন্তু জীবের এই জন্মমৃত্যু কথন গৌণ। আচ্ছা কাহাকে আশ্রয় করিয়া ইহা মূখ্য, যাহার অপেক্ষায় জীবের জন্মমৃত্যুকথন গৌণ হবে? সমাধানে তাহা বলা হইতেছে-

সেই কথন চরাচরকে আশ্রয় করে। জন্ম ও মরণ, এই শব্দদ্বয় স্থাবর জঙ্গমাত্মক শরীরকে বিষয় করে। স্থাবর ও জঙ্গমাত্মক ভূতসকল জন্মগ্রহণ করে ও মৃত হয়, সেইহেতু জন্ম ও মরণ, এই শব্দদ্বয় সেই বিষয়ে মূখ্য হইয়া তাহাতে অবস্থিত জীবাত্মাতে গৌণভাবে প্রযুক্ত হয়, যেহেতু তাহা থাকিলেই তাহা থাকে। যেহেতু শরীরের উৎপত্তি ও বিনাশ হইলে তাহাতে জন্ম ও মরণ শব্দদ্বয় প্রযুক্ত হয়, কিন্তু অসৎদ্বয়ের হয় না অর্থাৎ উৎপত্তি ও বিনাশ না হইলে উক্ত শব্দদ্বয় প্রযুক্ত হয় না। শরীরের সহিতে সম্বন্ধ হইতে ভিন্নস্থলে জীব জন্মগ্রহণ করে অথবা মৃত হয়, ইহা কদাপি কেহ দর্শন করে না। এই বিষয়ে শ্রুতি বলিতেছে-

'স বা অয়ং পুরুষো জায়মানঃ শরীরমভিসংপদ্যমানঃ স উত্ক্রামন্ ম্রিয়মাণঃ' -(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ ৪।৩।৮)
আর "জায়মান্ অর্থাৎ শরীরে আত্মভাবসম্পন্ন সেই এই পুরুষই ম্রিয়মাণ অর্থাৎ উৎক্রমণকারী তিনি", এইপ্রকারে শ্রুতিও শরীরের সহিত সংযোগ ও বিভাগরূপ নিমিত্তদ্বয়বশতঃই জন্ম ও মরণ শব্দদ্বয়কে প্রদর্শন করিতেছেন।

আর জাতকর্ম্মাদি সংস্কার বিধানও দেহের উৎপত্তিকে অপেক্ষা করিয়া হইয়াছে বুঝিতে হইবে, যেহেতু জীবের জন্ম হয় না। .........জীবের দেহাশ্রিত স্থুল (শরীরোৎপত্তিতে জীবের জন্ম, শরীর নাশে জীবের নাশ, এইপ্রকার লোকবুদ্ধি-সিদ্ধ) জন্মমৃত্যু হয় না, ইহা এই সূত্রের দ্বারা আচার্য্য বলিয়াছেন।............

No comments:

জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ-

  শ্রীভগবানুবাচ ময্যাসক্তমনাঃ পার্থ যোগং যুঞ্জন্মদাশ্রয়ঃ৷ অসংশয়ং সমগ্রং মাং যথা জ্ঞাস্যসি তচ্ছৃণু ৷৷ ১   ‘শাঙ্করভাষ্য’   অনুস...