Friday, 30 April 2021

"সুব্রহ্মণ্য ভুজঙ্গ স্তোত্রম্"


সদা বালরূপাপি বিঘ্নাদ্রিহন্ত্রী

মহাদন্তিবক্ত্রাপি পঞ্চাস্যমান্যা ।

বিধীন্দ্রাদিমৃগ্যা গণেশাভিধা মে

বিধত্তাং শ্রিয়ং কাপি কল্যাণমূর্তি ||১||

ভাবার্থ - যিনি বালকাকৃতি হলেও বিঘ্নপর্ব্বত বিধ্বস্ত করে থাকেন, গজেন্দ্রবদন হলেও পঞ্চাস্য ( সিংহ, গণেশ পক্ষে পঞ্চানন শিব ) যাঁর আদর করে থাকেন, ব্রহ্মা, ইন্দ্র প্রভৃতি ( দেবগণ ) যাঁর অন্বেষণ করেন, সেই গণেশনাম্নী অনির্ব্বচনীয় মঙ্গলমূর্তি আমার শ্রী সম্পাদন করুন ||১||

ন জানামি শব্দং ন জানামি বার্থং

ন জানামি পদ্যং ন জানামি গদ্যম ।

চিদেকা ষড়াস্যা হৃদি দ্যোততে মে

মুখান্নিশ্চ্যবন্তে গিরশ্চাপি চিত্রম ||২||

ভাবার্থ - আমি না জানি শব্দ, না জানি অর্থ, না জানি পদ্য, না জানি গদ্য। আশ্চর্য্যের বিষয়, আমার হৃদয়ে এক ষড়াননা চিন্ময়মূর্তি প্রকাশমানা আছেন, আর বাণীসমূহ আমার মুখ হতে অনর্গল ক্ষরিত হচ্ছে ||২||

ময়ূরাধিরূঢ়ং মহাবাক্যগূঢ়ং

মহোহারিদেহং মহচ্চিত্তগেহম ।

মহীদেবদেবং মহাবেদভাবং

মহাদেববালং ভজে লোকপালম ||৩||

ভাবার্থ - ময়ূরে আরূঢ়, মনোরম দেহ সম্পন্ন, মহাপুরুষগণের হৃদয় মন্দিরে অবস্থিত, ভূদেব বৃন্দের আরাধ্য, সমগ্র বেদরাশির আবির্ভাব হেতু তত্ত্বমস্যাদি মহাবাক্যের গূঢ়ার্থগম্য লোকপালক শিবকুমারকে ভজনা করি ||৩||

যদা সন্নিধানং গতা মানবা মে

ভবাম্ভোধিপারং গতাস্তে তদৈব ।

ইতি ব্যঞ্জয়ন সিন্ধুতীরে য আস্তে

তমীড়ে পবিত্রং পরাশক্তি পুত্রম ||৪||

ভাবার্থ - মানবগণ যখন আমার সমীপস্থ হয়, তখনই তারা ভবসমুদ্রের পারে গিয়ে থাকে, এই ( ভাব ) ব্যক্ত করবার জন্যই যিনি সাগরতীরে অবস্থিত, সেই পবিত্র পরাশক্তিপুত্র অর্থাৎ পার্বতীনন্দনকে স্তব করি ||৪||

যথাব্ধেস্তরঙ্গা লয়ং যান্তি তুঙ্গা-

স্তথৈবাপদঃ সন্নিধৌ সেবতাং মে ।

ইতীবোর্ম্মিপংক্তীর্নৃণাং দর্শয়ন্তং

সদা ভাবয়ে হৃৎসরোজে গুহং তম্ ||৫||

ভাবার্থ - যেমন সাগরের উচ্চ তরঙ্গ সকল আমার নিকট লয়প্রাপ্ত হচ্ছে, সেইরূপ মদীয় সেবকগণের বিপদ যতই উৎকট হোক ( আমার সমীপে ) তা লয়প্রাপ্ত হবেই। যিনি মানবগণকে যেন এই ভাবেই তরঙ্গ শ্রেণী প্রদর্শন করতেছেন – সেই কার্তিকেয় কে হৃদয়পদ্মে সদা ভাবনা করি ||৫||

গিরৌ মন্নিবাসে নরা যেহধিরূঢ়াং–

স্তদা পর্ব্বতে রাজতে তেহধিরূঢ়াঃ ।

ইতীব ব্রুবন্ গন্ধশৈলীধিরূঢ়ঃ

স দেবো মুদে মে সদা ষন্মুখোহস্তু ||৬||

ভাবার্থ - যে মানবগণ, খধি অর্থাৎ অজ্ঞানপূর্ব্বক ও আমার নিবাসপর্ব্বতে ( যখন ) আরোহন করে, তারা তখনই কৈলাসপর্ব্বতবাসী হয়ে যায় ( শিবসালোক্য প্রাপ্তির অধিকারী হয় ) যেন এ উপদেশ দেবার জন্যই যিনি গন্ধশৈলে অবস্থান করতেছেন, সেই দেব ষড়ানন সদা আমার আনন্দের কারণ হোক ||৬||

মহাম্ভোধিতীরে মহাপাপচোরে

মুনীন্দ্রানুকূলে সুগন্ধাঢ্যশৈলে ।

গুহায়াং বসন্তং স্বভাসালসন্তং

জনার্ত্তিং হরন্তং শ্রয়ামো গুহং তম্ ||৭||

ভাবার্থ - মহাপাপহারী মহাসমুদ্র তীরে মুনিবরপ্রিয় উত্তম গন্ধশৈলে গুহামধ্যে অবস্থিত, স্বীয় প্রভায় দেদীপ্যমান, আশ্রিত জনদুঃখবিনাশী সেই কার্তিকেয়ের আশ্রয় গ্রহণ করতেছি ||৭||

লসৎ স্বর্ণগেহে নৃণাং কামদোহে

সুমস্তোমসংছন্নমাণিক্যমঞ্চে ।

সমুদ্যৎ সহস্রার্কতুল্যপ্রকাশং

সদা ভাবয়ে কার্ত্তিকেয়ং সুরেশম ||৮||

ভাবার্থ - মানবগণের অভীষ্টসাধক উজ্জ্বল সুবর্ণমন্দিরে কুসুমরাশি সমাচ্ছন্ন মাণিক্যমঞ্চে উদীয়মান সহস্রসূর্য্যসমপ্রকাশ দেবশ্রেষ্ঠ কার্তিকেয়কে সদা ভাবনা করি ||৮||

রণদ্ধংসকে মঞ্জুলেহত্যন্তশোণে

মনোহারিলাবণ্যপীযূষপূর্নে ।

মনঃ ষটপদো মে ভবক্লেশতপ্তঃ

সদা মোদতাং স্কন্দ তে পাদপদ্মে ||৯||

ভাবার্থ - ধ্বনিতনূপুর, মনোহারলাবণ্য সুধাপূর্ণ, অত্যন্ত লোহিত কার্তিকেয় চরণকমলে সংসারক্লেশতপ্ত মদীয় মনঃষটপদ সদা প্রমোদ প্রাপ্ত হোক ||৯||

সুবর্ণাভদিব্যাম্বরৈর্ভাসমানাং

ক্কণৎকিঙ্কিণীমেখলাশোভমানাম্ ।

লসদ্ধেমপট্টেন বিদ্যোতমানাং

কটিং ভাবয়ে স্বন্দ তে দীপ্যমানাম্ ||১০||

ভাবার্থ - হে স্কন্দ, যা স্বভাব-ভাস্বর সুবর্ণাভ দিব্যবসনে শোভিত কিঙ্কিণীমুখর মেখলাদামে বিরাজমান, সুবর্ণময় সুচারুপীঠে অধিরূঢ় তুমি যাকে ( অধিকতর ) উজ্জ্বল করেছ, আমি সেই তোমার কটিদেশকে ভাবনা করি ||১০||

পুলিন্দেশকন্যা ঘনাভোগতুঙ্গ–

স্তনালিঙ্গনাসক্ত কাশ্মীররাগম্ ।

নমনস্যাম্যহং তারকারে তবোরঃ

স্বভক্তাবনে সর্ব্বদা সানুরাগম্ ||১১||

ভাবার্থ - হে তারকাসুর বিজয়িন, পুলিন্দ রাজতনয়ার ঘন পীবর তুঙ্গ স্তনালিঙ্গনে তদীয় কুঙ্কুমরাগ রঞ্জিত, স্বভক্তরক্ষণের সদা অনুরাগী, তোমার বক্ষঃস্থলকে আমি নমস্কার করি ||১১||

বিধৌ কৃপ্তদণ্ডান স্বলীলাধৃতাণ্ডান্

নিরস্তেভশুণ্ডান দ্বিষৎকালদণ্ডান্ ৷

হতেন্দ্রারিষণ্ডান জগত্রাণশৌণ্ডান

সদা তে প্রচন্ডাশ্রয়ে বাহুদণ্ডাণ ||১২||

ভাবার্থ - ( হে কার্তিকেয় ) তোমার যে করিশুণ্ডদর্পহারী অসুরসঙ্ঘ বিজয়ী লোকরক্ষাদক্ষ প্রচন্ড বাহুদণ্ড চন্দ্রের দণ্ড বিধান করেছেন, নিজ লীলা বশে আণ্ড অর্থাৎ অণ্ডজ ( কুক্কুট পক্ষী ) ধারণ করেছেন অথবা নিজ লীলা বশে আণ্ড অর্থাৎ ব্রহ্মান্ডের ধারণ হেতু এবং শত্রুগণের কালদন্ড স্বরূপ, আমি সর্বদা তাদের আশ্রিত গ্রহণ হচ্ছি ||১২||

সদা শারদাঃ ষণ্ মৃগাঙ্কা যদি স্যুঃ

সমুদ্যন্ত এব স্থিতাশ্চেৎ সমন্তাৎ ।

সদা পূর্ণবিম্বাঃ কলঙ্কৈশ্চ হীনা–

স্তদা ত্বন্মুখানাং ব্রুবে স্কন্দ সাম্যম ||১৩||

ভাবার্থ - হে স্কন্দ, যদি সর্বদা শরৎকালীন ছয়টি চন্দ্র হয়, এবং যদি একসঙ্গে চতুর্দিকে উদিত হয়, এবং সদা পূর্ণমন্ডল ও নিকলঙ্ক হয়, তাহলে তোমার ষড়াননের সাদৃশ্য আছে বলতে পারি, অর্থাৎ তোমার মুখমণ্ডল জগতে অতুলনীয় ||১৩||

স্ফুরন্মন্দহাসৈঃ সহংসানি চঞ্চৎ–

কটাক্ষাবলী ভৃঙ্গ সঙ্ঘোজ্জ্বলানি ।

মধুস্যন্দি বিম্বাধরানীশসূনো

তবালোকয়ে ষন্মুখাম্ভোরুহাণি ||১৪||

ভাবার্থ - হে মহেশ্বরনন্দন, স্ফুরিত মৃদুমন্দ হাস্য যোগে হংসশোভিত কটাক্ষপাত স্বরূপ ভ্রমরাবলি দ্বারা বিরাজিত মধুনিস্যন্দি বিম্বাধর যুক্ত তোমার ছয়টি মুখপদ্ম আমি অবলোকন করতেছি ||১৪||

বিশালেষু কর্ণান্তদীর্ঘেষ্বজস্রং

দয়াস্যন্দিষু দ্বাদশস্বীক্ষণেষু ।

ময়ীষৎ কটাক্ষঃ সকৃৎ পাতিতশ্চেদ্

ভবেৎ তে দয়াশীল কা নাম হানিঃ ||১৫||

ভাবার্থ - কর্ণপ্রান্ত পর্যন্ত আয়ত নিরন্তর করুণামৃতবর্ষী দ্বাদশলোচনের মধ্যে ( কোন এক লোচনের ) ঈষৎ কটাক্ষপাত যদি আমার প্রতি করো, হে দয়াশীল, তাতে তোমার হানি কি? ||১৫||

সুতাঙ্গোদভবো মেহসি জীবেতি ষড়ধা

জপন মন্ত্রমীশো মুদা জিঘ্রতে যান ।

জগদ্ভারভৃদ্ভ্যো জগন্নাথ তেভ্যঃ

কিরীটোজ্জ্বলেভ্যো নমো মস্তকেভ্যঃ ||১৬||

ভাবার্থ - হে পুত্র, তুমি আমার দেহ হতে উৎপন্ন, বেঁচে থাক – এই আশীর্ম্মন্ত্র ছয় ছয়বার জপ করে মহেশ্বর আনন্দ সহকারে যাকে আঘ্রাণ করেছেন, হে জগৎপথে, জগদভারহারী কিরীটোজ্জ্বল সেই তোমার মস্তক সকলকে ( আমার ) নমস্কার ||১৬||

স্ফুরদ্রত্নকেয়ূরহারাভিরাম–

শ্চলৎকুণ্ডলশ্রীলসদ্গণ্ডভাগঃ ।

কটৌ পীতবাসাঃ করে চারুশক্তিঃ

পুরস্তান্মমাস্তাং পুরারেস্তনূজঃ ||১৭||

ভাবার্থ - যিনি রত্নোজ্জ্বল কেয়ূরহারে রমনীয়, যার গণ্ডস্থল দোদুল্যমান কুণ্ডলশ্রী পরিশোভিত, কটিতটে পীত বস্ত্র ও হস্তে সুন্দর শক্তি অস্ত্র, সেই ত্রিপুরারি নন্দন আমার সম্মুখে অবস্থিতি করুন ||১৭||

ইহায়াহি বৎসেতি হস্তং প্রসার্য্যা

হ্বয়ত্যাদরাচ্ছঙ্করো মাতুরঙ্কাৎ ।

সমুৎপত্য তাতং শ্রয়ন্তং কুমারং

হরাশ্লিষ্টগাত্রং ভজে বালমূর্তিম||১৮||

ভাবার্থ - ‘বৎস এখানে এস' এই বলে হস্তদ্বয় প্রসারণ পূর্বক শিব আদরে আহ্বান করলে যিনি মাতৃক্রোড় হতে ঝাঁপিয়ে পিতাকে আশ্রয় করেন, শিবালিঙ্গিত সেই বালক মূর্তি কুমারকে ভজনা করি ||১৮||

কুমারেশসূনো গুহ স্কন্দ সেনা

পতে শক্তিপাণে ময়ূরাধিরূঢ় ।

পুলিন্দাত্মজাকান্ত ভক্তার্তিহারিন্

প্রভো তারকারে সদা রক্ষ মাং ত্বম ||১৯||

ভাবার্থ - হে ঈশনন্দন কুমার, স্কন্দ, হে শক্তিপাণে ময়ূরবাহন গুহ, হে পুলিন্দতনয়াপতে ভক্তদুঃখহারিন প্রভো তারক-বিজয়িন, আমাকে সর্বদা রক্ষা করো ||১৯||

প্রশান্তেন্দ্রিয়ে নষ্টসংজ্ঞে বিচেষ্টে

কফোদগারিবক্ত্রে ভয়োৎকম্পিগাত্রে ।

প্রয়াণোন্মুখে ময্যনাথে তদানীং

দ্রুতং মে দয়ালো ভবাগ্রে গুহ ত্বম ||২০||

ভাবার্থ - আমার ইন্দ্রিয়চয় শক্তিহীন, সংজ্ঞালুপ্ত, মুখ হতে কফ উদগীর্ণ, গাত্র ভয়ে কম্পিত, মৃত্যু আসন্ন, অনাথ আমি চেষ্টাহীন, তখন হে দয়ালু গুহ, আমার সম্মুখে আসো||২০||

কৃতান্তস্য দূতেষু চণ্ডেষু কোপা–

দ্দহ-চ্ছিন্দিভিন্দীতি মাং তর্জ্জয়ৎসু ।

ময়ূরং সমারুহ্য মাভৈরিতি ত্বং

পুরঃ শক্তিপাণি-র্মমায়াহি শীঘ্রম ||২১||

ভাবার্থ - যখন প্রচন্ড যমদূতগণ সক্রোধে তর্জন করিবে, ‘একে দগ্ধ করো, কেটে ফেলো, ফেঁড়ে ফেলো ', তখন ময়ূরে আরোহন পূর্বক শক্তি-হস্তে লয়ে মাভৈঃ বলতে বলতে সত্বর আমার সম্মুখে আসো ||২১||

প্রণম্যাসকৃৎ পাদয়োস্তে পতিত্বা

প্রসাদ্য প্রভো প্রার্থয়েহনেকবারম্ ।

ন বক্তুং ক্ষমোহহং তদানীং কৃপাব্ধে

ন কার্য্যন্তকালে মনাগপ্যুপেক্ষা ||২২||

ভাবার্থ - হে প্রভো, তোমার পায়ে পড়ে প্রনাম দ্বারা প্রসন্নতা বিধান করে বারংবার প্রার্থনা করতেছি, সেই সময় বলবার সামর্থ্য থাকবে না, হে কৃপাসিন্ধু ( তাই বলে ) যেন অন্তকালে একটু অপেক্ষা করো না ||২২||

সহস্রাণ্ডভোক্তা ত্বয়া শূরনামা

হতস্তারকঃ সিংহবক্ত্রশ্চ দৈত্যঃ ।

মমান্তর্হৃদিস্থং মনঃ ক্লেশমেকং

ন হংসি প্রভো কিং করোমি ক্ব যামি ||২৩||

ভাবার্থ - তুমি সহস্র ব্রহ্মাণ্ডভোক্তা বিখ্যাত অসুর তারককে এবং সিংহবক্ত্র, দৈত্যকে বিনষ্ট করেছ, হে প্রভো, আমার হৃদয়াভ্যন্তরে অবস্থিত একটা মনঃক্লেশকে নষ্ট না করো তো আমি কি করব, কোথায় যাব? ||২৩||

অহং সর্ব্বদা দুঃখভারাবসন্নো

ভবান দীনবন্ধুস্ত্বদন্যং ন যাচে ।

ভবদ্ভক্তিরোধং সদা কৃপ্তবাধং

মমাধিং দ্রুতং নাশয়োমা সুত ত্বম ||২৪||

ভাবার্থ - হে উমাতনয়, আমি সর্বদা দুঃখভারে অবসন্ন, আপনি দীনবন্ধু, আমি আপনার ব্যতীত ( কারোও নিকট ) প্রার্থনা করিবো না। আপনার ভক্তির প্রতিবন্ধক নিত্যকৃতের বাধাজনিত যে মনঃপীড়া আমার আছে, অবিলম্বে তা বিনাশ করুন||২৪||

অপস্মারকুষ্ঠক্ষয়ার্শঃপ্রমেহঃ

জরোন্মাদগুল্মাদিরোগা মহান্তঃ ।

পিশাচাশ্চ সর্ব্বে ভবৎপত্রভূতিং

বিলোক্য ক্ষণাৎ তারকারে দ্রবন্তে ||২৫||

ভাবার্থ - হে তারকাসুর শত্রু, অপস্মার, কুষ্ঠ, ক্ষয়, অর্শঃ, প্রমেহ, জ্বর, উন্মাদ এবং গুল্ম প্রভৃতি মহান রোগসকল এবং সমস্ত পিশাচগণ, আপনার বাহনের ঐশ্বর্য দর্শন করেই ক্ষণমধ্যে পলায়ন করে ||২৫||

দৃশি স্কন্দ মূর্তিঃ শ্রুতৌ স্কন্দকীর্তি

র্মুখে মে পবিত্রং সদা তচ্চরিত্রম্ ।

করে তস্য কৃত্যং বপুস্তস্য ভৃত্যং

গুহে সন্তু লীনা মমাশেষভাবাঃ ||২৬||

ভাবার্থ - আমার নয়নে কার্তিকেয়ের মূর্তি, তার কীর্তি কথা, মুখের সর্বদাই তার পবিত্র চরিত্র, হস্তে তাঁরই কর্ম এবং সর্বশরীরে তাঁরই ভৃত্যভাব। এই রূপ আমার সমস্ত সত্তাই যেন কার্তিকেয়ে লীন হয়ে থাকে ||২৬||

মুনীনামুতাহো নৃণাং ভক্তিভাজা–

মভীষ্টপ্রদাঃ সন্তি সর্ব্বত্র দেবাঃ ।

নৃণামন্ত্যজানামপি স্বার্থদানে

গুহ্যদ্দেবমন্যং ন জানে ন জানে ||২৭||

ভাবার্থ - মুনিগণ ও ভক্তিভাজন মানব গণের অভীষ্ট দাতা দেবগন সর্বত্র আছেন, কিন্তু অন্ত্যজ মানবগণেরও স্বার্থ প্রদানে এক কার্তিকেয় ব্যতীত অপর দেবতা আমি জানিনা, জানিনা ||২৭||

কলত্রং সুতা বন্ধুবর্গঃ পশুর্বা

নরো বাথ নারী গৃহে যে মদীয়াঃ ।

যজন্তো নমন্তঃ স্তুবন্তো ভবন্তং

স্মবন্তশ্চ তে সন্তু সর্ব্বে কুমার ||২৮||

ভাবার্থ - ভার্য্যা, কন্যা, পুত্র, বন্ধুবর্গ অথবা পশু ( অধিক কি ) আমার সম্বন্ধযুক্ত পুংজাতি বা স্ত্রী জাতি যারা আছে, হে কার্তিকেয়, তারা সকলেই যেন ( যথাসম্ভব ) যজন, প্রণাম, স্তব ও স্মরণে রত থাকে ||২৮||

মৃগাঃ পক্ষিণো দংশকা যে চ দুষ্টা–

স্তুথা ব্যাধয়ো বাধকা যে মদঙ্গে ।

ভবচ্ছক্তিতীক্ষ্ণগ্রভিন্নাঃ সুদূরে

বিনশ্যন্তু তে চূর্ণিতক্রৌঞ্চশৈল ||২৯||

ভাবার্থ - হে ক্রৌঞ্চপর্বত বিদারণ, যে সকল দুষ্ট মৃগ, পক্ষী, দংশক এবং যেসকল দুষ্টব্যাধি আমার দেহে আছে, আপনার শক্তি অস্ত্রের তীক্ষ্ণাগ্রভাগ দ্বারা বিদীর্ণ হয়ে তার বিনাশপ্রাপ্ত হোক ||২৯||

জনিত্রী পিতা চ স্বপুত্রাপরাধং

সহেতে ন কিং দেবসেনাধিনাথ ।

অহং চাতিবালো ভবান লোকতাতঃ

ক্ষমাস্বাপরাধং সমস্তং মহেশ ||৩০||

ভাবার্থ - হে দেবসেনাপতে, মাতা পিতা কি নিজ পুত্রের অপরাধ ক্ষমা করেন না? আমি অতি বালক, আপনি জগৎ পিতা, অতএব হে মহান ঈশ, আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করতেই হবে ||৩০||

নমঃ কেকিনে শক্তয়ে চাপি তুভ্যং

নমশ্ছাগ তুভ্যং নমঃ কুক্কুটায় ।

নমঃ সিন্ধবে সিন্ধুদেশায় তুভ্যং

পুনঃ স্কন্দমূর্তে নমস্তে নমোহস্তু ||৩১||

ভাবার্থ -( হে কার্তিকেয় ) তোমার প্রীত্যর্থে ময়ূরকে নমস্কার, শক্তি অস্ত্রকে নমস্কার, কুক্কুট কে নমস্কার, হে ছাগ, তোমাকেও নমস্কার । ( হে কার্তিকেয় ) তুমি সমুদ্র দেশে অবস্থিত, তোমাকে এবং সমুদ্রকে নমস্কার। হে স্কন্দরূপ ধারিন, তোমাকে আমার নমস্কা, নমস্কার ||৩১||

জয়ানন্দভূমন জয়াপারধামন

জয়ামোঘকীর্ত্তে জয়ানন্দমূর্তে ।

জয়ানন্দসিন্ধো জয়াশেষবন্ধো

জয় ত্বং সদা মুক্তিদানেশসূনো ||৩২||

ভাবার্থ - হে আনন্দভূমন, তোমার জয়। হে অশেষ তেজোনিধি, তোমার জয়। হে অমোঘকীর্তে, তোমার জয়, হে আনন্দ মূর্তে, তোমার জয়, হে আনন্দ সাগর, তোমার জয়। হে অশেষ জনের বন্ধু, তোমার জয়, হে সদা মুক্তিদান ব্রতী শিবনন্দন, তোমার জয় হোক ||৩২||

ভুজঙ্গাখ্যবৃত্তেন কৃপ্তং স্তবং যঃ

পঠেদ্ ভক্তিযুক্তো গুহং সংপ্রণম্য ।

সপুত্রান কলত্রং ধনং দীর্ঘমায়ু–

র্লভেত স্বয়ং স্কন্দসাযুজ্যমন্তে ||৩৩||

ভাবার্থ - ভুজঙ্গ প্রয়াত নামক ছন্দে গ্রথিত এই স্তোত্র যে ব্যক্তি ভক্তি যুক্ত হয়ে কার্তিকেয়কে প্রণাম পূর্বক পাঠ করবে, সে বহুপুত্র, ভার্য্যা, ধন ও দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত হয়ে অন্তকালে স্বয়ং কার্তিকেয়সাযুজ্য লাভ করে ||৩৩||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ সুব্রাহ্মণ্য ভুজঙ্গ স্তোত্রং সম্পূর্ণম ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ্ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত সুব্রাহ্মণ্য ভুজঙ্গ প্রয়াত স্তোত্র সমাপ্ত।

 

Sunday, 18 April 2021

“অচ্যুতাষ্টকম্”

 

 

শ্রীগণেশায় নমঃ ।

অচ্যুতাচ্যুত হরে পরমাত্মন, রাম কৃষ্ণ পুরুষোত্তম বিষ্ণো।

বাসুদেব ভগবন্ননিরুদ্ধ, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||১||

ভাবার্থ - হে অচ্যুত ! তুমি অব্যয়। হে হরে ! তুমি পরমাত্মা, তুমিই রাম, তুমিই কৃষ্ণ। হে বিষ্ণো ! তুমি সকল পুরুষের শ্রেষ্ঠ। হে বাসুদেব, হে অনিরুদ্ধ, হে শ্রীপতে, তুমি মদীয় অশেষ দুঃখের শান্তিবিধান কর ||১||

বিশ্বমঙ্গল বিভো জগদীশ, নন্দনন্দন নৃসিংহ নরেন্দ্র।

মুক্তিদায়ক মুকুন্দ মুরারে, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||২||

ভাবার্থ – হে বিভো ! তুমি জগতের কল্যাণ সাধন কর। হে জগদীশ, হে নন্দনন্দন, হে নৃসিংহরূপিন্। হে নরেন্দ্র ! তুমি ভক্তজনের মুক্তিবিধান কর। হে মুকুন্দ, হে মুরারে, হে শ্রীপতে, তুমি আমার আমার অশেষ দুঃখের শান্তিবিধান কর ||২||

রামচন্দ্র রঘুনায়ক দেব, দীননাথ দুরিতক্ষয়কারিন্ ।

যাদবেন্দ্র যদুভূষণ যজ্ঞ, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৩||

ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি রামচন্দ্ররূপে অবতীর্ণ হয়েছ, তুমিই রঘুবংশের অধিনায়ক। তুমি দীনব্যক্তির আশ্রয়, তুমি ভক্তবৃন্দের দুষ্কৃতি ক্ষয় কর, তুমি যাদবগণের ইন্দ্রস্বরূপ, যদুবংশের অলঙ্কার এবং তুমি যজ্ঞরূপ ধারণ করেছ। হে শ্রীপতে, তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তিবিধান কর ||৩||

দেবকীতনয় দুঃখদবাগ্রে, রাধিকারমণ রম্য সুমূর্তে ।

দুঃখমোচন দয়ার্ণব নাথ, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৪||

ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি দেবকীর পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়েছ, তুমি মানবগণের দুঃখকাননের অগ্নিস্বরূপ। হে রাধিকারমণ, তোমার মূর্তি অতি মনোহর। হে নাথ, তুমি সকলের দুঃখমোচন কর, তুমি কৃপাসাগর। হে শ্রীপতে, তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তিবিধান কর ||৪||

গোপিকাবদনচন্দ্রচকোর, নিত্য নির্গুণ নিরঞ্জন জিষ্ণো।

পূর্ণরূপ জয় শঙ্কর শর্ব্ব, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৫||

ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি গোপিকা মুখশশধরের চকোরস্বরূপ। তুমি ত্রিগুণাতীত, নিত্য, নিরঞ্জন। তুমি জয়শীল, পূর্ণব্রহ্ম ; তুমি সকলের কল্যাণ বিধান কর। তুমি সংহারকর্তা, তোমার জয় হউক। হে শ্রীপতে, তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তি বিধান কর ||৫||

গোকুলেশ গিরিধারণ-ধীর, যামুনাচ্ছতটখেলন বীর ।

নারদাদিমুনিবন্দিতপাদ, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৬||

ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি গোকুলের অধিপতি, গোবর্দ্ধন পর্ব্বত ধারণ করেও অচলভাবে বিরাজিতা ছিলে৷ তুমি যমুনার নির্মল তটভূমে ক্রীড়া করে থাক এবং তুমিই জগতের অদ্বিতীয় বীর। নারদাদি মুনিবৃন্দ সর্ব্বদা তোমার পাদপদ্ম সেবা করতেছে। হে শ্রীপতে ! তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তি বিধান কর ||৬|| 

দ্বারকাধিপ দুরূহ গুণাব্ধে, প্রাণনাথ পরিপূর্ণ ভবারে ।

জ্ঞানগম্য গুণসাগর ভূমন শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৭||

 ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি দ্বারকাপুরীর অধিনায়ক, তুমি তর্কপথে অজ্ঞেয়, তুমি গুণের সাগর, তুমি প্রাণনাথ ও পূর্ব্বব্রহ্মস্বরূপ, তুমি মানবের সংসার বিনাশ কর। হে ভূমন্, তুমি একমাত্র জ্ঞানের গোচর এবং তুমি ত্রিগুণনদীর তিরোধান স্থান। হে শ্রীপতে, তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তি বিধান কর ||৭||

 দুষ্টনির্দ্দমন দেব দয়ালো, পদ্মনাভ ধরণীধর ধীমন ।

রাবণান্তক রমেশ মুরারে, শ্রীপতে শময় দুঃখমশেষম ||৮||

 ভাবার্থ - হে দেব ! তুমি দুষ্টগণের নিঃশেষদলন কর, তুমি অতিশয় কৃপালু; হে পদ্মনাভ, তুমি অনন্তরূপে বসুমতী ধারণ করেছ, তুমি সর্ববুদ্ধির আধার। তুমি রাবণের সংহারসাধন করেছ, হে রমেশ, হে মুরারে। হে শ্রীপতে, তুমি আমার অশেষ দুঃখের শান্তি বিধান কর ||৮||

অচ্যুতাষ্টকমিদং রমণীয়ং নির্মিত ভবভয়ং বিনিহন্তুম্ ।

 যঃ পঠেদ বিষয় বৃত্তি-নিবৃত্তি, জন্ম-দুঃখমখিলং স জহাতি ||৯|| 

ভাবার্থ - সংসার দুঃখ সংহারার্থ পরম রমণীয় এই অচ্যুতাষ্টক স্তোত্র প্রণয়ন করেছেন। যিনি এই স্তোত্র পাঠ করেন, তিনি বিষয় ভোগবাসনায় নিবৃত্ত হয়ে অখিল জন্ম-দুঃখ পরিহারে সর্মথ হবেন ||৯||

 

 ||ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ অচ্যুতাষ্টকম স্তোত্রং সম্পূর্ণম || 

 ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত অচ্যুতাষ্টক স্তোত্র সমাপ্ত।

Friday, 16 April 2021

“লক্ষ্মীনৃসিংহ পঞ্চরত্নম্”

  



ত্বৎপ্রভুঞ্জীবপ্রিয়মিচ্ছসি চেন্নরহরিপূজাং কুরু সততং 

প্রতিবিম্বালঙ্কৃতিধৃতিকুশলো বিশ্বালঙ্কৃতিমাতনুতে । 

চেতোভৃঙ্গ ভ্রমসি বৃথা ভবমরুভূমৌ বিরসায়াং 

ভজ ভজ লক্ষ্মীনরসিংহানঘপদসরসিজমকরন্দম্ ||১||

ভাবার্থ- (হে চিত্ত) যদি তুমি নিজ প্রভু জীবের প্রিয়সাধন করতে ইচ্ছা কর তো সতত নরহরি পূজা কর, (দর্পণাদিস্থিত মুখাদি) প্রতিবিম্বে অলঙ্কার ধারণ কার্য্যে কুশল হতে হলে বিম্বকে অলঙ্কৃত করতে হয়। তাই বলি, হে চিত্তভ্রমর! নীরস সংসার মরুভূমিতে বৃথা ভ্রমণ করছ, লক্ষ্মীনৃসিংহদেবের নির্মল চরণকমল মকন্দর পুনঃ পুনঃ সেবন কর ||১||

শুক্তৌ রজতপ্রতিভা জাতা কটকদ্যার্থসমর্থা চেদ্

 দুঃখময়ী তে সংসৃতিরেষা নির্বৃতিদানে নিপুণা স্যাৎ । 

চেতোভৃঙ্গ ভ্রমসি বৃথা ভবমরুভূমৌ বিরসায়াং

ভজ ভজ নক্ষ্মীনরসিংহানঘপদসরসিজমকন্দরম্ ||২||

 ভাবার্থ- শুক্তিতে রজতবুদ্ধি হলে যদি বলয় প্রভৃতি অলঙ্কারের উপযুক্ত হয়, তবেই এই দুঃখময় সংসার সুখপ্রদানে সমর্থ হবে। অর্থাৎ ভ্রমকল্পিত রজতে যেমন অলঙ্কারাদি গঠন হয় না, মিথ্যা কল্পিত সংসারেও সেইরূপ সুখের কারণ হতে পারে না, হে চিত্তভ্রমর, নীরস সংসার মরুভূমিতে বৃথা ভ্রমণ করছ, শ্রী লক্ষ্মীনৃসিংহদেবের নির্মল চরণকমল মকরন্দ পুনঃ পুনঃ সেবন কর||২||

আকৃতিসাম্যাচ্ছাল্মলিকুসুমে স্থলনলিনত্বভ্রমমকরো- 

র্গন্ধরসাবিহ কিমু বিদ্যেত বিফলং ভ্রাম্যসি ভৃশবিরসহেস্মিন্ । 

চেতোভৃঙ্গ ভ্রমসি বৃদ্ধ ভবমরুভূমৌ বিরসায়াং 

ভজ ভজ লক্ষ্মীনরসিংহানঘপদসরসিজমকরন্দম্ ||৩||

 ভাবার্থ - হে চিত্তভ্রমর, আকার-সাদৃশ্যে তুমি শিমুলফুলে স্থলপদ্ম ভ্রম করেছ, এতে গন্ধরস আছে কি? এই গন্ধরসহীন শিমুলফুলে বৃথা ভ্রমণ করছ। তাই বলি হে চিত্তভ্রমর, নীরস সংসার মরুভূমিতে বৃথা ভ্রমণ করছ, শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহদেবের নির্মল চরণকমল মকরন্দ পুনঃ পুনঃ সেবন করি||৩||

স্রকচন্দন বনিতাদীন বিষয়ান সুখদান মত্বা তত্র বিহরসে 

গন্ধফলীসদৃশা ননু তেহমী ভোগানন্তরদুঃখ কৃতঃ স্যুঃ। 

চেতোভৃঙ্গ ভ্রমসি বৃথা ভবমরুভূমৌ বিরসায়াং 

ভজ ভজ লক্ষ্মীনরসিংহানঘপদসরসিজমকরন্দম্||৪||

 ভাবার্থ - (হে চিত্ত) স্রকচন্দন-বনিতাদি বিষয়-সমূহকে সুখজনক মনে করে তাতে বিহার করছ, ওহে তারা যে চম্পক কলিকার তুল্য ভোগানন্তর দুঃখকরই হয়ে থাকে। অর্থাৎ মধুলোভে স্বাদগ্রহণের পরেই মধু না পাওয়াতে বিশেষতর তিক্তাস্বাদ চম্পক কলিকা যেমন দুঃখ হেতু হয়, সুখলোভে ভোগ করবার পরেই সুখের পরিবর্তে সংসারও সেইরূপ দুঃখকর হয়ে থাকে। হে চিত্তভ্রমর, নীরস, সংসার মরুভূমিতে বৃথা ভ্রমণ করছ, শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহদেবের নির্মল চরণকমল মকরন্দ পুনঃ পুনঃ সেবন কর ||৪||

তব হিতমেকং বচনং বক্ষ্যে শৃণু সুখকামো যদি সততং

স্বপ্নে দৃষ্টং সকলং হি মৃষা জাগ্রতি চ স্মর তদ্বদিতি । 

চেতোভৃঙ্গ ভ্রমসি বৃথা ভবমরুভূমৌ বিরসায়াং 

ভজ ভজ নক্ষ্মীনরসিংহনঘপদসরসিজমকরন্দম্ ||৫||

 ভাবার্থ- হে চিত্তভ্রমর, যদি সদা সুখাভিলাষী হয়ে থাক তো, তোমাকে একটি হিতকথা বলব, শুন। যেমন স্বপ্ন দৃষ্ট সকল বস্তুই জাগ্রতাবস্থায় মিথ্যা বলে স্মরণ করে থাক, জাগ্রতাবস্থায় দৃষ্ট বস্তুও সেইরূপ মিথ্যা স্মরণ করবে। হে চিত্তভ্রমর, নীরস সংসার মরুভূমিতে বৃথা ভ্রমণ করছ, শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহদেবের নির্মল চরণকমল মকরন্দ পুনঃ পুনঃ সেবন কর ||৫|| 

||ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ লক্ষ্মীনৃসিংহ পঞ্চরত্নম সম্পূর্ণম || 

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত লক্ষ্মীনৃসিংহ পঞ্চরত্ন সমাপ্ত।

হৃদয়ে অবস্থিতি ও উৎক্রান্তি প্রভৃতি বুদ্ধ্যাদিরূপ উপাধিরই, তাহারা তদুপাধিক জীবে কথিত হওয়ায় জীবের অনুত্ব অসিদ্ধঃ-



বেদান্ত দর্শনের উৎক্রান্তিগত্যধিকরণের সিদ্ধান্ত হইল জীব স্বরূপত বিভু। হৃদয়ে অবস্থিতিবশতঃ জীবের অণুতা প্রতিপাদিত হয়, এইরূপ শঙ্কা জন্মিলে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন- উৎক্রান্তি, গতি , অগতি ইত্যাদি হইল বুদ্ধির গুণ, কিন্তু এইগুলিকে জীবাত্মার উপরই আরোপ করা হয়। এই একই কারণে অর্থাৎ বুদ্ধির সসীমতাহেতু আত্মাকে অণু বলিয়া মনে করা হয়, কিন্তু আত্মা স্বরূপতঃ বিভু। যেমন উপাসনার সৌকর্যর জন্য সর্বব্যাপী পরমাত্মাকে সসীম বলিয়া জ্ঞান করা হয়-ইহাও অনেকটা সেইরূপ।

'তদ্গুণসারত্বাত্তু তদ্ব্যপদেশঃ প্রাজ্ঞবৎ '-(ব্রহ্মসূত্র-২.৩.২৯)

শারীরকভাষ্যম্ এ ভগবৎপূজ্যপাদ শঙ্করাচার্য বলিতেছেন-হৃদয়রূপ আশ্রয়ে জীবের অবস্থিতিবোধক বাক্যও বুদ্ধিরই বলিয়া বুঝিতে হইবে, যেহেতু হৃদয় তাহারই আশ্রয়।

এইপ্রকারে উৎক্রান্তি প্রভৃতিরও উপাধির অধীনতা শ্রুতি প্রদর্শন করিতেছেন। যথা-

'কস্মিন্নু অহমুত্ক্রান্ত উত্ক্রান্তো ভবিষ্যামি কস্মিন্বা প্রতিষ্ঠিতে প্রতিষ্ঠাস্যামীতি' 'স প্রাণমসৃজত'-(প্রশ্ন উপনিষৎ-৬।৩-৪)

"কে উৎক্রমণ করিলে আমি উৎক্রান্ত হইব এবং কেই বা শরীরে অবস্থিত হইলে আমি অবস্থিত থাকিব", "তিনি প্রাণকে (-বুদ্ধিসহ সমষ্টি লিঙ্গশরীরকে) সৃষ্টি করিলেন", ইত্যাদি শ্রুতি।

আর উৎক্রান্তির অভাবে গমন ও আগমনেরও অভাব অবগত হওয়া যাইতেছে। যেহেতু দেহ হইতে অনিষ্ক্রান্ত কাহারও গমন ও আগমন সম্ভব নহে। এইপ্রকারে উপাধির গুণসকল সার অর্থাৎ প্রধানভাবে প্রতীয়মান হয় বলিয়া জীবের অণুত্বাদি কথন হইয়া থাকে, যেমন প্রাজ্ঞের হইয়া থাকে। যেমন প্রাজ্ঞের অর্থাৎ পরমাত্মার সগুণ উপাসনাসকলে উপাধিনিষ্ঠ গুণের প্রাধান্যবশতঃ অণুত্ব প্রভৃতির উপদেশ হইয়া থাকে, যথাঃ-

'অণীয়ান্ব্রীহের্বা যবাদ্বা' 'মনোময়ঃ প্রাণময়ঃ প্রাণশরীরঃ.... সর্বগন্ধঃ সর্বরসঃ'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৩।১৪।৩,২)'সত্যকামঃ সত্যসংকল্পঃ'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৮।১।৫)

"ব্রীহি (-ধান্য) বা যব হইতে ক্ষুদ্রতর" "তিনি মনোময় (-মনোবৃত্তিসকলের দ্বারাই তদুপাধিক তিনি যেন বিষয়ে প্রবৃত্ত ও তাহা হইতে নিবৃত্ত হন), প্রাণশরীর (জ্ঞান ও ক্রিয়াশক্তিযুক্ত লিশরীররূপ উপাধিযুক্ত), "সকলপ্রকার সুখকর গন্ধযুক্ত", "সকলপ্রকার সুখকর রসযুক্ত", "অব্যর্থকামনাবান সত্যসঙ্কল্প।"

ইত্যাদি এইপ্রকারের ন্যায়।

 

Wednesday, 14 April 2021

ব্রহ্মবিদ্যা প্রাপ্তির উপায়ঃ-

 



সামবেদীয় তলবকার ব্রাহ্মণের অন্তর্গত কেন উপনিষদে বর্ণিত আছে-

তস্যৈ তপো দমঃ কর্মেতি প্রতিষ্ঠা, বেদাঃ সর্বাঙ্গানি, সত্যমায়তনম্ ।

-(কেনোপনিষৎ-৪/৮)

ভগবৎপাদ্ শ্রী শঙ্করাচার্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- আচার্য বলিলেন - তোমার নিকট পূর্বে যে ব্রাহ্মী উপনিষৎ অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্যা বলিলাম সেই পূর্বকথিত উপনিষদের ( ব্রহ্মবিদ্যার ) প্রাপ্তির উপায়স্বরূপ হইতেছে তপস্যা প্রভৃতি। 'তপঃ' শব্দে এখানে শরীর, ইন্দ্রিয় ও মনের একাগ্রতা বুঝাইতেছে। 'দম' অর্থ ইন্দ্রিয়ের বিষয়ভোগে নিবৃত্তি। কর্ম শব্দে অগ্নিহোত্র প্রভৃতি শাস্ত্রীয় কর্মকে বুঝিতে হইবে। দেখাও গিয়াছে যে এই সকল উপায়দ্বারা যিনি সংস্কারযুক্ত, সেই পুরুষেরই চিত্তশুদ্ধিদ্বারা তত্ত্বজ্ঞান উৎপত্তি হয়। আবার ইহাও দেখা গিয়াছে যে যাহার চিত্তের পাপ (মলিনতা) বিনষ্ট হয় নাই, তাহাকে ব্রহ্মবিদ্যার উপদেশ করিলেও ব্রহ্মবিষয়ে অজ্ঞান বা বিপরীতজ্ঞান হইয়া থাকে, যেমন (ছান্দোগ্য উপনিষদবর্ণিত) ইন্দ্র ও বিরোচন প্রভৃতির হইয়াছিল।

সুতরাং এই জন্মে বা অতীতে বহু জন্মান্তরে তপস্যা প্রভৃতি দ্বারা যাঁহার চিত্ত শুদ্ধ হইয়াছে, তাঁহারই উপনিষদুক্ত জ্ঞান উৎপন্ন হয়।

"যাঁহার পরমেশ্বরের প্রতি পরাভক্তি আছে, আবার পরমেশ্বরের প্রতি যেরূপ, গুরুতেও যদি সেইরূপ ভক্তি থাকে, তাহা হইলে সেই মহাত্মার নিকটেই উপনিষদুক্ত এই সকল তত্ত্ব স্বানুভবযোগ্য হয়।" এই (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬/২৩) মন্ত্রবর্ণ হইতে এবং

"পাপকর্মের ক্ষয় হইলে লোকের জ্ঞান উৎপন্ন হয়।"-(মহাভারতের শান্তি পর্ব-২০৪/৮)

এই স্মৃতিবাক্য হইতেও ইহা প্রতিপাদিত হয়।

মূলমন্ত্রের 'ইতি' শব্দটি উপলক্ষণার্থ (অর্থাৎ অন্যান্য সাধনের অন্তর্ভুক্তি) বুঝাইবার

জন্য ব্যবহৃত হইয়াছে। এইরূপ ইতি শব্দে 'অমানিত্ব, অদম্ভিত্ব' প্রভৃতিও যে জ্ঞানোৎপত্তির উপকারক, তাহা উল্লিখিত হইয়া যাইতেছে। প্রতিষ্ঠা অর্থ চরণদ্বয়। তপঃ প্রভৃতি ব্রহ্মবিদ্যার চরণদ্বয়ের মতো; যেহেতু তাহারা অর্থাৎ তপঃ প্রভৃতি সাধন থাকিলেই ব্রহ্মবিদ্যা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অভয় ও আনন্দদানে প্রবৃত্ত হয়, যেমন পায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হইয়াই পুরুষ কোন কার্যে প্রবৃত্ত হয়। ঋক্ প্রভৃতি চারিবেদ এবং শিক্ষা প্রভৃতি ছয় অঙ্গসকলও প্রতিষ্ঠা, কেননা বেদসকল কর্ম জ্ঞানের প্রকাশক এবং বেদাঙ্গগুলি বেদের রক্ষক বলিয়া তাহারা ব্রহ্মবিদ্যার প্রতিষ্ঠা।

সত্যই ব্রহ্মবিদ্যার আয়তন বা আশ্রয়, কারণ যেখানে ব্রহ্মবিদ্যা অবস্থান করেন তাহাই তাঁহার আয়তন বা আশ্রয় হয়। বাক্য, মন ও শরীরের অমায়িত্ব অর্থাৎ অকুটিলতা হইতেছে সত্য। যাঁহারা অমায়াবী অর্থাৎ কূটিলতারহিত সাধু তাঁহাদিগকেই ব্রহ্মবিদ্যা আশ্রয় করে, কিন্তু অসুর প্রকৃতির মায়াবীগণেতে ব্রহ্মবিদ্যা স্থিত হয় না।

শ্রুতিতে আছে- "যাঁহাদিগেতে কুটিলতা, অসত্য ও মিথ্যাচার নাই, ব্রহ্মবিদ্যা তাহাদিগকে আশ্রয় করে।"-(প্রশ্ন উপনিষৎ-১/১৬)

এইজন্য সত্যকে ব্রহ্মবিদ্যার আশ্রয় বলিয়া কল্পনা করা হয়। তপস্যা প্রভৃতির মধ্যেই প্রতিষ্ঠারূপে প্রাপ্ত সত্যের পুনরায় যে আয়তন রূপে গ্রহণ করা হইয়াছে, তাহা সাধনরূপে উহার শ্রেষ্ঠতা জানাইবার জন্য। তাছাড়া স্মৃতিতেও আছে-

"সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ আর সত্যকে যদি এক তুলা দণ্ডে ধরা হয়, তাহা হইলে সহস্র অশ্বমেধের অপেক্ষা এক সত্যই বিশিষ্ট অর্থাৎ অধিক হয়।"-(বিষ্ণু স্মৃতি-৮).....

 

Sunday, 11 April 2021

"গণেশভুজঙ্গ–প্রয়াত-স্তোত্র"

 



"গণেশভুজঙ্গপ্রয়াত-স্তোত্র"

রণৎ ক্ষুদ্র ঘণ্টা নিনাদাভিরামং

চলৎ তাণ্ডবোদ্দণ্ডবৎ পদ্মতালম্

লসৎ তুন্দিলাঙ্গোপরি ব্যাল হারং

গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ||||

ভাবার্থ - (শিরোমালারূপে অবস্থিত) মুখরিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘণ্টিকানিনাদ যাঁর রমণীয়তা সম্পাদন করছে, যিনি তাণ্ডবনৃত্যে উদ্দণ্ডবৎ শুণ্ড-সঞ্চালনে তাল প্রদান করছেন, যাঁর তুন্দিল-অঙ্গোপরি সর্পহার বিরাজমান, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

ধ্বনিধ্বংসবীণালয়োল্লাসি বক্ত্রং

স্ফুরচ্ছুণ্ডদণ্ডোল্লসদ্বীজপূরম্

গলদ্দর্পসৌগন্ধ্যলোলালিমালং

গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে||||

ভাবার্থ - যাঁর বদনোচ্চারিত রবে বীণাধ্বণি বিড়ম্বিত হচ্ছে, তাতে যাঁর বদনমণ্ডল উল্লসিত, যিনি মনোহর শুণ্ডদণ্ডে বীরপূর ধারণ পূর্ব্বক শোভা পাচ্ছেন, যাঁর ক্ষরিত-মদ-সৌগন্ধে ভ্রমরকুল চঞ্চলভাবে পরিভ্রমণ করছে, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

চকাসজ্জবারক্তরক্তপ্রসূন-

প্রবালপ্রভাতারুণজ্যোতিরেকম।

প্রলম্বোদরং বক্রতুণ্ডৈদন্তং

গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে||||

ভাবার্থ - প্রফুল্ল জবাপুষ্পের ন্যায় যাঁর কান্তি লোহিতবর্ণ, যিনি রক্তপুষ্প, প্রবাল প্রাতঃকালীন অরুণের ন্যায় অদ্বিতীয় জ্যোতিঃস্বরূপ, যিনি লম্বোদর, বক্রতুণ্ড এবং একদন্ত, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

বিচিত্রস্ফুরদ্রত্নমালাকিরীটাং

কিরীটোল্লসচ্চন্দ্ররেখাবিভূষম।

বিভূষৈকভূষং ভবধ্বংসহেতুং

গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে||||

ভাবার্থ - যিনি মস্তকে বিচিত্র জ্যোতির্ময়ী রত্নমালা কিরীট ধারণ করছেন, যাঁর ভালতটে দেদীপ্যমান শশিকলা বিভূষণরূপে সুশোভিত, যিনি ভূষণসমূহের একমাত্র ভূষণ ভববন্ধনবিমোচনের মূলীভূত, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

উদঞ্চদ্ভুজাবল্লরীদৃশ্যমূলো-

চ্চলদভ্রূলতাবিভ্রমভ্রাজিতাক্ষম্

মরুৎসুন্দরীচামরৈঃ সেব্যমানং

গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে||||

ভাবার্থ - (চামরব্যজনকালে সুররমণীগণের) বাহুলতা উর্দ্ধভাগে সম-ত্তোলিত হওয়ার তাঁর মূল দৃশ্য হয়, তৎপ্রসঙ্গে সঞ্চালিত ভ্রূলতা-বিভ্রমে যাঁর নয়ন শোভা পেয়ে থাকে, চামরবীজন দ্বারা সুররমণীগণ-সেবিত, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

স্ফুরন্নিষ্ঠুরালোলপিঙ্গাক্ষিতারং

কৃপাকোমলোদারলীলাবতারম্

কলাবিন্দুং গীয়তে যোগিবর্য্যৈ-

গনাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে||||

ভাবার্থ- যাঁর নেত্রতারকা জ্যোতির্বিমণ্ডিত, কঠোর, চপল পিঙ্গলবর্ণ, যিনি দয়া, মার্দ্দব ঔদার্য্যের লীলাবতারস্বরূপ এবং যোগিপ্রবরগণ যাঁকে কলা বিন্দুস্থিত বলে বর্ণনা করেন, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

যমেকাক্ষরং নির্মলং নির্বিকল্পং

গুনাতীতমানন্দমাকারশূন্যম্

পরং পারমোঙ্কারমাম্নায়গর্ভং

বদন্তি প্রগলভং পুরাণং তমীড়ে||||

ভাবার্থ - যাঁকে একাক্ষর, বিমল, বিকল্পরহিত, ত্রিগুণের অতীত, আনন্দময়, নিরাকার, পরম পার প্রণবস্বরূপ, বেদগর্ভ এবং পুরাতন পুরুষ বলে (মুনিগণ) স্পর্দ্ধা সহকারে কীর্তন করেন, সেই ঈশাননন্দন গণপতিদেবকে স্তব করি ||||

চিদানন্দসান্দ্রায় শান্তানয় তুভ্যং

নমো বিশ্বকর্ত্রে হর্ত্রে তুভ্যম

নমোহনন্তলীলায় কৈবল্যভাসে

নমো বিশ্ববীজ প্রসীদীশসূনো||||

ভাবার্থ - হে জগৎকারণ! তুমি চিদানন্দঘন শান্তমূর্তি; তোমাকে প্রণাম করি। তুমি বিশ্বচরাচরের কর্তা হর্তা; তোমাকে প্রণাম করি। তুমি অনন্ত লীলাময়, কৈবল্যপ্রকাশ, তোমাকে প্রণাম করি। হে ঈশানসূনো! আমার প্রতি প্রসন্ন হও ||||

ইমং সুস্তবং প্রাতরুত্থায় ভক্ত্যা

পঠেদষস্তু মর্ত্যো লভেৎ সর্ব্বকামান

গণেশপ্রসাদেন সিধ্যস্তি বাচো

গণেশ বিভৌ দুর্লভং কিং প্রসন্নে ||||

ভাবার্থ - প্রভাতে গাত্রোত্থান পুরঃসর ভক্তিমান্ হয়ে যে মানব এই উত্তম স্তব পাঠ করে, তাঁর সর্ব্বাভীষ্টলাভ এবং গজাননপ্রসাদে সে ব্যক্তি বাক্ সিদ্ধি লাভ করে। বিভু গণপতিদেব প্রসন্ন হলে কোন্ বস্তু দুর্লভ হয়? |||

ইতি ভগবৎপাদ্ শ্রীমচ্ছঙ্করাচার্যকৃতং

গণেশভুজঙ্গপ্রয়াতস্তোত্রং

সম্পূর্ণম্

ইতি ভগবান্ শঙ্করাচার্য বিরচিত গণেশভুজঙ্গ-প্রয়াত-স্তোত্র সমাপ্ত।

...............….....…......…..

শ্রীশুভ চৌধুরী।

গণেশ চতুর্থী, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।


আত্মানাত্মবিবেকঃ-

  আত্মা ও অনাত্মা অর্থাৎ আত্মা ভিন্ন দেহের পৃথকত্বের বিবেকবোধই আত্মানাত্মবিবেক। দেহকেই আমরা ' আমি ' ভাবিয়া থাকি। ...