বেদান্ত দর্শনের উৎক্রান্তিগত্যধিকরণের সিদ্ধান্ত হইল জীব স্বরূপত বিভু। হৃদয়ে অবস্থিতিবশতঃ জীবের অণুতা প্রতিপাদিত হয়, এইরূপ শঙ্কা জন্মিলে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন- উৎক্রান্তি, গতি , অগতি ইত্যাদি হইল বুদ্ধির গুণ, কিন্তু এইগুলিকে জীবাত্মার উপরই আরোপ করা হয়। এই একই কারণে অর্থাৎ বুদ্ধির সসীমতাহেতু আত্মাকে অণু বলিয়া মনে করা হয়, কিন্তু আত্মা স্বরূপতঃ বিভু। যেমন উপাসনার সৌকর্যর জন্য সর্বব্যাপী পরমাত্মাকে সসীম বলিয়া জ্ঞান করা হয়-ইহাও অনেকটা সেইরূপ।
'তদ্গুণসারত্বাত্তু
তদ্ব্যপদেশঃ প্রাজ্ঞবৎ '-(ব্রহ্মসূত্র-২.৩.২৯)
শারীরকভাষ্যম্
এ ভগবৎপূজ্যপাদ শঙ্করাচার্য বলিতেছেন-হৃদয়রূপ আশ্রয়ে জীবের অবস্থিতিবোধক বাক্যও বুদ্ধিরই
বলিয়া বুঝিতে হইবে, যেহেতু হৃদয় তাহারই আশ্রয়।
এইপ্রকারে
উৎক্রান্তি প্রভৃতিরও উপাধির অধীনতা শ্রুতি প্রদর্শন করিতেছেন। যথা-
'কস্মিন্নু
অহমুত্ক্রান্ত উত্ক্রান্তো ভবিষ্যামি কস্মিন্বা প্রতিষ্ঠিতে প্রতিষ্ঠাস্যামীতি' 'স
প্রাণমসৃজত'-(প্রশ্ন উপনিষৎ-৬।৩-৪)
"কে
উৎক্রমণ করিলে আমি উৎক্রান্ত হইব এবং কেই বা শরীরে অবস্থিত হইলে আমি অবস্থিত থাকিব",
"তিনি প্রাণকে (-বুদ্ধিসহ সমষ্টি লিঙ্গশরীরকে) সৃষ্টি করিলেন", ইত্যাদি শ্রুতি।
আর
উৎক্রান্তির অভাবে গমন ও আগমনেরও অভাব অবগত হওয়া যাইতেছে। যেহেতু দেহ হইতে অনিষ্ক্রান্ত
কাহারও গমন ও আগমন সম্ভব নহে। এইপ্রকারে উপাধির গুণসকল সার অর্থাৎ প্রধানভাবে প্রতীয়মান
হয় বলিয়া জীবের অণুত্বাদি কথন হইয়া থাকে, যেমন প্রাজ্ঞের হইয়া থাকে। যেমন প্রাজ্ঞের
অর্থাৎ পরমাত্মার সগুণ উপাসনাসকলে উপাধিনিষ্ঠ গুণের প্রাধান্যবশতঃ অণুত্ব প্রভৃতির
উপদেশ হইয়া থাকে, যথাঃ-
'অণীয়ান্ব্রীহের্বা যবাদ্বা' 'মনোময়ঃ প্রাণময়ঃ প্রাণশরীরঃ.... সর্বগন্ধঃ সর্বরসঃ'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৩।১৪।৩,২)'সত্যকামঃ সত্যসংকল্পঃ'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৮।১।৫)
"ব্রীহি
(-ধান্য) বা যব হইতে ক্ষুদ্রতর" "তিনি মনোময় (-মনোবৃত্তিসকলের দ্বারাই তদুপাধিক
তিনি যেন বিষয়ে প্রবৃত্ত ও তাহা হইতে নিবৃত্ত হন), প্রাণশরীর (জ্ঞান ও ক্রিয়াশক্তিযুক্ত
লিশরীররূপ উপাধিযুক্ত), "সকলপ্রকার সুখকর গন্ধযুক্ত", "সকলপ্রকার সুখকর
রসযুক্ত", "অব্যর্থকামনাবান সত্যসঙ্কল্প।"
ইত্যাদি
এইপ্রকারের ন্যায়।
No comments:
Post a Comment