Thursday, 1 April 2021

ওঙ্কারই ধনু, আত্মাই শর এবং ব্রহ্ম উক্ত শরের লক্ষ্যঃ-


অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষদে বর্ণিত আছে-

প্রণবো ধনুঃ শরো হ্যাত্মা ব্রহ্ম তল্লক্ষ্যমুচ্যতে।

অপ্রমত্তেন বেদ্ধব্যং শরবত্তন্ময়ো ভবেৎ।। ২।২।৪

ভগবৎপাদ্ শ্রীশঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- প্রণব অর্থাৎ ওঙ্কারই ধনু, যেভাবে শরাসন (ধনু) শরের লক্ষ্যেতে প্রবেশের কারণ হয়, সেইভাবে ওঙ্কারই আত্মারূপ (জীবরূপ) শরের অবিনাশী প্রত্যক্ চৈতন্য ব্রহ্মরূপ লক্ষ্যেতে প্রবেশের কারণ হয়। কারণ পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত ওঙ্কারের দ্বারা পরিশুদ্ধ অর্থাৎ বিষয়বৃত্তিশূন্য সেই ওঙ্কার অবলম্বনকারী জীব নির্বিঘ্নে অবিনাশিস্বরূপ প্রত্যাগাত্মায় অবস্থান করে, যেভাবে ধনুদ্বারা নিক্ষিপ্ত শর লক্ষ্যে অবস্থান করে। অতএব ধনুসদৃশ বলিয়া ওঙ্কার ধনু। আর শরতুল্য জীবই অর্থাৎ দেহেন্দ্রিয়াদি উপাধিরূপ লক্ষণবিশিষ্ট হইয়া ব্রহ্মই সূর্যাদির জলে প্রতিবিম্বরূপে প্রবিষ্ট হইবার ন্যায় সমস্ত বুদ্ধিবৃত্তির প্রকাশকরূপে দেহে প্রবিষ্ট হন। সেই জীব শরের ন্যায় স্বীয় অন্তরাত্মরূপ অবিনাশী ব্রহ্মে ধৃত হইয়া আছেন। এইজন্য প্রত্যক্ চৈতন্যকে শরতুল্য জীবের লক্ষ্য বলিয়া কথিত। কেননা লক্ষ্যবস্তুর ন্যায় প্রত্যাগাত্মা মূলসত্তারূপে মনঃসমাহিতেচ্ছুগণ কর্ত্তৃক যেহেতু লক্ষিত হন।

তদ্বিষয়ে (লক্ষ্যাদিনির্ণয় বিষয়ে) এইরূপ হইলে অর্থাৎ সবকিছু স্থির হইয়া গেলে অপ্রমত্তভাবে-বাহ্য বিষয়ের উপলব্ধির তৃষ্ণানিমিত্ত অন্তঃকরণের যে দৌর্ব্বল্য (বৃত্তি) তদ্বর্জ্জিত হইয়া অর্থাৎ সবকিছুতে বৈরাগ্যসম্পন্ন ও জিতেন্দ্রিয় হইয়া একাগ্রচিত্তে প্রত্যক্ চৈতন্যরূপ লক্ষ্য বিদ্ধ করিতে হইবে। তদনন্তর সেই বেধনের পরে (লক্ষ্যে নিক্ষিপ্ত) শরের ন্যায় তন্ময় অর্থাৎ তাঁহাতে একীভূত হইতে হইবে। বক্তব্য এই যে, লক্ষ্যবস্তুর সহিত মিলিয়া এক হইয়া যাওয়াতেই যেমন শরের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় তেমনি দেহাদিতে আত্মবুদ্ধি দূর করিয়া অবিনাশী প্রত্যাগাত্মার সহিত ঐক্যরূপ ফল প্রাপ্ত হইতে হইবে।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...