সম্ভবতঃ খৃষ্টীয় একাদশ শতকের শেষভাগে শ্রীকৃষ্ণমিশ্র যতি আবির্ভূত হন। ইনি 'প্রবোধচন্দ্রোদয়' নামক একখানা নাটক রচনা করেন। এই প্রবোধচন্দ্রোদয়ে তিনি অদ্বৈতবেদান্তকে নাটকের রূপ দিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণমিশ্র শ্রীহর্ষের ন্যায় একাধারে অসামান্য কবি এবং দার্শনিক পণ্ডিত ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সন্ন্যাস অবলম্বন পূর্বক আদর্শ অদ্বৈতবাদী হন। প্রবোধ বা জ্ঞানই চন্দ্র। চন্দ্রের উদয়ে যেমন অন্ধকার বিদূরিত হয়, সেইরূপ জ্ঞানের উদয়ে অজ্ঞানন্ধকার বিধ্বস্ত হয়। এজন্যই শ্রীকৃষ্ণমিশ্র তাঁর নাটকের এরূপ নামকরণ করেছেন।
শ্রীকৃষ্ণমিশ্র
প্রবোধচন্দ্রোদয়ে মানুষের বিভিন্ন মানসিক বৃত্তি গুলোকে নট ও নটীরূপে
চিত্রিত করে ধর্ম, জ্ঞান, ঐশ্বর্য প্রভৃতিকে রক্ত মাংসের মানুষ সাজিয়ে রঙ্গমঞ্চে দর্শক-মণ্ডলীর সম্মুখে উপস্থিত করেছেন। অজ্ঞান নাটকীয় চরিত্রের রাজা। পাপ, অধর্ম প্রভৃতি তাঁর প্রিয় সহচর। অজ্ঞান কাশী রাজ্য অধিকার করে তত্রত্য ধর্মপ্রাণ রাজা জ্ঞানকে নির্বাসিত করল। কাশী অর্থাৎ জ্ঞানপুরী অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হল। পুণ্য পলায়ন করল, পাপের শ্রীবৃদ্ধি হল। এই দুঃসময়ে ভবিষ্যদ্বাণীতে
জানাগেল যে পুনরায় জ্ঞানরাজ্য
প্রতিষ্ঠিত হবে, উপনিষদুক্ত তত্ত্বজ্ঞানের সাথে জ্ঞানরাজের মিলন হবে। তত্ত্ববিদ্যা জ্ঞানের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য অজ্ঞানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। অজ্ঞান পরাজিত ও বিনষ্ট হল,
পাপ বিধ্বস্ত হল। জ্ঞানের নির্মল আলোকে নিখিল জীব, জগৎ উদ্ভাসিত হল, এটাই সংক্ষেপে প্রবোধচন্দ্রোদয়ের প্রতিপাদ্য। অদ্বৈত বেদান্তবাদ এরূপে নাটকীয় চিত্রে চিত্রিত করা গ্রন্থকারের অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচায়ক। প্রবোধচন্দ্রোদয়ের উপর রামদাস দীক্ষিতের প্রকাশ নামক টীকা ও নাণ্ডিল্যগোপ প্রভুর
চন্দ্রিকা নামে টীকা আছে। .....
তথ্যসূত্রঃ-
বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জানুয়ারি
১৫, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment