প্রস্থানত্রয়ের সমগ্র শাঙ্কর ভাষ্যের অতি প্রাঞ্জল এবং সরস টীকা প্রণয়ন করে ভাষ্যের সারগর্ভ উক্তির রহস্য জিজ্ঞাসুর নিকট সহজবোধ্য করেছেন আনন্দজ্ঞান বা আনন্দ গিরি। আনন্দজ্ঞানের বিদ্যাগুরু অনুভূতি স্বরূপাচার্য, দীক্ষাগুরু শুদ্ধানন্দ। ইনি সম্ভবতঃ গুজরাটদেশবাসী ও দ্বারকা পীঠের অধীশ্বর ছিলেন। কাঞ্চীকামকোটি সর্বজ্ঞ পীঠের পরম্পরায়ও আনন্দজ্ঞানেন্দ্র সরস্বতী নামে একজন পীঠাধিপতি আচার্যের নাম পাওয়া যায়। তবে এই আচার্যের সময়কাল আনন্দ গিরির সময়কাল থেকে বহুপূর্বে। আনন্দজ্ঞান প্রশ্ন ও ঐতরেয় ভাষ্যের টীকায় শঙ্করানন্দ ও বিদ্যারণ্যের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন, সুতরাং তিনি যে শঙ্করানন্দ ও বিদ্যারণ্যের পরবর্তী তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। গৃহস্থাশ্রমে থাকাকালেই আনন্দজ্ঞান তত্ত্বালোক নামে এক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। তত্ত্বালোকের উপর প্রজ্ঞানানন্দের তত্ত্ব-প্রকাশিকা টীকা ১৩৩৭ খৃষ্টাব্দে লিখিত হয়েছে বলে পাওয়া গিয়েছে। প্রজ্ঞানানন্দ অনুভূতিস্বরূপাচার্যের শিষ্য ও আনন্দজ্ঞানের গুরুভাই। তাই আনন্দ গিরির সময়কাল খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকেই মনে হয়।
ইনি
মীমাংসা, বেদান্ত ও নব্যন্যায়ে অসামান্য
পাণ্ডিত্য লাভ করেছিলেন। শাঙ্কর ভাষ্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণই আনন্দজ্ঞানের সাধনা। সমগ্র শঙ্কর-ভাষ্য এবং সুরেশ্বরাচার্যের বার্তিকের উপর টীকা ও স্বতন্ত্র বিবিধ
গ্রন্থ রচনা করে অদ্বৈত-সিদ্ধান্ত স্থাপন এবং প্রতিপক্ষ মত খণ্ডনে যত্নবান
হন। আনন্দ গিরির গ্রন্থসম্পদ অতুলনীয়। তন্মধ্যে শারীরক ভাষ্য-টীকা ন্যায়নির্ণয়, গীতা ভাষ্য-বিবেচন, ঈশা-ভাষ্য-টীকা, কেনোপনিষদ্ভাষ্য-টীকা, কেনোপনিষদ্ভাষ্য-বিবরণ-ব্যাখ্যা, কঠোপনিষদ্ভাষ্য-টীকা, মাণ্ডূক্য-ভাষ্য টীকা, মাণ্ডুক্যকারিকা-ভাষ্য টীকা, তৈত্তিরীয়-ভাষ্য-টীকা, তৈত্তিরীয়-ভাষ্য-বার্তিক-টীকা, ছান্দোগ্য-ভাষ্য-টীকা, বৃহদারণ্যক-বার্তিক—টীকা—শাস্ত্রপ্রকাশিকা, প্রশ্নোপনিষদ্ ভাষ্য-টীকা, ঐতরেয় ভাষ্য-টীকা, পঞ্চীকরণ-বিবরণ, উপদেশসাহস্রী টীকা, বাক্যবৃত্তি-টীকা, আত্মজ্ঞানোপদেশ-টীকা, শতশ্লোকী টীকা, শঙ্কর-বিজয়, শঙ্করাচার্যের অবতার কথা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া আত্মজ্ঞানোপদেশ-টীকা, ত্রিপুটি-প্রকরণ-টীকা, গঙ্গাপুরী ভট্টারকের পদার্থ তত্ত্ব নির্ণয়ের বিবরণ, মিতভাষিণী, গুরুস্তুতি প্রভৃতি গ্রন্থমালা আনন্দ গিরি রচনা করেছিলেন।
অপরাপর
দার্শনিক মতের খণ্ডনেও আনন্দজ্ঞান কম মনীষার পরিচয়
দেন নি। তিনি বেদান্ত-তত্ত্বালোকে বিভিন্ন দার্শনিক মত খণ্ডন করে
অদ্বৈতমত প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরিণামবাদী এবং ভেদাভেদবাদী ভাস্করও খণ্ডনে বাদ যান নি। ন্যায় বৈশেষিক মতের খণ্ডনে আনন্দজ্ঞান বেদান্ত-তর্ক-সংগ্রহ রচনা করেন। ন্যায় বৈশেষিকের খণ্ডনে আনন্দজ্ঞান শ্রীহর্ষ এবং চিৎসুখাচার্যের যোগ্য উত্তরাধিকারী।........
তথ্যসূত্রঃ-
১.
বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
২.
শ্রীযোগেন্দ্রনাথ তর্কসাংখ্যবেদান্ততীর্থ অনুবাদিত "অদ্বৈতসিদ্ধিঃ" গ্রন্থের ভূমিকা।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জানুয়ারি
১, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment