Wednesday, 16 March 2022

অব্যক্ত কি?

 


প্রথমে শ্রুতিতে কি বলছে এ বিষয়ে দেখে নেয়া যাক। কৃষ্ণযজুর্বেদীয় কঠশ্রুতিতে বর্ণিত আছে- "মহতঃ পরম্ অব্যক্তম্"-(কঠ উপনিষৎ-১/৩/১১) শঙ্করাচার্য এই শ্রুতির ভাষ্যে বলেছেন- "মহৎ (হিরণ্যগর্ভ) হইতেও শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সূক্ষ্মতর ও প্রত্যগাত্মভূত এবং ব্যাকৃত সকলের অপেক্ষাও মহত্তর এই অব্যক্ত, যাহা সম্পূর্ণ জগতের বীজভূত অর্থাৎ উপাদান কারণ স্বরূপ, অব্যাকৃত নাম ও রূপের সত্তাস্বরূপ, সমস্ত কার্য ও কারণশক্তির সমষ্টি, অব্যক্ত অব্যাকৃত আকাশাদি নামে প্রলয়কালে কথনীয় এবং বটবীজকণিকায় নিহিত বটবৃক্ষের শক্তির ন্যায় পরমাত্মাতে ওতপ্রোতভাবে সম্যক আশ্রিত।"

স্মৃতিতে শ্রীভগবান্ সাংখ্যের চতুর্বিংশতি তত্ত্বের বর্ণনায় বলছেন-"বুদ্ধিরব্যক্তমেব চ"-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৩/৫) শঙ্করাচার্য ভাষ্যে বলছেন-"অধ্যবসায় লক্ষণা বুদ্ধিরও কারণ অব্যক্ত অর্থাৎ যা ব্যক্ত নয় তাই অব্যক্ত বা অব্যাকৃত অর্থাৎ ঈশ্বর-শক্তি, যিনি শ্রীভগবানকর্তৃক 'আমার দুরতিক্রমণীয়া মায়া'-(ভগবদ্গীতা-৭/১৪) বলে উক্ত হয়েছেন।"

ব্রহ্মসূত্রের 'তদধীনত্বাদর্থবৎ৷৷১.৪.৩৷৷' এইসূত্রে তাহা স্পষ্ট। শঙ্করাচার্য উক্ত সূত্রের ভাষ্যে বলছেন-

"অবিদ্যারূপা যে প্রসিদ্ধা বীজশক্তি, তাহা 'অব্যক্ত' এই শব্দের দ্বারা নির্দ্দেশের যোগ্য, তাহা পরমেশ্বরকে আশ্রয়করতঃ অবস্থান করে, মায়াময়ী এবং মহাসুপ্তিস্বরূপা, যাহাতে স্বরূপজ্ঞানরহিত সংসারী জীবগণ শয়ন করে অর্থাৎ আবদ্ধ হইয়া জন্মমৃত্যু অনুভব করে। সেই এই অব্যক্ত কোন কোন স্থলে 'আকাশ' এই শব্দের দ্বারা নির্দিষ্ট হইয়াছে, যেহেতু এইপ্রকার শ্রুতি আছে-

'এতস্মিন্নু খল্বক্ষরে গার্গ্যাকাশ ওতশ্চ প্রোতশ্চ'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৩/৮/১১)

অর্থাৎ 'হে গার্গি, এই অক্ষরে (ক্ষয়রহিত ব্রহ্মে) 'আকাশ' ওতপ্রোতভাবে অবস্থিত আছে।'...."

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...