অথর্ববেদীয় মুণ্ডকোপনিষদের প্রথম মুণ্ডকের প্রথম খণ্ডে বর্ণিত আছে—
তপসা
চীয়তে ব্রহ্ম ততোঽন্নমভিজায়তে ।
অন্নাৎ
প্রাণো মনঃ সত্যং লোকাঃ কর্মসু চামৃতম্ ॥ -(মুণ্ডক উপনিষৎ- ১/১/ ৮)
আচার্য
শঙ্কর এই শ্রুতির ভাষ্যে বলিতেছেন–"সৃষ্টির উৎপত্তি ক্রম জানেন বলিয়া প্রাণীদের
উৎপত্তির কারণ অবিনাশী ব্রহ্ম তপসা অর্থাৎ ওই জ্ঞানের (সঙ্কল্পের) দ্বারা (সৃষ্ট্যুন্মুখ)
হন অর্থাৎ অঙ্কুরসদৃশ এই জগৎ উৎপন্ন করিতে ইচ্ছা করিয়া বীজসদৃশ নিজে স্ফীত হন যেভাবে
পুত্র সমুৎপাদনার্থ পিতা আনন্দে উল্লসিত হন।
সর্বজ্ঞতানিবন্ধন
সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারশক্তির এইরূপ জ্ঞানবশতঃ স্ফীত হওয়ার ফলে তন্নিমিত্ত অর্থাৎ
ব্রহ্মের নিমিত্ত অন্ন— অদন অর্থাৎ ভোগ করা যায় বলিয়া অন্ন (ভোগ্য) অর্থাৎ অব্যক্ত
যাহা সকল সংসারী জীবের সাধারণ কারণ (কেননা যেহেতু অব্যক্ত হইতে সকল প্রাণীর ভোগ্যশরীর
সৃষ্ট হয়), সেই অব্যক্ত অভিব্যক্তেচ্ছু অবস্থারূপে উৎপন্ন হয়। তদনন্তর অভিব্যক্তেচ্ছু
অবস্থা বিশিষ্ট ভোগ্য অব্যক্ত হইতে প্রাণ অর্থাৎ হিরণ্যগর্ভ যিনি কার্যব্রহ্মের (জগতের)
জ্ঞানশক্তি ও ক্রিয়াশক্তিবিশিষ্ট, জগৎজীবের সমষ্টিস্বরূপ, প্রেয়ঃ কামনা ও কামনা জনিত
কর্মফলের সমষ্টিরূপ বীজের অঙ্কুরসদৃশ, স্থূলজগতের, সূক্ষ্মস্বরূপ তিনি 'উৎপন্ন হন'।
আমার সেই প্রাণ (হিরণ্যগর্ভ) হইতে মন অর্থাৎ সঙ্কল্প, বিকল্প, সংশয় ও নিশ্চয়াদি স্বভাববিশিষ্ট মনসংজ্ঞক (সমষ্টি অন্তঃকরণ) উৎপন্ন হয়। তাহার পর আবার সঙ্কল্পাদ্যাত্মক (সমষ্টি) মন হইতে সত্য অর্থাৎ সত্যসংজ্ঞক আকাশাদি সূক্ষ্ম ভূতপঞ্চক সৃষ্ট হয়। এবং সত্যনামক সেই ভূতপঞ্চক হইতে ব্রহ্মাণ্ড ও তারপর ভূর্লোক প্রভৃতি সপ্তলোক উৎপন্ন হয়। আর সেই সকল লোকেতে (শরীরে) মনুষ্যাদি প্রাণিবর্গের বর্ণ ও আশ্রম অনুযায়ী নানাবিধ কর্ম এবং নিমিত্তস্বরূপ ঐ কর্মসকলেতে অমৃত অর্থাৎ ঐ কর্ম জনিত ফল উৎপন্ন হয়। শতকোটি কল্প অতিক্রম হইলেও যাবৎকাল পর্যন্ত (জ্ঞানোদয়ে)কর্মসমূহ বিনষ্ট না হয় তাবৎকাল পর্যন্ত (কর্মের সহিত) তৎফলও অক্ষুণ্ণ থাকিতেছে বলিয়া কর্মফলকে অমৃত বলা হইতেছে।
No comments:
Post a Comment