শঙ্করাচার্য
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার (৪/১৮) ভাষ্যে বলিতেছেন—"কর্ম্ম, ক্রিয়তে ইতি ব্যাপার মাত্রং"
অর্থাৎ যা করা যায় তথা ব্যাপারমাত্র। বেদান্তদর্শনে ব্রহ্মবিদ্যা নিজের উৎপত্তিতে
কাম্যবর্জ্জিত নিত্যনৈমিত্তিককর্ম্মরূপ বহিরঙ্গ সাধন এবং শমদমাদিরূপ অন্তরঙ্গ সাধনসাপেক্ষ।
আচার্য শঙ্কর ব্রহ্মসূত্রের (৩/৪/২৬) এর ভাষ্যে স্পষ্ট বলছেন—"ব্রহ্মবিদ্যা আশ্রমবিহিত
কাম্যবর্জ্জিত নিত্য ও নৈমিত্তিক সকল কর্ম্মকে অপেক্ষা করে, অত্যন্ত অনপেক্ষ অবশ্যই
নহে।" তাহাতে প্রমাণ কি? যেহেতু যজ্ঞাদিবোধক শ্রতিবাক্য আছে, যথা-
'তমেতং
বেদানুবচনেন ব্রাহ্মণা বিবিদিষন্তি যজ্ঞেন দানেন তপসানাশকেন '-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪/৪/২২)
অর্থাৎ
সেই উপনিষৎপ্রতিপাদ্য ব্রহ্মকে ব্রাহ্মণগণ বেদপাঠ, যজ্ঞ, দান ও যথেচ্ছ ভোজন না করারূপ
তপস্যার দ্বারা জানিতে ইচ্ছা করেন।"
বৈশেষিক
স্বীকৃত সপ্তপদার্থের মধ্যে তৃতীয় পদার্থ হলো 'কর্ম্ম'। মহর্ষি কণাদ বৈশেষিকসূত্রে
কর্ম্ম-এর লক্ষণে বলেছেন-
‘সংযোগবিভাগেষ্বনপেক্ষকারণমিতি
কর্মলক্ষণম্’- (বৈশেষিকসূত্র- ১/১/১৭)
অর্থাৎ
সংযোগ, বিভাগ ও বেগের সাধারণ কারণস্বরূপ পদার্থই হলো কর্ম্ম।
বৈশেষিকসূত্র
অনুসারে, যা একমাত্র দ্রব্যে থাকে, যা গুণশূন্য এবং কোন ভাবপদার্থকে অপেক্ষা না করেই
যা সংযোগ এবং বিভাগের কারণ হয় তাই কর্ম। গুণ কিন্তু সংযোগ এবং বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ
কারণ হয় না। কর্মই এক বস্তুর সঙ্গে অপর বস্তুর সংযোগ এবং এক বস্তু থেকে অপর বস্তুর
বিভাগ করে থাকে। যেমন, হাতের সঙ্গে বই-এর সংযোগস্থলে সংযোগটি হাতের ক্রিয়া থেকেই উৎপন্ন।
গুণ নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বেগের কারণ হতে পারে না। কর্মই বেগের কারণ।
তবে ষড়দর্শনের মধ্যে জৈমিনীর মীমাংসাশাস্ত্রেই কর্মের অনুষ্ঠানকে সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মীমাংসকদের মতে যে কর্ম বেদ নির্দেশিত অর্থাৎ বেদ যে কর্মকে ইষ্টের সাধক বলে তাই-ই ধর্ম, এবং বেদ নিষিদ্ধ কর্ম অর্থাৎ বেদ যাকে অনিষ্টের সাধক বলে তা অধর্ম। এই মতে, স্মৃতি (অর্থাৎ ঋষিদের রচিত ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ) ও সদাচারও ধর্মে প্রমাণ বলে গৃহীত হতে পারে যদি বেদে তার বিরুদ্ধতা না পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment