Tuesday, 25 July 2023

অবিকারী নির্বিশেষ ব্রহ্ম উপাদান কারণ হবেন কিরূপে?

 

মায়াময় ব্রহ্ম (সগুণ ব্রহ্ম) বা পরমেশ্বর জগতের নিমিত্তকারণ, আর নির্গুণ ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ। সগুণ নির্গুণ ভিন্ন তত্ত্ব নয়; সুতরাং এক ব্রহ্মই জগতের নিমিত্তও বটেন, উপাদানও বটেন। একই ব্রহ্মের এই উভয়বিধ কারণতাই (অভিন্ন নিমিত্তোপাদনতা) অদ্বৈতবেদান্তের সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, নির্বিশেষ ব্রহ্ম উপাদান হবেন কিরূপে? উপাদানকারণ কার্যে অনুগত হয়ে থাকে, ফলে বিকারী বা পরিণামী কারণেরই উপাদানকারণতা সম্ভব হয়। অবিকারী নির্বিশেষ ব্রহ্ম উপাদানকারণ হতে পারেন না।

এর উত্তরে বক্তব্য এই যে, অদ্বৈত বেদান্তের মতে উপাদান কারণ দুই প্রকার. পরিণামী উপাদান . অপরিণামী উপাদান। অপরিণামী ব্রহ্ম পরিণামী উপাদান হতে পারেন না সত্য, কিন্তু ব্রহ্মবিবর্ত জগতের ব্রহ্ম অধিষ্ঠান বা আশ্রয় বিধায় ব্রহ্মকে অপরিণামী উপাদানকারণ বলায় কোন বাধা নেই। এই অপরিণামী উপাদানকারণই বিবর্ত্তকারণ বলে অদ্বৈতবেদান্তে পরিচিত। এইরূপ পরিণামী অপরিণামী এই উভয়বিধ উপাদান কারণের লক্ষণ কি?

আচার্য মধুসূদন সরস্বতী অদ্বৈতসিদ্ধিতে বলেছেন "আত্মনি কার্য্যজনিহেতুত্বস্য উপাদানলক্ষণত্বাৎ, তস্য পরিণাম্য পরিণাম্যুভয়সাধারণত্বাৎ।" অর্থাৎ আত্মা বা নিজকে আশ্রয় করে যে সকল কার্য উৎপন্ন হয়ে থাকে, সে সকল কার্যের যা হেতু, তাই উপাদান কারণ। দণ্ড ঘটের উপাদানকারণ নয়, নিমিত্তকারণ, মাটি উপাদানকারণ। কেননা, ঘট মাটিকে আশ্রয় করে উৎপন্ন হয়, দণ্ডকে আশ্রয় করে উৎপন্ন হয় না; দণ্ড আত্মাশ্রিত (দণ্ডাশ্রিত) কার্যের কারণ নয়, মৃত্তিকা-আশ্রিত কার্যের কারণ, সুতরাং দণ্ডকে উপাদানকারণ বলা যায় না। মাটি আত্মাশ্রিত (মৃত্তিকাশ্রিত) কার্যেরই কারণ সুতরাং মাটি উপাদানকারণ। এইরূপ আত্মা বা ব্রহ্মকে আশ্রয় করে যে জড় জগতের উৎপত্তি হয়ে থাকে, তাতে অধিষ্ঠান ব্রহ্ম আত্মাশ্রিত কার্যেরই হেতু হয়ে থাকেন সুতরাং অধিষ্ঠান ব্রহ্মকে উপাদান কারণ বলতে কোন আপত্তি নেই। তাছাড়া, অনির্বচনীয় অবিদ্যাকে আশ্রয় করে (অবিদ্যা-পরিণামবশতঃ) যে অনির্বচনীয় জড় প্রপঞ্চের উৎপত্তি হয়ে থাকে, তাতে অবিদ্যা যে উপাদান হবে, এটা অবশ্য স্বীকার্য। অবিদ্যাকে আশ্রয় করে যে সকল অবিদ্যা-পরিণাম জড় কার্যের উৎপত্তি হয়ে থাকে, অবিদ্যার আশ্রয় ব্রহ্মই সকল জড় কার্যেরও আশ্রয় হন, সুতরাং অবিদ্যাকে পরিণামী উপাদান ব্রহ্মকে অপরিণামী উপাদান বলে স্বীকার করায় সঙ্গত।.....

তথ্যসূত্রঃ-

. পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমধুসূদন সরস্বতী বিরচিত "অদ্বৈতসিদ্ধি"

. "বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবাদ", কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ আশুতোষ শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতি।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ২৪, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

ভগবৎ শরণাগতিঃ-

 


"মামেকং শরণং ব্রজ" শ্রীগীতার এই শ্লোকের ব্যাখ্যায় পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমধুসূদন সরস্বতী বলছেন শরণাগতি তিন প্রকার, সাধনের অভ্যাসের তারতম্য বশতঃ এই ভূমিকাভেদ হয়। শরণাগতির প্রথম ভূমিতে বোধ হয় 'আমি তাঁর' এখানে মৃদু শরণাগতি; এর উদাহরণ দিচ্ছেনহে নাথ, ভেদ চলে গেলেও চিরকাল আমি তোমার, 'তুমি যে আমার'— এটা কখনও নয়। সকলেই বলে সমুদ্রের তরঙ্গ; তরঙ্গের সমুদ্র কেউই বলে না।

দ্বিতীয় ভূমিতে শরণাগতি মধ্যবলযুক্তএখানে বোধ হয় 'উনি আমার' উদাহরণ দিচ্ছেন, "জোর করে হাত ছেড়ে চলে যাচ্ছ, এতে বিস্মিত হবার কি আছে? আমার হৃদয় হতে যদি চলে যেতে পার, তবে তোমার পৌরুষ আছে মনে করব" এখানে ভক্ত ভগবানকে তাঁর হৃদয়ের সর্বস্বধনভাবে পেয়েছেনভগবান্ তাঁরই, অন্য কারও নয়।

তৃতীয় ভূমিতে অধিমাত্রশরণাগতির অবধি; এখানে বোধ হয় 'আমিই তিনি', এর উদাহরণ "এই সব, এবং আমি, পরম পুরুষ পরমেশ্বর যে বাসুদেব, সবই এক, অনন্ত হৃদয়গত হলে এরূপ অচলা বুদ্ধি যাঁদের হয় তাঁদের ছেড়ে দূরে চলে যেও (এটা দূতের প্রতি যমের উক্তি)".....

তথ্যসূত্রঃ- আচার্য শ্রীশ্রী মধুসূদন সরস্বতী বিরচিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা "গূঢ়ার্থদীপিকা" টীকা।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ১৯, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

Sunday, 16 July 2023

পুরাণ শাস্ত্রে শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন বিষয়ে কি বলছে?

 


আচার্য বিদ্যারণ্য স্বামী বলছেন—"শ্রবণ, মনন নিদিধ্যাসন আত্মসাক্ষাৎকারের হেতু। শ্রুতিবাক্য হতে আত্মশ্রবণ করবে, যুক্তিসমূহের দ্বারা তার মনন করবে, এরূপ মনন করে পরে সর্বদা সেই আত্মার ধ্যান করবে। পুরাণসমূহেই এই বিষয়ের তাৎপর্য স্পষ্টরূপে বর্ণিত আছে

সর্ববেদান্তবাক্যানামাচার্যমুখতঃ প্রিয়াৎ।

বাক্যানুগ্রাহকন্যায়শীলনং মননং ভবেৎ।।

নিদিধ্যাসনমৈকাগ্র্যং শ্রবণে মননেঽপি চ।

নিদিধ্যাসনসংজ্ঞং মননং দ্বয়ং বুধাঃ।।

ফলোপকারকাঙ্গং স্যাত্তেনাসম্ভাবনা তথা।

বিপরীতা নির্মূলং প্রবিনশ্যতি সত্তমাঃ।।

(মানব উপপুরাণ অধ্যায়)

প্রিয় আচার্যের মুখ হতে, সকল বেদান্তবাক্যের ব্রহ্মবিষয়ে তাৎপর্যজ্ঞানের অনুকূল যে সকল ন্যায় বা যুক্তি আছে, তা শ্রবন করে, সেই সকল যুক্তির বারংবার যে অনুশীলন, তাই মনন হয়ে থাকে। বেদান্তবাক্যের শ্রবণে এবং তার অর্থ-মননে চিত্তের যে একাগ্রতা, তাই নিদিধ্যাসন। নিদিধ্যাসন মনন এই দুইটি হে পণ্ডিতগণ! ফলের উপকারক অঙ্গ হয়ে থাকে। হে সাধুশ্রেষ্ঠগণ! সেই মনন নিদিধ্যাসনের দ্বারা, ব্রহ্মতত্ত্ব বিষয়ে যে অসম্ভাবনা বিপরীত জ্ঞান, তা মূলের সহিত উচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।"

এর তাৎপর্য এই যে, ধ্যান মনন এই দুইটি সাধন দ্বারা শ্রবণ দৃঢ়ীকৃত হয়, এই কারণে এই দুইটিকে ফলোপকারক অঙ্গ বলা হয়। এদের মধ্যে প্রথম অর্থাৎ মননের দ্বারা ব্রহ্মবিষয়ে যে অসম্ভাবনা, অর্থাৎ ব্রহ্ম প্রমাণের দ্বারা সিদ্ধ হয় না বলে তার অস্তিত্বেরই সম্ভাবনা নেই, এই প্রকার যে জ্ঞান, তা দূর হয়ে থাকে। নিদিধ্যাসন বা ধ্যানরূপ দ্বিতীয় উপায়টি দ্বারা, যে সকল ভ্রান্ত ধারণা বা বিপরীত প্রতীতি আছে, তাও নষ্ট হয়। এইরূপে অসম্ভাবনা বিপরীত প্রত্যয়রূপ দ্বিবিধ প্রতিবন্ধক নষ্ট করে, মনন নিদিধ্যাসন, শ্রবণের সাহায্য করে বলে, এই দুইটি হেতুকেই শ্রবণের সহকারী অর্থাৎ ফলোপকারক অঙ্গ বলে নির্দেশ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ-

আচার্য বিদ্যারণ্য মুনীশ্বর বিরচিত "বিবরণ-প্রমেয়-সংগ্রহ"

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ১৩, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

হরিভক্তি (স্থূল ও সূক্ষ্ম ভক্তি)

 


ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য প্রবোধ সুধাকরে বলছেন— "শ্রীকৃষ্ণচরণকমল ভক্তি ব্যতীত অন্তরাত্মা অর্থাৎ মন শুদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না, ক্ষারসলিলে বসনের ন্যায় ভক্তি দ্বারাই মন প্রক্ষালিত হতে পারে। মন যদি শুদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তবেই বোধ উদয় হয়। মনে সত্ত্বগুণের আবির্ভাব হলে বিদ্যুৎস্ফুরণের ন্যায় জ্ঞানোদয় হয়। যেমন মলিন দর্পণ বহুক্ষণ ভস্মাদি দ্বারা শোধিত হলে, তাতে মুখ সম্যক্ প্রতিফলিত হয়, সেরূপ শুদ্ধ চিত্তেই জ্ঞান সম্যক্ প্রতিফলিত হয়ে থাকে।

হরিভক্তি স্থূল সূক্ষ্ম এই দুই প্রকার। প্রারম্ভে স্থূল ভক্তি, তার সন্নিধান হতেই সূক্ষ্ম ভক্তি হয়। স্বাশ্রমধর্মাচরণ, বিবিধ উপাচার দ্বারা ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমা অর্চনা উৎসব, পুনঃপুনঃ হরি ভক্তগণের সহিত সঙ্গ, কৃষ্ণকথা শ্রবণে মহা-আনন্দ, সত্যবাদিতা, পরস্ত্রী, ধন এবং পরনিন্দায় বিমুখতা, গ্রাম্যকথায় উদ্বেগ, সুতীর্থ গমনে তৎপর থাকা এবং যদুপতির মাহাত্ম্য কথার বিয়োগ হলে 'বৃথা আয়ুঃক্ষয় হচ্ছে ' এরূপ চিন্তা, এই প্রকার স্থূলভক্তি করতে থাকলে, কৃষ্ণকথার অনুগ্রহে সেই সূক্ষ্ম ভক্তি উৎপন্ন হয়ে ক্রমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, যা হতে শ্রীহরি অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হন।

স্মৃতি এবং সাত্ত্বিক পুরাণ বাক্যে যেরূপ শ্রুত হওয়া যায়, তদনুরূপ শ্রীহরিমূর্তিতে মানসপূজার অভ্যাস, নির্জনবাসতৎপরতা, সত্যাচরণ, সমস্ত জীবে কৃষ্ণাবস্থানজ্ঞান, প্রাণিসমূহে অদ্রোহ, তা হতে উৎপন্ন ভূতদয়া, যদৃচ্ছা স্বল্পলাভে সন্তোষ, স্ত্রী-পুত্রাদির প্রতি মোহমমতা ত্যাগ, তৎসূচিত নিরহঙ্কারত্ব, অক্রোধ, মৃদুভাষিতা, প্রসন্নভাব, নিজনিন্দা স্তবে সমভাব, সুখ-দুঃখ-শীতোষ্ণাদি দ্বন্দ্বসহিষ্ণুতা, বিপদে নির্ভীকতা, নিদ্রা আহার বিহারে অনাদর, নিঃসঙ্গভাব, লৌকিক বাক্য প্রয়োগে অনবসর, কৃষ্ণ স্মরণে শাশ্বত শান্তি এবং কেউ হরিগীত বা বংশীধ্বনী করলে তৎশ্রবণে আনন্দাবির্ভাব যুগপৎ কম্পস্বেদাদি অষ্টসাত্ত্বিক ভাবের উদ্রেক হয়। ঘর্ম, নিস্তব্ধভাব, রোমাঞ্চ, গদগদ্স্বর, কম্প, বিবর্ণতা, অশ্রু এবং প্রলয় অর্থাৎ ব্যাহ্যজ্ঞানশূন্যতা এই হল অষ্টসাত্ত্বিক ভাব। সেই হরিগীত বা বংশীধ্বনীতে নিযুক্ত মন পরম আত্মনিবৃত্তি অনুভব করে এবং সেই অনুভব স্থায়ী হলে মদমত্ত হস্তীর অবস্থাপ্রাপ্তি হয়, ক্রমে সর্বজীবে ভগবদ্ভাব দর্শন এবং ভগবানে সর্বভূতদর্শন তাঁর ঘটে, এরূপ অবস্থা হলেই তিনি শ্রেষ্ঠ হরিদাস হয়ে থাকেন।".......

তথ্যসূত্রঃ-

ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্যের প্রবোধ সুধাকরঃ, দ্বিধা-ভক্তি-প্রকরণ।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ১৬, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

"নির্গুণ ব্রহ্মে কোন প্রমাণ নেই, এজন্য নির্গুণ অদ্বয়বাদ গ্রহণযোগ্য নয়"—এরূপ আপত্তির খণ্ডনঃ-

 


পূর্বপক্ষঃ-প্রমাণমাত্রই সগুণ সবিশেষ বস্তুরই সাধক হয়ে থাকে; কোন প্রমাণই নির্গুণ নির্বিশেষ তত্ত্ব সাধন করে না। নির্গুণ ব্রহ্মে কোন প্রমাণ নেই। এজন্য নির্গুণ অদ্বয়বাদ গ্রহণযোগ্য নয়।

সিদ্ধান্তঃ- ভগবান্ বাদরায়ণ 'শাস্ত্রযোনিত্বাৎ'- (ব্রহ্মসূত্র- ১।১।৩) এই সূত্রে বলেছেনবেদ উপনিষৎ প্রভৃতি অধ্যাত্ম শাস্ত্রকেই ব্রহ্মবিষয়ে অভ্রান্ত প্রমাণ বলে জানবে। "তং তু ঔপনিষদং পুরুষং পৃচ্ছামি"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-..২৬) অর্থাৎ সেই উপনিষৎপ্রতিপাদ্য পুরুষের বিষয় জিজ্ঞাসা করছি", ইত্যাদি শ্রুতিতে পরব্রহ্মরূপ পুরুষ উপনিষদ্গম্য, এটা প্রতীত হচ্ছে।

রূপ এবং লিঙ্গরহিত হওয়ায় ব্রহ্মের অন্য লৌকিক প্রমাণযোগ্যতা নেই। কোনপ্রকার রূপ-রসাদি না থাকায় ব্রহ্ম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নন এবং লিঙ্গ (—জ্ঞাপক চিহ্ন) সাদৃশ্যাদি রহিত হওয়ায় তিনি অনুমান উপমানাদি প্রমাণেরও বিষয় নন।

কিন্তু শ্রুতি অতি স্পষ্ট ভাষায় ব্রহ্মকেই একমাত্র সাক্ষাৎ, অপরোক্ষ তত্ত্ব বলে নির্দেশ করেছেন"সাক্ষাদপরোক্ষাদ্ ব্রহ্ম"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-..) অদ্বৈতবেদান্তী বেদান্তবেদ্য তুরীয় স্বয়ংজ্যোতিঃ ব্রহ্মকে সর্বদা সাক্ষাৎ অপরোক্ষ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। স্বপ্রকাশ স্বতঃপ্রমাণ ব্রহ্মই জগতের আশ্রয়। সেই সদাভাস্বর অধিষ্ঠান-চৈতন্যের সহিত অভিন্ন হয়ে প্রতিভাত হয়ে থাকে বলে বিশ্বপ্রপঞ্চও প্রত্যক্ষগম্য হয়ে থাকে। প্রতিবাদী প্রভৃতির দৃষ্টি স্থূল বস্তুর ঐন্দ্রিয়ক প্রত্যক্ষের মধ্যেই নিবদ্ধ রয়েছে। ঐরূপ স্থূল প্রত্যক্ষের অন্তরালে যে নির্বিশেষ বোধ লুকায়িত আছে তা তাদের দ্বৈতদৃষ্টিতে ভাসে নি।

উপাধিবশেই অখণ্ড সত্ত্বা ঘটের সীমায় আবদ্ধ হয়ে, সসীম সখণ্ড হয়ে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সকল উপাধি সরিয়ে নিলে, সত্যতা এবং জ্ঞানের অখণ্ড পরিপূর্ণ স্বরূপই নির্বিকল্প প্রত্যক্ষের ফলে প্রকাশিত হয়। এরূপ নির্বিকল্প প্রত্যক্ষই অদ্বৈতবেদান্তের মতে শুদ্ধ ব্রহ্মের প্রত্যক্ষ। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে নিখিল প্রপঞ্চের প্রত্যক্ষ সবিকল্প বা সবিশেষ প্রত্যক্ষ। প্রতিবাদীর দৃষ্টি সেই সবিকল্প প্রত্যক্ষের মধ্যে নিবদ্ধ রয়েছে। গুণের রাজ্য ছেড়ে গুণাতীতকে সাক্ষাৎ করতে পারেন নি তিনি। তাঁর সাধনা অনন্তগুণময়ের সান্নিধ্য লাভ করেই চরিতার্থ লাভ করেছে। অদ্বৈতবেদান্তী এখানেই বিরত হন নি। জ্ঞান-গিরির তুঙ্গ শৃঙ্গে আরোহণ করে নামরূপাত্মক জগতের মধ্যেও নাম রূপের অতীত 'অশব্দমস্পর্শমরূপমব্যয়ম্' শুদ্ধ ব্রহ্মের অপরোক্ষ সাক্ষাৎকার লাভ করেছেন।......

তথ্যসূত্রঃ-

. আচার্য ভারতী তীর্থের বৈয়াসিক ন্যায়মালা।

. প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলার কাব্য ব্যাকরণ সাংখ্য বেদান্ততীর্থ আশুতোষ শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতির

"বেদান্তদর্শন অদ্বৈতবাদ"

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ১২, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...