ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য প্রবোধ সুধাকরে বলছেন— "শ্রীকৃষ্ণচরণকমল ভক্তি ব্যতীত অন্তরাত্মা অর্থাৎ মন শুদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না, ক্ষারসলিলে বসনের ন্যায় ভক্তি দ্বারাই মন প্রক্ষালিত হতে পারে। মন যদি শুদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তবেই বোধ উদয় হয়। মনে সত্ত্বগুণের আবির্ভাব হলে বিদ্যুৎস্ফুরণের ন্যায় জ্ঞানোদয় হয়। যেমন মলিন দর্পণ বহুক্ষণ ভস্মাদি দ্বারা শোধিত হলে, তাতে মুখ সম্যক্ প্রতিফলিত হয়, সেরূপ শুদ্ধ চিত্তেই জ্ঞান সম্যক্ প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
হরিভক্তি
স্থূল ও সূক্ষ্ম এই
দুই প্রকার। প্রারম্ভে স্থূল ভক্তি, তার সন্নিধান হতেই
সূক্ষ্ম ভক্তি হয়। স্বাশ্রমধর্মাচরণ, বিবিধ উপাচার
দ্বারা ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমা অর্চনা উৎসব, পুনঃপুনঃ হরি ভক্তগণের সহিত
সঙ্গ, কৃষ্ণকথা শ্রবণে মহা-আনন্দ, সত্যবাদিতা,
পরস্ত্রী, ধন এবং পরনিন্দায়
বিমুখতা, গ্রাম্যকথায় উদ্বেগ, সুতীর্থ গমনে তৎপর থাকা
এবং যদুপতির মাহাত্ম্য কথার বিয়োগ হলে
'বৃথা আয়ুঃক্ষয় হচ্ছে ' এরূপ চিন্তা, এই
প্রকার স্থূলভক্তি করতে থাকলে, কৃষ্ণকথার
অনুগ্রহে সেই সূক্ষ্ম ভক্তি
উৎপন্ন হয়ে ক্রমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত
হয়, যা হতে শ্রীহরি
অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হন।
স্মৃতি
এবং সাত্ত্বিক পুরাণ বাক্যে যেরূপ শ্রুত হওয়া যায়, তদনুরূপ শ্রীহরিমূর্তিতে মানসপূজার অভ্যাস, নির্জনবাসতৎপরতা, সত্যাচরণ, সমস্ত জীবে কৃষ্ণাবস্থানজ্ঞান, প্রাণিসমূহে অদ্রোহ,
তা হতে উৎপন্ন ভূতদয়া,
যদৃচ্ছা স্বল্পলাভে সন্তোষ, স্ত্রী-পুত্রাদির প্রতি মোহমমতা ত্যাগ, তৎসূচিত নিরহঙ্কারত্ব, অক্রোধ, মৃদুভাষিতা, প্রসন্নভাব, নিজনিন্দা ও স্তবে সমভাব,
সুখ-দুঃখ-শীতোষ্ণাদি দ্বন্দ্বসহিষ্ণুতা,
বিপদে নির্ভীকতা, নিদ্রা আহার ও বিহারে
অনাদর, নিঃসঙ্গভাব, লৌকিক বাক্য প্রয়োগে অনবসর, কৃষ্ণ স্মরণে শাশ্বত শান্তি এবং কেউ হরিগীত
বা বংশীধ্বনী করলে তৎশ্রবণে আনন্দাবির্ভাব
ও যুগপৎ কম্পস্বেদাদি অষ্টসাত্ত্বিক ভাবের উদ্রেক হয়। ঘর্ম, নিস্তব্ধভাব,
রোমাঞ্চ, গদগদ্স্বর, কম্প, বিবর্ণতা, অশ্রু এবং প্রলয় অর্থাৎ
ব্যাহ্যজ্ঞানশূন্যতা এই হল অষ্টসাত্ত্বিক
ভাব। সেই হরিগীত বা
বংশীধ্বনীতে নিযুক্ত মন পরম আত্মনিবৃত্তি
অনুভব করে এবং সেই
অনুভব স্থায়ী হলে মদমত্ত হস্তীর
অবস্থাপ্রাপ্তি হয়, ক্রমে সর্বজীবে
ভগবদ্ভাব দর্শন এবং ভগবানে সর্বভূতদর্শন
তাঁর ঘটে, এরূপ অবস্থা
হলেই তিনি শ্রেষ্ঠ হরিদাস
হয়ে থাকেন।".......
তথ্যসূত্রঃ-
ভগবৎপাদ্
শঙ্করাচার্যের প্রবোধ সুধাকরঃ, দ্বিধা-ভক্তি-প্রকরণ।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জুলাই
১৬, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment