অপপ্রচার—"শঙ্করাচার্য শুদ্রবিদ্বষী ছিলেন, তিনি ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে বেদশ্রবণকারী শুদ্রের কর্ণবিবরে গরমসীসা ঢালার কথা বলেছেন, শুদ্রকে ব্রহ্মবিদ্যার অধিকার দেন নি।"
জবাব — প্রথমত আচার্য শঙ্কর ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে এটা গৌতম স্মৃতির
বচন উদ্বৃত করেছেন, যথা— 'অথ হাস্য বেদমুপশ্রৃণ্বতস্ত্রপুজতুভ্যাং
শ্রোত্রপ্রতিপূরণম্'-(গৌতম ধর্ম্মসূত্র-১২/৪) এই গৌতম
স্মৃতির মস্করি ভাষ্যে বলা হয়েছে— 'পঞ্চম
বর্ষের উর্দ্ধবয়স্ক শুদ্র যদি বুদ্ধিপূর্বক (ভ্রমবশতঃ
নহে) সন্নিকৃষ্ট স্থান হতে 'সাঙ্গবেদ' শ্রবণ
করে তাহলে সীসা দ্বারা কর্ণবিবরপরিপূরণরূপ
প্রায়শ্চিত্ত বিধি স্মৃতি দিয়েছে।'
স্মৃতিতে এই কঠোর বিধানগুলো
কেন দেয়া হয়েছে তা বর্তমানে শাস্ত্রবিকৃতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনাচারের দৃষ্টান্ত দেখলেই বোধগম্য হয়।
শুদ্রের
সরাসরি বেদমূলক বিদ্যাতে অধিকার না থাকলেও আচার্য
শঙ্কর কিন্তু ব্রহ্মসূত্রের সেই অপশুদ্রাধিকরণের ভাষ্যে
ইতিহাস পুরাণাদি অবলম্বনে শুদ্রের ব্রহ্মবিদ্যাতে অধিকার দিয়েছেন। যথা—
"শ্রাবয়েচ্চতুরোবর্ণান্ ' ইতি চেতিহাসপুরাণাধিগমে চাতুর্বর্ণ্যস্যাধিকারস্মরণাৎ৷"-(শাঙ্করভাষ্যম্, ব্রহ্মসূত্র-১.৩.৩৮)
অর্থাৎ "চারিবর্ণকে শ্রবণ করাইবে", এইপ্রকারে ইতিহাস ও পুরাণের জ্ঞানলাভে
চারিবর্ণেরই অধিকার স্মৃতিতে বর্ণিত হওয়ায়, "সেই সকল হইতে
তাহাদের জ্ঞানোৎপত্তি হইবে"।
"শ্রাবয়েচ্চতুরোবর্ণান্ কৃত্বা ব্রাহ্মণমগ্রত।"-(মহাভারত, শান্তিপর্ব-৩২৭/৪৯) এই
স্মৃতিতে বর্ণিত আছে- 'ব্রাহ্মণকে অগ্রে রেখে চারিবর্ণকেই শ্রবণ করাইবে।' তাছাড়া ইতিহাস পুরাণকে পঞ্চমবেদের উপাধি শাস্ত্র দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment