পূর্বপক্ষঃ-প্রমাণমাত্রই সগুণ ও সবিশেষ বস্তুরই সাধক হয়ে থাকে; কোন প্রমাণই নির্গুণ নির্বিশেষ তত্ত্ব সাধন করে না। নির্গুণ ব্রহ্মে কোন প্রমাণ নেই। এজন্য নির্গুণ অদ্বয়বাদ গ্রহণযোগ্য নয়।
সিদ্ধান্তঃ-
ভগবান্ বাদরায়ণ 'শাস্ত্রযোনিত্বাৎ'- (ব্রহ্মসূত্র- ১।১।৩) এই সূত্রে বলেছেন—বেদ উপনিষৎ প্রভৃতি
অধ্যাত্ম শাস্ত্রকেই ব্রহ্মবিষয়ে অভ্রান্ত প্রমাণ বলে জানবে। "তং
তু ঔপনিষদং পুরুষং পৃচ্ছামি"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৩.৯.২৬)
অর্থাৎ সেই উপনিষৎপ্রতিপাদ্য পুরুষের
বিষয় জিজ্ঞাসা করছি", ইত্যাদি শ্রুতিতে পরব্রহ্মরূপ পুরুষ উপনিষদ্গম্য, এটা প্রতীত হচ্ছে।
রূপ
এবং লিঙ্গরহিত হওয়ায় ব্রহ্মের অন্য লৌকিক প্রমাণযোগ্যতা
নেই। কোনপ্রকার রূপ-রসাদি না
থাকায় ব্রহ্ম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নন এবং লিঙ্গ
(—জ্ঞাপক চিহ্ন) ও সাদৃশ্যাদি রহিত
হওয়ায় তিনি অনুমান ও
উপমানাদি প্রমাণেরও বিষয় নন।
কিন্তু
শ্রুতি অতি স্পষ্ট ভাষায়
ব্রহ্মকেই একমাত্র সাক্ষাৎ, অপরোক্ষ তত্ত্ব বলে নির্দেশ করেছেন—"সাক্ষাদপরোক্ষাদ্ ব্রহ্ম"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৩.৪.১)
অদ্বৈতবেদান্তী বেদান্তবেদ্য তুরীয় স্বয়ংজ্যোতিঃ ব্রহ্মকে সর্বদা সাক্ষাৎ অপরোক্ষ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।
স্বপ্রকাশ স্বতঃপ্রমাণ ব্রহ্মই জগতের আশ্রয়। সেই সদাভাস্বর অধিষ্ঠান-চৈতন্যের সহিত অভিন্ন হয়ে
প্রতিভাত হয়ে থাকে বলে
বিশ্বপ্রপঞ্চও প্রত্যক্ষগম্য হয়ে থাকে। প্রতিবাদী
প্রভৃতির দৃষ্টি স্থূল বস্তুর ঐন্দ্রিয়ক প্রত্যক্ষের মধ্যেই নিবদ্ধ রয়েছে। ঐরূপ স্থূল প্রত্যক্ষের
অন্তরালে যে নির্বিশেষ বোধ
লুকায়িত আছে তা তাদের
দ্বৈতদৃষ্টিতে ভাসে নি।
উপাধিবশেই
অখণ্ড সত্ত্বা ঘটের সীমায় আবদ্ধ
হয়ে, সসীম সখণ্ড হয়ে
প্রকাশিত হয়ে থাকে। ঐ
সকল উপাধি সরিয়ে নিলে, সত্যতা এবং জ্ঞানের অখণ্ড
পরিপূর্ণ স্বরূপই নির্বিকল্প প্রত্যক্ষের ফলে প্রকাশিত হয়।
এরূপ নির্বিকল্প প্রত্যক্ষই অদ্বৈতবেদান্তের মতে শুদ্ধ ব্রহ্মের
প্রত্যক্ষ। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে নিখিল প্রপঞ্চের প্রত্যক্ষ সবিকল্প বা সবিশেষ প্রত্যক্ষ।
প্রতিবাদীর দৃষ্টি সেই সবিকল্প প্রত্যক্ষের
মধ্যে নিবদ্ধ রয়েছে। গুণের রাজ্য ছেড়ে গুণাতীতকে সাক্ষাৎ করতে পারেন নি
তিনি। তাঁর সাধনা অনন্তগুণময়ের
সান্নিধ্য লাভ করেই চরিতার্থ
লাভ করেছে। অদ্বৈতবেদান্তী এখানেই বিরত হন নি।
জ্ঞান-গিরির তুঙ্গ শৃঙ্গে আরোহণ করে নামরূপাত্মক জগতের
মধ্যেও নাম রূপের অতীত
'অশব্দমস্পর্শমরূপমব্যয়ম্'
শুদ্ধ ব্রহ্মের অপরোক্ষ সাক্ষাৎকার লাভ করেছেন।......
তথ্যসূত্রঃ-
১.
আচার্য ভারতী তীর্থের বৈয়াসিক ন্যায়মালা।
২.
প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলার কাব্য ব্যাকরণ সাংখ্য বেদান্ততীর্থ আশুতোষ শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতির
"বেদান্তদর্শন ও
অদ্বৈতবাদ"।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জুলাই
১২, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment