Tuesday, 17 March 2020

বেদান্তবেদ্য ব্রহ্মই জগতের কারণ, তাঁহাতেই বেদান্তবাক্য সকলের সমন্বয়ঃ-


মহর্ষি বাদরায়ণ প্রণীত বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রে বর্ণিত আছে-'তত্তু সমন্বয়াৎ৷৷'-ব্রহ্মসূত্র ১.১.৪৷৷
শারীরকভাষ্যে ভাষ্যকার ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বলিতেছেন- সূত্রস্থ 'তু' শব্দ পূর্ব্বপক্ষ নিরাকরণের জন্য। সূত্রস্থ 'তৎ' পদের অর্থ ব্রহ্ম, সেই ব্রহ্ম সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বশক্তিমান এবং জগতের উৎপত্তি, স্থিতি এবং লয়ের কারণ, ইহা বেদান্তশাস্ত্র হইতেই অবগত হওয়া যায়। যদি বলা হয় কি প্রকারে তাহা অবগত হওয়া যায়? তদুত্তরে সূত্রে বলা হইল-'সমন্বয়াৎ' অর্থাৎ সমন্বয় হইতে।
যেহেতু সমস্ত বেদান্তে বাক্যসকল তাৎপর্য্যদ্বারা এই অর্থেরই প্রতিপাদকরূপে সমনুগত হয়, যথা-''সদেব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্'- (ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬/২/১)।
‘হে প্রিয়দর্শন, এই জগৎ উৎপত্তির পূর্ব্বে এক অদ্বিতীয় সৎ রূপেই বিদ্যমান ছিল।'

'আত্মা বা ইদমেক এবাগ্র আসীত্৷'-(ঐতরেয় উপনিষৎ-১/১/১)
'ইহা অর্থাৎ এই জগৎ উৎপত্তির পূর্ব্বে একমাত্র আত্মস্বরূপেই বিদ্যমান ছিল।'

'তদেতদ্ব্রহ্মাপূর্বমনপরমনন্তরমবাহ্যম্ অয়মাত্মা ব্রহ্ম সর্বানুভূঃ''-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ ২।৫।১৯)
'সেই এই অপরোক্ষ ব্রহ্ম অপূর্ব্ব অর্থাৎ কারণবিহীন, অনপর অর্থাৎ কার্য্যবিহীন, অনন্তর অর্থাৎ স্বগতভেদহীন, অবাহ্য অর্থাৎ ইহার বাহিরে কিছুই নাই তথা সজাতীয় ও বিজাতীয় ভেদবিহীন, সর্ব্ববিষয়ের অনুভবকর্ত্তা এই আত্মাই ব্রহ্ম।'

'ব্রহ্মৈবেদমমৃতং পুরস্তাত্'-(মুণ্ডক উপনিষৎ ২।২।১১) 'অমৃতস্বরূপ ব্রহ্মই এই সম্মুখে বর্ত্তমান' ইত্যাদি।
আর ব্রহ্মের স্বরূপ বিষয়ে বেদান্তবাক্যগত পদসমূহের নিশ্চিত সমন্বয় অবগত হওয়া যাইলে, তাহাদের অন্যপ্রকার অর্থকল্পনা যুক্তিসঙ্গত নহে, যেহেতু তাহা করিলে শ্রুতহানি অর্থাৎ শ্রুতি প্রতিপাদ্য বিষয়ের পরিত্যাগ এবং অশ্রুতকল্পনা অর্থাৎ শ্রুতিতে প্রতিপাদিত হয় নাই তাদৃশ বিষয়ের গ্রহণ হইয়া পড়িবে।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...