Thursday, 5 March 2020

'ব্রহ্ম' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কি?


ব্রহ্মসূত্রের শারীরকভাষ্যে দেখা যায় ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বলেছেন-“বস্তুতঃ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিসমন্বিত, নিত্যশুদ্ধ, নিত্যবুদ্ধ ও নিত্যমুক্তস্বভাব ব্রহ্ম প্রসিদ্ধ আছেন। কারণ, ব্রহ্ম শব্দটির যদি ব্যুৎপত্তি করা যায়, তাহলেও নিত্যশুদ্ধত্বাদি ঐ সব অর্থই পাওয়া যায়। ‘মহান্’ এই অর্থবোধক 'বৃহ' ধাতু থেকেই তো ‘ব্রহ্ম’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া, ব্রহ্ম- যেহেতু সকলেরই আত্মা, এ কারণে, সবার নিকট সর্বদা ব্রহ্মের অস্তিত্ব প্রসিদ্ধ রয়েছে। সকলেই নিজের আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করে থাকে। 'আমি নাই'- এরকম জ্ঞান কখনও কারও হয় না। যদি এভাবে আমার অস্তিত্ব প্রসিদ্ধ না হতো- তাহলে সকলেই আমি নাই- এভাবে বুঝতো। সেই স্বানুভবযোগ্য আত্মাই তো ব্রহ্ম, ইহা 'অয়মাত্মা ব্রহ্ম'-(মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-২) ইত্যাদি শ্রুতিবাক্য হতে অবগত হওয়া যায়।”
- (শাঙ্করভাষ্য, ব্রহ্মসূত্র-১।১।১)

নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ এবং মুক্তস্বভাব। যেহেতু ব্রহ্মের উৎপত্তি বা বিনাশ নেই এবং দেশ, কাল ও বস্তুর দ্বারা পরিচ্ছিন্ন নয়, সেহেতু ব্রহ্ম হলেন নিত্য। যেহেতু কোন প্রকার অবিদ্যাদি দোষ বা মালিন্য তাঁকে স্পর্শ করে না, সেহেতু তিনি হলেন শুদ্ধ। যেহেতু তিনি জাড্যশূন্য ও প্রকাশস্বরূপ, সেহেতু তিনি হলেন বুদ্ধ বা সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। আবার অবিদ্যাদিদোষশূন্য ও প্রকাশস্বরূপ হওয়ায় বন্ধনের হেতুর অভাববশতঃ তিনি হলেন নিত্যমুক্ত। এইরূপ সকল দোষশূন্য হওয়ায় তৎ পদের লক্ষ্য নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বরূপ জ্ঞেয় নির্গুণ ব্রহ্ম সিদ্ধ হন। এই প্রকার নিরতিশয় মহান হওয়ায় ব্রহ্মের সর্বজ্ঞত্বও সিদ্ধ হয় । সর্বজ্ঞ হওয়ায় তিনি সর্বশক্তিমানও বটেন। এইরূপে তৎপদের বাচ্য সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান্ উপাস্য সগুণব্রহ্মও সিদ্ধ হন।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...