যে বিদ্বানের উপাধিকৃত ভেদদর্শন নষ্ট হইয়া গিয়াছে এবং যিনি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানঘন একরস অদ্বিতীয় আত্মাকেই কেবল দর্শন করেন, সেই মননশীল অর্থাৎ জ্ঞানীর আত্মার স্বরূপ কি হয়? ইহাই বলিতেছেন—
'যথোদকং শুদ্ধে
শুদ্ধমাসিক্তং তাদৃগেব ভবতি ৷
এবং
মুনের্বিজানত আত্মা ভবতি গৌতম ৷৷
-(কঠ উপনিষৎ ২.১.১৫)
—যেইরূপ শুদ্ধ অর্থাৎ নির্ম্মল উদকে (জলে) প্রক্ষিপ্ত নির্ম্মল জল একরসই হয় অর্থাৎ অন্যপ্রকার হয় না কিন্তু তদ্রূপই হয়, সেইরূপ হে গৌতম! আত্মৈকদর্শী জ্ঞানীর আত্মাও ঠিক এইরূপই হয়। অতএব কুতার্কিকগণের ভেদদৃষ্টি ও নাস্তিকগণের কুদৃষ্টি পরিত্যাগপূর্বক সহস্র সহস্র মাতাপিতা অপেক্ষাও হিতৈষী বেদের উপদিষ্ট আত্মৈকত্বদর্শনকে অভিমানশূন্য হইয়া অবলম্বন করিবে। ইহাই এই শ্রুতির তাৎপর্য্য।
আবার এই বিষয়ে অথর্ববেদের শৌনকীয় শাখার অন্তর্গত মুণ্ডক উপনিষদে আরও একটি সুন্দর উপমা বর্ণিত আছে।
যথা নদ্যঃ স্যন্দমানাঃ সমুদ্রেঽস্তং গচ্ছন্তি নামরূপে বিহায়৷
তথা বিদ্বান্নমরূপাদ্বিমুক্তঃ পরাৎ পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্৷৷
-(মুণ্ডক উপনিষৎ ৩.২.৮)
— আর যেরূপ গঙ্গাদি নদীসমূহ প্রবাহিত হইয়া সমুদ্রকে প্রাপ্ত হইয়া নাম ও রূপ পরিত্যাগপূর্ব্বক অস্ত—নিধর্ম্মক অর্থাৎ অভেদাত্মকসত্তা প্রাপ্ত হয় সেইরূপ অবিদ্যাজনিত নাম ও রূপ হইতে বিমুক্ত হইয়া জ্ঞানী পূর্বোক্ত অক্ষর অর্থাৎ অব্যক্ত হইতে শ্রেষ্ঠ পূর্বোক্ত লক্ষণবিশিষ্ট স্বপ্রকাশ প্রত্যক্ চৈতন্য পুরুষকে (ব্রহ্মকে) প্রাপ্ত হন।.......
তথ্যসূত্রঃ- ভগবান্ শঙ্করাচার্যের কঠ ও মুণ্ডক উপনিষদ্ ভাষ্য।
শ্রীশুভ চৌধুরী
মার্চ ৩১, ২০২০ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment