Sunday, 23 January 2022

মণিকর্ণিকাষ্টকম্

 

ত্বত্তীরে মণিকর্ণিকে হরিহরৌ সায়ুজ্যমুক্তিপ্রদৌ

বাদন্তৌ কুরুতঃ পরস্পরমুভৌ জন্তোঃ প্রয়াণোৎসবে ।

মদ্রূপো মনুজোঽয়মস্তু হরিণা প্রোক্তঃ শিবস্তৎক্ষণাৎ

তন্মধ্যাদ্ভৃগুলাঞ্ছনো গরুড়গঃ পীতাম্বরো নির্গতঃ ||১||

ভাবার্থ - হে মণিকর্ণিকে, তোমার তীরে কোন প্রাণীর প্রাণত্যাগরূপ উৎসব উপস্থিত হলে তার সাযুজ্যমুক্তিদারী হরি ও হরের বিবাদ আরম্ত হয়। “এই মনুষ্য আমার স্বরূপ প্রাপ্ত হোক।" হরি এই কথা শবের উদ্দেশে বললে, তৎক্ষণাৎ সেই শবদেহের মধ্য হতে বক্ষঃস্থলে ভৃগুপদচিহ্নিত পীতাম্বরধারী গরুড়বাহন পুরুষ নির্গত হয়ে থাকেন ||১||

ইন্দ্রাদ্যাস্ত্রিদশাঃ পতন্তি নিয়তং ভোগক্ষয়ে তে পুন-

র্জায়ন্তে মনুজাস্ততোপি পশবঃ কীটাঃ পতঙ্গাদয়ঃ ।

যে মাতর্মণিকর্ণিকে তব জলে মজ্জন্তি নিষ্কল্মষাঃ

সায়ুজ্যেঽপি কিরীটকৌস্তুভধরা নারায়ণাঃ স্যুর্নরাঃ ||২||

ভাবার্থ - ইন্দ্রাদি দেবগণ আপন আপন ভোগকালের অবসান হলে পতিত হন, তারা পুনরায় মানবাদি যোনিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং কালান্তরে কর্মবশতঃ সেই সকল মনুষ্য পশুযোনি প্রাপ্ত হয়ে পরে কীট-পতঙ্গাদি হয়ে থাকে, কিন্তু মাতা মণিকর্ণিকে, যে সকল মনুষ্য তোমার জলে একবারমাত্র নিমগ্র হয়, তারা সাযুজ্যমুক্তি প্রাপ্ত হয়ে কিরীট ও কৌস্তুভধারী নারারণ হয়ে থাকে, পুনঃ পতন হয় না ||২||

কাশী ধন্যতমা বিমুক্তনগরী সালঙ্কৃতা গঙ্গয়া

তত্রেয়ং মণিকর্ণিকা সুখকরী মুক্তির্হি তৎকিঙ্করী ।

স্বর্লোকস্তুলিতঃ সহৈব বিবুধৈঃ কাশ্যা সমং ব্রহ্মণা

কাশী ক্ষোণিতলে স্থিতা গুরুতরা স্বর্গো লঘুত্বং গতঃ ||৩||

ভাবার্থ - কাশীপুরী সর্বপ্রধান মুক্তিনগরী, গঙ্গা তার অলঙ্কার, মণিকর্ণিকা সেই গঙ্গামধ্যে নিরতিশয় সুখদায়িনী। কারণ, মুক্তি তার দাসী। একদিন ব্রহ্মা দেবগণের সহিত স্বর্গকে কাশীর সঙ্গে তুলাদণ্ডে তোলিত করেছিলেন, তাতে কাশীর গুরুতা প্রযুক্ত কাশী ক্ষিতিতলে অবস্থিত হলেন এবং স্বর্গ লঘু বলে তাা উর্দ্ধদেশে গমন করল ||৩||

গঙ্গাতীরমনুত্তমং হি সকলং তত্রাপি কাশ্যুত্তমা

তস্যাং সা মণিকর্ণিকোত্তমতমা যত্রেশ্বরো মুক্তিদঃ ।

দেবানামপি দুর্লভং স্থলমিদং পাপৌঘনাশক্ষমং

পূর্বোপার্জিতপুণ্যপুঞ্জগমকং পুণ্যৈর্জনৈঃ প্রাপ্যতে ||৪||

ভাবার্থ - সমস্ত গঙ্গাতীর অপর সকল স্থান অপেক্ষা উত্তম স্থান, সেই গঙ্গাতীর-মধ্যেও কাশী উত্তমা, সেই কাশীমধ্যে মণিকর্ণিকা অতিশয় উত্তম, ( যেহেতু, এই মণিকর্ণিকাতে প্রাণত্যাগ করলেই ) স্বয়ং ঈশ্বর ( তৎক্ষণাৎ ) সেই জীবকে মুক্তি প্রদান করে থাকেন। অতএব পাপবিনাশদক্ষ এই স্থান দেবগণেরও দুর্লভ ও পূর্ব-পূর্বজন্মার্জিত পুণাপু্ঞ্জজ্ঞাপক পুণ্যাত্মা ব্যক্তিরাই এ লাভ করে থাকেন ||৪||

দুঃখাম্ভোনিধিগতো হি জন্তুনিবহস্তেষাং কথং নিষ্কৃতিঃ

জ্ঞাত্বা তদ্বি বিরিঞ্চিনা বিরচিতা বারাণসী শর্মদা ।

লোকাঃ স্বর্গসুখাস্ততোঽপি লঘবো ভোগান্তপাতপ্রদাঃ

কাশী মুক্তিপুরী সদা শিবকরী ধর্মার্থমোক্ষপ্রদা ||৫||

ভাবার্থ - যে সকল জীব নিরন্তর দুঃখার্ণবে নিমগ্ন আছে, তারা কিরূপে সেই দুঃখসাগর হতে নিষ্কৃতি পাবে, এ চিন্তা করেই বিরিঞ্চি ( দুঃখার্ণবনিমগ্ন জন্তুগণের ) সুখদায়িনী এই বারাণসী পুরী নির্মাণ করেছেন। সকল লোকই অর্থাৎ ব্রহ্মলোক প্রভৃতি স্থান স্বর্গসুখপ্রদ ও ভোগান্তে পতন এই সকল লোক হতেই হয়, অতএব কাশী হতে এই সকল লোক লঘু, কিন্তু কাশীপুরী ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রদান করে অবশেষে মুক্তি দিয়ে থাকে; সুতরাং কাশীই জীবগণের সর্বদা মঙ্গলসাধন করেন ||৫||

একো বেণুধরো ধরাধরধরঃ শ্রীবৎসভূষাধরঃ

যোঽপ্যেকঃ কিল শঙ্করো বিষধরো গঙ্গাধরো মাধবঃ ।

হে মাতর্মণিকর্ণিকে তব জলে মজ্জন্তি তে মানবাঃ

রুদ্রা বা হরয়ো ভবন্তি বহবস্তেষাং বহুত্বং কথম্ ||৬||

ভাবার্থ - যিনি গিরিগোবর্ধন ধারণ করেছেন এবং যার বক্ষস্থলে শ্রীবৎসচিহ্ন ভূষণরূপে বিদ্যমান আছে, সেই মুরলীধর হরিও এক; আর যিনি শিরোদেশে গঙ্গাকে বহন করছেন, সেই নীলকণ্ঠ উমাপতি শঙ্করও এক ; কিন্তু মাতা মণিকর্ণিকে। যে সকল মানব তোমার জলে নিমগ্ন হয়, তারা (প্রতোকেই রুদ্র বা হরি স্বরূপ হওয়াতে ) বহু রুদ্র ও হরি হয়ে থাকেন; কিন্ত কিরূপে এদের বহুত্ব হয়? অর্থাং তোমার মাহাত্ম্য অদ্ভুত ||৬||

ত্বত্তীরে মরণং তু মঙ্গলকরং দেবৈরপি শ্লাঘ্যতে

শক্রস্তং মনুজং সহস্রনয়নৈর্দ্রষ্টুং সদা তৎপরঃ ।

আয়ান্তং সবিতা সহস্রকিরণৈঃ প্রত্যুদ্গতোঽভূৎ সদা

পুণ্যোঽসৌ বৃষগোঽথবা গরুড়্গঃ কিং মন্দিরং যাস্যতি ||৭||

ভাবার্থ - হে দেবি মণিকর্ণিকে ! তোমার তীরে মরণও মঙ্গলকর, দেবগণও এই মরণের প্রশংসা করে থাকেন। যে ব্যক্তি তোমার তীরে প্রাণত্যাগ করে, দেবরাজ সহস্র নয়ন দ্বারা তাকে দর্শন করার নিমিত্ত সমুৎসুক থাকেন, সে যখন আগমন করতে থাকে, তখন সূর্য্যদেব এই ব্যক্তি বৃষ বা গরুড়ে আরূঢ় হয়ে কোন্ মন্দিরে প্রবেশ করবেন, ইত্যাকার চিন্তা করত তাকে সহস্রকিরণ দ্বারা প্রত্যু্দ্গমন করেন ||৭||

মধ্যাহ্নে মণিকর্ণিকাস্নপনজং পুণ্যং ন বক্তুং ক্ষমঃ

স্বীয়ৈরব্ধশতৈশ্চতুর্মুখধরো বেদার্থদীক্ষাগুরুঃ ।

যোগাভ্যাসবলেন চন্দ্রশিখরস্তৎপুণ্যপারং গতঃ

ত্বত্তীরে প্রকরোতি সুপ্তপুরুষং নারায়ণং বা শিবম্ ||৮||

ভাবার্থ - বেদার্থের দীক্ষাগুরু, দেবশ্রেষ্ঠ চতুরানন, স্বীয় পরিমাণে শত বৎসরেও মধ্যাহ্নকালীন মণিকর্ণিকা স্নানের ফল বর্ণনা করে শেষ করতে পারেন নাই, কেবল একমাত্র চন্দ্রশেখর যোগাভ্যাসবলে তোমার পুণ্যমাহাত্ম্য জানিতে পারেন । যারা তোমার তীরে মহানিদ্রায় প্রসুপ্ত হয়, তাদের বিষুত্ব বা শিবত্ব প্রদান তিনিই করে থাকেন ||৮||

ফলশ্রুতি:–

কৃচ্ছ্রৈঃ কোটিশতৈঃ স্বপাপনিধনং যচ্চাশ্বমেধৈঃ ফলং

তৎসর্ব মণিকর্ণিকাস্নপনজে পুণ্যে প্রবিষ্টং ভবেৎ ।

স্নাত্বা স্তোত্রমিদং নরঃ পঠতি চেৎ সংসারপাথোনিধিং

তীর্ত্বা পল্বলবৎ প্রয়াতি সদনং তেজোময়ং ব্রহ্মণঃ ||৯||

ভাবার্থ - বহু শতকোটি চান্দ্রায়ণাদি ব্রতে যে পাপনাশ হয়, বহু অশ্বমেধে যে ফললাভ হয়, তৎসমস্তই মণিকর্ণিকায় স্নানজনিত পুণ্যের অন্তর্গত। আর যে ব্যক্তি স্নান করে এই স্তোত্র পাঠ করে, সেই মনুষ্য ক্ষুদ্র জলাশয়ের ন্যায় সংসারসাগর পার হয়ে তেজোময় ব্রহ্মসদনে গমন করে থাকে ||৯||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ মণিকর্ণিকাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত মণিকর্ণিকাষ্টক স্তোত্র সমাপ্ত।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...