Sunday, 16 July 2023

পুরাণ শাস্ত্রে শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন বিষয়ে কি বলছে?

 


আচার্য বিদ্যারণ্য স্বামী বলছেন—"শ্রবণ, মনন নিদিধ্যাসন আত্মসাক্ষাৎকারের হেতু। শ্রুতিবাক্য হতে আত্মশ্রবণ করবে, যুক্তিসমূহের দ্বারা তার মনন করবে, এরূপ মনন করে পরে সর্বদা সেই আত্মার ধ্যান করবে। পুরাণসমূহেই এই বিষয়ের তাৎপর্য স্পষ্টরূপে বর্ণিত আছে

সর্ববেদান্তবাক্যানামাচার্যমুখতঃ প্রিয়াৎ।

বাক্যানুগ্রাহকন্যায়শীলনং মননং ভবেৎ।।

নিদিধ্যাসনমৈকাগ্র্যং শ্রবণে মননেঽপি চ।

নিদিধ্যাসনসংজ্ঞং মননং দ্বয়ং বুধাঃ।।

ফলোপকারকাঙ্গং স্যাত্তেনাসম্ভাবনা তথা।

বিপরীতা নির্মূলং প্রবিনশ্যতি সত্তমাঃ।।

(মানব উপপুরাণ অধ্যায়)

প্রিয় আচার্যের মুখ হতে, সকল বেদান্তবাক্যের ব্রহ্মবিষয়ে তাৎপর্যজ্ঞানের অনুকূল যে সকল ন্যায় বা যুক্তি আছে, তা শ্রবন করে, সেই সকল যুক্তির বারংবার যে অনুশীলন, তাই মনন হয়ে থাকে। বেদান্তবাক্যের শ্রবণে এবং তার অর্থ-মননে চিত্তের যে একাগ্রতা, তাই নিদিধ্যাসন। নিদিধ্যাসন মনন এই দুইটি হে পণ্ডিতগণ! ফলের উপকারক অঙ্গ হয়ে থাকে। হে সাধুশ্রেষ্ঠগণ! সেই মনন নিদিধ্যাসনের দ্বারা, ব্রহ্মতত্ত্ব বিষয়ে যে অসম্ভাবনা বিপরীত জ্ঞান, তা মূলের সহিত উচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।"

এর তাৎপর্য এই যে, ধ্যান মনন এই দুইটি সাধন দ্বারা শ্রবণ দৃঢ়ীকৃত হয়, এই কারণে এই দুইটিকে ফলোপকারক অঙ্গ বলা হয়। এদের মধ্যে প্রথম অর্থাৎ মননের দ্বারা ব্রহ্মবিষয়ে যে অসম্ভাবনা, অর্থাৎ ব্রহ্ম প্রমাণের দ্বারা সিদ্ধ হয় না বলে তার অস্তিত্বেরই সম্ভাবনা নেই, এই প্রকার যে জ্ঞান, তা দূর হয়ে থাকে। নিদিধ্যাসন বা ধ্যানরূপ দ্বিতীয় উপায়টি দ্বারা, যে সকল ভ্রান্ত ধারণা বা বিপরীত প্রতীতি আছে, তাও নষ্ট হয়। এইরূপে অসম্ভাবনা বিপরীত প্রত্যয়রূপ দ্বিবিধ প্রতিবন্ধক নষ্ট করে, মনন নিদিধ্যাসন, শ্রবণের সাহায্য করে বলে, এই দুইটি হেতুকেই শ্রবণের সহকারী অর্থাৎ ফলোপকারক অঙ্গ বলে নির্দেশ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ-

আচার্য বিদ্যারণ্য মুনীশ্বর বিরচিত "বিবরণ-প্রমেয়-সংগ্রহ"

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুলাই ১৩, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...