Thursday, 17 June 2021

জীব ঈশ্বরের কল্পিত অংশ কোন হেতুবশতঃ ?

 


জীব ঈশ্বরের কল্পিত অংশ কোন হেতুবশতঃ ?

ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি জীব ঈশ্বরের কল্পিত অংশ। এখন কোন্ হেতুবশতঃ এই অংশতার জ্ঞান হয়? ভগবান সূত্রকার ব্রহ্মসূত্রে বলিতেছেন-

মন্ত্রবর্ণাচ্চ ৷৷- (ব্রহ্মসূত্র-২.৩.৪৪)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য শারীরক মীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন- এই মন্ত্রবর্ণও এই অর্থই অর্থাৎ ব্রহ্মাভিন্ন জীব অবিদ্যাদশাতে তাঁহার কল্পিত অংশ, ইহাই বোধ করাইতেছে। যথা-

"তাবানস্য মহিমা ততো জ্যায়াংশচ পূরুষঃ । পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্ৰিপাদস্যামৃতং দিবীতি ॥"- (ছান্দোগ্যোপনিষৎ- ৩.১২.৬)

"ব্রহ্মের চতুষ্পদ ও ষড়বিধ বিকারাত্মক যে পরিমাণ একপাদ গায়ত্রী বলিয়া বর্ণিত হইল, সেই পরিমাণই অৰ্থাৎ তৎসমস্তই উক্ত গায়ত্রী সংজ্ঞক সমস্ত ব্ৰহ্মের মহিমা, অর্থাৎ বিভূতির বিস্তার ; অতএব, তদাপেক্ষা অর্থাৎ গায়ত্রী-সংজ্ঞক বাচারম্ভণমাত্ররূপী অসত্য বিকারাত্মক ব্ৰহ্ম অপেক্ষাও পরমার্থ সত্য, বিকারহীন পূরুষ (পরব্রহ্ম) অতিশয় মহৎ ; কারণ, তিনিই সর্ব জগৎকে পরিপূরণ করেন, অথবা হৃদয়রূপ পুরে অবস্থান করেন, এইজন্য পুরুষ-পদবাচ্য হন । সমস্ত ভূত অর্থাৎ তেজ, জল ও পৃথিবী প্রভৃতি স্থাবর-জঙ্গম-সমূহ সেই এই পুরুষেরই একপাদ (একাংশমাত্র); এই গায়ত্র্যাত্মক সমস্ত ব্ৰহ্মের ত্রিপাদযুক্ত অমৃতস্বরূপ পূরুষ প্রকাশময় নিজ আত্মস্বরূপে অবস্থিত আছেন। ইতি শব্দ মহিমা কথন সমাপ্তি জ্ঞাপনার্থ ॥"

এখানে জীব যাহাতে প্রধান, সেই স্থাবরজঙ্গমসকলকে শ্রুতি নির্দেশ করিতেছেন-"অহিংসন্সর্বভূতান্যন্যত্র তীর্থেভ্যঃ" - (ছান্দোগ্যোপনিষৎ- ৮.১৫.১) "তীর্থ (-শাস্ত্রবিহিত কর্ম্ম) হইতে অন্যত্র ভূতসকলকে হিংসা করিবে না", এইপ্রকার প্রয়োগ আছে। অংশ, পাদ ও ভাগ ইহারা অর্থান্তর নহে, ইহারা পর্যায় শব্দ। এই হেতুবশতঃও অর্থাৎ বেদমন্ত্রে পঠিত হইয়াছে বলিয়াও জীব ঈশ্বরের কল্পিত অংশ ইহার জ্ঞান হয়।

আবার শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতেও জীব ঈশ্বরের অবিদ্যা কল্পিত অংশ ইহা স্মৃত হইতেছে। তাই মহর্ষি বাদরায়ণ পরবর্তী সূত্র করিতেছেন-

অপি চ স্মর্যতে ৷৷- (ব্রহ্মসূত্র-২.৩.৪৫)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- আর দেখ, ভগবদ্গীতাতেও জীব ঈশ্বরের অংশ ইহা, স্মৃত হইতেছে। আর এইহেতুশতঃও জীবের ঈশ্বরাংশতা অবগত হওয়া যায়। যথা-

'মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ'-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৫।৭)

"কারণ জীবলোকে অর্থাৎ সংসারে কর্তাভোক্তারূপে প্রসিদ্ধ জীব আমারই (পরমাত্মারই) সনাতন অংশ অর্থাৎ ভাগ বা অবয়ব বা একদেশ অর্থাৎ এইগুলি পরমাত্মা হইত পৃথক কোন অর্থান্তর নহে। সেই জীব আমার (পরমাত্মার) অংশ রূপে কল্পিত। জলরূপ নিমিত্ত অপসৃত হইলে সূর্যাংশ জল-সূর্য যেরূপ সূর্যে লীন হয়, অথবা মহাকাশের অভিন্ন অংশ ঘটস্থ আকাশ যেরূপ ঘট নষ্ট হইলে মহাকাশে মিলিত হয়, আর প্রত্যাগমন করে না, সেইরূপ ব্রহ্মাংশ জীব অবিদ্যাকৃত উপাধি-অপগমে ব্রহ্মপ্রাপ্ত হইয়া আর পুনরাবৃত্ত হয় না। কারণ জীব ব্রহ্মই।"...................

ভগবান বাদরায়ণ এইসূত্রে তাই বলিতেছেন-

আভাস এব চ ৷৷- (ব্রহ্মসূত্র-২.৩.৫০)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- জলে প্রতিবিম্বিত সূর্য্য প্রভৃতির ন্যায় এই জীব অবশ্যই পরমাত্মার আভাস (-প্রতিবিম্ব), ইহা অবগত হইতে হইবে। তিনিই (-উপাধিবর্জ্জিত পরমাত্মাই) সাক্ষাৎ জীব নহেন আবার তিনি জীব হইতে ভিন্ন বস্তুও নহেন।...................

 


No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...