শঙ্করাচার্য কৃষ্ণযজুর্বেদীয় কঠোপনিষদের ভাষ্য ভূমিকাতে ইহার একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিচ্ছেন- 'উপ' ও 'নি' পূর্বক সদ্ ধাতুর ক্বিপ্ প্রত্যয় নিষ্পন্ন এই উপনিষদ্ পদটি 'সদ্' ধাতুর বিনাশ, প্রাপ্তি, ও অবসাদনার্থক তিন প্রকার অর্থভেদে তিন প্রকার অর্থের প্রকাশক হইয়া থাকে।
যে
মুমুক্ষুগণ লৌকিক ও পারলৌকিক বিষয়ে
বিতৃষ্ণ হইয়া উপনিষদ্ শব্দের বাচ্য যে আত্মবিষয়ক পরোক্ষ
জ্ঞান সেই বিদ্যার 'উপ' বা সমীপে গমন
করিয়া অর্থাৎ শ্রবণ করিয়া তাহাতে 'নি' বা নিষ্ঠা সহকারে
নিঃসংশয় চিত্তে অনুশীলন করেন তাঁহাদের অবিদ্যাদি সংসার বীজের বিনাশ হয় বলিয়া 'সদ্' ধাতুর এই বিনাশার্থক অর্থের
যোগবশতঃ আত্মবিষয়ক বিদ্যাকে উপনিষদ্ বলা হয়।
অথবা
পূর্বোক্ত বৈরাগ্য, নিষ্ঠা ও জ্ঞানানুশীলন প্রভৃতি
বিশেষণ বিশিষ্ট মুমুক্ষুগণকে পরব্রহ্ম প্রাপ্ত করাইয়া দেয় বলিয়া 'সদ্' ধাতুর ব্রহ্মের প্রাপকত্ব অর্থের যোগবশতঃও ব্রহ্মবিষয়ক বিদ্যাকে উপনিষদ্ বলা হয়।
ভূঃ,
ভুবঃ প্রভৃতি লোক সকলের আদি অর্থাৎ পূর্বে সৃষ্ট ব্রহ্মা হইতে জাত ও জ্ঞাতা যে
অগ্নি বা বিরাট, দ্বিতীয়
বরে প্রার্থিত সেই অগ্নি বা বিরাটবিষয়ক বিদ্যার
ব্রহ্মলোকরূপ ফলপ্রাপ্তির কারণ হওয়ার ফলে ঐ বিদ্যা মনুষ্যাদি
লোকে পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন গর্ভবাস, জন্ম, জরা প্রভৃতি উপদ্রবসমূহের অবসাদকরূপে শৈথিল্য সম্পাদন করে বলিয়া সদ্ ধাতুর অবসদনার্থক অর্থের যোগবশতঃ ঐ অগ্নিবিদ্যাকেও উপনিষদ্
বলা হয়।
অনেকে
উপনিষদ্ শব্দের দ্বারা গ্রন্থকেও বুঝাইয়া থাকেন। গ্রন্থ ব্রহ্মবিষয়ক বিদ্যার নিমিত্ত বলিয়া গ্রন্থে উপনিষদ্ শব্দ ব্যবহার করা যাইতে পারে। তবে উপনিষদ্ শব্দ মুখ্য অর্থে ব্রহ্মবিদ্যাতে প্রযুক্ত হয় এবং লক্ষণাসহায়ে গ্রন্থেতেও প্রযুক্ত হয়।.......
No comments:
Post a Comment