Tuesday, 1 June 2021

নিষ্কলম্ নিরবয়ব ব্রহ্ম প্রাপ্তির উপায় কি?

 


অথর্ববেদের শৌনকীয় শাখার অন্তর্গত মুণ্ডক উপনিষদে বর্ণিত আছে-

'ন চক্ষুষা গৃহ্যতে নাপি বাচা নান্যৈর্দেবৈস্তপসা কর্মণা বা ৷ জ্ঞানপ্রসাদেন বিশুদ্ধসত্ত্বস্ততস্তু তং পশ্যতে নিষ্কলং ধ্যায়মানঃ৷-(মুণ্ডক উপনিষৎ ৩.১.৮)

শঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- পুনরায় সেই সত্যাখ্য ব্রহ্মের প্রাপ্তির অসাধারণ উপায়ের কথা বলা হইতেছে। কারণ রূপবর্জ্জিত বলিয়া কেহ এই সত্য ব্রহ্মকে চক্ষুর দ্বারা গ্রহণ করিতে পারে না, অবাচ্য বলিয়া বাগিন্দ্রিয়ের বা বাক্যের দ্বারাও গ্রহণ করিতে পারে না, অপরাপর ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারাও নয়। তপস্যার দ্বারা অন্য সর্ব্বলোক প্রাপ্তি হইলেও ইনি তপস্যার দ্বারা প্রাপ্ত হন না। প্রসিদ্ধ ও মহিমান্বিত হইলেও ঐ বেদোক্ত অগ্নিহোত্রাদি কর্ম্মের মাধ্যমেও তাঁহার প্রাপ্তি হয় না।

আচ্ছা, তাহা হইলে তাঁহার প্রাপ্তির উপায়টি কি? ইহার উত্তরে বলিতেছেন-জ্ঞানপ্রসাদ অর্থাৎ বুদ্ধির নির্ম্মলতাবশতঃই তাঁহার প্রাপ্তি হয়। কারণ সকলেই এই সত্যব্রহ্মকে প্রাপ্ত হইতে সমর্থ হইলেও স্বভাবত সর্ব্বপ্রাণিগণের জ্ঞান বাহ্যবস্তুবিষয়ক আসক্ত্যাদি দোষে কলুষিত বলিয়া অপ্রসন্ন (ঘোলা) অর্থাৎ অশুদ্ধ হইয়া মলিন দর্পণে এবং চঞ্চল জলে বিম্বের প্রতিফলের ন্যায় নিত্য সন্নিহিত হইলেও সত্যব্রহ্মের স্বরূপকে উপলব্ধি করাইতে পারে না। সেইহেতু যখন ইন্দ্রিয় ও বিষয়ের সংসর্গজনিত আসক্ত্যাদি মলরূপ কলুষতার দূরীভূত হওয়ার ফলে (স্বচ্ছ) দর্পণ ও জল প্রভৃতির মতো প্রসন্ন অর্থাৎ স্বচ্ছ ও শান্ত হইয়া বুদ্ধি অবস্থান করে তখন বুদ্ধির প্রসন্নতা (নির্ম্মলতা প্রাপ্তি) ঘটে। আর সেই জ্ঞানপ্রসাদে বিশুদ্ধচিত্ত অর্থাৎ বিশুদ্ধ অন্তঃকরণের সাধক এই সত্যব্রহ্মকে দেখিবার (প্রাপ্তি করিবার) যেহেতু যোগ্য হন সেইহেতু ধ্যায়মান অর্থাৎ সত্যাদি সাধনবিশিষ্ট ও সংযতেন্দ্রিয় জনই একাগ্রমনে চিন্তা করিতে করিতে নিষ্কল অর্থাৎ সম্পূর্ণ অবয়বভেদরহিত সেই সত্যব্রহ্মকে দর্শন অর্থাৎ প্রাপ্ত হন।

ইতি ভাষ্যানুবাদ।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...