Friday, 3 July 2020

উপনিষৎসকলে 'যোনি' শব্দের দ্বারা বর্ণিত হইয়াছেন বলিয়া ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণঃ-


শ্রীমৎ মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীত বেদান্ত মীমাংসাশাস্ত্রের প্রকৃত্যধিকরণে বর্ণিত আছে-

যোনিশ্চ হি গীয়তে৷৷ -(ব্রহ্মসূত্র ১.৪.২৭)

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- আচার্য্য শঙ্কর ভগবৎ ভাষ্যে বলিতেছেন- আর এইহেতুবশতঃও ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, যেহেতু উপনিষৎ সকলে ব্রহ্ম 'যোনি', এইরূপেও পঠিত হইতেছেন, যথা-

'কর্তারমীশং পুরুষং ব্রহ্মযোনিম্'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-৩.১.৩)

অর্থাৎ 'জগতের কর্ত্তা ঈশ্বর পুরুষ ব্রহ্মযোনি অর্থাৎ যিনি ব্রহ্ম আবার সর্ব্বকারণও।'

তদব্যয়ং যদ্ভূতযোনিং পরিপশ্যন্তি ধীরাঃ৷৷-(মুণ্ডক উপনিষৎ-১.১.৬)

অর্থাৎ 'এইরূপ লক্ষণবিশিষ্ট ভূতযোনি অর্থাৎ প্রাণিগণের সৃষ্টির কারণস্বরূপ, স্থাবর-জঙ্গমের কারণস্বরূপ পৃথিবীর ন্যায় যাঁহাকে তথা সকলের স্বরূপভূত সেই অব্যয়কে বিবেকিগণ সর্বত্র উপলব্ধি করেন।'ইত্যাদি শ্রুতি।

আর 'যোনি' শব্দটী প্রকৃতির (-উপাদানকারণের) বাচক, ইহা লোকমধ্যে অবগত হওয়া যায়, যথা-'পৃথিবী ওষধি ও বনস্পতিসকলের যোনি' ইত্যাদি। স্ত্রী যোনিও স্বীয় অবয়বের (-শোনিতের) দ্বারা হয় গর্ভের প্রতি উপাদানকারণ। কোন কোন স্থলে 'যোনি' শব্দ স্থানের বাচকরূপেও পরিদৃষ্ট হয়, যথা-

'যোনিষ্ট ইন্দ্র নিষদে অকারি'-(ঋগ্বেদ সংহিতা ১।১০৪।১)

অর্থাৎ 'হে ইন্দ্র!, তোমার উপবেশনের জন্য আমি যোনি (-স্থান) নির্ম্মাণ করিয়াছি।'

কিন্তু এখানে 'যথোর্ণনাভিঃ সৃজতে গৃহ্ণতে চ'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-১.১.৭)

'মাকড়সা কোন অন্যকারণের অপেক্ষা না করিয়া নিজেই সৃষ্টি করে অর্থাৎ নিজ শরীর হইতে অভিন্ন তন্তুরাশিকে বাহিরে প্রসারিত করে, আবার সেই সকলকে গ্রহণও করে অর্থাৎ নিজের সহিত একীভূত করিয়া ফেলে।'

ইত্যাদি এইজাতীয় বাক্যশেষবশতঃ যোনিশব্দটীর উপাদানকারণতারূপ অর্থ পরিগৃহীত হইতেছে। এইপ্রকারে ব্রহ্মের উপাদানকারণতা প্রকৃষ্টরূপে সিদ্ধ হইল।...........ইতি ভাষ্যানুসারে ভাবার্থ।

এইরূপ মাকড়সার শরীরের তন্তুরূপে পরিণামের ন্যায় ঈশ্বরের উপাধিভূতা মায়ার জগদ্রূপে পরিণামে ঈশ্বরের উপাদানকারণতাও সিদ্ধ হয়। এইরূপে মায়া-শবলিত ঈশ্বররূপ ব্রহ্মই হন জগতের অভিন্ননিমিত্তোপাদান কারণ।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...