Thursday, 30 July 2020

তত্ত্বজ্ঞানীর দেহে থাকাঃ-


আচার্য্য শঙ্কর ভগবদ্গীতার (৫।১৩) ভাষ্যে বলিতেছেন-'দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি সংঘাত হইতে আত্মা ভিন্ন' এইরূপ বিবেকীর 'আমি শরীরে থাকি' এইরূপ প্রত্যয় হইতে পারে। পরাত্মাতে অবিদ্যা দ্বারা অধ্যারোপিত অপরের অর্থাৎ দেহেন্দ্রিয়াদি জাত কর্ম্মসকলের, বিবেকজ্ঞানরূপ বিদ্যাবিশিষ্ট মনের দ্বারা তত্ত্বজ্ঞানীর সংন্যাস উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন-বিবেকজ্ঞান সর্ব্বকর্ম্ম সংন্যাসীরও দেহেই বিশেষ বিজ্ঞান হওয়ায়, গৃহের মত নবদ্বার যুক্ত দেহপুরে তাঁহার থাকা কেবল প্রারব্ধ কর্ম্মের অবশিষ্ট সংস্কার সকলের ফলভোগের অনুবৃত্তিহেতু।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই তত্ত্বটিকে অপূর্ব্ব দৃষ্টান্ত দ্বারা উপস্থাপন করিতেছেন-'নারকেলের ফোঁপল শুকিয়ে গেলে যেমন খোল থেকে আলাদা হয়ে যায়, তেমনিভাবে তত্ত্বজ্ঞানী দেহে অবস্থান করেন। তবে একটা না একটা জায়গায় একটু লেগে থাকে-এরই নাম প্রারব্ধ।'

সেই পরমাত্মাই জীবভাব প্রাপ্ত হইয়া নবদ্বার-যুক্ত দেহপুরে অবস্থান করে। এই বিষয়ে কৃষ্ণযজুর্ব্বেদীয় শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্ এ বর্ণিত আছে-
নবদ্বারে পুরে দেহী হংসো লেলায়তে বহিঃ৷

বশী সর্বস্য লোকস্য স্থাবরস্য চরস্য চ৷৷-(শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ -৩।১৮)

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- নবদ্বারযুক্ত পুরে অর্থাৎ মস্তকস্থ দুই চক্ষু, দুই কর্ণ, দুই নাসিকা এবং মুখ এই সাতটি আত্মার রূপ, শব্দ, গন্ধ এবং রস উপলব্ধির দ্বার, বাকি দুইটী নিম্নাঙ্গে মুত্র ও পুরীষ ত্যাগের জন্য উপস্থ এবং পায়ু; সর্ব্বসমেত এই নয়টী দ্বারযুক্ত শরীরে দেহী তথা বিজ্ঞানাত্মা অর্থাৎ ভূত ও ইন্দ্রিয়রূপ উপাধিযুক্ত হইয়া হংস অর্থাৎ পরমাত্মা বহির্বিষয় গ্রহণার্থ সচেষ্ট হন। এখানে অবিদ্যাজনিত কার্যকে হনন করিবার জন্য তিনি হংস। তথা স্থাবরজঙ্গম সমস্ত লোকের নিয়ন্তা তিনিই। এভাবেই এই শ্রুতিতে ব্রহ্মের সর্বাত্মকভাব প্রতিপাদন করা হইয়াছে।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...