Monday, 31 May 2021

কল্যাণবৃষ্টিস্তবঃ

 


কল্যাণবৃষ্টিস্তবঃ ইহার ভাবার্থঃ-

কল্যাণবৃষ্টিভিরিবামৃতপূরিতাভি-

র্লক্ষ্মীস্বয়ংবরণমঙ্গলদীপিকাভিঃ ।

সেবাভিরম্ব তব পাদসরোজমূলে

নাকারি কিং মনসি ভাগ্যবতাং জনানাম্ ||১||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! অমৃতপূরিত কল্যাণবৃষ্টির ন্যায় লক্ষ্মীদেবীর স্বয়ংবর কার্য্যে মঙ্গলদীপ প্রভৃতি দ্বারা তোমার সেবার জন্য তোমার পাদপদ্ম মূলে অবস্থিত ভাগ্যবানদের মনে ( তুমি ) কি না করেছ? ||১||

এতাবদেব জননি স্পৃহণীয়মাস্তে

ত্বদ্বন্দনেয়ু সলিলস্থগিতে চ নেত্রে ।

সান্নিধ্যমুদ্যদরুণায়ুতসোদরস্য

ত্বদ্বিগ্রহস্য পরয়া সুধয়া প্লুতস্য ||২||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! তোমার বন্দনাকালে অশ্রুরুদ্ধ নেত্রদ্বয় ও উদয়োন্মুখ দশ সহস্র অরুণসদৃশ, পরম অমৃতের দ্বারা আপ্লুত, তোমার বিগ্রহের সান্নিধ্য এই দুইটিই স্পৃহণীয় ||২||

ঈশাত্বনামকলুষাঃ কতি বা ন সন্তি

ব্রহ্মাদয়ঃ প্রতিভবং প্রলয়াভিভূতাঃ ।

একঃ স এব জননি স্থিরসিদ্ধিরাস্তে

যঃ পাদয়োস্তব সকৃৎ প্রণতিং করোতি ||৩||

ভাবার্থ -হে মাতঃ ! ঈশ্বরনাম দ্বারা কলুষিত, প্রতিসৃষ্টিতে প্রলয়াভিভূত ( জন্ম-মরণ যুক্ত ) কত ব্রহ্মাদিই আছেন ( কিন্তু ) যিনি তোমার পাদপদ্মদ্বয়ে একবার প্রণতি করেন, তিনিই একমাত্র স্থিরসিদ্ধি ব্যক্তি ( অর্থাৎ ব্রহ্মাদিও জন্মমরণের অধীন, কিন্তু তোমার পদসেবী ব্যক্তি জন্ম-মৃত্যু প্রবাহের বহির্দেশে গমন করে–অমরতা লাভ করে বা মোক্ষ প্রাপ্ত হয় ||৩||

লব্ধ্বা সকৃত্ত্রিপুরসুন্দরি তাবকীনং

কারুণ্যকন্দলিতকান্তিভরং কটাক্ষম্ ।

কন্দর্পকোটিসুভগাস্ত্বয়ি ভক্তিভাজঃ

সংমোহয়ন্তি তরুণীর্ভুবনত্রয়েঽপি ||৪||

ভাবার্থ - হে ত্রিপুরসুন্দরী ! তোমার করুণাপূর্ণ কটাক্ষ একবার মাত্র লাভ করলে তোমাতে ভক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি কোটিকামসদৃশ সৌভাগ্যসম্পন্ন হয়ে ভুবনত্রয় স্থিত তরুণীগণকে সম্মোহিত করে ||৪||

হ্রীংকারমেব তব নাম গৃণন্তি বেদা

মাতস্ত্রিকোণনিলয়ে ত্রিপুরে ত্রিনেত্রে ।

ত্বৎসংস্মৃতৌ যমভটাভিভবং বিহায়

দীব্যন্তি নন্দনবনে সহ লোকপালৈঃ ||৫||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! বেদ সকল হ্রীংকারই তোমার নাম ( এরূপ ) বলে থাকেন। হে ত্রিকোণবাসিনি, হে ত্রিপুরে, হে ত্রিনেত্রে, তোমার স্মরণ করলে যমদূত কর্তৃক পীড়িত হওয়ার স্থলে সে লোকপালগণ সহ নন্দনকাননে ক্রীড়া করে ||৫||

হন্তুঃ পুরামধিগলং পরিপীয়মানঃ

ক্রূরঃ কথং ন ভবিতা গরলস্যবেগঃ ।

নাশ্বাসনায় যদি মাতরিদং তবার্ধং

দেবস্য শশ্বদমৃতাপ্লুতশীতলস্য ||৬||

ভাবার্থ - পুরসমূহের হন্তা ( ত্রিপুরারি ) কর্তৃক পীত গরলের বেগ গলস্থিত হয়েও ভয়ঙ্কর কেন হবে না..... যদি মাতঃ তোমার নিরন্তর অমৃতপ্লাবিত শীতল শরীরের এই অর্ধভাগ ওর আশ্বাসনের নিমিত্ত না হয়। ( অর্থাৎ মাতঃ ! তোমার শরীরের অর্ধভাগ যা সর্বদা অমৃতপ্লাবিত ও শীতল, ও শিবের অর্ধাঙ্গ ) । এই জন্যই শিব বিষপানে ও বিষবেগে অভিভূত হন নাই–বিষ তোমার দেহের অর্ধাংশমাত্রের সাহচর্য্যে তার ভয়ঙ্করতা ত্যাগ করেছে, অন্যথা ও শিবের শরীরে ভয়ঙ্করই হত ||৬||

সর্বজ্ঞতাং সদসি বাক্পটুতাং প্রসূতে

দেবি ত্বদঙ্ঘ্রিসরসীরুহয়োঃ প্রণামঃ ।

কিঞ্চস্ফুরন্মুকুটমুজ্জ্বলমাতপত্রং

দ্বে চামরে চ মহতীং বসুধাং দদাতি ||৭||

ভাবার্থ - হে দেবী ! তোমার পাদপদ্মদ্বয়ে প্রণাম সভাতে বাকপটুতা ও সর্বজ্ঞতা দান করে। এবং দেদীপ্যমান মুকুট ও উজ্জ্বল ছত্র ও দুটি চামর ও প্রভুত ভূমি দান করে । ( অর্থাৎ তোমার পাদপদ্মে প্রণাম করলে প্রণত ব্যক্তির সভায় বাকপটুতা, সর্বজ্ঞতা, মুকুট, ছত্র, চামর ( এইগুলি রাজচিহ্ন ) ও বহু ভূমি প্রাপ্তিও হয়, তোমার কৃপায় যে কেবল জ্ঞানলাভ হয় তাই নয়, ঐশ্বর্য্য প্রাপ্ত হওয়া যায় ) ||৭||

কল্পদ্রুমৈরভিমতপ্রতিপাদনেষু

কারুণ্যবারিধিভিরম্ব ভবৎকটাক্ষৈঃ ।

আলোকয় ত্রিপুরসুন্দরি মামনাথং

ত্বয়্যেব ভক্তিভরিতং ত্বয়ি বদ্ধতৃষ্ণম্ ||৮||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ত্রিপুরসুন্দরী ! অভীষ্টদানে কল্পদ্রুম স্বরূপ, করুণার সমুদ্ররূপ তোমার কটাক্ষ দাঁড়া তোমাতেই ভক্তিযুক্ত, তোমাতে বদ্ধতৃষ্ণ ( অর্থাৎ যে তোমার প্রাপ্তি বিষয়ক তৃষ্ণাতে আবদ্ধ ) অনাথ আমাকে অবলোকন করো ||৮||

হন্তেতরেষ্বপি মনাংসি নিধায় চান্যে

ভক্তিং বহন্তি কিল পামরদৈবতেষু ।

ত্বামেব দেবি মনসা সমনুস্মরামি

ত্বামেব নৌমি শরণং জননি ত্বমেব ||৯||

ভাবার্থ - হায় ! অন্য ( বহু ব্যক্তি ) তোমার ছাড়া অন্য হীন দেবতাতে অভিনিবেশ সহকারে ভক্তিযুক্ত হয় ( কিন্তু ‌) দেবী ( আমি ) মনে তোমাকেই মাত্র স্মরণ করি, তোমাকেই প্রণাম করি। হে মাতঃ ! তুমি আমার একমাত্র আশ্রয়। ( অর্থাৎ আমি অনন্যভক্তিতে তোমাকেই আশ্রয় করেছি ) ||৯||

লক্ষ্যেষু সৎস্বপি কটাক্ষনিরীক্ষণানা-

মালোকয় ত্রিপুরসুন্দরি মাং কদাচিৎ ।

নূনং ময়া তু সদৃশঃ করুণৈকপাত্রং

জাতো জনিষ্যতি জনো ন চ জায়তে বা ||১০||

ভাবার্থ - হে ত্রিপুরসুন্দরী ! কটাক্ষ দ্বারা নিরীক্ষণের লক্ষ্যবস্তু থাকলেও কখনো আমাকেও অবলোকন করো । ( অর্থাৎ তোমার কটাক্ষপাত যোগ্য বহু সাধুভক্ত আছেন বটে তবুও আমাকেও তুমি কটাক্ষ দ্বারা অবলোকন কর ) ( কারণ ) এ নিশ্চিত যে, আমার ন্যায় করুণার একমাত্র পাত্র কখনও উৎপন্ন হয় নাই, হচ্ছে না, হবেও না । ( সুতরাং আমাকে করুণা কটাক্ষপাত দ্বারা উদ্ধার করো ) ||১০||

হ্রীং হ্রীমিতি প্রতিদিনং জপতাং তবাখ্যাং

কিং নাম দুর্লভমিহ ত্রিপুরাধিবাসে ।

মালাকিরীটমদবারণমাননীয়া

তান্ সেবতে বসুমতী স্বয়মেব লক্ষ্মীঃ ||১১||

ভাবার্থ - হে ত্রিপুরাধিবাসিনী ! হ্রীং হ্রীং এইরূপ তোমার নাম প্রতিদিন জপকারীদের ইহজগতে দুর্লভ কি আছে ? মাল্য কিরীট মত্ত হস্তীর মান্য বসুমতী স্বয়ং লক্ষ্মীও তাদের সেবা করেন (অর্থাৎ তারা রাজ্যাদিও লাভ করতে অনায়াসেই পারেন ) ||১১||

সম্পৎকরাণি সকলেন্দ্রিয়নন্দনানি

সাম্রাজ্যদাননিরতানি সরোরুহাক্ষি ।

ত্বদ্বন্দনানি দুরিতাহরণোদ্যতানি

মামেব মাতরনিশং কলয়ন্তু নান্যম্ ||১২||

ভাবার্থ - হে মাতঃ পদ্মনয়নে ! ঐশ্বর্য্যকর, সকল ইন্দ্রিয়ের আনন্দকর, সাম্রাজ্যদানে নিরত, পাপনাশে উদ্যত, তোমার বন্দনা আমাকেই নিরন্তর প্রেরণ করুক, ( অন্যকে নয় ) অর্থাৎ তোমার বন্দনা–যা সকল ঐশ্বর্য্য দান করে, সমস্ত ইন্দ্রিয়ের আনন্দদায়ক, অধিক কি, ও সাম্রাজ্যদানে সর্বদা নিরত ( সাম্রাজ্য তোমার সান্নিধ্য ), পাপনাশক ও আমাকেই নিরন্তর তোমার প্রতি প্রেরণ করুক ||১২||

কল্পোপসংহৃতিষু কল্পিততাণ্ডবস্য

দেবস্য খণ্ডপরশোঃ পরভৈরবস্য ।

পাশাঙ্কুশৈক্ষবশরাসনপুষ্পবাণা

সা সাক্ষিণী বিজয়তে তব মূর্তিরেকা ||১৩||

ভাবার্থ - তাণ্ডব নৃত্যকারী পরম ভৈরব ( ভয়ঙ্কর ), দেব খণ্ডপরশু শিবের, কল্পের উপসংহার কালে সেই পাশ, অঙ্কুশ, ঐক্ষব ধনু ও পুষ্পবাণ যুক্ত তোমার মূর্তিই একমাত্র সাক্ষীরূপে জয়যুক্ত হচ্ছে। ( অর্থাৎ শিব সংহার মূর্তিতে তাণ্ডব নৃত্য করে যখন সমস্ত জগৎপ্রপঞ্চ ধ্বংস করেন, তখন সকলেই নাশ প্রাপ্ত হয়, কেবল তার কার্য্যের সাক্ষী তুমি অবস্থান করো ) ( পঞ্চবাণ ধনুঃ ত্রিপুরসুন্দরী অন্যতম অস্ত্র ) ||১৩||

লগ্নং সদা ভবতু মাতরিদং তবার্ধং

তেজঃ পরং বহুলকুঙ্কুম পঙ্কশোণম্ ।

ভাস্বৎকিরীটমমৃতাংশুকলাবতংসং

মধ্যে ত্রিকোণনিলয়ং পরমামৃতার্দ্রম্ ||১৪||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! এই তোমার অর্ধ ও শ্রেষ্ঠ, বহুল ভাবে কুঙ্কুমপঙ্কসদৃশ রক্তবর্ণ, উজ্জল কিরীটযুক্ত, চন্দ্রকলাবতংস যুক্ত, ত্রিকোণবাসী, পরম অমৃত দ্বারা আর্দ্র তেজঃ ( আমার ) মধ্যে ( হৃদয় মধ্যে ) সর্বদা লগ্ন থাকুক ||১৪||

হ্রীংকারমেব তব নাম তদেব রূপং

ত্বন্নাম দুর্লভমিহ ত্রিপুরে গৃণন্তি ।

ত্বত্তেজসা পরিণতং বিয়দাদিভূতং

সৌখ্যং তনোতি সরসীরুহসম্ভবাদেঃ ||১৫||

ভাবার্থ - হে ত্রিপুরে ! হ্রীংকারই তোমার নাম, ওই তোমার নাম স্বরূপ, ইহলোকে তোমার নাম দুর্লভ বলা হয়। তোমার তেজঃ দ্বারা পরিণত আকাশাদি ভূতবর্গ ব্রহ্মাদির সুখ উৎপাদন করে ||১৫||

হ্রীংকারত্রয়সম্পুটেন মহতা মন্ত্রেণ সন্দীপিতং

স্তোত্রং যঃ প্রতিবাসরং তব পুরো মাতর্জপেন্মন্ত্রবিৎ ।

তস্য ক্ষোণিভুজো ভবন্তি বশগা লক্ষ্মীশ্চিরস্থায়িনী

বাণী নির্মলসূক্তিভারভরিতা জাগর্তি দীর্ঘং বয়ঃ ||১৬||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! যে মন্ত্রজ্ঞ প্রতিদিন তোমার সম্মুখে হ্রীংকারত্রয় সম্পুটিত মহৎ মন্ত্র দ্বারা উজ্জল স্তোত্র পাঠ করেন, ক্ষিতিপতি ( রাজা ) তার বশীভূত হন, লক্ষ্মী চিরস্থায়িনী হন, আয়ু দীর্ঘ হয়, বাণী ( বাক্য ) নির্মল সূক্তি ( সুন্দর উক্তি ) ভার দ্বারা যুক্ত হয়ে জাগৃত হয় ||১৬||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য

শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য

শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ

কল্যাণবৃষ্টিস্তবঃ সম্পূর্ণম ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য ভগবান শঙ্করাচার্য বিরচিত কল্যাণবৃষ্টি স্তবঃ সমাপ্ত।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...