Saturday, 31 July 2021

আকাশভাবাপন্ন ব্রহ্ম হইতে বায়ুর উৎপত্তিঃ-


আমরা অদ্বৈতবেদান্তের সৃষ্টিক্রম বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করছিলাম। পূর্বের আলোচনায় ইহা সিদ্ধ হয়েছে যে আকাশ উৎপত্তিশীল অনিত্য পদার্থ। যে যুক্তি বলে আকাশের উৎপত্তি সিদ্ধ হল, বায়ু সম্পর্কেও সেই যুক্তি প্রযোজ্য। বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের মাতরিশ্বাধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আকাশভাবাপন্ন ব্রহ্ম হইতে বায়ুর উৎপত্তি হয়।

এতেন মাতরিশ্বা ব্যাখ্যাতঃ ।।-(ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৮)

শঙ্করাচার্য ভাষ্যে বলছেন- ইহা অতিদেশ (-এই সূত্রের ব্যাখ্যাতেও আকাশের উৎপত্তিপ্রতিপাদক যুক্তিসকলের প্রয়োগ করিতে হইবে)। "ইহার দ্বারা", অর্থাৎ আকাশবিষয়ক ব্যাখ্যার দ্বারা মাতরিশ্বাও, অর্থাৎ আকাশাশ্রিত বায়ুও ব্যাখ্যাত হইল। এইস্থলেও পূর্বের পক্ষ সকল আলোকপাত করা হইতেছে।

একপক্ষ মনে করেন, ছন্দোগশাখাধ্যায়িগণের উৎপত্তিপ্রকরণে (ছান্দোগ্য উপনিষৎ- ৬/২/৩) পঠিত হয় নাই বলিয়া বায়ু উৎপন্ন হয় না। কিন্তু তৈত্তিরীয়শাখাধ্যায়িগণের উৎপত্তিপ্রকরণে "আকাশাৎ বায়ুঃ"- (তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২/১) অর্থাৎ 'আকাশ হইতে বায়ু উৎপন্ন হইল' এইপ্রকার পাঠ আছে, সুতরাং বিরোধবশত শ্রুতি প্রমাণ নহে, এইরূপ অন্য পক্ষ মনে করেন। আর সেইহেতু শ্রুতিদ্বয়ের বিরোধ হইলে বায়ুর উৎপত্তি প্রতিপাদনকারিণী শ্রুতি গৌণী হবে, যেহেতু বায়ুর উৎপত্তি সম্ভব নহে, ইহা অপর এক পক্ষের অভিপ্রায়। আর সেই বায়ুর উৎপত্তি কেন সম্ভব নহে কারণ-"সা এষা অনস্তমিতা দেবতা যদ্ বায়ুঃ"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-১/৫/২২) 'সেই এই অবিনাশী দেবতা যাহা বায়ু', এইপ্রকার নাশের প্রতিষেধ আছে এবং যেহেতু "বায়ুশ্চ অন্তরিক্ষং চ এতদ্ অমৃতম্"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ- ২/৩/৩) এই প্রকারে অমৃতত্ব প্রভৃতি শ্রুত হয়।

এইসব পূর্বপক্ষ প্রাপ্ত হইলে সিদ্ধান্ত এই যে- একবিজ্ঞানে সর্ববিজ্ঞান প্রতিজ্ঞার বাধ হয় না বলিয়া এবং যাহা কিছু কার্য্য বস্তু তাহাদের পরস্পরের বিভাগ অঙ্গীকৃত হয় বলিয়া বায়ু উৎপন্ন হয়, ইহা সিদ্ধান্ত। বৃহদারণ্যকে বায়ুর বিনাশের যে প্রতিষেধ, তাহা অপরবিদ্যাবিষয়ক (উপাসনাতে উপাস্যের স্তুতি প্রতিপাদক, এইহেতু তাহা) আপেক্ষিক, যেহেতু অগ্নি প্রভৃতির ন্যায় বায়ুর স্বকর্ম হইতে বিরাম হয় না। আর বায়ুবিষয়ক যে অমৃতত্বাদির শ্রবণ তাহার প্রতিবিধান করা হইয়াছে অর্থাৎ উপাস্যের স্তুতির জন্য আপেক্ষিক, ইহা বলা হইয়াছে।

 

Thursday, 29 July 2021

আত্মা স্বরূপতই বিধিনিষেধাত্মক কর্মের অর্থাৎ ধর্ম-অধর্মাদিরূপ পাপ-পুণ্যের অতীতঃ-

 


যিনি এই আত্মাকে শরীরের সহিত এক করিয়া ফেলেন সেই দেহাত্মাভিমানীর পক্ষেই পাপপুণ্যরূপ সংসার। পক্ষান্তরে আত্মজ্ঞের পক্ষে অর্থাৎ যিনি দেহ এবং আত্মার পার্থক্য অনুভব করিয়াছেন তাঁহার পক্ষে আর ঐ আত্মসম্পর্কিত কোন পাপপুণ্যাদি দর্শন করা সম্ভব হয় না। কৃষ্ণযজুর্বেদীয় কঠোপনিষদে বর্ণিত আছে-

হন্তা চেন্মন্যতে হন্তুং হতশ্চেন্মন্যতে হতম্ ।

উভৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে ॥ -(কঠোপনিষৎ -১/২/১৯)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- শংকরাচার্য ভাষ্যে বলিতেছেন- এইরূপ বিকাররহিত হইলেও এই আত্মাকে শরীরেতেই আত্মবুদ্ধিসম্পন্ন কোন হননকারী যদি 'ইহাকে হত্যা করিব' এইরূপ মনে করেন এবং অন্য যে জন হত হয় সেও যদি আত্মাকে হত অর্থাৎ 'আমি হত হইতেছি' এইরূপ মনে করে তবে তাহারা উভয়ই নিজ আত্মাকে বিশেষভাবে জানেনা। এখন আত্মা অবিকারী বলিয়া যেহেতু তিনি বধও করেন না এবং আকাশের মত অবিকারী বলিয়া হতও হন না, অতএব ধর্ম-অধর্মাদি রূপ সংসার আত্মজ্ঞানরহিত ব্যক্তির সহিতই সম্পর্কিত কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞের সহিত নহে। কারণ শ্রুতিপ্রমাণ এবং যুক্তি অনুসারেও ব্রহ্মজ্ঞ কর্তৃক পাপ-পুণ্যাদির উৎপত্তি কখনো সম্ভব হয় না।

 

কিরূপ স্থানে আসন করিবে এই বিষয়ে শ্রুতি নির্দ্দেশঃ-

 


সমে শুচৌ শর্করাবহ্নিবালিকা-

বিবর্জিতে শব্দজলাশ্রয়াদিভিঃ ।

মনোনুকূলে ন তু চক্ষুপীড়নে

গুহানিবাতাশ্রয়ণে প্রয়োজয়েৎ ॥ -(কৃষ্ণযজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ-২।১০)

শঙ্করাচার্য ভাষ্যে বলিতেছেন-যেস্থান সমতল অর্থাৎ নিম্ন ও উন্নতভাবরহিত, শর্করা অর্থাৎ ক্ষুদ্র পাষাণখণ্ড প্রভৃতি, অগ্নি, বালুকা (পাষাণচূর্ণ) নাই, যেস্থান শব্দ-কলহ প্রভৃতি শূন্য এবং যেস্থান সর্ব্বপ্রাণীভোগ্য জলাশয় ও মণ্ডপ (আশ্রয়) সমীপবর্ত্তী নহে এবং যাহা মনের অনুকূল অর্থাৎ মনোরম অথচ চক্ষুর পীড়াদায়ক নহে এবং যেখানে প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হয় না, এমন গুহা প্রভৃতি নির্জ্জনস্থানে আশ্রয় করিয়া চিত্তকে পরমাত্মায় সংযোজিত করিবে।

 

একমাত্র অদ্বিতীয় রুদ্রই সত্যবস্তুঃ-


"একো হি রুদ্রো ন দ্বিতীয়ায় তস্থু-

র্য ইমাঁল্লোকানীশত ঈশনীভিঃ ।

প্রত্যঙ্ জনাস্তিষ্ঠতি সঞ্চুকোচান্তকালে

সংসৃজ্য বিশ্বা ভুবনানি গোপাঃ ॥"

-(কৃষ্ণযজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ-৩।২)

শঙ্করাচার্য ভাষ্যে বলিতেছেন-যেহেতু রুদ্র (পরমাত্মা) একই; পরমার্থদর্শী ব্রহ্মবিদ্গণ দ্বিতীয় অপর কোন বস্তুর জন্য অবস্থান করেন না, অর্থাৎ তাহারা অদ্বিতীয় রুদ্রকেই দর্শন করিয়াছেন, দ্বিতীয় কোনবস্তু দর্শন করেন নাই। ঈশনী স্বশক্তি দ্বারা এই সমস্ত লোককে শাসন অর্থাৎ নিয়মিতরূপে পরিচালিত করেন; এবং যিনি সকলজনের অন্তরস্থ, যিনি প্রত্যেক পুরুষের মধ্যে বর্ত্তমান অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক রূপের (বস্তুর) অনুরূপ রূপে প্রকটিত হইয়াছেন।

আরও অন্তকালে-প্রলয় সময়ে যিনি কোপ করিয়া থাকেন, সংহার করেন, কি করিয়া? বিশ্বভূবন সৃষ্টি করিয়া এবং তাহার গোপা গোপ্তা রক্ষক হইয়া (পরে সংহার করেন)। এইকথা বলা হইতেছে যে, পরমাত্মা অদ্বিতীয়, তিনি যে কুম্ভকারের ন্যায় নিজেকে মৃৎপিণ্ডের মত উপাদানকারণ রূপে গ্রহণ করেন, তাহা নহে; তবে কি? না, স্বীয় শক্তির বিক্ষেপ করেন বলিয়া সৃষ্টিকর্ত্তা ও নিয়ন্তা বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকেন। 

ধ্যানঃ-



শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রের (৪/১/৮) ভাষ্যে বলিতেছেন-'ধৈ' ধাতুর অর্থ ইহাই যে, সমানাকারা চিত্তবৃত্তির প্রবাহ করা।

পতঞ্জলি বলছেন-"তত্র প্রত্যয়-একতানতা ধ্যানম্"-(পাতঞ্জল যোগসূত্র, বিভূতিপাদ-২)

অর্থাৎ ধারণাজনিত চিত্তের প্রত্যয়ের অর্থাৎ জ্ঞানবৃত্তির একতানতা হল ধ্যান। ভাষ্যকার ব্যাস বলছেন-সেই দেশে (যে শরীরের আভ্যন্তরীণ নাভিচক্রাদি দেশে অথবা ওঙ্কারাদি বাহ্যবিষয়ে ধারণা অভ্যাস করার কথা বলা হয়েছে তাতে) ধ্যেয় বস্তুর আলম্বনে চিত্তের জ্ঞানবৃত্তির একতানতা বা একরূপ প্রবাহ, যা অন্য প্রত্যয়ের দ্বারা সম্বন্ধিত নয়, তা হলো ধ্যান।

অর্থাৎ সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান নিরন্তর একভাবে প্রবাহিত হইতে থাকিলে তাহাকে ‘ধ্যান’ বলে। ধ্যান হলো অবিচ্ছিন্ন তৈল ধারার মতো বা বাতাসহীনতায় কম্পবিহীন দীপশিখার মত, চিত্তের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগ। আলোচ্যে, বিষয় হলো পুরুষের স্বরূপ, অথবা দেবদেবীর মূর্তি বা ওঙ্কারে চিত্তের লয় হওয়া ধ্যান। যোগীযাজ্ঞবল্ক্য মতে ধ্যানই জীবকুলের বন্ধন ও মোক্ষের কারণ। বিষয়-ধ্যান বন্ধনের আর স্বরূপ-ধ্যান ও ওঙ্কার-ধ্যান মোক্ষের কারণ।

সদানন্দ যোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলছেন- "অদ্বিতীয় বস্তু বিষয়ে অন্তঃকরণের বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন বৃত্তি প্রবাহকে ধ্যান বলে।"-(বেদান্তসার-২০৭)

ধারণার পটুতার অভাবে অদ্বিতীয় আত্মবস্তুকে, মন একতানভাবে ধরে রাখতে পারেনা, মধ্যে মধ্যে রূপ-রসাদিতে চিত্ত ধাবিত হয়- আবার তাকে আত্মবৃত্তিতে যুক্ত করতে হয়। এরূপ বৃত্তি প্রবাহকেই ধ্যান বলে।

অপরোক্ষানুভূতিতে শংকরাচার্য চিত্তের একবস্তুতে স্থিতিলাভকেই ধ্যান বলে মেনেছেন। যথা-

"আমি ব্রহ্মই হই এই সদ্বৃত্তি দ্বারা আলম্বনশূন্যভাবে অবস্থিতিই পরমানন্দদায়িনী ধ্যান শব্দ দ্বারা বিখ্যাত।"-(অপরোক্ষানুভূতি-১২৩)

এইরূপ অবস্থায় বাহ্যবস্তুর জ্ঞান থাকে না।.

 

উপাসনা বা ধ্যান আসনে উপবেশন করিয়াই সম্ভবঃ-


বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রের আসীনাধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় হইল উপাসনাকালে আসন বা উপবেশনের আবশ্যকতা। অনেকে মনে করেন আসনাদি নিয়মের আবশ্যকতা নাই কারণ উপাসনা মানস ব্যাপার হওয়ায় শরীর স্থিতির নিয়ম নাই, যেহেতু শরীর হইতে মন ভিন্ন পদার্থ। ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

"আসীনঃ সম্ভবাৎ"-(ব্রহ্মসূত্র- ৪/১/৭)

শঙ্করাচার্য শারীরকমীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন- আসনে উপবিষ্ট হইয়াই উপাসনা করিবে। তাহাতে হেতু কি?- যেহেতু তাহা সম্ভব। সমানাকারা মানসবৃত্তির যে প্রবাহকরণ তাহার নাম উপাসনা। তাহা কিন্তু যিনি গমন করেন, বা যিনি ধাবিত হন, তাঁহার পক্ষে সম্ভব নহে; যেহেতু গতি প্রভৃতি চিত্তের বিক্ষেপকারক। যিনি দণ্ডায়মান থাকেন তাঁহার পক্ষেও দেহধারণে ব্যাপৃত মন সূক্ষ্মবস্তু নিরীক্ষণ করিতে সমর্থ হয় না। আর যিনি শয়ান থাকেন, তাঁহারও মন অকস্মাৎ নিদ্রার দ্বারা অভিভূত হইয়া পড়ে।

যিনি আসনে উপবিষ্ট থাকেন, তাঁহার পক্ষে কিন্তু এই জাতীয় বহুদোষ সহজে পরিহৃত হইয়া থাকে, এইহেতু তাঁহার পক্ষে উপাসনা সম্ভব।

আসনসিদ্ধেরই ধ্যান সিদ্ধ হয়। পতঞ্জলি যোগসূত্রে বলছেন-

স্থিরসুখামাসনম্ ।।-(পাতঞ্জল যোগসূত্র, সাধনপাদ্- ৪৬)

-যেভাবে অনেকক্ষণ স্থিরভাবে সুখে বসিয়া থাকা যায়, তাহার নাম আসন।

ভাষ্যকার ব্যাস বলছেন- তা যেমন পদ্মাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন স্বস্তিক (আসন), দণ্ডাসন সোপাশ্রয়, পর্যঙ্ক, ক্রৌঞ্চ-নিষদন, হস্তি-নিষদন, উষ্ট্র-নিষদন ও সমসংস্থান এগুলি স্থির সুখজনক ও যথা সুখকারক হলেই হলো আসন। যেভাবে উপবেশন করলে শরীর অক্লেশে স্থৈর্যসম্পন্ন হয় তাকে স্থিরসুখ বা যথাসুখ বলে।

"শ্রীবিমলাষ্টকম স্তোত্রম"

 


আদ্যাদেবী পরাৎপরা ভগবতী মাতা কৃপাসাগরী

ব্রহ্মানন্দপ্রদায়িনী হরবধু ষটচক্র চক্রেশ্বরী ।

মায়া মোহময়ী জনদয়োকরী ব্রহ্মাণ্ড ভাণ্ডোদরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||১||

ভাবার্থ - আদ্যাদেবী মহামায়া একরূপ মা ভগবতী, যিনি করুণাসিন্ধু স্বরূপা, ব্রহ্মান্ডের আনন্দ প্রদানকারী, যিনি শিবের ঘরণী, মানবদেহের ষটচক্রের অধিষ্ঠাত্রী। যিনি মায়া মোহের মধ্যে লোকের উন্নতি বিধায়িনী, নিজের উদরে ব্রহ্মাণ্ড ধারণ করেছ, মানব কল্যাণ করে চলেছেন, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী, সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ (রক্ষা) করো||১||

উদ্দ্যোতচক্র প্রভাকরী অভয়দা শ্রীপাদপীঠেশ্বরী

দারুব্রহ্ম বিনোদিনী তু ত্রিপুরা প্রত্যক্ষ মাহেশ্বরী ।

ভক্তোন্মাদ পরায়ণাতি পরমা বিশ্বেশী মাতেশ্বরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||২||

ভাবার্থ - যাঁর ঊর্ধ্বে প্রভার ন্যায় চক্র, অভয় প্রদায়িনী, তুমিই শ্রীপাদ পীঠের অধীশ্বরী, তুমিই দারুব্রহ্ম রক্ষক (অর্থাৎ নীলাদ্রি নিবাসী বিষ্ণুজায়া সুভদ্রাকে বুঝানো হয়েছে), আনন্দদায়িনী, তুমিই চিন্তামণি নিবাসিনী ত্রিপুরসুন্দরী, সাক্ষাৎ মাহেশ্বরী‌। যিনি ভক্তের প্রতি পরায়নের জন্য উন্মাদ, যিনি পরম বিশ্বের মাতা, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||২||

হস্তেব্যালবলা জীবোত্তমকরা চন্দ্রাংশু বিম্বাধরী

প্রাণকুম্ভ করান্বিতা তু জননী প্রাণস্য প্রাণেশ্বরী ।

সর্ব্বানন্দকরী দৃশা শুভকরী রত্নাঢ্য মালাধরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৩||

ভাবার্থ - যার উপরি হস্তে জীবের ইন্দ্রিয় বন্ধনের প্রতীক পাশ অর্থাৎ নাগকন্যা ও সংযমের প্রতীক অঙ্কুশ ধারণ করেছেন, যাঁর অধর চন্দ্রকিরণের ন্যায় স্নিগ্ধ মনোহর, যাঁর নিম্ন হস্তে প্রাণকুম্ভ, সকল ভক্তের জননী, প্রাণেশ্বরী। ভক্তের দৃশ্যে যিনি সর্বানন্দ প্রদায়িনী ও হস্তে রত্নমালা ধারণ করে আছেন, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৩||

আর্তত্রাণকরী সদাশিবকরী কৈবল্য লোলুপিনী

নানা চিত্র বিচিত্র ভূষণধরী কারুণ্য পূর্ণেশ্বরী ।

কৌমারী করুণাময়ী ত্রিলহরী নীলাদ্রি গৃহেশ্বরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৪||

ভাবার্থ - তুমি আর্তদিগের ত্রাণকারিণী, নিরন্তর কল্যাণকারী, মোক্ষ প্রদানকারী, তুমি বহুবিধ রত্নে খচিত সজ্জায় সজ্জিত, করুণাস্বরুপা, পূর্ণেশ্বরী। তুমি কৌমারী, করুণাময়ী, সৃষ্টি,স্থিতি ও প্রলয়রূপ তরঙ্গস্বরুপা, নীলাদ্রি নিবাসীর গৃহের অধীশ্বরী ( এখানে দেবি বিমলা, লক্ষ্মীর আরেক রূপ। এজন্য তিনি জগন্নাথের শক্তি লক্ষ্মী ), সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৪||

লজ্জাপুষ্টিকরী তু শান্তিকুহরী ক্ষান্তিপ্রদা শাঙ্করী

শক্তিযন্ত্র কূলেশ্বরী শুভকরী হ্রীংবীজ মন্ত্রাক্ষরী ।

বিদ্যাদানকরী হরিসহচরী যোগেশ্বরী ভ্রামরী ।

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৫||

ভাবার্থ - তুমি লজ্জা, পুষ্টি রূপিনী, ভক্তের মনে ও রন্ধ্রে শান্তি, ক্ষমা প্রদান কর, তুমি শঙ্করী, তুমি শক্তিযন্ত্রের আশ্রয়রূপিনী, সদা শুভকরী, হ্রীং বীজের অক্ষররূপিনী। তুমি ভক্তের বিদ্যা দানকারিনী ( ভক্তদের শ্রীবিদ্যা প্রদান করে ), শ্রীহরির লীলাসহচরী, যোগেশ্বরী, ভ্রামরী, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৫||

দারিদ্রানল ধ্বংসিনী ভগবতী বিজ্ঞান দীপাঙ্কুরী

ধতাশক্তিধরী মহেশগৃহিণী কৌমারী সনৎকরী ।

গোবিন্দাঙ্গ বিহারিণী চ জননী যজ্ঞোদ ভবাশ্বকরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৬||

ভাবার্থ - যিনি ভক্তের দারিদ্র্য দলনকারী, ধ্বংস রূপিনী, তুমিই ভগবতী বিজ্ঞান দীপের কারণ, ধাতাশক্তি ধারিণী, মহেশ্বরের গৃহিণী, সদা কৌমারী রূপিনী। আবার যিনি গোবিন্দের অর্ধাঙ্গিনী অর্থাৎ গোবিন্দের অর্ধেক অঙ্গস্বরূপা, স্বয়ং জননী ভুবনেশ্বরী, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৬||

(বি.দ্র : এখানে দেবী বিমলা, মা লক্ষ্মীর স্বরূপ। তাই তিনি নারানের অর্ধাঙ্গিনী। আবার তন্ত্রশাস্ত্রে মতে, দেবী বিমলা সতীপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, যার ভৈরব সদাশিব। তাই তিনি অন্যরূপে মহেশ্বরের গৃহিণী। এক অঙ্গে অনেক রূপ )

চণ্ড ধ্বংসকরী মহাননধরী শ্রীকেশরী শেখরী

ভক্তদুঃখ বিমর্দ্দনকরী প্রত্যক্ষ বজ্রেশ্বরী ।

হুঙ্কারৈ র্বিকটা করালবদনা কঙ্কাল জীর্ণোদরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৭||

ভাবার্থ - যাঁর শেখরে উজ্জ্বল কান্তিযুগ কেশরাশি বিরাজ করছে, যিনি ভক্তের দুঃখ বিমর্দন করে, সাক্ষাৎ বজ্রেশ্বরী। আবার যিনি করালবদনা, কঙ্কালের মতো জীর্ণ, বিকট হুংকার দেন, দেবী চামুন্ডা রূপিনী, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৭||

কর্পুরাগুরু কস্তুরী রুচিকরী কাদম্বিনী সুন্দরী

নানারত্ন বিমণ্ডিতা বিভবদা সৌদামিনী শর্বরী ।

ভক্তানন্দং হরিহ্যরিক্ষয়করী ধর্ম্মার্থ শ্রদ্ধাকরী

ত্রাহি মাং বিমলে সদাসুখকরী শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী ||৮||

ভাবার্থ - যিনি মেঘমালাস্বরূপা, সুস্বাদু কর্পূর, অগুরু ও কস্তুরীর মতো যাঁর বদনকমল সুন্দরী, বহুবিধ রত্নে খচিত অলঙ্কৃতা, ঐশ্বর্য দায়িনী, সৌদামিনী, প্রলয়ান্ধকার স্বরূপা। যিনি ভক্তের আনন্দ রূপিনী, সর্বরিপু হরণ করে ক্ষয়কারিনী, ধর্ম, অর্থ ও শ্রদ্ধা রূপিনী, সেই শ্রীক্ষেত্র রাজেশ্বরী সদাসুখকরী বিমলা, আমায় ত্রাণ কর||৮||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীপুরুষোত্তম রক্ষক শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ আদি বিমলা অষ্টকম সম্পূর্ণং ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীপুরুষোত্তম রক্ষক শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য বিরচিত বিমলা অষ্টকম সমাপ্ত।

 

Wednesday, 21 July 2021

আত্মার স্বরূপঃ-

 


ওঙ্কার যাঁহার বাচক সেই আত্মার স্বরূপ সাক্ষাৎ নির্ধারণ করিবার ইচ্ছায় এই মন্ত্র কথিত হইতেছে।

ন জায়তে ম্রিয়তে বা বিপশ্চিন্ -

নায়ং কুতশ্চিন্ন বভূব কশ্চিৎ।

অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।। (কৃষ্ণযজুর্বেদীয় কঠ উপনিষৎ- ১।২।১৮)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ-

এই প্রত্যগাত্মা উৎপন্ন হন না এবং মরেনও না। উৎপত্তিবিশিষ্ট অনিত্য বস্তুর অনেক প্রকার (ছয় প্রকার) বিকার হইয়া থাকে। 'ন জায়তে ম্রিয়তে বা' এই মন্ত্রাংশ বলিয়া এই আত্মাতে সমস্ত বিকারের নিবারণের জন্য প্রথমে তাহাদের মধ্যে জন্ম ও বিনাশরূপ আদি ও অন্ত বিকারদ্বয়কে নিবারণ করা হইতেছে। প্রত্যগাত্মার চৈতন্যস্বভাব কখনো ছিন্ন হয় না বলিয়া তিনি মেধাবী অর্থাৎ জ্ঞানস্বরূপ।

আর এই আত্মা অপর কোনো কারণ হইতে উৎপন্ন হন নাই। এবং এই আত্মা হইতেও অপর কোন পদার্থ উৎপন্ন হয় নাই। অতএব এই আত্মা জন্মরহিত, বিনাশরহিত এবং শাশ্বত অর্থাৎ ক্ষয়রহিত। কেননা যাহা অশাশ্বত—পরিবর্তনশীল, তাহাই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়; কিন্তু এই আত্মা শাশ্বত এবং পুরাণও অর্থাৎ পূর্বেও নূতনই ছিলেন। কারণ যে বস্তু ভিত্তি (দেয়াল) প্রভৃতির মত অবয়ব পুষ্টির মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহা 'সম্প্রতি ইহা নূতন' বলিয়া কথিত হয়। কিন্তু আত্মা তাহার ঠিক বিপরীত—পুরাণ অর্থাৎ বৃদ্ধিরহিত। যেহেতু এইরূপ অতএব শস্ত্রাদির দ্বারা শরীর বিনষ্ট হইলেও আত্মা নিহত হন না—উঁহার কোন হিংসা করা হয় না; অর্থাৎ শরীরের মধ্যে স্থিত হইলেও আত্মা আকাশের মত নির্লিপ্ত।।১।২।১৮।।

 

"শ্রীশিবপঞ্চাক্ষরনক্ষত্রমালাস্তোত্রম্"




শ্রীমদাত্মনে গুণৈকসিন্ধবে নমঃ শিবায়

ধামলেশধূতকোকবন্ধবে নমঃ শিবায় ।

নামশেষিতানমদ্ভাবান্ধবে নমঃ শিবায়

পামরেতরপ্রধানবন্ধবে নমঃ শিবায় ||১||

ভাবার্থ - শ্রীমদাত্মা (১–বিভূতিসম্পন্ন, এবং আত্মা স্বয়ং ব্ৰহ্ম ; ২–নিবাস নারায়ণের আত্মস্বরূপ ; ৩-শ্রীমান্ প্রশন্তবুদ্ধিগণের আত্মা এই ত্রিবিধ অর্থ) গুণৈকসাগর শিবকে নমস্কার, যার তেজঃকণিকার নিকট সূর্য নির্জ্জিত, সেই শিবকে নমঙ্কার, প্রণামপরায়ণ ব্যক্তিগণের সংসারকুপ-বিনাশক শিবকে নমস্কার, পামরেতরপ্রধানবন্ধু অর্থাৎ পামর ও তদিতর–নীচ ও উচ্চ সকলেরই প্রধান বন্ধু অথবা সাধুজনের প্রধান বন্ধু শিবকে নমস্কার ||১||

কালভীতবিপ্রবালপাল তে নমঃ শিবায়

শূলভিন্নদুষ্টদক্ষভাল তে নমঃ শিবায় ।

মূলকারণায় কালকাল তে নমঃ শিবায়

পালয়াধুনা দয়ালবাল তে নমঃ শিবায় ||২||

ভাবার্থ - হে যম-ভীত-বিপ্রবালকের (শিলাদপুত্র নন্দীর বা মৃকণ্ডুপুত্র মার্কণ্ডেয়ের) রক্ষক, তােমার উদ্দেশে ‘নমঃ শিবায়'। তুমি দুষ্ট দক্ষ প্রজাপতির ললাটদেশ শূল দ্বারা বিদীর্ণ করেছিলে, তােমার উদ্দেশে ‘নমঃ শিবায়', হে কালান্তক, তুমি মূলকারণ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়', হে করুণা-( তরুর ) আলবাল, এক্ষণে ( আমাকে ) রক্ষা কর, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়' ||২||

ইষ্টবস্তুমুখ্যদানহেতবে নমঃ শিবায়

দুষ্টদৈত্যবংশধূমকেতবে নমঃ শিবায় ।

সৃষ্টিরক্ষণায় ধর্মসেতবে নমঃ শিবায়

অষ্টমূর্তয়ে বৃষেন্দ্রকেতবে নমঃ শিবায় ||৩||

ভাবার্থ - যিনি ইষ্ট বস্তু দানের মুখ্য হেতু, সেই শিবকে নমস্কার, দুষ্ট দৈত্যকুলের যিনি ধুমকেতু (বিনাশকারণ ), সেই শিবকে নমঙ্কার, যিনি সৃষ্টিরক্ষণার্থ ধৰ্ম্ম-মর্যাদা-রক্ষক, সেই শিবকে নমস্কার, যিনি অষ্টমূর্তি এবং বৃষ- রাজধ্বজ, সেই শিবকে নমস্কার ||৩||

আপদদ্রিভেদটঙ্কহস্ত তে নমঃ শিবায়

পাপহারিদিব্যসিন্ধুমস্ত তে নমঃ শিবায় ।

পাপদারিণে লসন্নমস্ততে নমঃ শিবায়

শাপদোষখণ্ডনপ্রশস্ত তে নমঃ শিবায় ||৪||

ভাবার্থ - হে বিপৎস্বরূপ-পৰ্বত-বিদারণ-টঙ্কপাণে, (টঙ্ক পাথর কাটবার অস্ত্র, শিবের হস্তে সেই অস্ত্র আছে,ভক্ত বলছেন, ভক্তগণের দুর্ভেদ্য পর্ব্বতােপম বিপৎ খণ্ডন করাই তার উদ্দেশ্য ), তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়, তুমি মস্তকে কলুষনাশিনী গলাকে ধারণ করেছ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়, হে নমস্কার-সমূহের শােভন পাত্র, তুমি পাপনাশক, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়, হে শাপ দোষ-খণ্ডনে প্রশস্ত, ( অভিশপ্ত ব্যক্তি তােমার আরাধনায় শাপদোষ হতে মুক্ত হয়ে থাকে ) তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায় ||৪||

ব্যোমকেশ দিব্যভব্যরূপ তে নমঃ শিবায়

হেমমেদিনীধরেন্দ্রচাপ তে নমঃ শিবায় ।

নামমাত্রদগ্ধসর্বপাপ তে নমঃ শিবায়

কামনৈকতানহৃদ্দুরাপ তে নমঃ শিবায় ||৫||

ভাবার্থ - হে দিব্য মঙ্গলমুর্তি ব্যোমকেশ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। হেমময় গিরিরাজ সুমেরু তােমার ধনুঃ ( মৎস্যপুরাণাদিতে ক্রিপুরবধ উপাখ্যান দ্রষ্টব্য ), তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তুমি কেবল তােমার নামােচ্চারণমাত্র, (উচ্চারণকর্তার) সকল পাপ নষ্ট কর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় ||৫||

ব্রহ্মমস্তকাবলীনিবদ্ধ তে নমঃ শিবায়

জিহ্মগেন্দ্রকুণ্ডলপ্রসিদ্ধ তে নমঃ শিবায় ।

ব্রহ্মণে প্রণীতবেদপদ্ধতে নমঃ শিবায়

জিহ্মকালদেহদত্তপদ্ধতে নমঃ শিবায় ||৬||

ভাবার্থ - হে ব্ৰহ্মযুক্ত (পঞ্চ-ঋকমন্ত্রযুক্ত) ঈশানাদি পঞ্চশীর্ষ সম্পন্ন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। হে নাগরাজকুণ্ডলধারী প্রসিদ্ধ পুরুষ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তুমি ব্ৰহ্মার মুর্তি ধারণ করে বেদমার্গ প্রণয়ন করেছ, (তােমার উদ্দেশে) নমঃ শিবায়। হে কুটিল-কৃতান্তদেহে পদাঘাত- বারিন, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায় ||৬||

কামনাশনায় শুদ্ধকর্মণে নমঃ শিবায়

সামগানজায়মানশর্মণে নমঃ শিবায় ।

হেমকান্তিচাকচক্যবর্মণে নমঃ শিবায়

সামজাসুরাঙ্গলব্ধচর্মণে নমঃ শিবায় ||৭||

ভাবার্থ - কামবিনাশন শুদ্ধকর্মা শিবকে নমঙ্কার, সামগানসুখী শিবকে নমস্কার, সুবর্ণকান্তি-চাকচক্যময় বর্ণধারী শিবকে নমস্কার, গজাসুরচর্মধারী শিবকে নমস্কার ||৭||

জন্মমৃত্যুঘোরদুঃখহারিণে নমঃ শিবায়

চিন্ময়ৈকরূপদেহধারিণে নমঃ শিবায় ।

মন্মনোরথাবপূর্তিকারিণে নমঃ শিবায়

সন্মনোগতায় কামবৈরিণে নমঃ শিবায় ||৮||

ভাবার্থ - জন্ম-মৃত্যু-ঘাের-দুঃখহারী শিবকে নমঙ্কার, চিন্ময় অদ্বিতীয় রূপদেহধারী শিবকে নমস্কার, মদীয় মনােরথপুরক শিবকে নমস্কার, সাধুগণের মনােমধ্যে বিরাজমান মদনবৈরী শিবকে নমস্কার ||৮||

যক্ষরাজবন্ধবে দয়ালবে নমঃ শিবায়

দক্ষপাণিশোভিকাঞ্চনালবে নমঃ শিবায় ।

পক্ষিরাজবাহহৃচ্ছয়ালবে নমঃ শিবায়

অক্ষিফাল বেদপূততালবে নমঃ শিবায় ||৯||

ভাবার্থ - কুবেরবন্ধু দয়ালু শিবকে নমস্কার, দক্ষিণহন্তে স্বর্ণ-ভূঙ্গারধারী শিবকে নমস্কার, গরুড়বাহন নারায়ণের মনােমন্দিরে শয়ান শিবকে নমস্কার, (যার অন্যান্য উচ্চারণস্থানের ন্যায়) তালব্য বর্ণের উচ্চারণস্থান বেদধ্বনি পূত, সেই ভাললােচন শিবকে নমস্কার ||৯||

দক্ষহস্তনিষ্ঠজাতবেদসে নমঃ শিবায়

অক্ষরাত্মনে নমদ্বিড়ৌজসে নমঃ শিবায় ।

দীক্ষিতপ্রকাশিতাত্মতেজসে নমঃ শিবায়

উক্ষরাজবাহ তে সতাং গতে নমঃ শিবায় ||১০||

ভাবার্থ - যার দক্ষিণ হস্তে অগ্নি অবস্থিত, সেই শিবকে নমস্কার, ইন্দ্র-নমস্কৃত অক্ষরাত্মা শিবকে নমস্কার, দীক্ষিত ব্যক্তির হৃদয়ে আত্মতেজঃ প্রকাশক শিবকে নমস্কার, হে সজ্জনের গতি বৃষরাজবাহন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় ||১০||

রাজতাচলেন্দ্রসানুবাসিনে নমঃ শিবায়

রাজমাননিত্যমন্দহাসিনে নমঃ শিবায় ।

রাজকোরকাবতংসভাসিনে নমঃ শিবায়

রাজরাজমিত্রতাপ্রকাশিনে নমঃ শিবায় ||১১||

ভাবার্থ - রজতপর্বতরাজ কৈলাসের সানুবাসী শিবকে নমস্কার, সদা মনদ-হাস্য-সুশােভিত শিবকে নমস্কার, শশি-কলাবতংস-সমুস্তাসিত শিবকে নমস্কার, রাজরাজ কুবেরের প্রতি মৈত্রীপ্রকাশক শিবকে নমস্কার ||১১||

দীনমানবালিকামধেনবে নমঃ শিবায়

সূনবাণদাহকৃৎকৃশানবে নমঃ শিবায় ।

স্বানুরাগভক্তরত্নসানবে নমঃ শিবায়

দানবান্ধকারচণ্ডভানবে নমঃ শিবায় ||১২||

ভাবার্থ - দীন মানবগণের কামধেনু শিবকে নমঙ্কার, যার নয়নাগ্নি কুমুমশরকে দগ্ধ করেছিলেন, সেই শিবকে নমস্কার, যিনি নিজ অনুরাগে ভক্তগণের পক্ষে রত্ন-সানু, সেই শিবকে নমস্কার, যিনি দানবরূপী অন্ধকারের পক্ষে সূর্য্য, সেই শিবকে নমস্কার ||১২||

সর্বমঙ্গলাকুচাগ্রশায়িনে নমঃ শিবায়

সর্বদেবতাগণাতিশায়িনে নমঃ শিবায় ।

পূর্বদেবনাশসংবিধায়িনে নমঃ শিবায়

সর্বমন্মনোজভঙ্গদায়িনে নমঃ শিবায় ||১৩||

ভাবার্থ - সর্বমঙ্গলার স্তনাগ্রশায়ী (উরােদেশে শয়ান, অথবা শায়ীশায়যুক্ত ; শয়কর, তদীয় ব্যাপার শায়, তদযুক্ত) শিবকে নমস্কার, যিনি সর্বদেবতাগণকে অতিক্রম করেছেন, অর্থাৎ সর্বদেবশ্রেষ্ঠ, সেই শিবকে নমস্কার, অসুরগণের বিনাশকারী শিবকে সমস্কার, সকল সাধুর মদনভঞ্জন শিবকে নমস্কার ||১৩||

স্তোকভক্তিতোঽপি ভক্তপোষিণে নমঃ শিবায়

মাকরন্দসারবর্ষিভাষিণে নমঃ শিবায় ।

একবিল্বদানতোঽপি তোষিণে নমঃ শিবায়

নৈকজন্মপাপজালশোষিণে নমঃ শিবায় ||১৪||

ভাবার্থ - যিনি স্বল্পমাত্র ভক্তি হলেও তাকে ভক্ত বলে রক্ষা করেন, সেই শিবকে নমস্কার, যার বাক্য মকরন্দসারবর্ষী, সেই শিবকে নমস্কার, একটিমাত্র বিল্বপত্র প্রদান করলেও (দাতার প্রতি) যিনি সম্তোষযুক্ত, সেই শিবকে নমস্কার, অনেকজন্মকৃত পাপরাশিকে যিনি শােষণ করে লয়েন, সেই শিবকে নমস্কার ||১৪||

সর্বজীবরক্ষণৈকশীলিনে নমঃ শিবায়

পার্বতীপ্রিয়ায় ভক্তপালিনে নমঃ শিবায় ।

দুর্বিদগ্ধদৈত্যসৈন্যদারিণে নমঃ শিবায়

শর্বরীশধারিণে কপালিনে নমঃ শিবায় ||১৫||

ভাবার্থ - সর্বজীবের রক্ষণ যার প্রধান স্বভাব, সেই শিবকে নমস্কার ভক্তপালক পার্বতীবল্লভ শিবকে নমঙ্কার ; দুর্দ্দান্ত-দৈত্য সৈন্যবিদারণপটু শিবকে নমস্কার ; রজনীকরধারী কপালী শিবকে নমস্কার ||১৫||

পাহি মামুমামনোজ্ঞদেহ তে নমঃ শিবায়

দেহি মে বরং সিতাদ্রিগেহ তে নমঃ শিবায় ।

মোহিতর্ষিকামিনীসমূহ তে নমঃ শিবায়

স্বেহিতপ্রসন্ন কামদোহ তে নমঃ শিবায় ||১৬||

ভাবার্থ - হে উমামনােহর দেহধারিন, আমাকে রক্ষা কর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়, হে শুভ্রাচলবাসিন, আমাকে বর প্রদান কর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় তুমি দারুবনে ঋষিকামিনীদিগকে মােহিতা করেছিলে, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবার, স্বাভীষ্টগণের প্রতি প্রসন্ন হয়ে (তাদের) কামনাপুরণকারিন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়' ||১৬||

মঙ্গলপ্রদায় গোতুরঙ্গ তে নমঃ শিবায়

গঙ্গয়া তরঙ্গিতোত্তমাঙ্গ তে নমঃ শিবায় ।

সঙ্গরপ্রবৃত্তবৈরিভঙ্গ তে নমঃ শিবায়

অঙ্গজারয়ে করেকুরঙ্গ তে নমঃ শিবায় ||১৭||

ভাবার্থ - হে গােতুরঙ্গ (বৃষবাহন)! তুমি মঙ্গলপ্রদ, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়, হে গঙ্গা-তরঙ্গিত-শীর্ষ, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায় হে সমরপ্রবৃত্ত বৈরি পরাজয়দক্ষ, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায় হে কুরঙ্গহস্ত, ( যিনি এক হস্তে মৃগ ধারণ করে আছেন) তুমি মনােজ-শক্ৰ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় ||১৭||

ঈহিতক্ষণপ্রদানহেতবে নমঃ শিবায়

আহিতাগ্নিপালকোক্ষকেতবে নমঃ শিবায় ।

দেহকান্তিধূতরৌপ্যধাতবে নমঃ শিবায়

গেহদুঃখপুঞ্জধূমকেতবে নমঃ শিবায় ||১৮||

ভাবার্থ - যিনি ক্ষণমাত্রে অভিলষিত প্রদানের কারণ, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি সাগ্নিক দ্বিজগণের পালক ও বৃষধ্বজ, সেই শিবকে নমস্কার। যার শরীরকান্তি রজতধাতুকে নি্জিত করেছে, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি গৃহবাসজনিত দুঃখপুঞ্জবিনাশে ধূমকেতুস্বরূপ, সেই শিবকে নমস্কার ||১৮||

ত্র্যক্ষ দীনসৎকৃপাকটাক্ষ তে নমঃ শিবায়

দক্ষসপ্ততন্তুনাশদক্ষ তে নমঃ শিবায় ।

ঋক্ষরাজভানুপাবকাক্ষ তে নমঃ শিবায়

রক্ষ মাং প্রপন্নমাত্ররক্ষ তে নমঃ শিবায় ||১৯||

ভাবার্থ - হে ত্রিলােচন, দীনের প্রতি তােমার কূপা-কটাক্ষ বর্তমান, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবার। হে দক্ষযজ্ঞনাশন-দক্ষ, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়,। হে চন্দ্র-সূর্য্য-বহ্নি-লােচন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। হে প্রপন্ন মাত্রের রক্ষক, আমাকে রক্ষা কর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবার ||১৯||

ন্যঙ্কুপাণয়ে শিবঙ্করায় তে নমঃ শিবায়

সঙ্কটাব্ধিতীর্ণকিঙ্করায় তে নমঃ শিবায় ।

কঙ্কভীষিতাভয়ঙ্করায় তে নমঃ শিবায়

পঙ্কজাননায় শঙ্করায় তে নমঃ শিবায় ||২০||

ভাবার্থ - তুমি হস্তে মৃগ ধারণ করেছ, তুমি শুভকর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তােমার; কিঙ্কর হলেই সঙ্কট-সমুদ্র হতে উত্তীর্ণ হয়, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়, কলুষরাশি যাকে ভয়চকিত করেছে, তুমি তাকেও অভয় প্রদান কর, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়। তুমি কমলবদন শঙ্কর, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় ||২০||

কর্মপাশনাশ নীলকণ্ঠ তে নমঃ শিবায়

শর্মদায় নর্মভস্মকণ্ঠ তে নমঃ শিবায় ।

নির্মমর্ষিসেবিতোপকণ্ঠ তে নমঃ শিবায়

কুর্মহে নতীর্নমদ্বিকুণ্ঠ তে নমঃ শিবায় ||২১||

ভাবার্থ - হে কর্মপাশনাশন নীলকণ্ঠ, তোমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়। তুমি সুখদাতা, লীলা সময়ে তােমার আকণ্ঠ চিতাভম্ম অনুলেপন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। মমত্বদোষবর্জিত ঋষিগণ হােমার সমীপস্থান আশ্রয় করেছেন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তে বিষ্ণুনমস্কৃত, আমরা বহু প্রণাম করিতেছি, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায় ||২১||

বিষ্টপাধিপায় নম্রবিষ্ণবে নমঃ শিবায়

শিষ্টবিপ্রহৃদ্গুহাচরিষ্ণবে নমঃ শিবায় ।

ইষ্টবস্তুনিত্যতুষ্টজিষ্ণবে নমঃ শিবায়

কষ্টনাশনায় লোকজিষ্ণবে নমঃ শিবায় ||২২||

ভাবার্থ - যিনি জগতের অধিপতি, বিষ্ণু যার নিকট নম্র, সেই শিবকে নমস্কার, যিনি শিষ্ট ব্রাহ্মণগণের হৃদয় গুহায় সঞ্চরণশীল, সেই শিবকে নমস্কার। জিষ্ণু অর্জুন যার নিকট ইষ্ট বব় প্রাপ্ত হয়ে নিত্য তুষ্টিলাভ করেছিলেন, সেই শিবের উদ্দেশে নমস্কার। যিনি কর্মবিনাশক এবং ত্রৈলােক মধ্যে সর্ববোৎকৃষ্ট, সেই শিবকে নমস্কার ||২২||

অপ্রমেয়দিব্যসুপ্রভাব তে নমঃ শিবায়

সৎপ্রপন্নরক্ষণস্বভাব তে নমঃ শিবায় ।

স্বপ্রকাশ নিস্তুলানুভাব তে নমঃ শিবায়

বিপ্রডিম্ভদর্শিতার্দ্রভাব তে নমঃ শিবায় ||২৩||

ভাবার্থ - হে অপ্রমেয় দিব্যপ্রভাব, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। হে প্রপন্ন-সাধুজন-রক্ষণশীল, তােমার উদ্দেশে 'নম: শিবায়। হে স্বপ্রকাশ, হে অতুল জ্ঞানসম্পন্ন, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়'। বিপ্র-বালকের প্রতি তুমি করুণার্দ্রভাব প্রদর্শন করেছিলে, তোমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়' ||২৩||

সেবকায় মে মৃড় প্রসীদ তে নমঃ শিবায়

ভাবলভ্য তাবকপ্রসাদ তে নমঃ শিবায় ।

পাবকাক্ষ দেবপূজ্যপাদ তে নমঃ শিবায়

তবকাঙ্ঘ্রিভক্তদত্তমোদ তে নমঃ শিবায় ||২৪||

ভাবার্থ - হে মৃড়, আমি সেবক, আমার প্রতি প্রসন্ন হও, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তােমার প্রসন্নতাই কেবল ভক্তিভাবলভ্যতাকে রক্ষা করে থাকে, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়'। হে অগ্নিলােচন, তােমার চরণ দেবগণের পূজ্য, তােমার উদ্দেশে নমঃ শিবায়। তােমার চরণকমল ভক্তকে তুমি আনন্দ প্রদান করে থাক, তােমার উদ্দেশে 'নমঃ শিবায়' ||২৪||

ভুক্তিমুক্তিদিব্যভোগদায়িনে নমঃ শিবায়

শক্তিকল্পিতপ্রপঞ্চভাগিনে নমঃ শিবায় ।

ভক্তসঙ্কটাপহারয়োগিনে নমঃ শিবায়

যুক্তসন্মনঃসরোজয়োগিনে নমঃ শিবায় ||২৫||

ভাবার্থ - যিনি (ঐহিক) ভােগ, মুক্তি এবং দিবা ভােগ দান করেন, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি নিজশক্তি কল্পিত জগৎ প্রপঞ্চের অধিষ্ঠান, সেই শিবকে নমস্কার। ভক্তগণের দুঃখাপহারী যােগরত শিবকে নমস্কার। যােগযুক্ত সাধুর হৃদয়কমলে যার সঙ্গ সতত বর্তমান, সেই শিবকে নমস্কার ||২৫||

অন্তকান্তকায় পাপহারিণে নমঃ শিবায়

শান্তমায়দন্তিচর্মধারিণে নমঃ শিবায় ।

সন্ততাশ্রিতব্যথাবিদারিণে নমঃ শিবায়

জন্তুজাতনিত্যসৌখ্যকারিণে নমঃ শিবায় ||২৬||

ভাবার্থ - যিনি অন্তকের অন্তক ও পাপবিনাশী, সেই শিবকে নমঙ্কার। যার মায়া উপশান্ত হয়েছে, পরিধানে যার করিচর্ম, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি আপ্রিতগণের সতত ব্যথা বিনাশ করেন, সেই শিবকে নমঙ্কার। যিনি সফল প্রাণিগণকে নিত্য মুখ প্রদান করেন, সেই শিবকে নমস্কার ||২৬||

শূলিনে নমো নমঃ কপালিনে নমঃ শিবায়

পালিনে বিরিঞ্চিতুণ্ডমালিনে নমঃ শিবায় ।

লীলিনে বিশেষরুণ্ডমালিনে নমঃ শিবায়

শীলিনে নমঃ প্রপুণ্যশালিনে নমঃ শিবায় ||২৭||

ভাবার্থ - শূলধারীকে নমস্কার, কপালমালীকে নমস্কার, শিবকে নমস্কার। যিনি পালক, যিনি ব্ৰহ্মার মুণ্ডমালা ধারণ করেছেন, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি লীলাময় হয়ে বিশেষ নরমুণ্ডমালা ধারণ করেন, সেই শিবকে নমস্কার। যিনি প্রশস্তশীল এবং প্রকৃষ্ট পুণ্যশালী, তাকে নমস্কার, সেই শিবকে নমস্কার ||২৭||

শিবপঞ্চাক্ষরমুদ্রাং চতুষ্পদোল্লাসপদ্যমণিঘটিতাম্ ।

নক্ষত্রমালিকামিহ দধদুপকণ্ঠং নরো ভবেৎসোমঃ ||২৮||

ভাবার্থ - এই শিবপঞ্চাক্ষরমুদ্রা চতুষ্পদ-শােভিত পদ্ম-রত্নে নির্মিত। এই নক্ষত্রমালা। মানব ইহ-জীবনে উপকণ্ঠ অর্থাৎ কণ্ঠসমীপে ধারণ করলে পক্ষান্তরে নিকটে রাখলে সােম হয়ে থাকে। (সােম শিবত্বপ্রাপ্ত, পক্ষান্তরে চন্দ্র। চন্দ্ৰ নক্ষত্রমালার নিকটে থাকেন, তাই এ স্থানে সােম শব্দ দুই অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। এই স্তবের বিশেষত্বসমস্ত স্তৰ পাঠে ১০৮ বার নমঃ শিবায় উচ্চারণ হয় ) ||২৮||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ শিবপঞ্চাক্ষরনক্ষত্রমালাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্কর ভগবতঃ বিরচিত শ্রীশিবপঞ্চাক্ষর নক্ষত্রমালা স্তোত্র সমাপ্ত।

 

Saturday, 17 July 2021

আকাশ উৎপত্তিশীল অনিত্য পদার্থঃ-

 


ইতোমধ্যে অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টিক্রম বিষয়ে তৈত্তিরীয় শ্রুতি অবলম্বনে একটী সংক্ষিপ্ত আলোচনা করিয়াছি। বেদান্ত বা উপনিষৎসকলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থলে বিভিন্ন প্রকার উৎপত্তিপ্রতিপাদিকা শ্রুতিসকল উপলব্ধ হইতেছে। কেহ কেহ আকাশের উৎপত্তি পাঠ করেন, কেহ কেহ তাহা করেন না। এই প্রকারে কেহ কেহ বায়ুর উৎপত্তি পাঠ করেন, কেহ তাহা করেন না। ছান্দোগ্য শ্রুতিতে বর্ণিত হইতেছে-

'সদেব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।১) অর্থাৎ "হে প্রিয়দর্শন, ইহা (-এই জগৎ) অগ্রে (-সৃষ্টির পূর্ব্বে) এক অদ্বিতীয় সদ্রূপেই বিদ্যমান ছিল", এই প্রকারে সৎ-শব্দবাচ্য ব্রহ্মের প্রস্তাব করিয়া 'তদৈক্ষত' 'তত্তেজোসৃজত'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩) "তিনি ঈক্ষণ করিলেন", এবং "তেজকে সৃষ্টি করিলেন", এই প্রকারে পঞ্চমহাভূতের মধ্যে মধ্যম (-তৃতীয় স্থানবর্ত্তী) তেজকে আদি করিয়া তেজঃ জল ও অন্ন (-ক্ষিতি) এই তিনটীর উৎপত্তি শ্রবণ করাইতেছেন। ছান্দোগ্য শ্রুতিতে আকাশের উৎপত্তি নাই। কিন্তু পূর্ব আলোচনায় তৈত্তিরীয় শ্রুতিতে (২।১) "সেই এই আত্মস্বরূপ ব্রহ্মের নিমিত্ত আকাশ উৎপন্ন হইল, আকাশ হইতে বায়ু, বায়ু হইতে অগ্নি, অগ্নি হইতে জল, জল হইতে ক্ষিতি, ক্ষিতি হইতে ওষধিসকল, ওষধিসকল হইতে অন্ন এবং অন্ন হইতে দেহ" এইরূপ বর্ণিত আছে।

আর এই হেতু কোনস্থলে তেজঃপ্রমুখা সৃষ্টি এবং কোন স্থলে আকাশপ্রমুখা সৃষ্টি বর্ণিত হওয়ায় শ্রুতিদ্বয়ের বিরোধ হইতেছে এইরূপ শঙ্কা উৎপন্ন হয়। কেহ কেহ ছান্দোগ্য সৃষ্টিপ্রকরণে পঠিত না হওয়ায় আকাশকে নিত্য পদার্থ জ্ঞান করেন। বৈশেষিক দর্শনকার কণাদের অভিপ্রায় অনুসরণকারীগণ মনে করেন জীবিত থাকিতে আকাশের উৎপত্তির সম্ভাবনা করিতে পারা যায় না। বিরুদ্ধবাদীরা মনে করেন, আকাশের উৎপত্তি অসম্ভব, অতএব আকাশের উৎপত্তিবোধিকা তৈত্তিরীয় শ্রুতিকে গৌণ অর্থে গ্রহণ করা উচিত। অমৃত এবং অনন্ত বলিয়া আকাশের কোন আরম্ভ থাকিতে পারে না। এইসকল শঙ্কার প্রত্যুত্তরে আচার্য বাদরায়ণ বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রে সিদ্ধান্ত করিতেছেন-এক বিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞান সিদ্ধির জন্য আকাশের উৎপত্তি স্বীকার্য। বিজ্ঞেয় ব্রহ্ম হইতে সমগ্র বস্তুজাত অভিন্ন হত্তয়ায়, আত্মবিজ্ঞান হইতে সর্ববিজ্ঞানবিষয়ক যে শ্রুতি প্রতিজ্ঞা তাহার হানি হয় না। ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন সত্তাবিশিষ্ট নিত্য আকাশ অঙ্গীকার করিলে সেই প্রতিজ্ঞা পরিত্যক্ত হইয়া পড়িবে। প্রবল তৈত্তিরীয় শ্রুতি বাক্যের সহিত দুর্ব্বল ছান্দোগ্য বাক্যের একবাক্যতা দ্বারা আকাশের উৎপত্তি সমর্থন করা হইতেছে এই সূত্রে-

প্রতিজ্ঞাহানিরব্যতিরেকাচ্ছব্দেভ্যঃ ৷৷-(ব্রহ্মসূত্র-২।৩।৬)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ-আচার্য শঙ্কর ভাষ্য করিতেছেন-

'যেনা অশ্রুতং শ্রুতিং ভবত্যমতং মতমবিজ্ঞাতং বিজ্ঞাতম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।১।৩)

"যাঁহার (-যদ্বিষয়ক জ্ঞানের) দ্বারা অশ্রুত বিষয় শ্রুত হয়, অবিজ্ঞাত বিষয় বিজ্ঞাত হয়" ইত্যাদি

'আত্মনি খল্বরে দৃষ্টে শ্রুতে মতে বিজ্ঞাতে ইদং সর্বং বিদিতম্'- (বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪।৫।৬)

"প্রিয়ে, আত্মা দৃষ্ট হইলে, শ্রুত হইলে, বিচারিত হইলে এবং বিজ্ঞাত হইলে এই সমস্তই বিজ্ঞাত হয়" ইত্যাদি;

'কস্মিন্নু ভগবো বিজ্ঞাতে সর্বমিদং বিজ্ঞাতং ভবতি'- (মুণ্ডক উপনিষৎ-১।১।৩)

"হে ভগবন্, কোন্ বস্তুটী বিজ্ঞাত হইলে এই সমস্তই বিজ্ঞাত হয়।" ইত্যাদি এবং " আমার বাহিরে (—আমাকে বিষয় করে না, এতাদৃশ) কোন প্রকার বিদ্যা নাই, আত্মভিন্ন জ্ঞেয় কিছুই নাই", ইত্যাদি এই প্রকার প্রতিজ্ঞা বেদচতুষ্টয়ান্তর্গত প্রত্যেক উপনিষদে অবগত হওয়া যাইতেছে।

সেই প্রতিজ্ঞার এইপ্রকারে অহানি অর্থাৎ বাধাভাব (—অপরিত্যাগ ) হয়, যদি সমগ্র বস্তুজাত বিজ্ঞেয় ব্রহ্ম হইতে অভিন্ন হয়। যেহেতু বস্তু সকল ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন হইলে 'একবিষয়ক জ্ঞানের দ্বারা সকল বস্তু বিজ্ঞাত হয়', ইত্যাদি এই প্রতিজ্ঞা ত্যক্ত হইয়া পড়িবে। আর ব্রহ্মের সহিত বস্তু সকলের সেই অভিন্নতা এই প্রকারে যুক্তিসঙ্গত হয়, যদি সমগ্র বস্তুজাত এক ব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন হয়।

কিন্তু জীবাদির ন্যায় আকাশ উৎপন্ন না হইলেও যদি ব্রহ্মরূপ অধিষ্ঠানে কল্পিতরূপে অঙ্গীকৃত হয়, তাহা হইলেও উক্ত প্রতিজ্ঞা সিদ্ধ হতে পারে। তদুত্তরে বলিতেছেন —

'প্রকৃতি (—উপাদানকারন) ও বিকার (—তাহার কার্য্য ) অভিন্ন', এই যুক্তির দ্বারাই 'একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞানরূপ' প্রতিজ্ঞার সিদ্ধি শব্দ-সকল (শ্রুতিসকল) হইতে অবগত হওয়া যাইতেছে। কি সেই শ্রুতি, তাহা প্রদর্শন করিতেছেন— যেমন দেখ, "যাহার দ্বারা অশ্রুত বিষয় শ্রুত হয় " ইহা প্রতিজ্ঞা করিয়া কার্য্য ও কারণের অভিন্নতা প্রতিপাদনপর মৃত্তিকাদি দৃষ্টান্তসকলের দ্বারা একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞানরূপ এই প্রতিজ্ঞা সমর্থিত হইতেছে।

আর তাহা সাধন করিবার জন্যই পরবর্ত্তী শব্দসকল (— শ্রুতিবাক্যসকল )

"হে সোম্য, উৎপত্তির পূর্ব্বে ইহা (—জগৎ ) এক ও অদ্বিতীয় সদ্রূপেই বিদ্যমান ছিল"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।১), "তিনি ঈক্ষণ করিলেন", "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩), ইত্যাদি এই প্রকারে ব্রহ্মের কার্য্য সকলকে প্রদর্শন করিয়া "এই সকলেই এতদাত্মক অর্থাৎ এই সদাখ্য আত্মার দ্বারা আত্মবান"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।৮।৭) এইপ্রকারে আরম্ভকরতঃ ছান্দোগ্যের ষষ্ঠ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি পর্য্যন্ত কারণের সহিত কার্যসকলের অভিন্নতা প্রদর্শন করিতেছে।

সেই হেতু আকাশ যদি ব্রহ্মের কার্য্য না হয়, তাহা হইলে ব্রহ্ম বিজ্ঞাত হইলে আকাশ বিজ্ঞাত হইবে না; আর তাহা হইলে 'একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞান' প্রতিজ্ঞার পরিত্যাগ হইয়া পড়িবে। প্রতিজ্ঞার পরিত্যাগের দ্বারা কিন্তু বেদের অপ্রমাণ্য সাধন করা যুক্তিসঙ্গত নহে।

যেহেতু দেখ, প্রত্যেক উপনিষদে সেই সেই শ্রুতিসকল প্রতিজ্ঞাটীকেই স্থাপন করিতেছেন, যথা —

'ইদং সর্বং যদয়মাত্মা '-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।৪।৬)

"এই সমস্তই 'তাহা', যাহা এই আত্মা",

'ব্রহ্মৈবেদমমৃতং পুরস্তাৎ'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-২।২।১১)

"এই অমৃতস্বরূপ ব্রহ্মই পুরোভাগে অবস্থিত", ইত্যাদি এই সকল।

সেইহেতু (—শ্রৌত প্রতিজ্ঞা এই প্রকারেই সিদ্ধ হয় বলিয়া ) বহ্নি প্রভৃতির ন্যায়ই আকাশই উৎপন্ন হয়, ইহা অঙ্গীকার করিতে হইবে ; স্বকপোলকল্পিত ব্যাখ্যার দ্বারা তাহার অন্যথা করা উচিত নহে।

আর যে বলা হয়েছে 'শ্রুতিতে পঠিত হয় নাই, বলিয়া আকাশ উৎপন্ন হয় না' তাহা যুক্তিসঙ্গত নহে, যেহেতু আকাশের উৎপত্তি-বিষয়ক অন্য শ্রুতি প্রদর্শিত হইয়াছে। যথা— "সেই এই হইতে আকাশ উৎপন্ন হইল"-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।১) ইত্যাদি। হ্যাঁ সত্য, তাহা প্রদর্শিত হইয়াছে, কিন্তু তাহা "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩), এই অন্য শ্রুতির সহিত বিরুদ্ধ মনে হয়। না, তাহা বলিতে পারি না, যেহেতু সকল শ্রুতির জন্য একবাক্যতা হইয়া থাকে( —সকল শ্রুতি একই অর্থ প্রতিপাদন করেন )।

আবার শঙ্কা হইল যে- অবিরুদ্ধ শ্রুতিসকলের একবাক্যতা হউক, এখানে কিন্তু তাহাদের মধ্যে বিরোধ কথিত হইয়াছে; যেহেতু একবার মাত্র শ্রুত স্রষ্টার সহিত স্রষ্টব্য পদার্থদ্বয়ের যুগপৎ বা ক্রমশঃ সম্বন্ধ সম্ভব নহেঃ যেহেতু তেজঃ ও আকাশ দুইটীরই যুগপৎ প্রথমে উৎপত্তি ( সমুচ্চয়—) সম্ভব নহে এবং যেহেতু শাখাভেদে তাহাদের উৎপত্তির প্রাথম্য প্রতিপাদনরূপ বিকল্প ও সম্ভব নহে।

উত্তরে সিদ্ধান্তী বলেন— ইহা দোষ নহে, তৈত্তিরীয় তেজের সৃষ্টির তৃতীয়ত্ব অর্থাৎ তৃতীয় স্থলে বর্ণণা শ্রুত হইয়াছে, যথা— সেই এই আত্মা হইতে আকাশ উৎপন্ন হইল, আকাশ হইতে বায়ু, এবং বায়ু হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল ইত্যাদি"। এই শ্রুতিকে কদাপি অন্য প্রকারে পরিণত (—ব্যাখ্যা ) করিতে পারা যায় না। ছান্দ্যোগ্যশ্রুতিকে কিন্তু অন্যপ্রকারে পরিণত করতে পাওয়া যায়, যথা— 'তিনি আকাশ ও বায়ুকে সৃষ্টি করিয়া "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন", ইত্যাদি। এই ছান্দ্যোগ্য শ্রুতি প্রধানভাবে তেজের উৎপত্তি প্রতিপাদিকা হইয়া অন্য শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ আকাশের উৎপত্তিকে নিশ্চয়ই বারণ করিতে সমর্থ নহে। যেহেতু আকাশকে উৎপত্তি অঙ্গীকৃত হইলে ছান্দ্যোগ্যশ্রুতির সহিত বিরোধ হয় না, ইহা উপরে প্রদর্শিত হইয়াছে। একই ছান্দ্যোগ্য বাক্যের দুইটী ব্যাপার অর্থাৎ উভয়প্রকার অর্থ সম্ভব নহে। কারণ তাহাতে বাক্যভেদদোষ ও অন্যশ্রুতির সহিত বিরোধ হইবে। অতএব ছান্দ্যোগ্যশ্রুতি আকাশের উৎপত্তি নিরাকরণ করিতে পারে না, ইহা সিদ্ধ হইল।

আচ্ছা, একই স্রষ্টার অনেক স্রষ্টব্যের সহিত সম্বন্ধের ন্যায় একই বাক্যের অনেক অর্থ হইবে না কেন? তদুত্তরে সিদ্ধান্তী বলিতেছেন — স্রষ্টা কিন্তু এক হইলেও ক্রমশঃ অনেক স্রষ্টব্যকে সৃষ্টি করিতে পারেন। শ্রুতিবাক্যের অর্থবোধকালে কিন্তু তাহা সম্ভব নহে , এইহেতু একবাক্যতা কল্পনা করা সম্ভব হইলে বিরুদ্ধ অর্থ প্রতিপাদিকারূপে শ্রুতিকে ত্যাগ করা উচিত নহে।

আমরা কিন্তু একবারমাত্র শ্রুত স্রষ্টার সহিত দুইটী স্রষ্টব্য বস্তুর সম্বন্ধ অভিপ্রায় (—স্বীকার ) করিতেছি না, যেহেতু অন্য শ্রুতির (তৈত্তিরীয় শ্রুতির) বলে আকাশাদি অন্য স্রষ্টব্য বস্তু সংগৃহীত হইয়া থাকে।

আর যেমন -'সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জলান্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৩।১৪।১)

"এই সমস্তই ব্রহ্মস্বরূপ, যেহেতু তাঁহা হইতে উৎপন্ন হয়, তাঁহাতেই বিলীন হয় এবং তাঁহাতেই প্রাণনক্রিয়া করে (—স্থিতিকালে তদাশ্রয়েই বর্ত্তমান থাকে" ), এই স্থলে সকল বস্তুর সাক্ষাদ্ভাবেই ব্রহ্ম হইতে যে উৎপত্তি শ্রুত হয়, তাহা যেমন শ্রুতির প্রদেশান্তরে বিহিত তেজঃপ্রমুখ সৃষ্টিক্রমকে বারণ করেন না এইরূপে তেজেরও যে ব্রহ্ম হইতে উৎপত্তি শ্রুত হয় , তাহা অন্য শ্রুতিতে বিহিত আকাশপ্রমুখ সৃষ্টিক্রমকে বারণ করিতে সমর্থ নহে।

এখন আবার শঙ্কা হইল- কিন্তু "সর্ব্বং খলু" ইত্যাদি এই বাক্যটী শম (রাগদ্বেষাদিরাহিত্য) বিধানের জন্য, যেহেতু "তাঁহা হিতে উৎপন্ন হয় এবং তাঁহাতে বিলীন হয় এবং তদাশ্রয়েই প্রাণনক্রিয়া করে, অতএব শান্ত হয়ে উপাসনা করিবে", এইপ্রকার শ্রুত হইতেছে। সুতরাং ইহা সৃষ্টি প্রতিপাদক বাক্যই নহে। সেইহেতু শ্রুতির অন্যস্থলে বিহিত সৃষ্টির ক্রমকে ইহা নিবারণ করিবে, ইহা সঙ্গত নহে। কিন্তু " তৎ তেজোহসৃজত" ইত্যাদি ইহা সৃষ্টিপ্রতিপাদক বাক্য, সেইহেতু শ্রুতিতে যেইপ্রকার বর্ণিত হইয়াছে, সেইপ্রকার ক্রমকেই গ্রহন করা উচিত, ইত্যাদি।

তদুত্তরে কথিত হইতেছে—না, এইপ্রকার বলিতে পার না, যেহেতু তেজের (—তেজঃসৃষ্টির ) প্রাথম্যের অনুরোধে অন্য শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ আকাশপদার্থকে পরিত্যাগ করা উচিত নহে, যেহেতু ক্রম পদার্থের (দ্রব্যের) ধর্ম্ম। আর দেখ,

"তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন", এই স্থলে ক্রমের বাচক কোন শব্দ নাই কিন্তু অর্থ হইতে (—তদপূর্ব্বে অন্য পদার্থের উৎপত্তি শ্রুত না হওয়ায়) ক্রম অবগত হওয়া যাইতেছে (—অনুমতি হইতেছে )।

তাহা (—অনুমতি সেই অশ্রৌত ক্রম ) কিন্তু "বায়ু হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল", শ্রুত্যন্তরে প্রসিদ্ধ তৃতীয় স্থানাপন্ন হওয়ারূপ শ্রৌত ক্রমের দ্বারা নিবারিত হইতেছে; কারণ এতাদৃশ অশ্রৌত ক্রমাপেক্ষা শ্রৌত ক্রম বলবান।

আর আকাশ ও তেজের যুগপৎ প্রথমে উৎপত্তিবিষয়ক যে বিকল্প এবং সমুচ্চয়, তাহারা অসম্ভাবনা ও অস্বীকৃতির দ্বারা নিবারিত হইয়াছে। অতএব তৈত্তিরীয় ও ছান্দোগ্য, এই শ্রুতিদ্বয়ের মধ্যে বিরোধ নাই; সুতরাং তাহারা অপ্রমান নহে।

 

"পাণ্ডুরঙ্গাষ্টকং"

 


শঙ্করাচার্য বিরচিত "পাণ্ডুরঙ্গাষ্টকং"

মহায়োগপীঠে তটে ভীমরথ্যা

বরং পুণ্ডরীকায় দাতুং মুনীন্দ্রৈঃ ।

সমাগত্য তিষ্ঠন্তমানন্দকন্দং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||১||

ভাবার্থ - [ পুণ্ডরীক নামে এক সাধক ভীমরধী নদীতটে মহাযােগপীঠে ভগবান্ বিষ্ণুর উপাসনা করেছিলেন, নারায়ণ পুণ্ডরীককে বরপ্রদানার্থ সেই স্থানে শিরােদেশে শিবলিঙ্গ ধারণ পূর্ব্বক আবিভূত হয়ে পাণ্ডুরঙ্গনামক কটিতটন্যস্তহস্ত সুঠাম মুক্তিতে অবস্থান করছেন শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য দিগ্বিজয়কালে সেই ভীমরথী- তীরে উপস্থিত হয়ে উক্ত পাণ্ডুরঙ্গের স্তব করেন। ] যিনি পুণ্ডরীককে বরপ্রদানের নিমিত্ত মুনিগণের সহিত আগমন করে ভীমরথীতীরে মহাযােগপীঠে বিদ্যমান আছেন, সেই আনন্দকন্দস্বরূপ পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||১||

তড়িদ্বাসসং নীলমেঘাবভাসং

রমামংদিরং সুন্দরং চিৎপ্রকাশম্ ।

বরন্ত্বিষ্টকায়াং সমন্যস্তপাদং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||২||

ভাবার্থ - যার পরিধেয়বস্ত্র বিদ্যুৎপুঞ্জের ন্যায় সমুজ্জল, যার দেহ নবজলধরের ন্যায় নীলবর্ণ, যিনি লক্ষ্মীর আবাসস্থান, যার কলেবর অতি সুন্দর, যাকে দর্শন করলে জ্ঞানের উদয় হয়, যিনি সকলের শ্রেষ্ঠ, ধিনি ইষ্টকোপরি পাদবিন্যাস করে বিদ্যমান আছেন, সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||২||

প্রমাণং ভবাব্ধেরিদং মামকানাং

নিতম্বঃ করাভ্যাং ধৃতো যেন তস্মাৎ ।

বিধাতুর্বসত্যৈ ধৃতো নাভিকোষঃ

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৩||

ভাবার্থ - আমার ভক্তগণের পক্ষে ভবসাগরের পরিমাণ (গভীরতা) এইমাত্র (কটিদেশ পর্য্যন্ত), এ জ্ঞাপনের জন্য (যে ভবসাগর অন্যের পক্ষে দুস্তর, তা আমার ভক্তগণের পক্ষে অনায়াসে পার হবার যােগ্যমাত্র কোমর-জল, এ দেখাইবার জন্য) দুই হাত যিনি নিজ কটিদেশে স্থাপন করেছেন, এবং যিনি ব্ৰহ্মার বসতির নিমিত্ত নাভিকোষ ধারণ করেছেন, সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৩||

স্ফুরৎকৌস্তুভালঙ্কৃতং কণ্ঠদেশে

শ্রিয়া জুষ্টকেয়ূরকং শ্রীনিবাসম্ ।

শিবং শান্তমীড্যং বরং লোকপালং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৪||

ভাবার্থ - যার কণ্ঠদেশে সমুজ্জল কৌন্তুভমণি অলঙ্কাররূপে শােভা পাচ্ছে, লক্ষ্মী যার কেয়ূরযুগল সর্বদা সেবা করেন, যিনি লক্ষ্মীর আবাসস্থান- স্বরূপ, যিনি সর্বমঙ্গলপ্রদ, যিনি সর্বদা শান্তিপরায়ণ, যিনি সকলের স্তুত্য, যিনি সকলের শ্রেষ্ঠ, যিনি সকল লােক পালন করেন, সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৪||

শরচ্চন্দ্রবিম্বাননং চারুহাসং

লসৎকুণ্ডলাক্রান্তগণ্ডস্থলান্তম্ ।

জপারাগবিম্বাধরং কঞ্জনেত্রং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৫||

ভাবার্থ - যার বদন শরৎকালীন চন্দ্রের ন্যায় অতিশয় শােভমান, যার বদলে অতি মনােহর হাস্য প্রকাশ পায়, যার গণ্ডপ্রান্তভাগ কুণ্ডল-মণ্ডিত, যার অধর জবা পুষ্পের ন্যায় লােহিতবর্ণ, যার নয়নযুগল পদ্মের ন্যায়, সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৫||

কিরীটোজ্বলৎসর্বদিক্প্রান্তভাগং

সুরৈরর্চিতং দিব্যরত্নৈরনর্ঘৈঃ ।

ত্রিভঙ্গাকৃতিং বর্হমাল্যাবতংসং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৬||

ভাবার্থ - যার মৌলিস্থিত কিরীটের উজ্জ্বল প্রভায় সমস্ত দিগন্ত আলােকিত হয়েছে, দেবগণ যাকে অমুল্য দিব্যরত্ন দ্বারা অর্চনা করেন, যিনি ত্রিভঙ্গাকায়ে বিদ্যমান আছেন, বিনি ময়ূরপুচ্ছ ও মালা দ্বারা বিভূষিত হয়ে থাকেন, সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৬||

বিভুং বেণুনাদং চরন্তং দুরন্তং

স্বয়ং লীলয়া গোপবেষং দধানম্ ।

গবাং বৃন্দকানন্দদং চারুহাসং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৭||

ভাবার্থ - যিনি জগতের অদ্বিতীয় অধীশ্বর, যিনি সর্ব্বদা বেণুবাদন করে বিচরণ করেন, যিনি সকলের দুষ্প্রাপ্য ও অন্তহীন, যিনি স্বয়ং লীলাপ্রকাশ করে গােপবেশ ধারণ করেছেন, যিনি গাে-গণের আনন্দবর্দ্ধন করেন, সেই সুচারু হাস্যবদন পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৭||

অজং রুক্মিণীপ্রাণসঞ্জীবনং তং

পরং ধাম কৈবল্যমেকং তুরীয়ম্ ।

প্রসন্নং প্রপন্নার্তিহং দেবদেবং

পরব্রহ্মলিঙ্গং ভজে পাণ্ডুরঙ্গম্ ||৮||

ভাবার্থ - যিনি অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, যিনি রুক্মিণীর প্রাণসঞ্জীবক, যিনি পরম ধাম অর্থাৎ যাতে লীন হলে আর পতন হয় না, যিনি সাক্ষাৎ মােক্ষস্বরূপ, যিনি জাগ্রৎ, স্বপ্ন ও সুযুপ্তি অবস্থাত্রয়ের অতীত, যিনি প্রসন্ন হলে শরণাগত ব্যক্তির ক্লেশ নিবারিত হয়,সেই পরব্রহ্মলিঙ্গ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণকে ভজনা করি ||৮||

স্তবং পাণ্ডুরঙ্গস্য বৈ পুণ্যদং যে

পঠন্ত্যেকচিত্তেন ভক্ত্যা চ নিত্যম্ ।

ভবাম্ভোনিধিং তেঽপি তীর্ত্বান্তকালে

হরেরালয়ং শাশ্বতং প্রাপ্নুবন্তি ||৯||

ভাবার্থ - যারা প্রতিদিন নিয়তচিত্ত হয়ে ভক্তিপূর্বক মহাপুণ্যপ্রদ পাণ্ডুরঙ্গ নামক নারায়ণের স্তব করেন, তারা অন্তকালে এই ভবসাগর হতে পরিত্রাণ পেয়ে পরমধামে বিষ্ণুলােকে গমন করেন ||৯||

॥ ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ পাণ্ডুরঙ্গাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ॥

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্কর ভগবতঃ বিরচিত পাণ্ডুরঙ্গাষ্টকং সমাপ্ত।

 

Monday, 5 July 2021

"ত্রিপুরসুন্দরীমানসপূজাস্তোত্রম্"

 


শ্রীঃ গণেশায় নমঃ

মম ন ভজনশক্তিঃ পাদয়োস্তে ন ভক্তি-

র্ন চ বিষয়বিরক্তির্ধ্যানয়োগে ন সক্তিঃ ।

ইতি মনসি সদাহং চিন্তয়ন্নাদ্যশক্তে

রুচিরবচনপুষ্পৈরর্চনং সংচিনোমি ||১||

ভাবার্থ- হে আদ্যাশক্তে, আমার ভজন করবার শক্তি নাই, বিষয়ে বিরক্তিও নাই। ধ্যান করার আসক্তিও নাই, এ সর্বদা মনে চিন্তা করে আমি মনোহর বাক্যরূপ পুষ্পদ্বারা ( তোমার ) অর্চনা করতেছি||১||

ব্যাপ্তং হাটকবিগ্রহৈর্জলচরৈরারূঢদেবব্রজৈঃ

পোতৈরাকুলিতান্তরং মণিধরৈর্ভূমীধরৈর্ভূষিতম্ ।

আরক্তামৃতসিন্ধুমুদ্ধুরচলদ্বিচীচয়ব্যাকুল-

ব্যোমানং পরিচিন্ত্য সন্ততমহো চেতঃ কৃতার্থী ভব ||২||

ভাবার্থ - স্বর্ণময় শরীরযুক্ত জলচর দ্বারা ব্যাপ্ত, আরূঢ় হয়েছেন দেবগণ যাতে, এবম্ভূত নৌকা দ্বারা আকুলিত, মণিধারণকারী পর্বতগণ দ্বারা অলঙ্কৃত, উদগত তরঙ্গ সমূহ দ্বারা ব্যাকুল হয়েছে আকাশ যৎকর্তৃক, এবম্ভূত ঈষৎ রক্তবর্ণ অমৃতসমুদ্রকে নিরন্তর চিন্তা করে হে চিত্ত, তুমি কৃতার্থ হও||২||

তস্মিন্নুজ্জ্বলরত্নজালবিলসৎকান্তিচ্ছটাভিঃ স্ফুটং

কুর্বাণং বিয়দিন্দ্রচাপনিচয়ৈরাচ্ছাদিতং সর্বতঃ ।

উচ্চৈঃ শৃঙ্গনিষণ্ণদিব্যবনিতাবৃন্দাননপ্রোল্লসৎ–

গীতাকর্ণননিশ্চলাখিলমৃগং দ্বীপং নমস্কুর্মহে ||৩||

ভাবার্থ - সেই ( সুধা সমুদ্রের ) আকাশগত ইন্দ্রধনু সমূহ দ্বারা সর্বত আস্বাদিত, উচ্চ ( পর্বত ) শৃঙ্গে উপবিষ্ট দেবস্ত্রীগণের মুখে শোভিত গীত শ্রবণহেতু নিশ্চল হয়েছে সমগ্র পশুসমূহ যাতে, এবম্ভূত উজ্জল রত্নসমূহের শোভমান কান্তিচ্ছটা কর্তৃক প্রকাশিত দ্বীপকে নমস্কার করতেছি||৩||

জাতীচম্পকপাটলাদিসুমনঃসৌরভ্যসম্ভাবিতং

হ্রীঙ্কারধ্বনিকণ্ঠকোকিলকুহূপ্রোল্লাসিচূতদ্রুমম্ ।

আবির্ভূতসুগন্ধিচন্দনবনং দৃষ্টিপ্রিয়ং নন্দনং

চঞ্চচ্চঞ্চলচঞ্চরিকচটুলং চেতশ্চিরং চিন্তয় ||৪||

ভাবার্থ - জাতী, ( চামেলি ) চম্পক, পাটলা ( পারুল ) প্রভৃতি পুষ্পের সুগন্ধে আমোদিত, হ্রীংকার ধ্বনি যার কণ্ঠে আছে এবম্ভূত কোকিলের কুহুধ্বনি দ্বারা উল্লাসিত হয়েছে আম্রবৃক্ষ যাতে এবম্ভূত,পুনঃ পুনঃ ইতস্ততঃ উড্ডীয়মান চঞ্চল ভ্রমরবৃন্দ দ্বারা চাঞ্চল্যযুক্ত, যাতে সুগন্ধি চন্দন বন আবির্ভূত হয়েছে এবম্ভূত, দৃষ্টির আনন্দদায়ক নন্দনবনকে চিত্ত ( তুমি ) চিরকাল চিন্তা কর||৪||

পরিপতিতপরাগৈঃ পাটলক্ষোণিভাগো

বিকসিতকুসুমোচ্চৈঃ পীতচন্দ্রার্করশ্মিঃ ।

অলিশুকপিকরাজীকূজিতৈঃ শ্রোত্রহারী

স্ফুরতু হৃদি মদীয়ে নূনমুদ্যানরাজঃ ||৫||

ভাবার্থ - সর্বত্র পতিত পুষ্পের পরাগ দ্বারা ঈষৎ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে পৃথিবী যে স্থলে এবম্ভূত, বিকসিত কুসুমগণ কর্তৃক অতিমাত্রায় পীত হয়েছে চন্দ্র ও সূর্য্যরশ্মি যে স্থলে এরূপ, ভ্রমর শুকপক্ষী ও কোকিল সমূহের কুজন দ্বারা শ্রবণেন্দ্রিয় আকর্ষণকারী উদ্যানশ্রেষ্ঠ নিশ্চয় আমার হৃদয়ের স্ফুরিত হোক||৫||

রম্যদ্বারপুরপ্রচারতমসাং সংহারকারিপ্রভ

স্ফূর্জত্তোরণভারহারকমহাবিস্তারহারদ্যুতে ।

ক্ষৌণীমণ্ডলহেমহারবিলসৎসংসারপারপ্রদ

প্রোদ্যদ্ভক্তমনোবিহার কনকপ্রাকার তুভ্যং নমঃ ||৬||

ভাবার্থ - মনোহর দ্বারের সম্মুখে বিচরণশীল ( অবস্থিত ) অন্ধকারসমূহের সংহারকারী প্রভাসম্পন্ন, মহাশব্দকারী ( খোলা ও বন্ধ করার সময় ) বহির্দ্বারে ভারহরণকারী ( প্রাকারমধ্যে কীলক দ্বারা প্রোথিত হওয়ায় ও মহাভারযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অনায়াসে খুলতে ও বন্ধ করতে পারা যায় ) মহা বিস্তার দ্বারা ( অর্থাৎ তোরণ ভার হরণ করার জন্য প্রাকার মহা বিস্তৃতি সম্পন্ন করা হয়েছে, ফলে পুরীর চতুর্দিকে কই ব্যর্থ হওয়ায় ) হারবৎ শোভিত, ভূমন্ডলরূপ স্বর্ণ হার শোভিত সংসারের পারপ্রদানকারী, উদ্যমশীল ভক্তগণের মনে বিহরণকারী, কনকনির্মিত প্রাকার ( দেওয়াল ) তোমাকে নমস্কার||৬||

উদ্যৎকান্তিকলাপকল্পিতনভঃস্ফূর্জদ্বিতানপ্রভঃ

সৎকৃষ্ণাগরুধূপবাসিতবিয়ৎকাষ্ঠান্তরে বিশ্রুতঃ ।

সেবায়াতসমস্তদৈবতগণৈরাসেব্যমানোঽনিশং

সোঽয়ং শ্রীমণিমণ্ডপোঽনবরতং মচ্চেতসি দ্যোততাম্ ||৭||

ভাবার্থ - উদগত দীপ্তিরাশি দ্বারা যার আকাশ প্রদেশে অতিশয় শোভা সম্পন্ন চন্দ্রাতপসদৃশ সৃষ্ট হয়েছে ( অর্থাৎ যার কিরণজাল দ্বারা উর্দ্ধস্থ আকাশে চন্দ্রাতপবৎ আবরণ সৃষ্ট হয়েছে এবম্ভূত ), উৎকৃষ্ট কৃষ্ণাগুরুজাত ধূপের সুগন্ধে আকাশ সর্বত্র (সর্বদিকে) প্রখ্যাত হয়েছে, সেবা করার জন্য উপস্থিত সমস্ত দেবগণ কর্তৃক নিরন্তর সেবিত, সেই এই শ্রীমণিমণ্ডপ আমার চিত্তে নিরন্তর শোভিত হোক||৭||

ক্বাপি প্রোদ্ভটপদ্মরাগকিরণব্রাতেন সন্ধ্যায়িতং

কুত্রাপি স্ফুটবিস্ফুরন্মরকতদ্যুত্যা তমিস্রায়িতম্ ।

মধ্যালম্বিবিশালমৌক্তিকরুচা জ্যোৎস্নায়িতং কুত্রচিৎ–

মাতঃ শ্রীমণিমন্দিরং তব সদা বন্দামহে সুন্দরম্ ||৮||

ভাবার্থ - হে মাতঃ, অতি উদার ( মহৎ ) পদ্মরাগমণির কিরণসমূহ দ্বারা যার কোনও অংশ সন্ধ্যাকালের অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে, স্পষ্টদীপ্তি সম্পন্ন মরকতমণির প্রভা দ্বারা যার কোনও স্থান অন্ধকার রাত্রিকালীন অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে, মধ্যস্থলে লম্বিত বিশাল মুক্তার কান্তিতে যার কোনও স্থান জ্যোৎস্নালোক দ্বারা আলোকিত স্থানের ন্যায় হয়েছে, এইরূপ তোমার সুন্দর শ্রীমণিমন্দিরকে সর্বদা বন্দনা করতেছি||৮||

উত্তুঙ্গালয়বিস্ফুরন্মরকতপ্রোদ্যৎপ্রভামণ্ডলা-

ন্যালোক্যাঙ্কুরিতোৎসবৈর্নবতৃণাকীর্ণস্থলীশঙ্কয়া ।

নীতো বাজিভিরুৎপথং বত রথঃ সূতেন তিগ্মদ্যুতে-

র্বল্গাবল্গিগতহস্তমস্তশিখরং কষ্টৈরিতঃ প্রাপ্যতে ||৯||

ভাবার্থ - তোমার অত্যুচ্চ আলয় হতে বিচ্ছুরিত মরকত মণির উদ্গত প্রভামন্ডল দেখে নতুন তৃণ পরিব্যাপ্ত ভূমি সন্দেহে আনন্দিত অশ্বগুলি কর্তৃক সূর্যের রথ সূর্যের গমন পথের বাইরে নীত হয়ে সেস্থান হতে সারথি দ্বারা বল্গাকর্ষণাদি পূর্বক কথঞ্চিৎ প্রকারে অস্তশিখর প্রাপ্ত হচ্ছে ||৯||

মণিসদনসমুদ্যৎকান্তিধারানুরক্তে–

র্বিয়তি চরমসন্ধ্যাশঙ্কিনো ভানুরথ্যাঃ ।

শিথিলিতগতকুপ্যৎসূতহুঙ্কারনাদৈঃ

কথমপি মণিগেহাদুচ্চকৈরুচ্চলন্তি ||১০||

ভাবার্থ - সূর্য্যোর রথবাহক অশ্বগণ তোমার মণিমন্দির সমুত্থিত কিরণজাল দ্বারা আকাশ আবৃত হওয়ায় সায়ংসন্ধ্যা ( সূর্যাস্ত সময় ) উপস্থিত আশঙ্কা করে শিথিলগতি হওয়ায় কোপকারী ( ক্রুদ্ধ ) সারথির হুংকার ধ্বনি দ্বারা ( ভয়চালিত হয়ে ) মনিগৃহ হতে কোন প্রকারে শীঘ্র যাচ্ছে ( অর্থাৎ ওরা সন্ধ্যাকাল সমুপস্থিত বুঝে বিশ্রামার্থ গতি শিথিল করায় পুনরায় সারথির হুংকার দ্বারা নিজ মনে সন্ধ্যাকালে ভ্রম থাকা সত্ত্বেও কোন প্রকারে অনিচ্ছাসত্ত্বে গতি বৃদ্ধি করতেছে ) ||১০||

ভক্ত্যা কিং নু সমর্পিতানি বহুধা রত্নানি পাথোধিনা

কিংবা রোহণপর্বতেন সদনং যৈর্বিশ্বকর্মাকরোৎ ।

আ জ্ঞাতং গিরিজে কটাক্ষকলয়া নূনং ত্বয়া তোষিতে

শম্ভৌ নৃত্যতি নাগরাজফণিনা কীর্ণা মণিশ্রেণয়ঃ ||১১||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! রত্মাকর সমুদ্রের বা বিদূর পর্ব্বত কর্তৃক ভক্তি প্রযুক্ত বহু প্রকার রত্ন সকল সমর্পিত হয়েছে কি ? যার দ্বারা বিশ্বকর্মা তোমার এই বাসস্থান নির্মাণ করেছেন, অহো জ্ঞাত হয়েছি, ( বুঝেছি ) নিশ্চয়ই তোমার কর্তৃক কটাক্ষের ষোড়শাংশ মাত্র দাঁড়া তোষিত হয়ে শিব নৃত্য করতে থাকাকালে নাগরাজ ফণীন্দ্র বাসুকি এই মনি সমূহ বিকিরণ করেছেন ||১১||

বিদূরমুক্তবাহনৈর্বিনম্রমৌলিমণ্ডলৈ-

র্নিবদ্ধহস্তসম্পুটৈঃ প্রয়ত্নসংয়তেন্দ্রিয়ৈঃ ।

বিরিঞ্চিবিষ্ণুশঙ্করাদিভির্মুদা তবাম্বিকে

প্রতীক্ষ্যমাণনির্গমো বিভাতি রত্নমণ্ডপঃ ||১২||

ভাবার্থ - হে অম্বিকে ! ( সম্ভ্রম বশতঃ ) অতিদূরে যাদের বাহনগণ ত্যক্ত হয়েছে, যারা অবনত মস্তক, যাদের হস্ত সম্পুট ( অঞ্জলি ) আকারে নিবন্ধ ( কৃতাঞ্জলি ), অতিশয় যত্ন পূর্বক যারা তৎকালে ইন্দ্রিয়গণকে সংযত করেছেন, এবম্ভূত ব্রহ্মা বেশ নসিব প্রভৃতি কর্তৃক হর্ষে তোমার ( মন্দিরাভ্যন্তর হতে ) নির্গমন প্রতীক্ষা করা হচ্ছে যে স্থলে এরূপ রত্নমণ্ডপ শোভা পাচ্ছে ||১২||

ধ্বনন্মৃদঙ্গকাহলঃ প্রগীতকিন্নরীগণঃ

প্রনৃত্যদিব্যকন্যকঃ প্রবৃত্তমঙ্গলক্রমঃ ।

প্রকৃষ্টসেবকব্রজঃ প্রহৃষ্টভক্তমণ্ডলো

মুদে মমাস্তু সন্ততং ত্বদীয়রত্নমণ্ডপঃ ||১৩||

ভাবার্থ - ধ্বনিত হচ্ছে মৃদঙ্গ ও কাহল নামক বাদ্যযন্ত্র যে স্থলে, যে স্থলে কিন্নরীগণ গান করতেছে, দিব্যকন্যা সমূহ যে স্থলে নৃত্য করতেছে, যে স্থলে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান প্রবৃত্ত হয়েছে, যে স্থলে উৎকৃষ্ট সেবক সমূহ বিদ্যমান, যে স্থলে আনন্দিত ভক্তমণ্ডলী সমুপস্থিত, এরূপ তোমার রত্নমণ্ডপ সর্বদা আনন্দের নিমিত্ত হোক ||১৩||

প্রবেশনির্গমাকুলৈঃ স্বকৃত্যরক্তমানসৈ-

র্বহিস্থিতামরাবলীবিধীয়মানভক্তিভিঃ ।

বিচিত্রবস্ত্রভূষণৈরুপেতমঙ্গনাজনৈঃ

সদা করোতু মঙ্গলং মমেহ রত্নমণ্ডপঃ ||১৪||

ভাবার্থ - প্রবেশ ও নির্গম ( আসা যাওয়া ) দ্বারা আকুল ( ব্যতিব্যস্ত ), নিজকার্য্যে অনুরক্ত মনোবিশিষ্ট ( যারা নিজকার্য্যে অত্যন্ত অনুরক্ত ), বহির্দেশ স্থিত দেবতাগণ দ্বারা প্রদর্শিত হচ্ছে, ভক্তি যাদের প্রতি, অর্থাৎ যার বাইরে আসামাত্র দেবতাগণ বারংবার ভক্তি প্রদর্শন করতেছেন এরূপ বিচিত্র ভূষণসম্পন্ন, স্ত্রীগণ দ্বারা যুক্ত ( পরিচারিকাদি স্ত্রীগণ যুক্ত ) রত্নমন্ডপ ইহলোকে সর্বদা মঙ্গল করুক ||১৪||

সুবর্ণরত্নভূষিতৈর্বিচিত্রবস্ত্রধারিভি-

র্গৃহীতহেমযষ্টিভির্নিরুদ্ধসর্বদৈবতৈঃ ।

অসংখ্যসুন্দরীজনৈঃ পুরস্থিতৈরধিষ্ঠিতো

মদীয়মেতু মানসং ত্বদীয়তুঙ্গতোরণঃ ||১৫||

ভাবার্থ - সুবর্ণ ও রত্নালঙ্কৃতা, বিচিত্র বস্ত্র পরিহিতা, ধৃত স্বর্ণনির্মিত দণ্ড দ্বারা সমস্ত দেবগণকে নিরোধকারিণী, ( সমস্ত দেবগণকে ভিতরে প্রবিষ্ট হতে বাধাদানকারী ), সম্মুখ স্থিত অসংখ্য সুন্দরীগণ দ্বারা অধিষ্ঠিত তোমার অত্যুচ্চ তোরণ দ্বার আমার মনে আগমন করুক ||১৫||

ইন্দ্রাদীংশ্চ দিগীশ্বরান্ সহপরিবারানথো সায়ুধান্

যোষিদ্রূপধরান্ স্বদিক্ষু নিহিতান্ সচিন্ত্য হৃৎপঙ্কজে ।

শঙ্খে শ্রীবসুধারয়া বসুমতীয়ুক্তং চ পদ্মং স্মরন্

কামং নৌমি রতিপ্রিয়ং সহচরং প্রীত্যা বসন্তং ভজে ||১৬||

ভাবার্থ - অনন্তর সায়ুধ ( শস্ত্রাস্ত্রাদিসহ ), পরিজনাদি সহ, স্ত্রীরূপ ধারী, নিজ নিজ দিক সকলে অবস্থিত, দিকপতি ইন্দ্রাদিকে হৃদয়পদ্মে চিন্তাপূর্বক শ্রীবসুধারা সহিত বসুমতীযুক্ত পদ্মকে শঙ্খে স্মরণ করতে করতে আনন্দে রতির প্রিয় কামকে নমস্কার করতেছি, এবং সহচর বসন্তকে ভজনা করতেছি ||১৬||

গায়ন্তীঃ কলবীণয়াতিমধুরং হুঙ্কারমাতন্বতী-

র্দ্বারাভ্যাসকৃতস্থিতীরিহ সরস্বত্যাদিকাঃ পূজয়ন্ ।

দ্বারে নৌমি মদোন্মদং সুরগণাধীশং মদেনোন্মদাং

মাতঙ্গীমসিতাম্বরাং পরিলসন্মুক্তাবিভূষাং ভজে ||১৭||

ভাবার্থ - এই মণিমণ্ডপে মধুরবীণাবাদ্য সহযোগে মধুর গানকারিণী, হুঙ্কারধ্বনিকারিণী, দ্বার সমীপে অবস্থিতি কারিণী, সরস্বতী প্রভৃতিকে পূজা করে, মদ হেতু উন্মত্ত দেবগণের অধীশকে দ্বারদেশে নমস্কার করতেছি, মদ হেতু উন্মত্তা কৃষ্ণবর্ণ বস্ত্রপরিহিতা, শোভাযুক্ত মুক্তালঙ্কৃতা মাতঙ্গীকে ভজনা করিতেছি। (এ স্থলে ১৬, ১৭ সংখ্যক শ্লোকের অর্থবোধের নিমিত্ত দেবীর পূজা পদ্ধতি আলোচ্য; বিস্তারভয়ে লিখিত হইল না) ||১৭||

কস্তূরিকাশ্যামলকোমলাঙ্গীং

কাদম্বরীপানমদালসাঙ্গীম্ ।

বামস্তনালিঙ্গিতরত্নবীণাং

মাতঙ্গকন্যাং মনসা স্মরামি ||১৮||

ভাবার্থ - কস্তূরিকার (কস্তূরীর) ন্যায় শ্যাম বর্ণ ও কোমল অঙ্গবিশিষ্টা কাদম্বরী (সুরা বিশেষ) পান হেতু মদে (মত্ততায় ) অলস হয়েছে অঙ্গ যার, যিনি বামস্তন দ্বারা আলিঙ্গিত রত্নবীণাযুক্তা, এবম্ভূতা মাতঙ্গমুনির কন্যাকে মনে মনে স্মরণ করতেছি ||১৮||

বিকীর্ণচিকুরোৎকরে বিগলিতাম্বরাডম্বরে

মদাকুলিতলোচনে বিমলভূষণোদ্ভাসিনি ।

তিরস্করিণি তাবকং চরণপঙ্কজং চিন্তয়ন্

করোমি পশুমণ্ডলীমলিকমোহদুঘ্ধাশয়াম্ ||১৯||

ভাবার্থ - যার কেশপাশ বিকীর্ণ (ছড়ান) হয়েছে, বস্ত্র সমূহের আড়ম্বর নষ্ট হয়েছে (অর্থাৎ যার বস্ত্রের আড়ম্বর নাই) যিনি মত্ততাপ্রযুক্ত আকুলিতচক্ষু, হে দেবি! বিমল অলঙ্কার দ্বারা উদ্ভাসিত, তিরস্করিণি (কানাৎ) মধ্যস্থ তােমার চরণকমল চিন্তা করে পশুমণ্ডলীকে (অধম-ভাবযুক্ত উপাসকগণকে) মিথ্যা মােহ পূরিতচিত্ত করব ||১৯||

প্রমত্তবারুণীরসৈর্বিঘূর্ণমানলোচনাঃ

প্রচণ্ডদৈত্যসূদনাঃ প্রবিষ্টভক্তমানসাঃ ।

উপোঢ়কজ্জলচ্ছবিচ্ছটাবিরাজিবিগ্রহঃ

কপালশূলধারিণীঃ স্তুবে ত্বদীয়দূতিকাঃ ||২০||

ভাবার্থ - মত্ততাজনক বারুণী (সুরা) দ্বারা বিঘূর্ণমান (চঞ্চল) লোচনযুক্তা, প্রচণ্ড দৈত্যনাশিনী, ভক্তের মনে প্রবিষ্টা, (ভক্তমনে অধিষ্ঠানকারিণী) কজ্জল সদৃশ ছটাসমূহ বিরাজিত (শােভিত) বিগ্রহ (শরীর) যুক্তা, কপাল (নরশিরঃ) ও শূলধারিণী, তােমার দূতীগণকে স্তব করতেছি ||২০||

স্ফূর্জন্নব্যযবাঙ্কুরোপলসিতাভোগৈঃ পুরঃ স্থাপিতৈ-

র্দীপোদ্ভাসিশরাবশোভিতমুখৈঃ কুম্ভৈর্নবৈঃ শোভিনা ।

স্বর্ণাবদ্ধবিচিত্ররত্নপটলীচঞ্চৎকপাটশ্রিয়া

যুক্তং দ্বারচতুষ্টয়েন গিরিজে বন্দে মণী মন্দিরম্ ||২১||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! সম্মুখে স্থাপিত, দীপ্তিশীল নতুন যবাঙ্কুর দ্বারা যার সমগ্রভাগ শােভিত এরূপ দীপ দ্বারা উদ্ভাসিত শরাব (মাটি প্রভৃতির শরাপাত্র বিশেষ) দ্বারা শােভিত মুখযুক্ত, নতুন কুম্ভ দ্বারা শােভিত, স্বর্ণমধ্যে আবদ্ধ (গ্রথিত) বিচিত্র রত্নসমূহনির্মিত গৃহের চাল (ছাদ) ও চঞ্চল কপাটের শােভাযুক্ত দ্বারচতুষ্টয় বিশিষ্ট

মণিমন্দিরকে বন্দনা করতেছি ||২১||

আস্তীর্ণারুণকম্বলাসনয়ুতং পুষ্পোপহারান্বিতং

দীপ্তানেকমণিপ্রদীপসুভগং রাজদ্বিতানোত্তমম্ ।

ধূপোদ্গারিসুগন্ধিসম্ভ্রমমিলদ্ভৃঙ্গাবলীগুঞ্জিতং

কল্যাণং বিতনোতু মেঽনবরতং শ্রীমণ্ডপাভ্যন্তরম্ ||২২||

ভাবার্থ - আস্তৃত অরুণবর্ণ কম্বলাসন যুক্ত, পুষ্পরূপ উপহার যুক্ত, প্রদীপ্ত অনেক মণিময় প্রদীপ সমৃদ্ধ, শােভমান উত্তম চন্দ্রাতপযুক্ত, ধূপ উদ্গিরণকারী সুগন্ধিবস্তুর প্রতি আকর্ষণ বশতঃ মিলিত (উপস্থিত) ভ্রমর সমূহের গুঞ্জন ধ্বনিযুক্ত, শ্রীমণ্ডপের অভ্যন্তর ভাগ অনবরত আমার কল্যাণ করুক ||২২||

কনকরচিতে পঞ্চপ্রেতাসনেন বিরাজিতে

মণিগণচিতে রক্তশ্বেতাম্বরাস্তরণোত্তমে ।

কুসুমসুরভৌ তল্পে দিব্যোপধানসুখাবহে

হৃদয়কমলে প্রাদুর্ভূতাং ভজে পরদেবতাম্ ||২৩||

ভাবার্থ - হৃদয়কমলমধ্যে স্বর্ণনিম্মিত, ব্রহ্মাদি সদাশিবান্ত পাঁচটি প্রেতরূপ আসনে বিরাজিত,

মণিসমূহখচিত, রক্ত ও শ্বেতবর্ণ উত্তম আস্তরণযুক্ত (বিছানার চাদরযুক্ত) পুষ্পগন্ধ-সুবাসিত, দিব্য

উপাধান (বালিশ) দ্বারা সুখাবহ শয্যায়, প্রাদুর্ভূত পরদেবতাকে ভজনা করতেছি ||২৩||

সর্বাঙ্গস্থিতিরম্যরূপরুচিরাং প্রাতঃ সমভ্যুত্থিতাং

জৃম্ভামঞ্জুমুখাম্বুজাং মধুমদব্যাঘূর্ণদক্ষিত্রয়াম্ ।

সেবায়াতসমস্তসন্নিধিসখীঃ সম্মানয়ন্তীং দৃশা

সংপশ্যন্ পরদেবতাং পরমহো মন্যে কৃতার্থং জনুঃ||২৪||

ভাবার্থ - সমস্ত অঙ্গস্থিত রমণীয় রূপ দ্বারা মনােজ্ঞা, প্রাতঃকালে ( নিদ্রা হতে ) সমভ্যুত্থিতা ( জাগ্রতা ) জৃম্তা ( হাই তােলা ) হেতু সুন্দের মুখকমলবিশিষ্টা, মধুপানহেতু মত্ততাজনিত ঘূর্ণিতনেত্রত্রয়যুক্তা সেবার্থ আগত যারা সন্নিধানে উপস্থিত, এরূপ সখীগণকে দৃষ্টি দ্বারা সম্মানদানকারিণী, পরদেবতাকে দর্শন করে অহাে! আমার জন্ম পরম কৃতার্থ মনে করতেছি ||২৪||

উচ্চৈস্তোরণবর্তিবাদ্যনিবহধ্বানে সমুজ্জৃম্ভিতে

ভক্তৈর্ভূমিবিলগ্নমৌলিভিরলং দণ্ডপ্রণামে কৃতে ।

নানারত্নসমূহনদ্ধকথনস্থালীসমুদ্ভাসিতাং

প্রাতস্তে পরিকল্পয়ামি গিরিজে নীরাজনামুজ্জ্বলাম্ ||২৫||

ভাবার্থ - হে গিরিজে ! তােরণস্থিত বাদাসমূহের ধ্বনি অতিশয় উজ্জ্বস্তিত (স্পষ্ট বা তীব্র হলে,) অর্থাৎ আরত্রিক কালে তারণস্থিত বাদ্যগুলি পূর্বাপেক্ষা উচ্চশব্দে বাদিত হলে ভূমিলগ্নমস্তক ভক্তগণ কর্তৃক যথেষ্ট দণ্ডবৎ প্রণাম কৃত হলে, প্রাতঃকালে নানাবিধ রত্নসমূহখচিত কথন নামক স্থালীতে শােভমান উজ্জ্বল নীরাজন (আরত্রিক) সম্পাদন করতেছি ||২৫||

পাদ্যং তে পরিকল্পয়ামি পদয়োরর্ঘ্যং তথা হস্তয়োঃ

সৌধীভির্মধুপর্কমম্ব মধুরং ধারাভিরাস্বাদয় ।

তোয়েনাচমনং বিধেহি শুচিনা গাঙ্গেন মৎকল্পিতং

সাষ্টাঙ্গং প্রণিপাতমীশদয়িতে দৃষ্ট্যা কৃতার্থী কুরু ||২৬||

ভাবার্থ - হে শিবদয়িতে ! তােমার পদদ্বয়ে পাদ্য, এবং হস্তদ্বয়ে অর্ঘ্য, পরিকল্পনা করতেছি ( মনে মনে চিন্তা করতেছি )। হে মাতঃ! সুধাধারা যােগে মধুর মধুপর্ক আস্বাদন কর, পবিত্র গঙ্গাজল দ্বারা আচমন কর, আমার কৃত সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাতকে দৃষ্টিপাত মাত্র দ্বারা কৃতার্থ করো ||২৬||

মাতঃ পশ্য মুখাম্বুজং সুবিমলে দত্তে ময়া দর্পণে

দেবি স্বীকুরু দন্তধাবনমিদং গঙ্গাজলেনান্বিতম্ ।

সুপ্রক্ষালিতমাননং বিরচয়ন্ স্নিগ্ধাম্বরপ্রোঞ্ছনং

দ্রাগঙ্গীকুরু তত্ত্বমম্ব মধুরং তাম্বূলমাস্বাদয় ||২৭||

ভাবার্থ - হে মাতঃ! আমার কর্তৃক দত্ত সুনির্ম্মল দর্পণে মুখপদ্ম দেখ। হে দেবী, গঙ্গাজলযুক্ত এই দন্তধাবন বস্তু স্বীকার কর, মুখ প্রক্ষালিত করে স্নিগ্ধ বস্তুদ্বারা পরিমার্জ্জন সহসা স্বীকার কর। হে মাতঃ মধুর তাম্বূল আস্বাদন কর ||২৭||

নিধেহি মণিপাদুকোপরি পদাম্বুজং মজ্জনা-

লয়ং ব্রজ শনৈঃ সখীকৃতকরাম্বুজালম্বনম্ ।

মহেশি করুণানিধে তব দৃগন্তপাতোৎসুকান্

বিলোকয়মনাগমূনুভয়সংস্থিতান্ দৈবতান্ ||২৮||

ভাবার্থ - হে মহেশি, পাদুকার উপরিভাগে পদকমল স্থাপন করো, সখীগণ কর্তৃক দত্ত করপদ্মাবলম্বনে শনৈঃ শনৈঃ স্নানাগারে গমন করো। হে করুণানিধিস্বরূপে ! তােমার ঈষৎ কটাক্ষপাতে উৎসুক (অর্থাৎ তােমার ঈষৎ কটাক্ষপাতে যারা নিজেকে ধন্য মনে করেন) উভয় পার্শ্বস্থিত এই দেবগণকে ঈষৎ অবলােকন করো ||২৮||

হেমরত্নবরণেন বেষ্টিতং

বিস্তৃতারুণবিতানশোভিতম্ ।

সজ্জসর্বপরিচারিকাজনং

পশ্য মজ্জনগৃহং মনো মম ||২৯||

ভাবার্থ - স্বর্ণ ও রত্ননিম্মিত বেষ্টন দ্বারা বেষ্টিত, বিস্তৃত অরুণবর্ণ চন্দ্রাতপশােভিত, সজ্জিত সমস্ত পরিচারিকাজন যুক্ত, আমার মনঃস্বরূপ, স্নানাগারকে অবলােকন করো ||২৯||

কনককলশজালস্ফাটিকস্নানপীঠা-

দ্যুপকরণবিশালং গন্ধমত্তালিমালম্ ।

স্ফুরদরুণবিতানং মঞ্জুগন্ধর্বগানং

পরমশিবমহিলে মজ্জনাগারমেহি ||৩০||

ভাবার্থ - হে পরমশিবমহিলে ! স্বর্ণ কলসসমূহ স্ফটিকনিম্মিত স্নানপীঠ (আসন) প্রভৃতি উপকরণ যােগে বিশাল, গন্ধোন্মত্ত ভ্রমরসমূহযুক্ত, দীপ্তিশীল অরুণবর্ণ চন্দ্রাতপবিশিষ্ট গন্ধর্ব্বগণ কর্তৃক গীত মনােহর গানযুক্ত, স্নানাগারে আগমন কর ||৩০||

পীনোত্তুঙ্গপয়োধরাঃ পরিলসৎসম্পূর্ণচন্দ্রাননাঃ

রত্নস্বর্ণবিনির্মিতাঃ পরিলসৎসূক্ষ্মাম্বরপ্রাবৃতাঃ ।

হেমস্নানঘটীস্তথা মৃদুপটীরুদ্বর্তনং কৌসুমং

তৈলং কঙ্কতিকং করেষু দধতীর্বন্দেঽম্ব তে দাসিকাঃ||৩১||

ভাবার্থ - হে মাতঃ! স্থুল ও উন্নত পয়ােধরযুক্তা, শােভাযুক্ত পূর্ণচন্দ্রাননা, রত্ন ও স্বর্ণালঙ্কতা, শােভমান সুক্ষ্ম বস্ত্রপরিহিতা, এবং স্বর্ণনিম্ম্মিত স্নান-ঘট, কোমল বস্ত্র, পুষ্পজাত উদ্বর্ত্তন , (গাত্রে মর্দনােপযােগী বস্তু), তৈল, চিরুণী, প্রভৃতি যুক্তহস্তা তােমার দাসীগণকে বন্দনা করতেছি ||৩১||

তত্র স্ফাটিকপীঠমেত্য শনকৈরুত্তারিতালঙ্কৃতি-

র্নীচৈরুজ্ঝিতকঞ্চুকোপরিহিতারক্তোত্তরীয়াম্বরা ।

বেণীবন্ধমপাস্য কঙ্কতিকয়া কেশপ্রসাদং মনাক্

কুর্বাণা পরদেবতা ভগবতী চিত্তে মম দ্যোততাম্ ||৩২||

ভাবার্থ - সেই (স্নানাগারে) স্ফটিকময় আসনে শনৈঃ শনৈঃ আগমন করে যিনি অলঙ্কার খুলতেছেন এরূপ অল্প পরিত্যক্ত হয়েছে কঞ্চুকের (কাঁচুলির) উপরিভাগে ধৃত রক্ত উত্তরীয় বস্ত্র যৎ কর্তৃক, বেণীর বন্ধন মােচন করে চিরুণীর দ্বারা যিনি কেশের নিৰ্ম্মলতা সম্পাদন করতেছেন (চুল আঁচড়াচ্ছেন) এবস্তূতা পরদেবতা ভগবতী আমার চিত্তে প্রকাশিত হোন ||৩২||

অভ্যঙ্গং গিরিজে গৃহাণ মৃদুনা তৈলেন সম্পাদিতং

কাশ্মীরৈরগরুদ্রবৈর্মলয়জৈরুদ্বর্তনং কারয় ।

গীতে কিন্নরকামিনীভিরভিতো বাদ্যে মুদা বাদিতে

নৃত্যন্তীমিহ পশ্য দেবি পুরতো দিব্যাঙ্গনামণ্ডলীম্ ||৩৩||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! মৃদু তৈল দ্বারা সম্পন্ন অভ্যঙ্গ গ্রহণ কর; কুঙ্কুম, গলিত অগুরু ও চন্দন দ্বারা উদ্বর্ত্তন (গাত্র মদ্দন) সম্পন্ন করাও; চতুদ্দ্দিকে কিন্নরস্ত্রীগণ কর্তৃক গান সময়ে আনন্দ সহকারে বাদ্য বাদিত হওয়ার কালে সম্মুখে নৃত্যকারিণী দিব্য স্ত্রীমণ্ডলীকে দেখ ||৩৩||

কৃতপরিকরবন্ধাস্তুঙ্গপীনস্তনাঢ্যা

মণিনিবহনিবদ্ধা হেমকুম্ভীর্দধানাঃ ।

সুরভিসলিলনির্যদ্গন্ধলুব্ধালিমালাঃ

সবিনয়মুপতস্থুঃ সর্বতঃ স্নানদাস্যঃ ||৩৪||

ভাবার্থ - যার দৃঢ়ভাবে (আট সাটভাবে) শরীরস্থ বস্ত্রাদি বন্ধন করেছে, উচ্চ ও স্থূল স্তনযুক্তা, মণিসমূহ খচিত স্বর্ণকুম্ভধারিণী, সুগন্ধ জল হতে নির্গত গন্ধলুব্ধ ভ্ৰমরসমূহ-পরিবৃতা স্নানদাসীগণ (যারা স্নানে সহায়তা করে) চতুর্দিকে বিনয়ের সহিত উপস্থিত হয়েছে ||৩৪||

উদ্গন্ধৈরগরুদ্রবৈঃ সুরভিণা কস্তূরিকাবারিণা

স্ফূর্জৎসৌরভয়ক্ষকর্দমজলৈঃ কাশ্মীরনীরৈরপি ।

পুষ্পাম্ভোভিরশেষতীর্থসলিলৈঃ কর্পূরপাথোভরৈঃ

স্নানং তে পরিকল্পয়ামি গিরিজে ভক্ত্যা তদঙ্গীকুরু||৩৫||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! ভক্তি সহকারে উদ্গতগন্ধ গলিত অগুরু, সুগন্ধ কস্তূরীজল, অত্যন্ত সুগন্ধ যক্ষকর্দ্দম (একপ্রকার মিশ্রিত গন্ধদ্রব্য) জল ও কুঙ্কম জল দ্বারা, এবং পুষ্পজল, সকল তীর্থসলিল, কর্পূর জলরাশি দ্বারা তোমার স্নান সম্পন্ন করতেছি, তা গ্রহণ কর ||৩৫||

প্রত্যঙ্গং পরিমার্জয়ামি শুচিনা বস্ত্রেণ সম্প্রোঞ্ছনং

কুর্বে কেশকলাপমায়ততরং ধূপোত্তমৈর্ধূপিতম্ ।

আলীবৃন্দবিনির্মিতাং যবনিকামাস্থাপ্যরত্নপ্রভং

ভক্তত্রাণপরে মহেশগৃহিণি স্নানাম্বরং মুচ্যতাম্ ||৩৬||

ভাবার্থ - পবিত্র বস্ত্র দ্বারা প্রত্যেক অঙ্গ মার্জ্জন করতেছি, (মুছিয়ে দিতেছি) উৎকৃষ্ট ধূপ দ্বারা ধূপিত কেশসমূহ বিস্তৃততর করতেছি, হে ভক্তত্রাণপরায়ণে! হে মহেশগৃহিণি! সখীগণনির্ম্মিত যবনিকা (কানাৎ) স্থাপন করে রত্নসদৃশ প্রভাশালী স্নানবস্ত্র পরিত্যাগ কর ||৩৬||

পীতং তে পরিকল্পয়ামি নিবিড়ং চণ্ডাতকং চণ্ডিকে

সূক্ষ্মং স্নিগ্ধমুরীকুরুষ্ব বসনং সিন্দূরপূরপ্রভম্ ।

মুক্তারত্নবিচিত্রহেমরচনাচারুপ্রভাভাস্বরং

নীলং কঞ্চুকমর্পয়ামি গিরিশপ্রাণপ্রিয়ে সুন্দরি ||৩৭||

ভাবার্থ - হে চণ্ডিকে! তােমার নিমিত্ত পীতবর্ণ নিবিড় (ঘন) চণ্ডাতক (স্ত্রীলােকগণের উরুদেশের অর্দ্ধভাগ আচ্ছাদনকারী বস্ত্র) পরিকল্পনা করতেছি, সিন্দূরপ্রবাহ সদৃশ সৃক্ষ্ম, স্নিগ্ধ, বস্ত্ৰ গ্রহণ কর, মুক্তা ও রত্নদ্বারা বিচিত্রতাযুক্ত স্বর্ণরচনা দ্বারা মনােহর প্রভায় উজ্জ্বল,

নীলবর্ণ কঞ্চক (কাঁচুলী) গিরিশপ্রাণপ্রিয়ে সুন্দরি, তােমাকে অর্পণ করতেছি ||৩৭||

বিলুলিতচিকুরেণচ্ছাদিতাংসপ্রদেশে

মণিনিকরবিরাজৎপাদুকান্যস্তপাদে ।

সুললিতমবলম্ব্য দ্রাক্ সখীমংসদেশে

গিরিশগৃহিণি ভূষামণ্টপায় প্রয়াহি ||৩৮||

ভাবার্থ - চঞ্চল কেশ দ্বারা আচ্ছাদিত স্কন্ধপ্রদেশে মণিসমূহ-শােভিত পাদুকায় রক্ষিত হয়েছে চরণ যার, (সম্বোধন পদ) হে গিরিশগৃহিণি! সহসা সখীকে স্কন্ধদেশে মনােহর ভাবে অবলম্বন করে (সখীর স্কন্ধে হস্তারপণপূরব্বক) ভূষামণ্ডপের (বেশভূষা যে মণ্ডপে নিস্পন্ন হয়) উদ্দেশ্যে গমন কর ||৩৮||

লসৎকনককুট্টিমস্ফুরদমন্দমুক্তাবলী-

সমুল্লসিতকান্তিভিঃ কলিতশক্রচাপব্রজে ।

মহাভরণমণ্ডপে নিহিতহেমসিংহাসনং

সখীজনসমাবৃতং সমধিতিষ্ঠ কাত্যায়নি ||৩৯||

ভাবার্থ - শােভমান স্বর্ণখচিত ভুতলে অতিশয় দীপ্তিযুক্ত মুক্তাসমূহ সমুদ্গত কিরণসমূহ দ্বারা সৃষ্ট ইন্দ্ৰধনুসমূহ যুক্ত বিশাল অলঙ্কারমণ্ডপে (যে মণ্ডপে অলঙ্কারাদি পরিধান করা হয়) সখীজন কর্তৃক পরিবেষ্টিত, রক্ষিত স্বর্ণ সিংহাসনে কাত্যায়নী অধিষ্ঠিত হও ||৩৯||

স্নিগ্ধং কঙ্কতিকামুখেন শনকৈঃ সংশোধ্য কেশোৎকরং

সীমন্তং বিরচয়্য চারু বিমলং সিন্দূররেখান্বিতম্ ।

মুক্তাভির্গ্রথিতালকাং মণিচিতৈঃ সৌবর্ণসূত্রৈঃ স্ফুটং

প্রান্তে মৌক্তিকগুচ্ছকোপলতিকাং গ্রথ্নামি বেণীমিমাম্ ||৪০||

ভাবার্থ - চিরুণীর মুখ দ্বারা শনৈঃ শনৈঃ কেশসমূহকে স্নিগ্ধভাবে সংশােধিত করে সিন্দূররেখাযুক্ত, নির্মল সীমন্ত (সীথি) রচনা পূর্ব্বক, মুক্তাদ্বারা গ্রথিত অলকযুক্ত, প্রান্তভাগে মুক্তাগুচ্ছ দ্বারা রচিত উপলতিকাযুক্ত, (উপলতিকা আভরণ বিশেষ) এই বেণীকে মণিখচিত স্বর্ণসূত্র দ্বারা গ্রথিত করতেছি ||৪০||

বিলম্বিবেণীভুজগোত্তমাঙ্গ-

স্ফুরন্মণিভ্রান্তিমুপানয়ন্তম্ ।

স্বরোচিষোল্লাসিতকেশপাশং

মহেশি চূড়ামণিমর্পয়ামি ||৪১||

ভাবার্থ - হে মহেশী ! বিলম্বিত বেণীরূপ সর্পের শিরােদেশে দীপ্তিপ্রাপ্ত হচ্ছে এরূপ মণির ভ্রম-

উৎপাদনকারী, স্বীয় কান্তিতে কেশপাশের শোভাকারী, চূড়ামণি (তােমাকে) অর্পণ করতেছি ||৪১||

ত্বামাশ্রয়দ্ভিঃ কবরীতমিস্রৈঃ

বন্দীকৃতং দ্রাগিব ভানুবিম্বম্ ।

মৃড়ানি চূড়ামণিমাদধানং

বন্দামহে তাবতমুত্তমাঙ্গম্ ||৪২||

ভাবার্থ - হে মৃড়ানি, তােমাকে আশ্রয়কারিণী কবরী (চুলের খোঁপা) রূপণী অন্ধকার রাত্রিগণ কর্তৃক সহসা বন্দীবৃত (বদ্ধ) সূর্য্যবিম্বের ন্যায় চূড়ামণি ধারণকারী তােমার উত্তমাঙ্গকে (মস্তককে) বন্দনা করতেছি। ( অর্থাৎ অন্ধকার রাত্রিসদৃশ কৃষ্ণবর্ণ কেশপাশ মধ্যস্থ (অতএব যেন বদ্ধ উজ্জ্বল গােলাকার সুতরাং সূর্য্যবিস্ব সদৃশ চূড়ামণিবিশিষ্ট মস্তককে বন্দনা করতেছি। ) ||৪২||

স্বমধ্যনদ্ধহাটকস্ফুরন্মণিপ্রভাকুলং

বিলম্বিমৌক্তিকচ্ছটাবিরাজিতং সমন্ততঃ ।

নিবদ্ধলক্ষচক্ষুষা ভবেন ভূরি ভাবিতং

সমর্পয়ামি ভাস্বরং ভবানি ফালভূষণম্ ||৪৩||

ভাবার্থ - হে ভবানী, স্বীয় মধ্যভাগে আবদ্ধ স্বর্ণমধ্যে প্রকাশমান মণির প্রভায় আকুল, চতুর্দ্দিক প্রসারিত মুক্তাচ্ছটাশােভিত, নিবদ্ধদৃষ্টিযুক্তচক্ষুবিশিষ্ট শিব কর্তৃক বহু চিন্তিত (বহুবার ধ্যাত) ভাস্বর ললাটভূষণ সমর্পণ করতেছি ||৪৩||

মীনাম্ভোরুহখঞ্জরীটসুষমাবিস্তারবিস্মারকে

কুর্বাণে কিল কামবৈরিমনসঃ কন্দর্পবাণপ্রভাম্ ।

মাধ্বীপানমদারুণেঽতিচপলে দীর্ঘে দৃগম্ভোরুহে

দেবি স্বর্ণশলাকয়োর্জিতমিদং দিব্যাঞ্জনং দীয়তাম্||৪৪||

ভাবার্থ - হে দেবী! মৎস্য, পদ্ম, খঞ্জনপক্ষী প্রভৃতির শােভা বিস্তার বিষয়ে বিস্মৃতি উৎপাদক ( অর্থাৎ ওরা তােমার চক্ষুর শােভা দেখে নিজ শােভার কথা বিস্মৃত হয়), শিবের মনে কামবাণের প্রভাব উৎপাদনকারী, মাধ্বী (সুরা) পানহেতু মত্ততাপ্রযুক্ত অরুণবর্ণ, অত্যন্ত

চপল, দীর্ঘ, নয়নপদ্মে, স্বর্ণশলাকা দ্বারা গৃহীত এই দিব্যাঞ্জন প্রদান করো ||৪৪||

মধ্যস্থারুণরত্নকান্তিরুচিরাং মুক্তামুগোদ্ভাসিতাং

দৈবাদ্ভার্গবজীবমধ্যগরবের্লক্ষ্মীমধঃ কুর্বতীম্ ।

উৎসিক্তাধরবিম্বকান্তিবিসরৈর্ভৌমীভবন্মৌক্তিকাং

মদ্দত্তমুররীকুরুষ্ব গিরিজে নাসাবিভূষামিমাম্ ||৪৫||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! মধ্যস্থিত অরুণবর্ণ রত্নের কিরণ দ্বারা মনােহর, মুক্তারূপমুদ্গ দ্বারা উদ্ভাসিত, দৈব বশতঃ শুক্র ও বুধ মধ্যস্থ রবির শােভাকে হতমানকারী, উদ্ধত অধরবিম্বের কিরণসমূহ দ্বারা যার মধ্যস্থিত মুক্তা প্রবালরূপ ধারণ করেছে (অর্থাৎ অধরবিম্বের রক্তবর্ণ কিরণ পতিত হওয়ায় মুক্তাটি রক্তবর্ণে প্লাবিত হওয়ায় প্রবালের ন্যায় মনে হচ্ছে) এক আমার কর্তৃক দত্ত এই নাসিকার অলঙ্কার স্বীকার করো ||৪৫||

উড়ুকৃতপরিবেষস্পর্ধয়া শীতভানো-

রিব বিরচিতদেহদ্বন্দ্বমাদিত্যবিম্বম্ ।

অরুণমণিসমুদ্যৎপ্রান্তবিভ্রাজিমুক্তং

শ্রবসি পরিনিধেহি স্বর্ণতাটঙ্কয়ুগ্মম্ ||৪৬||

ভাবার্থ - শীতরশ্মির (চন্দ্রের) নক্ষত্রগণকৃত মণ্ডলের প্রতি স্পর্দ্ধাবশতঃ বিরচিত হয়েছে দেহের দ্বন্দ্ব (দুইটি) যৎকর্তৃক এবম্ভূত সূর্য্যবিম্বের ন্যায় অরুণবর্ণ মণি হতে উদ্গত প্রান্তদেশে শােভমান মুক্তাযুক্ত, স্বর্ণনির্মিত তাটঙ্ক (কর্ণভূষণ) যুগলকে কর্ণে স্থাপন করো ||৪৬||

মরকতবরপদ্মরাগহীরো-

ত্থিতগুলিকাত্রিতয়াবনদ্ধমধ্যম্।

বিততবিমলমৌক্তিকং চ

কণ্ঠাভরণমিদং গিরিজে সমর্পয়ামি ||৪৭||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! মরকতশ্রেষ্ঠ পদ্মরাগ ও হীরক হতে উত্থিত গুলিকাত্রয়ে আবদ্ধ মধ্যভাগ, বিস্তারিত নির্মল মুক্তাযুক্ত, এই কণ্ঠাভরণ সমর্পণ করতেছি ||৪৭||

নানাদেশসমুত্থিতৈর্মণিগণপ্রোদ্যৎপ্রভামণ্ডল-

ব্যাপ্তৈরাভরণৈর্বিরাজিতগলাং মুক্তাচ্ছটালঙ্কৃতাম্ ।

মধ্যস্থারুণরত্নকান্তিরুচিরাং প্রান্তস্থমুক্তাফল-

ব্রাতামম্ব চতুষ্কিকাং পরশিবে বক্ষঃস্থলে স্থাপয় ||৪৮||

ভাবার্থ - হে মাতঃ পরশিবে! নানা দেশজাত মণিসমূহ হতে উদ্গত প্রভামণ্ডল দ্বারা ব্যাপ্ত অলঙ্কার দ্বারা শােভিত গলদেশযুক্ত, মুক্তার ছটা দ্বারা অলঙ্কৃত, মধ্যস্থ অরুণ রত্নকরণ দ্বারা মনােজ্ঞ, প্রান্তভাগস্থিত মুক্তাফলসমূহ যুক্ত, চতুষ্কিকা (নামক অলঙ্কার চার-নরী হার) বক্ষঃস্থলে স্থাপন করো ||৪৮||

অন্যোন্যং প্লাবয়ন্তী সততপরিচলৎকান্তিকল্লোলজালৈঃ

কুর্বাণা মজ্জদন্তঃকরণবিমলতাং শোভিতেব ত্রিবেণী ।

মুক্তাভিঃ পদ্মরাগৈর্মরকতমণিভির্নির্মিতা দীপ্যমানৈ-

র্নিত্যং হারত্রয়ী তে পরশিবরসিকে চেতসি দ্যোততাম্নঃ ||৪৯||

ভাবার্থ - সর্বদা চঞ্চল কিরণ-প্রবাহসমূহ দ্বারা পরস্পরকে প্লাবনকারী, শােভমান ত্রিবেণীর ন্যায় মগ্ন ব্যক্তির অন্তঃকরণের বিমলতাকারী, দীপ্তিমৎ মুক্তা পদ্মরাগ, মরকত মণিসমূহ দ্বারা নির্মিত, তােমার হারত্রয় হে পরশিবরসিকে, সর্ব্বদা আমাদের চিত্তে দীপ্তি প্রাপ্ত হোক ||৪৯||

করসরসিজনালে বিস্ফুরৎকান্তিজালে

বিলসদমলশোভে চঞ্চদীশাক্ষিলোভে ।

বিবিধমণিময়ূখোদ্ভাসিতং দেবি দুর্গে

কনককটকয়ুগ্মং বাহুয়ুগ্মে নিধেহি ||৫০||

ভাবার্থ - হে দেবী ! পদ্মনালসদৃশ হস্তবিশিষ্টা প্রদীপ্ত কিরণজালসম্পন্না বিলাসযুক্ত নির্মল শােভাযুক্তা, শিবের চঞ্চল চক্ষুর লোভের বিষয়ভূতা হে দুর্গে! নানা প্রকার মণিকিরণে উদ্ভাসিত স্বর্ণকটকযুগল বাহু যুগলে ধারণ করো ||৫০||

ব্যালম্বমানসিতপট্টকগুচ্ছশোভি

স্ফূর্জন্মণীঘটিতহারবিরোচমানম্ ।

মাতর্মহেশমহিলে তব বাহুমূলে

কেয়ূরকদ্বয়মিদং বিনিবেশয়ামি ||৫১||

ভাবার্থ - হে মাতঃ মহেশমহিলে! লম্বমান শুভ্ররেশমগুচ্ছ শােভিত, ভাস্বরমণি সংঘটিত হারশােভিত, এই দুইটি কেয়ূর তােমার বাহুমূলে নিবেশিত করতেছি ||৫১||

বিততনিজময়ূখৈর্নির্মিতামিন্দ্রনীলৈ-

র্বিজিতকমলনালালীনমত্তালিমালাম্ ।

মণিগণখচিতাভ্যাং কঙ্কণাভ্যামুপেতাং

কলয় বলয়রাজীং হস্তমূলে মহেশি ||৫২||

ভাবার্থ - হে মহেশী ! প্রসারিত নিজ কিরণসমূহযুক্ত ইন্দ্রনীল মণি নির্মিত কমলনালে লীন মত্ত ভ্রমরসমূহকে পরাজয়কারী, মণিসমূহ-খচিত কঙ্কণদ্বয়যুক্ত, বলয়গুলি হস্তমূলে গ্রহণ করো ||৫২||

নীলপট্টমৃদুগুচ্ছশোভিতা-

বদ্ধনৈকমণিজালমঞ্জুলাম্ ।

অর্পয়ামি বলয়াৎ পুরঃসরে

বিস্ফুরৎকনকতৈতৃপালিকাম্ ||৫৩||

ভাবার্থ - নীলবর্ণ রেশমের কোমল গুচ্ছশোভিত আবদ্ধ অনেক মণিসমূহ দ্বারা মনােহর, দীপ্তিমৎ স্বর্ণময় তৈতৃপালিকা (নামে অলঙ্কার) বলয়ের সম্মুখভাগে অর্পণ করতেছি ||৫৩||

আলবালমিব পুষ্পধন্বনা বালবিদ্রুমলতাসু নির্মিতম্ ।

অঙ্গুলীষু বিনিধীয়তাং শনৈরঙ্গুলীয়কমিদং মদর্পিতম্||৫৪||

ভাবার্থ - শিশুপ্রবাল লতাতে কামদেব কর্তৃক নির্মিত আলবাল (বৃক্ষে জলসেচনের জন্য নির্মিত গােলাকার গর্ভ) সদৃশ, এই আমার কর্তৃক অর্পিত অঙ্গুরীয়ক শনৈঃ শনৈঃ অঙ্গুলি সকলে ধারণ করো। (প্রবাল লতার ন্যায় তােমার অঙ্গুলি সকলে যেন অঙ্গুরীয়কচ্ছলে কামদেব

জল সেচনের জন্য চতুদ্দ্দিকে বেষ্টন করে প্রাচীরবৎ বন্ধন করেছেন) ||৫৪||

বিজিতহরমনোভূমত্তমাতঙ্গকুম্ভ-

স্থলবিলুলিতকূজৎকিঙ্কিণীজালতুল্যাম্ ।

অবিরতকলনদৈরীশচেতো হরন্তীং

বিবিধমণিনিবদ্ধাং মেখলামর্পয়ামি ||৫৫||

ভাবার্থ - শিবের কামরূপ পরাজিত মত্ত হস্তীর কুম্ভস্থলে (মস্তকে) স্থিত অতএব চঞ্চল, এই হেতু ধ্বনিযুক্ত নূপুরসমূহ সদৃশী, অবিরত মধুর ধ্বনি দ্বারা শিবের চিত্তহরণকারিণী, বিবিধ প্রকার মণিখচিত মেখলা (বস্ত্ৰ বন্ধনরজ্জু) অর্পণ করতেছি ||৫৫||

ব্যালম্বমানবরমৌক্তিকগুচ্ছশোভি

বিভ্রাজিহাটকপুটদ্বয়রোচমানম্ ।

হেম্না বিনির্মিতমনেকমণিপ্রবন্ধং

নীবীনিবন্ধনগুণং বিনিবেদয়ামি ||৫৬||

ভাবার্থ - লম্বমান শ্রেষ্ঠ মুক্তাগুচ্ছশােভিত, ভাস্বর স্বর্ণনির্মিত পদ্মদ্বয়শােভিত, স্বর্ণনির্মিত, অনেক মণি খচিত, কটিবস্ত্র বন্ধনার্থ রজ্জু নিবেদন করতেছি ||৫৬||

বিনিহতনবলাক্ষাপঙ্কবালাতপৌঘে

মরকতমণিরাজীমঞ্জুমঞ্জীরঘোষে ।

অরুণমণিসমুদ্যৎকান্তিধারাবিচিত্র-

স্তব চরণসরোজে হংসকঃ প্রীতিমেতু ||৫৭||

ভাবার্থ - বিনষ্ট নতুন লাক্ষাজাত পঙ্ক ও উদয়কালীন সূর্য্যকিরণ সমূহের ন্যায় রক্তবর্ণ, মরকতমণিসমূহের নিশ্ছিদ্রপংক্তি খচিত মনােহর নূপুরধ্বনিযুক্ত, তােমার চরণপদ্মে, অরুণবর্ণ মণি হতে সমুদ্যত কিরণ-প্রবাহ দ্বারা বিচিত্র শােভাসম্পন্ন হংসক ( একপ্রকার পাদভূষণ) আনন্দপ্রাপ্ত হোক ||৫৭||

নিবদ্ধশিতিপট্টকপ্রবরগুচ্ছসংশোভিতাং

কলক্বণিতমঞ্জুলাং গিরিশচিত্তসম্মোহনীম্ ।

অমন্দমণিমণ্ডলীবিমলকান্তিকির্ম্মীরিতাং

নিধেহি পদপঙ্কজে কনকঘুঙ্ঘুরূমম্বিকে ||৫৮||

ভাবার্থ - হে অম্বিকে! নিবদ্ধ কৃষ্ণবর্ণ রেশমী সূত্রের গুচ্ছ দ্বারা সম্যকশােভিত, কলধ্বনিদ্বারা মনােহর, গিরিশের চিত্ত সম্মােহনকারী, উজ্জ্বল মণি সমূহের নির্মলকান্তিচ্ছুরিত, বিচিত্র স্বর্ণ- ঘুঙুর (নূপুর) পদকমলে পরিধান করো ||৫৮||

বিস্ফুরৎসহজরাগরঞ্জিতে

শিঞ্জিতেন কলিতাং সখীজনৈঃ ।

পদ্মরাগমণিনূপুরদ্বয়ী-

মর্পয়ামি তব পাদপঙ্কজে ||৫৯||

ভাবার্থ - সখীগণ কর্তৃক উজ্জ্বল স্বাভাবিক রক্তবর্ণে রঞ্জিত, তােমার চরণকমলে নিজধ্বনি দ্বারা পরিজ্ঞাত, পদ্মরাগ মণিখচিত নূপুরদ্বয় অর্পণ করতেছি ||৫৯||

পদাম্বুজমুপাসিতুং পরিগতেন শীতাংশুনা

কৃতাং তনুপরম্পরামিব দিনান্তরাগারুণাম্ ।

মহেশি নবয়াবকদ্রবভরেণ শোণীকৃতাং

নমামি নখমণ্ডলীং চরণপঙ্কজস্থাং তব ||৬০||

ভাবার্থ - হে মহেশি, তােমার চরণকমল উপাসনা করার জন্য উপস্থিত চন্দ্র কর্তৃক উৎপাদিত সন্ধ্যাকালীন রক্তিমার দ্বারা অরুণবর্ণ শরীর সকলের ন্যায় (অর্থাৎ সন্ধ্যাকালীন রক্ততা দ্বারা অরুণবর্ণ বিশিষ্ট কতকগুলি চন্দ্রের ন্যায়) নতুন অলক্তক (আলতা) দ্বারা রক্তবর্ণে রঞ্জিত, তােমার চরণকমলস্থিত নখসমূহকে প্রণাম করতেছি ||৬০||

আরক্তশ্বেতপীতস্ফুরদুরুকসুমৈশ্চিত্রিতাং পট্টসূত্রৈ-

র্দেবস্ত্রীভিঃ প্রয়ত্নাদগরুসমুদিতৈর্ধূপিতাং দিব্যধূপৈঃ ।

উদ্যদ্গন্ধান্ধপুষ্পন্ধয়নিবহসমারব্ধঝাঙ্কারগীতাং

চঞ্চৎকহ্লারমালাং পরশিবরসিকে কণ্ঠপীঠেঽর্পয়ামি ||৬১||

ভাবার্থ - হে পরশিবরসিকে! ঈষদ্রক্ত, শ্বেতপীত প্রস্ফুটিত বৃহৎ কুসুম ও রেশমী সূত্র দ্বারা অলঙ্কৃত, দেবস্ত্রীগণ কর্তৃক যত্নপূর্ব্বক অগরুযুক্ত দিব্যধূপ দ্বারা ধূপিত, উদগত গন্ধ দ্বারা অন্ধ ভ্রমরসমূহ কর্তৃক আরন্ধ ঝঙ্কাররূপী গীতযুক্ত, চঞ্চল কহ্লারপু্পের মালা কণ্ঠদেশে অর্পণ করতেছি ||৬১||

গৃহাণ পরমামৃতং কনকপাত্রসংস্থাপিতং

সমর্পয় মুখাম্বুজে বিমলবীটিকামম্বিকে ।

বিলোকয় মুখাম্বুজং মুকুরমণ্ডলে নির্মলে

নিধেহি মণিপাদুকোপরি পদাম্বুজং সুন্দরি ||৬২||

ভাবার্থ - হে অম্বিকে! স্বর্ণপাত্রে সংস্থাপিত, পরম অমৃতস্বরূপ, বিমল তাম্বূলবীটিকা ( পানের খিলি ) গ্রহণ কর ও মুখপদ্মে সমর্পণ কর, নির্ম্মল দর্পণে মুখপদ্ম বিলোকন কর, হে ত্রিপুরসুন্দরী ! মণিময় পাদুকার উপর পাদপদ্ম স্থাপন করো ||৬২||

আলম্ব্য স্বসখীং করেণ শনকৈঃ সিংহাসনাদুত্থিতা

কূজন্মন্দমরালমঞ্জুলগতিপ্রোল্লাসিভূষাম্বর ।

আনন্দপ্রতিপাদকৈরুপনিষদ্বাক্যৈঃ স্তুতা বেধসা

মচ্চিত্তে স্থিরতামুপৈতু গিরিজা যান্তী সভামণ্ডপম্ ||৬৩||

ভাবার্থ - হস্তদ্বারা স্বীয় সখীকে অবলম্বন করে শনৈঃ শনৈঃ সিংহাসন হতে উত্থিতা, কূজনকারী মন্দগতি মরালের মনােহর গতির সাহচর্য্যে অতিশয় শােভাসম্পন্ন হয়েছে ভূষণ ও বস্ত্ৰ যার এবম্ভূতা, বিধাতা (ব্ৰহ্মা) কর্তৃক আনন্দবােধক (ব্ৰহ্ম বােধক) উপনিষদ্ বাক্যগুলির দ্বারা স্তুতা সভামণ্ডপে গমনকারিণী, হে গিরিজা আমার চিত্তে স্থিরতা প্রাপ্ত হোন ||৬৩||

চলন্ত্যামম্বায়াং প্রচলতি সমস্তে পরিজনে

সবেগং সংয়াতে কনকলতিকালঙ্কৃতিভরে ।

সমতাদুত্তালস্ফুরিতপদসম্পাতজনিতৈ-

র্ঝণৎকারৈস্তারৈর্ঝণঝণিতমাসীন্মণিগৃহম্ ||৬৪||

ভাবার্থ - জগন্মাতা গমন করতে থাকলে, সমস্ত পরিজন গমন করতে থাকে, সেই সময়ে কনকলতিকালঙ্কারভার বেগযুক্ত হলে, চতু্র্দিকে উত্তাল ও স্পষ্ট পদক্ষেপ জনিত উচ্চ ঝণৎকার ধ্বনিতে মণিগৃহ ঝণ্ ঝণ শব্দে মুখর হয়েছিল ||৬৪||

চঞ্চদ্বেত্রকরাভিরঙ্গবিলসদ্ভূষাম্বরাভিঃ পুরো-

যান্তীভিঃ পরিচারিকাভিরমরব্রাতে সমুৎসারিতে ।

রুদ্ধে নির্জরসুন্দরীভিরভিতঃ কক্ষান্তরে নির্গতং

বন্দে নন্দিতশম্ভু নির্মলচিদানন্দৈকরূপং মহঃ ||৬৫||

ভাবার্থ - চঞ্চলবেত্রহস্তা, শরীরে শােভমান অলঙ্কার ও বস্ত্রযুক্তা, অগ্রগামিনী, পরিচারিকাগণ কর্তৃক দেবগণ সমুৎসারিত (দূরীকৃত) হলে, দেবস্ত্রীগণ কর্তৃক চতুর্দ্দিক ব্যাপ্ত এরূপ কক্ষমধ্যে উদিত, শিবের আনন্দদায়ক, নির্মল চিদানন্দস্বরূপ তেজকে বন্দনা করতেছি ||৬৫||

বেধাঃ পাদতলে পতত্যয়মসৌ বিষ্ণুর্নমত্যগ্রতঃ

শম্ভুর্দেহি দৃগঞ্চলং সুরপতিং দূরস্থমালোকয় ।

ইত্যেবং পরিচারিকাভিরুদিতে সম্মাননাং কুর্বতী

দৃগ্দ্বন্দ্বেন যথোচিতং ভগবতী ভূয়াদ্বিভূত্যৈ মম ||৬৬||

ভাবার্থ - এই ইনি বিধাতা (ব্ৰহ্মা) পদতলে পতিত হয়েছেন, সম্মুখে বিষ্ণু প্রণাম করতেছেন, শিব (আমার প্রতি কটাক্ষপাত কর) এ বলতেছেন, দূরে দণ্ডায়মান দেবরাজকে অবলােকন কর ইত্যাদি বাক্য পরিচারিকাগণ কর্তৃক কথিত হলে পরে চক্ষুর্দ্বয় দ্বারা (অর্থাৎ দৃষ্টিপাত মাত্র দ্বারা) যথােচিত সম্মান প্রদানকারিণী ভগবতী আমার ঐশ্বর্য্যের নিমিত্ত হোন ||৬৬||

মন্দং চারণসুন্দরীভিরভিতো যান্তীভিরুৎকণ্ঠয়া

নামোচ্চারণপূর্বকং প্রতিদিশং প্রত্যেকমাবেদিতাৎ ।

বেগাদক্ষিপথং গতান্ সুরগণানালোকয়ন্তী শনৈ-

র্দিৎসন্তী চরণাম্বুজং পথি জগৎ পায়ান্মহেশপ্রিয়া ||৬৭||

ভাবার্থ - উৎকণ্ঠার সহিত চতুর্দ্দিক বেষ্টন করে গমনকারিণী চারণস্ত্রীগণ কর্তৃক যারা নামােচ্চারণ পূ্র্ব্বক প্রত্যেক ব্যক্তি বিজ্ঞাপিত হয়েছেন (অর্থাৎ চারণস্ত্রীগণ যাদের প্রত্যেকের নাম গ্রহণ পূর্ব্বক পরিচয় দেবীর সমীপে নিবেদন করেছেন) ফলে বেগে দৃষ্টিপথে পতিত (অর্থাৎ পরিচয় দেওয়া হলে তাড়াতাড়ি দেবীর সম্মুখে উপস্থিত) দেবগণকে শনৈঃ শনৈঃ দর্শনকারিণী পথে চরণকমল দানে ইচ্ছুক। হে মহেশপ্রিয়া (পাৰ্ব্বতী) জগৎকে পালন করুন ||৬৭||

অগ্রে কেচন পার্শ্বয়োঃ কতিপয়ে পৃষ্ঠে পরে প্রস্থিতা

আকাশে সমবস্থিতাঃ কতিপয়ে দিক্ষু স্থিতাশ্চাপরে ।

সংমর্দং শনকৈরপাস্য পুরতো দণ্ডপ্রণামান্মুহুঃ

কুর্বাণাঃ কতিচিৎসুরা গিরিসুতে দৃক্পাতমিচ্ছন্তি তে ||৬৮||

ভাবার্থ - হে গিরিকন্যে! কয়েকজন দেবতা সম্মুখভাগে, কতিপয় দেবতা পার্শ্বভাগে, অপর দেবগণ পৃষ্ঠভাগে থেকে গমন করতেছেন, কতিপয় দেবতা আকাশদেশে, সমবস্থিত, অপর দেবগণ দশ দিকে স্থিত, কয়েকজন দেবতা শনৈঃ শনৈঃ ভীড় এড়িয়ে সম্মুখভাগে মুহুম্মুহু দণ্ডবৎ প্রণাম করতেছেন; এরা তােমার দৃষ্টিপাত মাত্র ইচ্ছা করেন ||৬৮||

অগ্রে গায়তি কিন্নরী কলপদং গন্ধর্বকান্তাঃ শনৈ-

রাতোদ্যানি চ বা দয়ন্তি মধুরং সব্যাপসব্যস্থিতাঃ ।

কূজন্নূপুরনাদ মঞ্জু পুরতো নৃত্যন্তি দিব্যাঙ্গনা

গচ্ছন্তঃ পরিতঃ স্তুবন্তি নিগমস্তুত্যা বিরিঞ্চ্যাদয়ঃ ||৬৯||

ভাবার্থ - সম্মুখদেশে কিন্নরী মধুর অস্ফুটধ্বনিযুক্ত পদ গান করতেছে, দক্ষিণ ও বামভাগস্থিত গন্ধৰ্বস্ত্রীগণ ধীরে ধীরে বাদ্যসকল মধুরভাবে বাজাচ্ছেন, দিব্যস্ত্রীগণ ধ্বনিত-নূপুরশব্দ দ্বারা মনােহর নৃত্য করতেছে, চতু্র্দিক বেষ্টনপূর্ব্বক গমনকারী ব্রহ্মাদি দেবগণ নিগমােক্ত স্তুতিদ্বারা স্তব করতেছেন ||৬৯||

কস্মৈচিৎ সুচিরাদুপাসিতমহামন্ত্রৌঘসিদ্ধিং ক্রমা-

দেকস্মৈ ভবনিঃস্পৃহায় পরমানন্দস্বরূপাং গতিম্ ।

অন্যস্মৈ বিষয়ানুরক্তমনসে দীনায় দুঃখাপহং

দ্রব্যং দ্বারসমাশ্রিতায় দদতীং বন্দামহে সুন্দরীম্ ||৭০||

ভাবার্থ - কাকেও বহুকাল উপাসিত মহামন্ত্রসমূহের সিদ্ধি, সংসারের প্রতি স্পৃহাহীন কোনও এক ব্যক্তিকে ক্রমে ক্রমে পরমানন্দস্বরূপতা প্রাপ্তি, ও বিষয়াসক্তমনা, দীন দ্বারদেশে উপস্থিত অন্য কাকেও দুঃখনাশক ধনদানকারিণী ত্রিপুরসুন্দরীকে বন্দনা করতেছি। (ভাবার্থ এই যে - একই ত্রিপুরসুন্দরী ধর্ম অর্থ কাম ও মােক্ষরূপ চতুর্বর্গ--পুরুষার্থ সম্পাদন করতে সমর্থ) ||৭০||

নম্রীভূয় কৃতাঞ্জলিপ্রকটিতপ্রেমপ্রসন্নাননে

মন্দং গচ্ছতি সন্নিধৌ সবিনয়াৎ সোৎকণ্ঠমোঘত্রয়ে ।

নানামন্ত্রগণং তদর্থমখিলং তৎসাধনং তৎফলং

ব্যাচক্ষাণমুদগ্রকান্তি কলয়ে যৎকিঞ্চিদাদ্যং মহঃ ||৭১||

ভাবার্থ - নম্র হয়ে কৃতাঞ্জলি দ্বারা প্রকটিত প্রেমহেতু প্রসন্ন মুখ, ওঘত্রয় (দিব্য, সিদ্ধ, মানব) নিকটে বিনয় সহকারে উৎকণ্ঠাযুক্তভাবে মন্দ মন্দ গমন করতে থাকলে নানামন্র সমূহ, সমস্ত মন্ত্রার্থ, তার সাধন, তাহার ফল ব্যাখ্যাকারী, উদগ্র কান্তিযুক্ত যৎকিঞ্চিৎ আদি তেজঃকে স্তব করতেছি ||৭১||

তব দহনসদৃক্ষৈরীক্ষণৈরেব চক্ষু-

র্নিখিলপশুজনানাং ভীষয়দ্ভীষণাস্যম্ ।

কৃতবসতি পরেশর্প্রেয়সি দ্বারি নিত্যং

শরভমিথুনমুচ্চৈর্ভক্তিয়ুক্তো নতোঽস্মি ||৭২||

ভাবার্থ - হে পরেশপ্রেয়সি! অগ্নিসদৃশ চক্ষুগুলি দ্বারাই নিখিল পশুভাবস্থিত জনগণের চক্ষুর ভীতিজনক, তােমার দ্বারে বাসকারী, ভীষণ মুখ, শরভযুগকে অতিশয় ভক্তিযুক্ত হয়ে নিয়ত প্রণত হচ্ছি ||৭২||

কল্পান্তে সরসৈকদা সমুদিতানেকার্কতুল্যপ্রভাং

রত্নস্তম্ভনিবদ্ধকাঞ্চনগুণস্ফূর্জদ্বিতানোত্তমাম্ ।

কর্পূরাগরুগর্ভবর্তিকলিকাপ্রাপ্তপ্রদীপাবলীং

শ্রীচক্রাকৃতিমুল্লসন্মণিগণাং বন্দামহে বেদিকাম্ ||৭৩||

ভাবার্থ - কল্পাবসানে সহসা এককালে উদিত অনেক সূর্য্যতুল্য প্রভাসম্পন্না, রত্নস্তম্ভসমূহে নিবদ্ধ স্বর্ণময় সূত্রদ্বারা উজ্জ্বল উত্তম চন্দ্রাতপযুক্তা, কর্পূর অগুরুগর্ভিত বর্তিকাজাত শিখা দ্বারা প্রাপ্ত প্রদীপাবলী (অর্থাৎ যে বেদিকায় করপরাগরুগর্ভিত বর্তিকাজাত শিখাযুক্ত প্রদীপসমূহ আছে), শ্রীচক্রাকৃতি, উজ্জ্বল মণিসমূহযুক্ত বেদিকাকে বন্দনা করতেছি ||৭৩||

স্বস্থানস্থিতদেবতাগণবৃতে বিন্দৌ মুদা স্থাপিতং

নানারত্নবিরাজিহেমবিলসৎকান্তিচ্ছটাদুর্দিনম্ ।

চঞ্চৎকৌসুমতূলিকাসনয়ুতং কামেশ্বরাধিষ্ঠিতং

নিত্যানন্দনিদানমম্ব সততং বন্দে চ সিংহাসনম্ ||৭৪||

ভাবার্থ - হে মাতঃ! নিজস্থানস্থিত দেবতাগণ-পরিবৃত বিন্দুতে হর্ষসহকারে স্থাপিত, নানাবিধ রত্নশােভিত স্বর্ণ-সংসক্ত কিরণচ্ছটা দ্বারা মেঘাচ্ছন্ন দিনের ন্যায় ব্যাপ্ত, চঞ্চল কুসুমপূ্ণ তুলিকাসন (গদী) যুক্ত, কামেশ্বর কর্তৃক অধিষ্ঠিত, নিত্যানন্দের হেতু সিংহাসনকে বন্দনা

করতেছি ||৭৪||

বদদ্ভিরভিতো মুদা জয় জয়েতি বৃন্দারকৈঃ

কৃতাঞ্জলিপরম্পরা বিদধতী কৃতার্থা দৃশা ।

অমন্দমণিমণ্ডলীখচিতহেমসিংহাসনং

সখীজনসমাবৃতং সমধিতিষ্ঠ দাক্ষায়ণি ||৭৫||

ভাবার্থ - হর্ষ-বশতঃ চতুর্দ্দিকে জয় জয়বাদী দেবগণকৃত অঞ্জলি গুলি (জোড়হস্ত) চক্ষুর দ্বারা ( দেখে ) কৃতার্থকারিণী হে দাক্ষায়ণী! সখীজনবেষ্টিত উজ্জ্বল মণিসমূহ খচিত স্বর্ণসিংহাসনে সম্যকরূপে অধিষ্ঠিত হও ||৭৫||

কর্পূরাদিকবস্তুজাতমখিলং সৌবর্ণভৃঙ্গারকং

তাম্বূলস্য করণ্ডকং মণিময়ং চৈলাঞ্চলং দর্পণম্ ।

বিস্ফূর্জন্মণিপাদুকে চ দধতীঃ সিংহাসনস্যাভিত-

স্তিষ্ঠন্তীঃ পরিচারিকাস্তব সদা বন্দামহে সুন্দরি ||৭৬||

ভাবার্থ - হে ত্রিপুরসুন্দরী! নিখিল (সমগ্র) কর্পূরাদি বস্তু জাত, সুবর্ণনির্মিত ভৃঙ্গার, তাম্বুল রাখার পাত্র, মণিময় পট্টবস্ত্র, দৰ্পণ, উজ্জ্বল মণিময় পাদুকাদ্বয় ধারিণী (বাহিনী) সিংহাসনের চতুর্দ্দিকে অবস্থিতা তােমার পরিচারিকাগণকে সর্ব্বদা বন্দনা করতেছি ||৭৬||

ত্বদমলবপুরুদ্যৎকান্তিকল্লোলজালৈঃ

স্ফুটমিব দধতীভির্বাহুবিক্ষেপলীলাম্ ।

মুহুরপি চ বিধূতে চামরগ্রাহিণীভিঃ

সিতকরকরশুভ্রে চামরে চালয়ামি ||৭৭||

ভাবার্থ - তােমার নির্মল শরীর হতে উদ্গত কান্তির কল্লোলসমূহ দ্বারা প্রকাশযুক্ত, বাহুবিক্ষেপের লীলাকারিণী, (অর্থাৎ লীলাপূর্ণ বাহুবিক্ষেপসংযুক্তা) চামরগ্রহণকারিণীগণ কর্তৃক পুনঃ পুনঃ কম্পিত, চন্দ্রকিরণবৎ শুভ্র চামরদ্বয় চালনা করতেছি ||৭৭||

প্রান্তস্ফুরদ্বিমলমৌক্তিকগুচ্ছজালং

চঞ্চন্মহামণিবিচিত্রিতহেমদণ্ডম্ ।

উদ্যৎসহস্রকরমণ্ডলচারু হেম-

চ্ছত্রং মহেশমহিলে বিনিবেশয়ামি ||৭৮||

ভাবার্থ - হে মহেশমহিলে! প্রান্তভাগে শােভিত বিমল মুক্তাগুচ্ছসমূহযুক্ত, মহামণি দ্বারা বিচিত্রিত স্বর্ণদণ্ডযুক্ত, উদ্গত সহস্র সূ্র্য্যমণ্ডলবৎ মনােহর স্বর্ণচ্ছত্র নিবেদন করতেছি ||৭৮||

উদ্যত্তাবকদেহকান্তিপটলীসিন্দূরপূরপ্রভা-

শোণীভূতমুদগ্রলোহিতমণিচ্ছেদানুকারিচ্ছবি ।

দূরাদাদরনির্মিতাঞ্জলিপুটৈরালোকমানং সুর-

ব্যূহৈঃ কাঞ্চনমাতপত্রমতুলং বন্দামহে সুন্দরম্ ||৭৯||

ভাবার্থ - তােমার শরীর-কান্তিপটল (প্রবাহ) রূপ উদ্গত সিন্দূরপ্রবাহের প্রভা দ্বারা রক্তবর্ণ, উদগ্র রক্তবর্ণ মণিচ্ছেদের (মণিচ্ছিন্নাংশ) অনুকরণকারী আকৃতি বিশিষ্ট (অর্থাৎ মণির কর্ত্তিত বা ভগ্নাংশবৎ লােহিত বর্ণ) দেববৃন্দ কর্তৃক দূর হইতে শ্রদ্ধা-নির্মিত অঞ্জলি সহিত (করজোড় হয়ে) আলােক্যমান (যে দেখা যাচ্ছে) অতুলনীয় সুন্দর, স্বর্ণ-নির্মিত ছত্রকে বন্দনা করতেছি ||৭৯||

সন্তুষ্টাং পরমামৃতেন বিলসৎকামেশ্বরাঙ্কস্থিতাং

পুষ্পৌঘৈরভিপূজিতাং ভগবতীং ত্বাং বন্দমানা মুদা ।

স্ফূর্জত্তাবকদেহরশ্মিকলনাপ্রাপ্তস্বরূপাভিদাঃ

শ্রীচক্রাবরণস্থিতাঃ সবিনয়ং বন্দামহে দেবতাঃ ||৮০||

ভাবার্থ - সন্তুষ্টা, কামেশ্বরের পরমামৃত দ্বারা শোভিত অঙ্কস্থিতা, পুষ্পসমূহ দ্বারা পূজিতা ভগবতীর বন্দনারত, তার ভাস্বর দেহরশ্মি দ্বারা বশ্যতা প্রাপ্তস্বরূপাভেদ বিশিষ্ট শ্রীচত্রের আবরণ-দেবতাগণকে বিনয়ের সহিতে বন্দনা করতেছি ||৮০||

আধারশক্ত্যাদিকমাকলয়্য

মধ্যে সমস্তাধিকয়োগিনীং চ।

মিত্রেশ নাথাদিকমত্র নাথ-

চতুষ্টয়ং শৈলসুতে নতোঽস্মি ||৮১||

ভাবার্থ - হে শৈলসুতে! আধারশক্তি প্রভৃতিকে স্থির করে, মধ্যে সমস্ত অধিক যােগিনীকে স্থির করে, এই স্থলে মিত্রেশনাথাদি নাথচতুষ্টয়কে নমস্কার করতেছি নত হচ্ছি। (নাথচতুষ্টয় ত্রিপুরসুন্দরী পূজাপ্রকরণে তত্ত্সার দ্রষ্টব্য) ||৮১||

ত্রিপুরাসুধার্ণবাসনমারভ্য ত্রিপুরমালিনী যাবৎ ।

আবরণাষ্টকসংস্থিত মাসনষট্কং নমামি পরমেশি ||৮২||

ভাবার্থ - হে পরমেশি! ত্রিপুরাসুধার্ণবাসন হতে আরম্ভ করে ত্রিপুরমালিনী পর্যন্ত আটটি আবরণে সংস্থিত ছয়টি আসনকে প্রণাম করতেছি ||৮২||

ঈশানে গণপং স্মরামি বিচরদ্বিঘ্নান্ধকারচ্ছিদং

বায়ব্যে বটুকং চ কজ্জলরুচিং ব্যালোপবীতান্বিতম্ ।

নৈর্ঋত্যে মহিষাসুরপ্রমথিনীং দুর্গাং চ সম্পূজয়ন্

আগ্নেয়েঽখিলভক্তরক্ষণপরং ক্ষেত্রাধি নাথং ভজে||৮৩||

ভাবার্থ - বিচরণশীল বিঘ্নরূপ অন্ধকার-নাশকারী গণপতিকে ঈশান কোণে স্মরণ করতেছি, কজ্জল সদৃশকান্তি, সর্পরূপ উপবীত-ধারী বটুককে বায়ুকোণে, মহিষাসুর-প্রমথিনী দুর্গাকে নৈর্ঋত কোণে, অখিল ভক্ত-রক্ষণপর ক্ষেত্রাধিনাথকে অগ্নিকোণে ভজনা করতেছি। (এ স্থলে দিক সম্বন্ধে মতভেদ আছে)। ||৮৩||

উড্যানজালন্ধরকামরূপ-

পীঠানিমান্ পূর্ণগিরিপ্রসক্তান্ ।

ত্রিকোণদক্ষাগ্রিমসব্যভাগ-

মধ্যস্থিতান্ সিদ্ধিকরান্ নমামি ||৮৪||

ভাবার্থ - ত্রিকোণের দক্ষিণ, অগ্র ও বামভাগ মধ্যস্থিত, পূর্ণগিরিতে প্রসক্ত, এই সিদ্ধিকর, উড্যান, (উড্ডীয়ান) জালন্ধর ও কামরূপ পীঠগুলিকে নমস্কার করতেছি ||৮৪||

লোকেশঃ পৃথিবীপতির্নিগদিতো বিষ্ণুর্জলানাং প্রভু-

স্তেজোনাথ উমাপতিশ্চ মরুতামীশস্তথা চেশ্বরঃ ।

আকাশাধিপতিঃ সদাশিব ইতি প্রেতাভিধামাগতা-

নেতাংশ্চক্রবহিঃস্থিতান্ সুরগণান্বন্দামহে সাদরম্ ||৮৫||

ভাবার্থ - লােকেশ (ব্ৰহ্মা) পৃথিবীপতিরূপে কথিত, জলসমূহের অধিপতি বিষ্ণু, তেজঃসমূহে অধিপতি উমানাথ শিব এবং বায়ুগণের অধিপতি ঈশ্বর ও আকাশাধিপতি সদাশিব এরা প্রেতনামে প্রসিদ্ধ, এই চক্রবহিঃস্থিত দেবগণকে আদর সহকারে বন্দনা করতেছি ||৮৫||

তারানাথকলাপ্রবেশনিগমব্যাজাদ্গতাসুপ্রথং

ত্রৈলোক্যে তিথিষু প্রবর্তিতকলাকাষ্ঠাদিকালক্রমম্ ।

রত্নালঙ্কৃতিচিত্রবস্ত্রললিতং কামেশ্বরীপূর্বকং

নিত্যাষোড়শকং নমামি লসিতং চক্রাত্মনোরন্তরে ||৮৬||

ভাবার্থ - বিশ্বে তিথিসমূহে চন্দ্রকলায় প্রবেশ ও নিগমস্থলে প্রখ্যাত, ( যারা ) কলাকাষ্ঠাদি কালাবয়ব প্রবর্তিত করেছেন, রত্নালঙ্কার ও বিচিত্র বস্ত্রাদি শােভিত, শ্রীচক্র ও নিজের ( উপাসকের ) মধ্যে শােভিত কামেশ্বরীপ্রমুখ ষােড়শটি নিত্যাকে প্রণাম করতেছি ( নিত্যা-তিথিনিত্যা ) ||৮৬||

হৃদি ভাবিতদৈবতং প্রয়ত্না-

ভ্যুপদেশানুগৃহীতভক্তসঙ্ঘম্ ।

স্বগুরুক্রমসংজ্ঞচক্ররাজ-

স্থিতমোঘত্রয়মানতোঽস্মি মূর্ধ্না ||৮৭||

ভাবার্থ - দেবতাকে হৃদয়ে চিন্তনকারী, যত্নপূর্ব্বক উপদেশ দ্বারা অনুগৃহীত হয়েছে ভক্তসংঘ যাদের এবম্ভূত, স্বগুরুতক্রমসংজ্ঞক চক্ররাজস্থিত ওঘত্রয়কে অবনত মস্তকদ্বারা প্রণাম করতেছি (ওঘত্রয়-দিব্য, সিদ্ধ ও মানব)। ||৮৭||

হৃদয়মথশিরঃ শিখাখিলাদ্যে

কবচমথো নয়নত্রয়ং চ দেবি ।

মুনিজনপরিচিন্তিত তথাস্ত্রং

স্ফুরতু সদা হৃদয়ে ষড়ঙ্গমেতৎ ||৮৮||

ভাবার্থ - নিখিল বিশ্বের আদিভূতে দেবি। হৃদয়, অনন্তর মস্তক, শিখা কবচ, অনন্তর নয়নত্রিতয় ও মুনিজন কর্তৃক চিত্তিত অস্ত্র এই ছয়টি অঙ্গ আমার হৃদয়ে সকব্বদা প্রকাশিত থাকুক। (এ স্থলে তান্ত্রিক পূজাবিধিতে যে হৃদয়াদি ষড়ঙ্গন্যাস কর্তব্য, ওই বিশেষভাবে বলা হয়েছে।) ||৮৮||

ত্রৈলোক্যমোহনমিতি প্রথিতে তু চক্রে

চঞ্চদ্বিভূষণগণত্রিপুরাধিবাসে ।

রেখাত্রয়ে স্থিতবতীরণিমাদিসিদ্ধী-

র্মুদ্রা নমামি সততং প্রকটাভিধাস্তাঃ ||৮৯||

ভাবার্থ - চঞ্চল বিভূষণ (অলঙ্কার) সমূহযুক্ত ত্রিপুরাদেবীর আবাসস্থান ত্রৈলােক্যমোহন নামে প্রসিদ্ধ চক্রে (ত্রিপুরসুন্দরী পূজা তন্ত্রসার দ্রষ্টব্য) রেখাত্রয়ে স্থিতা অণিমাদি সিদ্ধি ও মুদ্রা সকলকে সদা প্রণাম করতেছি ||৮৯||

সর্বাশাপরিপূরকে বসুদলদ্বন্দ্বেন বিভ্রাজিতে

বিস্ফূর্জত্রিপুরেশ্বরীনিবসতৌ চক্রে স্থিতা নিত্যশঃ ।

কামাকর্ষণিকাদয়ো মণিগণভ্রাজিষ্ণুদিব্যাম্বরা

যোগিন্যঃ প্রদিশন্তু কাঙ্ক্ষিতফলং বিখ্যাতগুপ্তাভিধা||৯০||

ভাবার্থ - ষোড়শ দলযুক্ত সর্ব্বাশাপরিপূরক নামক অত্যুজ্জল ত্রিপুরেশ্বরীনিবাসস্থানভূত চক্রে সর্বদা স্থিত, মণিসমূহদীপ্ত দিব্যবস্ত্রযুক্তা কামাকর্ষণিকাদি নামে প্রসিদ্ধ গুপ্তাখ্য যােগিনীগণ আকাঙ্ক্ষিত ফল দান করুন ||৯০||

মহেশি বসুভির্দলৈর্লসতি সর্বসংক্ষোভণে

বিভূষণগণস্ফুরৎ ত্রিপুরসুন্দরীসদ্মনি ।

অনঙ্গকুসুমাদয়ো বিবিধভূষণোদ্ভাসিতা

দিশন্তু মম কাঙ্ক্ষিতং তনুতরাশ্চ গুপ্তাভিধাঃ ||৯১||

ভাবার্থ - হে মহেশি, অষ্টদলশােভিত সর্ব্বসংক্ষোভণ নামে ত্রিপুরসুন্দরীর নিবাসস্থানরূপ চক্রে অলঙ্কারালঙ্কৃতা অনঙ্গকুসুমাদি গুপ্তরাখ্য যােগিনীগণ

অলঙ্কারসমূহ শােভিত আমার আকাঙ্ক্ষিত ফল দান করুন ||৯১||

লসদ্যুগদৃশারকে স্ফুরতি সর্বসৌভাগ্যদে

শুভাভরণভূষিতত্রিপুরবাসিনীমন্দিরে ।

স্থিতা দধতু মঙ্গলং সুভগসর্বসংক্ষোভিণী-

মুখাঃ সকলসিদ্ধয়ো বিদিতসম্প্রদায়াভিধাঃ ||৯২||

ভাবার্থ - শােভাসম্পন্ন চতুর্দশ দল সৰ্বসৌভাগ্যদায়ক দীপ্তিমৎ মঙ্গলজনক অলঙ্কার ভূষিত ত্রিপুরসুন্দরীর মন্দিররূপ চক্রে স্থিতা বিদিত-সম্প্রদায়যােগিনী নামে খ্যাত সুভগসংক্ষোভিণী (তন্ত্রসারে পাঠ ভিন্ন আছে) প্রমুখ সকল সিদ্ধিগণ মঙ্গলদায়ক হোন ||৯২||

বহির্দশারে সর্বার্থসাধকে ত্রিপুরাশ্রয়াঃ ।

কুলকৌলাভিধাঃ পান্তু সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িকাঃ ||৯৩||

ভাবার্থ - সর্বার্থসাধক বহির্দশদলযুক্ত চক্রে ত্রিপুরাতে আশ্রিত কুলকৌলভিধা সর্ব্বসিদ্ধিপ্রদায়িকা যােগিনীগণ পালন করুন ||৯৩||

অন্তঃশোভিদশারকেঽতিললিতে সর্বাদিরক্ষাকরে

মালিন্যা ত্রিপুরাদ্যয়া বিরচিতাবাসে স্থিতং নিত্যশঃ ।

নানারত্নবিভূষণং মণিগণভ্রাজিষ্ণু দিব্যাম্বরং

সর্বজ্ঞাদিকশক্তিবৃন্দমনিশং বন্দে নিগর্ভাভিধম্ ||৯৪||

ভাবার্থ - অতিমনােহর সর্বাদিরক্ষাকর নামে ত্রিপুরমালিনী কর্তৃক বিরচিত আবাসস্থলরূপ চক্রে নিত্যস্থিত নানারত্ন-বিভূষিত, মণিসমূহ দীপ্ত বস্ত্রযুক্ত নিগর্ভ-নামে (পাঠান্তর আছে তন্ত্রসার দ্রষ্টব্য) সর্বজ্ঞাদি শক্তিসমূহকে নিরন্তর বন্দনা করি ||৯৪||

সর্বরোগহরেঽষ্টারে ত্রিপুরাসিদ্ধয়ান্বিতে ।

রহস্যযোগিনীর্নিত্যং বশিন্যাদ্যা নমাম্যহম্ ||৯৫||

ভাবার্থ - সিদ্ধত্রিপুরাযুক্ত অষ্টদল সৰ্ব্বরােগহর চক্রে বশিনী আদি রহস্যযােগিনীগণকে আমি নিত্য নমস্কার করতেছি ||৯৫||

চূতাশোকবিকাশিকেতকরজঃপ্রোদ্ভাসিনীলাম্বুজ-

প্রস্ফূর্জন্নবমল্লিকাসমুদিতৈঃ পুষ্পৈঃ শরান্নির্মিতান্ ।

রম্যং পুষ্পশরাসনং সুললিতং পাশং তথা চাঙ্কুশং

বন্দে তাবকমায়ুধং পরশিবে চক্রান্তরালেস্থিতম্ ||৯৬||

ভাবার্থ - হে পরশিবে! চক্রের অন্তরালে অবস্থিত, চূত, অশােক, বিকশিত, কেতকীরজঃ দ্বারা উদ্ভাসিত নীলপদ্ম প্রস্ফুজ্জিত নবমল্লিকা প্রভৃতি পুষ্পনির্মিত শরগুলি, মনােহর পুষ্পধনু, সুললিত পাশ ও অঙ্কুশ প্রভৃতি তােমার অস্ত্র সমূহকে বন্দনা করি ||৯৬||

ত্রিকোণ উদিতপ্রভে জগতি সর্বসিদ্ধিপ্রদে

যুতে ত্রিপুরয়াম্বয়া স্থিতবতী চ কামেশ্বরী ।

তনোতু মম মঙ্গলং সকলশর্ম বজ্রেশ্বরী

করোতু ভগমালিনী স্ফুরতু মামকে চেতসি ||৯৭||

ভাবার্থ - জগতে সর্বসিদ্ধিপ্রদ উদিত কিরণযুক্ত মাতা ত্রিপুরাযুক্ত ত্রিকোণে স্থিতা কামেশ্বরী আমার মঙ্গল বিস্তার করুন, বজ্রেশ্বরী সকল মঙ্গল করুন, ভগমালিনী আমার চিত্তে স্ফুরিত হোন ||৯৭||

সর্বানন্দময়ে সমস্তজগতামাকাঙ্ক্ষিতে বৈন্দবে

ভৈরব্যা ত্রিপুরাদ্যয়া বিরচিতাবাসে স্থিতা সুন্দরী ।

আনন্দোল্লসিতেক্ষণা মণিগণভ্রাজিষ্ণুভূষাম্বরা

বিস্ফূর্জদ্বদনা পরাপররহঃ স মাং পাতু যোগিনী ||৯৮||

ভাবার্থ - সর্বানন্দময়, সমস্ত জগতের আকাঙ্ক্ষিত, ক্রিপুরাদিভৈরবীগণ দ্বারা বিরচিত আবাসস্থলরূপ বৈন্দব চক্রে অবস্থিত সুন্দরী আনন্দে উল্লসিত চক্ষুযুক্ত, মণিসমূহ দ্বারা দীপ্তিশীল অলঙ্কার ও বস্ত্রযুক্তা বিস্ফুর্জিতবদনা সেই পরাপররহস্যযােগিনী আমাকে পালন করুন ||৯৮||

উল্লসৎকনককান্তিভাসুরং

সৌরভস্ফুরণবাসিতাম্বরম্ ।

দূরতঃ পরিহৃতং মধুব্রতৈ-

রর্পয়ামি তব দেবি চম্পকম্ ||৯৯||

ভাবার্থ - হে দেবী ! উজ্জল স্বর্ণের কিরণের ন্যায় দীপ্তিবিশিষ্ট, সুগন্ধ স্কুরণ দ্বারা আকাশকে আমােদিত করতেছে এরূপ, ভ্রমরগণ কর্তৃক দূরে পরিহৃত (ভ্রমরগণ যার মধুপান করে নাই সুতরাং অনুচ্ছিষ্ট বা অভুক্ত) চম্পক তােমার নিমিত্ত অর্পণ করতেছি ||৯৯||

বৈরমুদ্ধতমপাস্য শম্ভুনা

মস্তকে বিনিহিতং কলাচ্ছলাৎ ।

গন্ধলুব্ধমধুপাশ্রিতং সদা

কেতকীকুসুমমর্পয়ামি তে ||১০০||

ভাবার্থ - শিবকর্তৃক অতিশয় অপ্রিয়তা (থাকা সত্ত্বেও) পরিত্যাগ করে চন্দ্রকলাচ্ছলে মস্তকে রক্ষিত গন্ধলােভী মধুকরগণ কর্তৃক আশ্রিত, কেতকীকুসুম স্ব্বদা তােমাকে অর্পণ করতেছি। (শিবের কেতকী পুষ্পের প্রতি বিরাগ পুরাণে বর্ণিত আছে, ঐ বিরাগ থাকা সত্ত্বেও শিব যেন চক্রকলাচ্ছলে কেতকীপুষ্প মস্তকে ধারণ করেছেন, এ স্থলে ভাবার্থ) ||১০০||

চূর্ণীকৃতং দ্রাগিব পদ্মজেন

ত্বদাননস্পর্দ্ধি সুধাংশুবিম্বম্ ।

সমর্পয়ামি স্ফুটমঞ্জলিস্থং

বিকাসি জাতীকুসুমোৎকরং তে ||১০১||

ভাবার্থ - ব্ৰহ্মা কর্তৃক সহসা চূর্ণীকৃত (চুর্ণিত) তােমার মুখশােভার স্পর্দ্ধাসম্পন্ন (তােমার মুখশােভার সহিত প্রতিযােগিতাতে সমুদ্যত) চন্দ্রবিম্বের ন্যায়, পরিস্ফুট (বিকসিত) মদীয় অঞ্জলিমধ্যস্থ, শােভাসম্পন্ন জাতীপুষ্পের রাশি তােমাকে সমর্পণ করতেছি ||১০১||

অগরুবহলধূপাজস্রসৌরভ্যরম্যাং

মরকতমণিরাজীরাজিহারিস্রগাভাম্ ।

দিশি বিদিশি বিসরদ্গন্ধলুব্ধালিমালাং

বকুলকুসুমমালাং কণ্ঠপীঠেঽর্পয়ামি ||১০২||

ভাবার্থ - (তােমার) কণ্ঠদেশে অগরুবহুল ধূপের অতিশয় সুগন্ধ দ্বারা রমণীয়, মরকতমণিসমূহের শ্রেণীযুক্ত মাল্যসদৃশ, দশ দিকে বিসর্পিত গন্ধলুব্ধ ভ্রমর সমূহবিশিষ্ট, বকুল পুষ্পের মালা অর্পণ করতেছি ||১০২||

ঈঁকারোর্দ্ধগবিন্দুরাননমধোবিন্দুদ্বয়ং চ স্তনৌ

ত্রৈলোক্যে গুরুগম্যমেতদখিলং হার্দং চ রেখাত্মকম্ ।

ইত্থং কামকলাত্মিকাং ভগবতীমন্তঃ সমারাধয়ন্

আনন্দাম্বুধিমজ্জনে প্রলভতামানন্দথুং সজ্জনঃ ||১০৩||

ভাবার্থ - ঈ কারের উর্দ্ধ্বগত বিন্দু তােমার মুখ ও অধােগতবিন্দুদ্বয় তােমার স্তন, এই হৃদয়গ্রাহী রেখাস্বরূপ সমগ্র বিষয়টি ত্রৈলােক্যে গুরুগম্য। এইরূপে কামকলাত্মিকা ভগবতীকে অন্তরে আরাধনা করে সজ্জন ব্যক্তি আনন্দসমুদ্রে মগ্ন হওয়ার আনন্দলাভ করুন ||১০৩||

ধূপং তেঽগরুসম্ভবং ভগবতি প্রোল্লাসি গন্ধোদ্ধুরং

দীপং চৈব নিবেদয়ামি মহসা হার্দান্ধকারচ্ছিদম্ ।

রজস্বর্ণবিনির্মিতেষু পরিতঃ পাত্রেষু সংস্থাপিতং

নৈবেদ্যং বিনিবেদয়ামি পরমানন্দাত্মিকে সুন্দরি ||১০৪||

অনুবাদ- হে ভগবতী! অগুরু দ্বারা প্রস্তুত, প্রােল্লসিত গন্ধে পরিপূর্ণ ধূপ ও কিরণদ্বারা হৃদয়ের অন্ধকারচ্ছেদকারী দীপ নিবেদন করতেছি, হে পরমানন্দস্বরূপে ! হে ত্রিপুরসুন্দরী ! চতুর্দ্দিকে রত্ন ও স্বর্ণনির্মিত পাত্রসমূহে সংস্থাপিত নৈবেদ্য তােমাকে নিবেদন করতেছি ||১০৪||

জাতীকোরকতুল্যমোদনমিদং সৌবর্ণপাত্রে স্থিতং

শুদ্ধান্নং শুচি মুদ্গমাষচণকোদ্ভূতাতথা সূপকাঃ ।

প্রাজ্যং মাহিষমাজ্যমুত্তমমিদং হৈয়ঙ্গবীনং পৃথক্

পাত্রেষু প্রতিপাদিতং পরশিবে তৎসর্বমঙ্গীকুরু ||১০৫||

ভাবার্থ - হে পরশিবে! এই জাতী পুষ্পের কোরকের ( কুঁড়ি ) ন্যায় ( শুভ্র বর্ণ ও কোমল ) ওদন ( অন্ন ) সুবর্ণপাত্রস্থিত বিশুদ্ধ অন্ন এবং পবিত্র মুগ, মাষকলায় ও চণক ( ছােলা ) হতে জাত সূপ (ডাল), প্রচুর মাহিষ ঘৃত, এই উত্তম পৃথক্ পাত্রে রক্ষিত, (দত্ত) নবনীত, সেই

সমুদায় স্বীকার করো ( অর্থাৎ গ্রহণ করো ) ||১০৫||

শিম্বীসূরণশাকবিল্ববৃহতীকূষ্মাণ্ডকোশাতকী-

বৃন্তাকানি পটোলকানি মৃদুনা সংসাধিতান্যগ্নিনা ।

সম্পন্নানি চ বেসবারবিসরৈর্দিব্যানি ভক্ত্যা কৃতা-

ন্যগ্রেতে বিনিবেদয়ামি গিরিজে সৌবর্ণপাত্রব্রজে ||১০৬||

ভাবার্থ - হে গিরিজে! ভক্তিসহকারে কৃত, (পক্ক) বাটনা মসলাসমূহের দ্বারা যুক্ত, দিব্য, মৃদুঅগ্নি দ্বারা সাধিত (পক্ক) শিম, শূরণ, ওলকচু, (শাক) বিল্ব বৃহতী (ক্ষুদ্র বার্তাকী) কুম্মাণ্, ঝিঙা, বৃন্তাক (বেগুন) ও পটোল সুবর্ণপাত্রসমূহে তােমার অগ্রে (সম্মুখে) নিবেদন করতেছি ||১০৬||

নিম্বূকার্দ্রকচূতকন্দকদলীকৌশাতকীকর্কটী-

ধাত্রীবিল্বকরীরকৈর্বিরচিতান্যানন্দচিদ্বিগ্রহে ।

রাজীভিঃ কটুতৈলসৈন্ধবহরিদ্রাভিঃ স্থিতান্ পাতয়ে

সন্ধানানি নিবেদয়ামি গিরিজে ভূরিপ্রকারাণি তে||১০৭||

ভাবার্থ - লেবু, আর্দ্রক, আম্র, শূরণ (ওল) কদলী, ঝিঙা, কাঁকুড়, আমলকী, বেল ও বংশাঙ্কুর বিরচিত, নানাপ্রকার, সর্ষপ, কটুতৈল (সর্ষপতৈল) সৈন্ধব হরিদ্রাদি দ্বারা রৌদ্রতাপে প্রস্তুত সন্ধান (কাঁজি) সকল, আনন্দ ও চিন্ময় শরীরবিশিষ্ট হে গিরিজে! তােমাকে নিবেদন করতেছি ||১০৭||

সিতয়াঞ্চিতলড্ডু কব্রজান্ মৃদুপূপান্মৃদুলাশ্চ পূরিকাঃ ।

পরমান্নমিদং চ পার্বতি প্রণয়েনপ্রতিপাদয়ামিতে ||১০৮||

ভাবার্থ - হে পাৰ্ব্বতী ! ভক্তিবশতঃ তােমাকে শর্করাযুক্ত লড্ডুকসমূহ, কোমল পিষ্টকসমূহ, কোমল পূরিকা (খাদ্য বস্তু বিশেষ) এবং এই পরমান্ন প্রতিপাদন করতেছি ||১০৮||

দুগ্ধমেতদনলে সুসাধিতং

চন্দ্রমণ্ডলনিভং তথা দধি ।

ফাণিতং শিখরিণীং সিতাসিতাং

সর্বমম্ব বিনিবেদয়ামি তে || ১০৯||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! এই অগ্নিতে সুসিদ্ধ দুগ্ধ এবং চন্দ্রমণ্ডল সদৃশ (শুভ্র) দধি, ফাণিত ( ইক্ষুবিকার ) শিখরিণী (মিষ্টান্ন বিশেষ) ও সিতা ও অসিতা ( মিষ্টদ্রব্যবিশেষ ) তােমাকে নিবেদন করিতেছি ||১০৯||

অগ্রে তে বিনিবেদ্য সর্বমমিতং নৈবেদ্যমঙ্গীকৃতং

জ্ঞাত্বা তত্ত্বচতুষ্টয়ং প্রথমতো মন্যে সুতৃপ্তাং ততঃ ।

দেবীং ত্বাং পরিশিষ্টমম্ব কনকামত্রেষু সংস্থাপিতং

শক্তিভ্যঃ সমুপাহারামিসকলং দেবেশি শম্ভুপ্রিয়ে ||১১০||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! প্রথমতঃ তােমার সম্মুখে অপরিমিত সর্বপ্রকার নৈবেদ্য নিবেদন করে ও গৃহীত হয়েছে জেনে, দেবী তােমাকে সুতৃপ্ত মনে করি; অতঃপর স্বর্ণপাত্রস্থিত অবশিষ্ট সকল তত্ত্বচতুষ্টয় হে শম্ভুপ্রিয়ে! দেবেশি (উহা) শক্তিগণকে উপহার দিচ্ছি ||১১০||

বামেন স্বর্ণপাত্রীমনুপমপরমান্নেন পূর্ণাং দধানা-

মন্যেন স্বর্ণদর্বীং নিজজনহৃদয়াভীষ্টদাং ধারয়ন্তীম্ ।

সিন্দূরারক্তবস্ত্রাং বিবিধমণিলসদ্ভূষণাং মেচকাঙ্গীং

তিষ্ঠন্তীমগ্রতস্তে মধুমদমুদিতামন্নপূর্ণাং নমামি ||১১১||

ভাবার্থ - অতুলনীয় পরমান্ন দ্বারা পূর্ণ স্বর্ণপাত্রকে বাম (হস্ত) দ্বারা ধারণকারিণী নিজ (ভক্ত) জনের হৃদয়ের অভিলাষদায়িনী স্বর্ণ-দর্বীকে অন্য (হস্ত) দ্বারা ধারণকারিণী সিন্দুরবৎ রক্তবস্ত্রযুক্তা, বিবিধ মণিখচিত অলঙ্কারযুক্ত, শ্যামলাঙ্গী, তােমার সম্মুখস্থিতা মধু মদপ্রযুক্ত আনন্দযুক্তা, অন্নপূর্ণাকে নমস্কার করতেছি ||১১১||

পঙ্ক্ত্যোপবিষ্টান্ পরিতস্তু চক্রং

শক্ত্যা স্বয়ালিঙ্গিতবামভাগান্ ।

সর্বোপচারৈঃ পরিপূজ্য ভক্ত্যা

তবাম্বিকে পারিষদান্নমামি || ১১২||

ভাবার্থ - হে অম্বিকে! চক্রে চতুর্দ্দিকে পংক্তিবদ্ধভাবে উপবিষ্ট, নিজশক্তি দ্বারা আলিঙ্গিত বামভাগ তােমার পারিষদগণকে ভক্তিসহকারে সর্বপ্রকার উপচার দ্বারা পূজা করে প্রণাম করতেছি ||১১২||

পরমামৃতমত্তসুন্দরী-

গণমধ্যস্থিতমর্কভাসুরম্ ।

পরমামৃতঘূর্ণিতেক্ষণং

কিমপি জ্যোতিরুপাস্মহে পরম্ || ১১৩||

ভাবার্থ - পরম অমৃত পানহেতু মত্তসুন্দরীগণ মধ্যস্থিত, সূর্য্যসদৃশ ভাস্বর, পরম অমৃতপানজনিত বিঘূর্ণিতলােচন কোনও পরম জ্যোতিকে উপাসনা করতেছি ||১১৩||

দৃশ্যতে তব মুখাম্বুজং শিবে শ্রূয়তে স্ফুটমনাহতধ্বনিঃ ।

অর্চনে তব গিরামগোচরে ন প্রয়াতি বিষয়ান্তরং মনঃ ||১১৪||

ভাবার্থ - হে শিবে! তােমার মুখপদ্ম দৃষ্ট হচ্ছে, অনাহতধ্বনি স্পষ্ট শ্রুত হচ্ছে, বাক্যসমূহের অগােচরে তােমার পূজায় নিবিষ্ট আমার মন বিষয়ান্তরে যায় না ||১১৪||

ত্বন্মুখাম্বুজবিলোকনোল্লসৎ

প্রেমনিশ্চলবিলোচনদ্বয়ীম্ ।

উন্মনীমুপগতাং সভামিমাং

ভাবয়ামি পরমেশি তাবকীম্ || ১১৫||

ভাবার্থ - তােমার মুখ-কমল বিলােকন দ্বারা উল্লসিত প্রেমহেতু নিশ্চল চক্ষুদ্বয়যুক্ত অতএব উর্দ্ধস্থিত মণিবিশিষ্টতা প্রাপ্ত তােমার এই সভাকে পরমেশি চিন্তা করতেছি ||১১৫||

চক্ষুঃ পশ্যতু নেহ কিঞ্চন পরং ঘ্রাণং ন বা জিঘ্রতু

শ্রোত্রং হন্ত শৃণোতু ন ত্বগপি ন স্পর্শং সমালম্বতাম্ ।

জিহ্বা বেত্তু ন বা রসং মম পরং যুষ্মৎস্বরূপামৃতে

নিত্যানন্দবিঘূর্ণমাননয়নে নিত্যং মনো মজ্জতু ||১১৬||

ভাবার্থ - আমার চক্ষু ইহলােকে কিছুই না দেখুক, ঘ্রাণ (নাসিকা) কিছুই ঘ্রাণ না করুক, শ্রোত্র শ্রবণ না করুক, ত্বক স্পর্শ গ্রহণ না করুক, জিহ্বা রসকে না জানুক,

নিত্যানন্দ হেতু বিঘূর্ণিতলােচনে! তােমার স্বরূপরূপী অমৃতে আমার মন নিত্য মগ্ন হোক ||১১৬||

যস্ত্বাং পশ্যতি পার্বতি প্রতিদিনং ধ্যানেন তেজোময়ীং

মন্যে সুন্দরি তত্ত্বমেতদখিলং বেদেষু নিষ্ঠাং গতম্ ।

যস্তস্মিন্ সময়ে তবার্চনবিধাবানন্দসান্দ্রাশয়ো

যাতোঽহং তদভিন্নতাং পরশিবে সোঽয়ং প্রসাদস্তব ||১১৭||

ভাবার্থ - হে পার্ব্বতি ! যে প্রতিদিন ধ্যানযােগে তেজোময়ী তােমাকে দর্শন করে, হে ত্রিপুরসুন্দরী, বেদ সকলে নিষ্পত্তি প্রাপ্ত (চূড়ান্তভাবে নির্ণীত) এই সমগ্র তত্ত্বকে মনে করি সেই সময়ে তােমার পূজার বিষয়ে আনন্দ দ্বারা নিবিড় অভিপ্রায় বিশিষ্ট যে আমি

তােমার অভিন্নতা প্রাপ্ত হই, হে পরশিবে! ও তােমার প্রসন্নতার ফলমাত্র ||১১৭||

গণাধিনাথং বটুকঞ্চ যোগিনীঃ

ক্ষেত্রাধিনাথং চ বিদিক্চতুষ্টয়ে ।

সর্বোপচারৈঃ পরিপূজ্য ভক্তিতো

নিবেদয়ামো বলিমুক্তয়ুক্তিভিঃ ||১১৮||

ভাবার্থ - গণাধিনাথ, বটুক, যােগিনীগণ, ক্ষেত্রাধিনাথকে বিদিক চারটিতে (চারিটি কোণে) ভক্তিভরে সর্ব্বপ্রকার উপচার দ্বারা পূজা করে কথিত প্রকারে বলি (উপহারদ্রব্য) নিবেদন করতেছি ||১১৮||

বীণামুপান্তে খলু বাদয়ন্ত্যৈ

নিবেদ্য শেষং খলু শেষিকায়ৈ ।

সৌবর্ণভৃঙ্গারবিনির্গতেন

জলেন শুদ্ধাচমনং বিধেহি ||১১৯||

ভাবার্থ - হে দেবী ! বীণা সহ অন্যান্য বাদ্য বাদন এখানে শেষ করা হয়েছে। সুবর্ণপাত্রস্থিত শুদ্ধ জল দ্বারা আচমন করো ||১১৯||

তাম্বূলং বিনিবেদয়ামি বিলসৎকর্পূরকস্তূরিকা-

জাতীপূগলবঙ্গচূর্ণখদিরৈর্ভক্ত্যা সমুল্লাসিতম্ ।

স্ফূর্জদ্রত্নসমুদ্গকপ্রণিহিতং সৌবর্ণপাত্রে স্থিতৈ-

র্দীপৈরুজ্জ্বলমান্নচূর্ণরচিতৈরারার্তিকং গৃহ্যতাম্ ||১২০||

ভাবার্থ - শােভমান কর্পূর কস্তূরী জাতীপুষ্প সুপারী লবঙ্গ চূণ খদির দ্বারা সমুল্লাসিত, ভাস্বর রত্নপেটিকায় রক্ষিত তাম্বূল ভক্তিসহকারে নিবেদন করতেছি। সুবর্ণপাত্রস্থিত অন্নচূর্ণ রচিত দীপসমূহ দ্বারা উজ্জ্বল আরত্রিক গ্রহণ করো ||১২০||

কাচিদ্ গায়তি কিন্নরী কলপদং বাদ্যং দধানোর্বশী

রম্ভা নৃত্যতি কেলিমঞ্জুলপদং মাতঃ পুরস্তাৎ তব ।

কৃত্যং প্রোজ্ঝ্য সুরস্ত্রিয়ো মধুমদব্যাঘূর্ণমানেক্ষণং

নিত্যানন্দসুধাম্বুধিং তব মুখং পশ্যন্তি দৃশ্যন্তি চ ||১২১||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! তােমার সম্মুখে কোনও কিন্নরী মধুর শব্দে গান করতেছে, উর্ব্বশী বাদ্য ধারণ করে আছে, রম্ভা কেলিদ্বারা মনােহর চরণে নৃত্য করতেছে, দেবস্ত্রীগণ কার্য্য পরিত্যাগ করে , মধুপান জনিত মদপ্রযুক্ত নিত্য আনন্দরূপ অমৃতের সাগররূপী তােমার

মুখ দেখতেছে ও আনন্দিত হচ্ছে ||১২১||

তাম্বূলোদ্ভাসিবক্ত্রৈস্ত্বদমলবদনালোকনোল্লাসিনেত্রৈ-

শ্চক্রস্থৈঃ শক্তিসঙ্ঘৈঃ পরিহৃতবিষয়াসঙ্গমাকর্ণ্যমানম্

গীতজ্ঞাভিঃ প্রকামং মধুরসমধুরং বাদিতং কিন্নরীভি-

র্বীণাঝঙ্কারনাদং কলয় পরশিবানন্দসন্ধানহেতােঃ ||১২২||

ভাবার্থ - তাম্বূল দ্বারা উদ্ভাসিত মুখ, তােমার নির্ম্মল বদন অবলােকন দ্বারা উল্লাসযুক্ত নেত্র, চক্রস্থিত শক্তিসংঘ কর্তৃক বিষয়াসক্তি পরিহার পূর্ব্বক শ্রয়মাণ, পরশিবানন্দ-সঙ্ঘটনের জন্য গীতজ্ঞ কিন্নরীগণ কর্তৃক যথেষ্ট মধুরসবৎ মধুরভাবে বাদিত বীণাঝঙ্কার ধ্বনি স্বীকার করো ||১২২||

অর্চাবিধৌ জ্ঞানলবোঽপি দূরে

দূরে তদাপাদকবস্তুজাতম্ ।

প্রদক্ষিণীকৃত্য ততোঽর্চনং তে

পঞ্চোপচারাত্মকমর্পয়ামি ||১২৩||

ভাবার্থ - পূজা বিষয়ে জ্ঞানকণা ও দূরে আছে (অর্থাৎ বিন্দুমাত্র জ্ঞান নাই) জ্ঞানপ্রাপক বস্তুসমূহও দূরেই আছে (সুতরাং জ্ঞানের আশাও নাই) এজন্য প্রদক্ষিণ করে তােমাকে পঞ্চোপচারাত্মক পূজা করতেছি ||১২৩||

যথেপ্সিতমনোগতপ্রকটিতোপচারার্চিতং

নিজাবরণদেবতাগণবৃতাং সুরেশস্থিতাম্ ।

কৃতাঞ্জলিপুটো মুহুঃ কলিতভূমিরষ্টাঙ্গকৈ-

র্নমামি ভগবত্যহং ত্রিপুরসুন্দরি ত্রাহি মাম্ ||১২৪||

ভাবার্থ - হে ভগবতী ! হে ত্রিপুরসুন্দরী ! কৃতাঞ্জলিপুট হয়ে বারম্বার সাষ্টাঙ্গে ভূমিপ্রাপ্ত হয়ে আমি যথেচ্ছ মনােগত অথচ প্রকটিত উপচারসমূহ দ্বারা অর্চ্চিত, নিজ আবরণ দেবতাগণ- পরিবৃত, শিবােপরি অবস্থিতাকে নমস্কার করতেছি, আমাকে ত্রাণ করো ||১২৪||

বিজ্ঞপ্তীরবধেহি মে সুমহতা যত্নেন তে সন্নিধিং

প্রাপ্তং মামিহ কান্দিশীকমধুনা মাতর্ন দূরীকুরু ।

চিত্তং ত্বৎপদভাবনে ব্যভিচরেদ্দৃগ্ বাক্ চ মে জাতু চেত

তৎসৌম্যে স্বগুণৈর্বধান ন যথা ভূয়ো বিনির্গচ্ছতি ||১২৫||

ভাবার্থ - হে মাতঃ ! আমার নিবেদন অবধান কর, অতিশয় যত্নপূর্ব্বক ইহলােকে তােমার সন্নিধিপ্রাপ্ত,

ভয়ে পলায়িত, আমাকে এখন দূর করে দিও না, হে সৌম্যে! আমার চিত্ত, চক্ষুঃ ও বাক্ ইন্দ্রিয় যদি

কদাচিৎ তােমার পদ চিন্তাতে ব্যভিচারী হয়, এই হেতু নিজগুণ দ্বারা ( গুণ শব্দে রজ্জুও বুঝায় ) এরূপ বন্ধন কর ( চিত্ত প্রভৃতিকে ) যাতে ( ওরা ) পুনঃপুনঃ বহির্গত হতে না পারে ||১২৫||

ক্বাহং মন্দমতিঃ ক্বচেদমখিলৈরেকান্তভক্তৈঃ স্তুতং

ধ্যাতং দেবি তথাপি তে স্বমনসা শ্রীপাদুকাপূজনম্ ।

কাদাচিৎকমদীয়চিন্তনবিধৌ সন্তুষ্টয়া শর্মদং

স্তোত্রং দেবতয়া তয়া প্রকটিতং মন্যে মদীয়াননে ||১২৬||

ভাবার্থ - হে দেবী ! মন্দবুদ্ধি আমিই বা কোথায়, এই অখিল একান্ত ভক্তগণ দ্বারা স্তুত ও ধ্যানের বিষয়ই ( দেবি ) বা কোথায় ( অর্থাৎ আমি ও দেবী অত্যন্ত দূরতম বস্তু অখিল একান্তভক্তগণ যাকে ধ্যান করেন তিনি আমার নিকটস্থ হবেন, এই প্রকার আশা

কোথায় ) তথাপি নিজমনে তােমার শ্রীপাদুকাপূজন ( ত্রিপুরসুন্দরী পূজায় শ্রীপাদুকাপূজন শব্দই প্রয়ােগ করতে হয়, তন্ত্রসার দ্রষ্টব্য ) নামে মঙ্গলপ্রদ স্তোত্র, মনে হয় কোনও সময়ে আমার চিন্তাদ্বারা সন্তুষ্ট সেই দেবতা কর্তৃক মদীয় মুখে প্রকটিত হয়েছে (আমার এইরূপ

স্তোত্র রচনার সামর্থ্য নেই, দেবতার কৃপা ব্যতীত কিছুতেই সম্ভব নয় ) ||১২৬||

নিত্যার্চমিদং চিত্তে ভাব্যমানং সদা ময়া ।

নিবদ্ধং বিবিধৈঃ পদ্যৈরনুগৃহ্ণাতু সুন্দরী ||১২৭||

ভাবার্থ - আমার কর্তৃক সর্বদা চিত্তে চিন্ত্যমান, এই বিবিধ পদ্যে নিত্যাচ্চচন নিবন্ধ ( রচিত ) হলো, একে ত্রিপুরসুন্দরী অনুগ্রহ করুন ||১২৭||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ

ত্রিপুরসুন্দরীমানসপূজাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য ভগবতঃ বিরচিত ত্রিপুরসুন্দরী মানস পূজা স্তোত্র সমাপ্ত।

 

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...