Saturday, 17 July 2021

আকাশ উৎপত্তিশীল অনিত্য পদার্থঃ-

 


ইতোমধ্যে অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টিক্রম বিষয়ে তৈত্তিরীয় শ্রুতি অবলম্বনে একটী সংক্ষিপ্ত আলোচনা করিয়াছি। বেদান্ত বা উপনিষৎসকলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থলে বিভিন্ন প্রকার উৎপত্তিপ্রতিপাদিকা শ্রুতিসকল উপলব্ধ হইতেছে। কেহ কেহ আকাশের উৎপত্তি পাঠ করেন, কেহ কেহ তাহা করেন না। এই প্রকারে কেহ কেহ বায়ুর উৎপত্তি পাঠ করেন, কেহ তাহা করেন না। ছান্দোগ্য শ্রুতিতে বর্ণিত হইতেছে-

'সদেব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।১) অর্থাৎ "হে প্রিয়দর্শন, ইহা (-এই জগৎ) অগ্রে (-সৃষ্টির পূর্ব্বে) এক অদ্বিতীয় সদ্রূপেই বিদ্যমান ছিল", এই প্রকারে সৎ-শব্দবাচ্য ব্রহ্মের প্রস্তাব করিয়া 'তদৈক্ষত' 'তত্তেজোসৃজত'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩) "তিনি ঈক্ষণ করিলেন", এবং "তেজকে সৃষ্টি করিলেন", এই প্রকারে পঞ্চমহাভূতের মধ্যে মধ্যম (-তৃতীয় স্থানবর্ত্তী) তেজকে আদি করিয়া তেজঃ জল ও অন্ন (-ক্ষিতি) এই তিনটীর উৎপত্তি শ্রবণ করাইতেছেন। ছান্দোগ্য শ্রুতিতে আকাশের উৎপত্তি নাই। কিন্তু পূর্ব আলোচনায় তৈত্তিরীয় শ্রুতিতে (২।১) "সেই এই আত্মস্বরূপ ব্রহ্মের নিমিত্ত আকাশ উৎপন্ন হইল, আকাশ হইতে বায়ু, বায়ু হইতে অগ্নি, অগ্নি হইতে জল, জল হইতে ক্ষিতি, ক্ষিতি হইতে ওষধিসকল, ওষধিসকল হইতে অন্ন এবং অন্ন হইতে দেহ" এইরূপ বর্ণিত আছে।

আর এই হেতু কোনস্থলে তেজঃপ্রমুখা সৃষ্টি এবং কোন স্থলে আকাশপ্রমুখা সৃষ্টি বর্ণিত হওয়ায় শ্রুতিদ্বয়ের বিরোধ হইতেছে এইরূপ শঙ্কা উৎপন্ন হয়। কেহ কেহ ছান্দোগ্য সৃষ্টিপ্রকরণে পঠিত না হওয়ায় আকাশকে নিত্য পদার্থ জ্ঞান করেন। বৈশেষিক দর্শনকার কণাদের অভিপ্রায় অনুসরণকারীগণ মনে করেন জীবিত থাকিতে আকাশের উৎপত্তির সম্ভাবনা করিতে পারা যায় না। বিরুদ্ধবাদীরা মনে করেন, আকাশের উৎপত্তি অসম্ভব, অতএব আকাশের উৎপত্তিবোধিকা তৈত্তিরীয় শ্রুতিকে গৌণ অর্থে গ্রহণ করা উচিত। অমৃত এবং অনন্ত বলিয়া আকাশের কোন আরম্ভ থাকিতে পারে না। এইসকল শঙ্কার প্রত্যুত্তরে আচার্য বাদরায়ণ বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রে সিদ্ধান্ত করিতেছেন-এক বিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞান সিদ্ধির জন্য আকাশের উৎপত্তি স্বীকার্য। বিজ্ঞেয় ব্রহ্ম হইতে সমগ্র বস্তুজাত অভিন্ন হত্তয়ায়, আত্মবিজ্ঞান হইতে সর্ববিজ্ঞানবিষয়ক যে শ্রুতি প্রতিজ্ঞা তাহার হানি হয় না। ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন সত্তাবিশিষ্ট নিত্য আকাশ অঙ্গীকার করিলে সেই প্রতিজ্ঞা পরিত্যক্ত হইয়া পড়িবে। প্রবল তৈত্তিরীয় শ্রুতি বাক্যের সহিত দুর্ব্বল ছান্দোগ্য বাক্যের একবাক্যতা দ্বারা আকাশের উৎপত্তি সমর্থন করা হইতেছে এই সূত্রে-

প্রতিজ্ঞাহানিরব্যতিরেকাচ্ছব্দেভ্যঃ ৷৷-(ব্রহ্মসূত্র-২।৩।৬)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ-আচার্য শঙ্কর ভাষ্য করিতেছেন-

'যেনা অশ্রুতং শ্রুতিং ভবত্যমতং মতমবিজ্ঞাতং বিজ্ঞাতম্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।১।৩)

"যাঁহার (-যদ্বিষয়ক জ্ঞানের) দ্বারা অশ্রুত বিষয় শ্রুত হয়, অবিজ্ঞাত বিষয় বিজ্ঞাত হয়" ইত্যাদি

'আত্মনি খল্বরে দৃষ্টে শ্রুতে মতে বিজ্ঞাতে ইদং সর্বং বিদিতম্'- (বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪।৫।৬)

"প্রিয়ে, আত্মা দৃষ্ট হইলে, শ্রুত হইলে, বিচারিত হইলে এবং বিজ্ঞাত হইলে এই সমস্তই বিজ্ঞাত হয়" ইত্যাদি;

'কস্মিন্নু ভগবো বিজ্ঞাতে সর্বমিদং বিজ্ঞাতং ভবতি'- (মুণ্ডক উপনিষৎ-১।১।৩)

"হে ভগবন্, কোন্ বস্তুটী বিজ্ঞাত হইলে এই সমস্তই বিজ্ঞাত হয়।" ইত্যাদি এবং " আমার বাহিরে (—আমাকে বিষয় করে না, এতাদৃশ) কোন প্রকার বিদ্যা নাই, আত্মভিন্ন জ্ঞেয় কিছুই নাই", ইত্যাদি এই প্রকার প্রতিজ্ঞা বেদচতুষ্টয়ান্তর্গত প্রত্যেক উপনিষদে অবগত হওয়া যাইতেছে।

সেই প্রতিজ্ঞার এইপ্রকারে অহানি অর্থাৎ বাধাভাব (—অপরিত্যাগ ) হয়, যদি সমগ্র বস্তুজাত বিজ্ঞেয় ব্রহ্ম হইতে অভিন্ন হয়। যেহেতু বস্তু সকল ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন হইলে 'একবিষয়ক জ্ঞানের দ্বারা সকল বস্তু বিজ্ঞাত হয়', ইত্যাদি এই প্রতিজ্ঞা ত্যক্ত হইয়া পড়িবে। আর ব্রহ্মের সহিত বস্তু সকলের সেই অভিন্নতা এই প্রকারে যুক্তিসঙ্গত হয়, যদি সমগ্র বস্তুজাত এক ব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন হয়।

কিন্তু জীবাদির ন্যায় আকাশ উৎপন্ন না হইলেও যদি ব্রহ্মরূপ অধিষ্ঠানে কল্পিতরূপে অঙ্গীকৃত হয়, তাহা হইলেও উক্ত প্রতিজ্ঞা সিদ্ধ হতে পারে। তদুত্তরে বলিতেছেন —

'প্রকৃতি (—উপাদানকারন) ও বিকার (—তাহার কার্য্য ) অভিন্ন', এই যুক্তির দ্বারাই 'একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞানরূপ' প্রতিজ্ঞার সিদ্ধি শব্দ-সকল (শ্রুতিসকল) হইতে অবগত হওয়া যাইতেছে। কি সেই শ্রুতি, তাহা প্রদর্শন করিতেছেন— যেমন দেখ, "যাহার দ্বারা অশ্রুত বিষয় শ্রুত হয় " ইহা প্রতিজ্ঞা করিয়া কার্য্য ও কারণের অভিন্নতা প্রতিপাদনপর মৃত্তিকাদি দৃষ্টান্তসকলের দ্বারা একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞানরূপ এই প্রতিজ্ঞা সমর্থিত হইতেছে।

আর তাহা সাধন করিবার জন্যই পরবর্ত্তী শব্দসকল (— শ্রুতিবাক্যসকল )

"হে সোম্য, উৎপত্তির পূর্ব্বে ইহা (—জগৎ ) এক ও অদ্বিতীয় সদ্রূপেই বিদ্যমান ছিল"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।১), "তিনি ঈক্ষণ করিলেন", "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩), ইত্যাদি এই প্রকারে ব্রহ্মের কার্য্য সকলকে প্রদর্শন করিয়া "এই সকলেই এতদাত্মক অর্থাৎ এই সদাখ্য আত্মার দ্বারা আত্মবান"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।৮।৭) এইপ্রকারে আরম্ভকরতঃ ছান্দোগ্যের ষষ্ঠ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি পর্য্যন্ত কারণের সহিত কার্যসকলের অভিন্নতা প্রদর্শন করিতেছে।

সেই হেতু আকাশ যদি ব্রহ্মের কার্য্য না হয়, তাহা হইলে ব্রহ্ম বিজ্ঞাত হইলে আকাশ বিজ্ঞাত হইবে না; আর তাহা হইলে 'একবিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞান' প্রতিজ্ঞার পরিত্যাগ হইয়া পড়িবে। প্রতিজ্ঞার পরিত্যাগের দ্বারা কিন্তু বেদের অপ্রমাণ্য সাধন করা যুক্তিসঙ্গত নহে।

যেহেতু দেখ, প্রত্যেক উপনিষদে সেই সেই শ্রুতিসকল প্রতিজ্ঞাটীকেই স্থাপন করিতেছেন, যথা —

'ইদং সর্বং যদয়মাত্মা '-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।৪।৬)

"এই সমস্তই 'তাহা', যাহা এই আত্মা",

'ব্রহ্মৈবেদমমৃতং পুরস্তাৎ'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-২।২।১১)

"এই অমৃতস্বরূপ ব্রহ্মই পুরোভাগে অবস্থিত", ইত্যাদি এই সকল।

সেইহেতু (—শ্রৌত প্রতিজ্ঞা এই প্রকারেই সিদ্ধ হয় বলিয়া ) বহ্নি প্রভৃতির ন্যায়ই আকাশই উৎপন্ন হয়, ইহা অঙ্গীকার করিতে হইবে ; স্বকপোলকল্পিত ব্যাখ্যার দ্বারা তাহার অন্যথা করা উচিত নহে।

আর যে বলা হয়েছে 'শ্রুতিতে পঠিত হয় নাই, বলিয়া আকাশ উৎপন্ন হয় না' তাহা যুক্তিসঙ্গত নহে, যেহেতু আকাশের উৎপত্তি-বিষয়ক অন্য শ্রুতি প্রদর্শিত হইয়াছে। যথা— "সেই এই হইতে আকাশ উৎপন্ন হইল"-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।১) ইত্যাদি। হ্যাঁ সত্য, তাহা প্রদর্শিত হইয়াছে, কিন্তু তাহা "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩), এই অন্য শ্রুতির সহিত বিরুদ্ধ মনে হয়। না, তাহা বলিতে পারি না, যেহেতু সকল শ্রুতির জন্য একবাক্যতা হইয়া থাকে( —সকল শ্রুতি একই অর্থ প্রতিপাদন করেন )।

আবার শঙ্কা হইল যে- অবিরুদ্ধ শ্রুতিসকলের একবাক্যতা হউক, এখানে কিন্তু তাহাদের মধ্যে বিরোধ কথিত হইয়াছে; যেহেতু একবার মাত্র শ্রুত স্রষ্টার সহিত স্রষ্টব্য পদার্থদ্বয়ের যুগপৎ বা ক্রমশঃ সম্বন্ধ সম্ভব নহেঃ যেহেতু তেজঃ ও আকাশ দুইটীরই যুগপৎ প্রথমে উৎপত্তি ( সমুচ্চয়—) সম্ভব নহে এবং যেহেতু শাখাভেদে তাহাদের উৎপত্তির প্রাথম্য প্রতিপাদনরূপ বিকল্প ও সম্ভব নহে।

উত্তরে সিদ্ধান্তী বলেন— ইহা দোষ নহে, তৈত্তিরীয় তেজের সৃষ্টির তৃতীয়ত্ব অর্থাৎ তৃতীয় স্থলে বর্ণণা শ্রুত হইয়াছে, যথা— সেই এই আত্মা হইতে আকাশ উৎপন্ন হইল, আকাশ হইতে বায়ু, এবং বায়ু হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল ইত্যাদি"। এই শ্রুতিকে কদাপি অন্য প্রকারে পরিণত (—ব্যাখ্যা ) করিতে পারা যায় না। ছান্দ্যোগ্যশ্রুতিকে কিন্তু অন্যপ্রকারে পরিণত করতে পাওয়া যায়, যথা— 'তিনি আকাশ ও বায়ুকে সৃষ্টি করিয়া "তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন", ইত্যাদি। এই ছান্দ্যোগ্য শ্রুতি প্রধানভাবে তেজের উৎপত্তি প্রতিপাদিকা হইয়া অন্য শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ আকাশের উৎপত্তিকে নিশ্চয়ই বারণ করিতে সমর্থ নহে। যেহেতু আকাশকে উৎপত্তি অঙ্গীকৃত হইলে ছান্দ্যোগ্যশ্রুতির সহিত বিরোধ হয় না, ইহা উপরে প্রদর্শিত হইয়াছে। একই ছান্দ্যোগ্য বাক্যের দুইটী ব্যাপার অর্থাৎ উভয়প্রকার অর্থ সম্ভব নহে। কারণ তাহাতে বাক্যভেদদোষ ও অন্যশ্রুতির সহিত বিরোধ হইবে। অতএব ছান্দ্যোগ্যশ্রুতি আকাশের উৎপত্তি নিরাকরণ করিতে পারে না, ইহা সিদ্ধ হইল।

আচ্ছা, একই স্রষ্টার অনেক স্রষ্টব্যের সহিত সম্বন্ধের ন্যায় একই বাক্যের অনেক অর্থ হইবে না কেন? তদুত্তরে সিদ্ধান্তী বলিতেছেন — স্রষ্টা কিন্তু এক হইলেও ক্রমশঃ অনেক স্রষ্টব্যকে সৃষ্টি করিতে পারেন। শ্রুতিবাক্যের অর্থবোধকালে কিন্তু তাহা সম্ভব নহে , এইহেতু একবাক্যতা কল্পনা করা সম্ভব হইলে বিরুদ্ধ অর্থ প্রতিপাদিকারূপে শ্রুতিকে ত্যাগ করা উচিত নহে।

আমরা কিন্তু একবারমাত্র শ্রুত স্রষ্টার সহিত দুইটী স্রষ্টব্য বস্তুর সম্বন্ধ অভিপ্রায় (—স্বীকার ) করিতেছি না, যেহেতু অন্য শ্রুতির (তৈত্তিরীয় শ্রুতির) বলে আকাশাদি অন্য স্রষ্টব্য বস্তু সংগৃহীত হইয়া থাকে।

আর যেমন -'সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জলান্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৩।১৪।১)

"এই সমস্তই ব্রহ্মস্বরূপ, যেহেতু তাঁহা হইতে উৎপন্ন হয়, তাঁহাতেই বিলীন হয় এবং তাঁহাতেই প্রাণনক্রিয়া করে (—স্থিতিকালে তদাশ্রয়েই বর্ত্তমান থাকে" ), এই স্থলে সকল বস্তুর সাক্ষাদ্ভাবেই ব্রহ্ম হইতে যে উৎপত্তি শ্রুত হয়, তাহা যেমন শ্রুতির প্রদেশান্তরে বিহিত তেজঃপ্রমুখ সৃষ্টিক্রমকে বারণ করেন না এইরূপে তেজেরও যে ব্রহ্ম হইতে উৎপত্তি শ্রুত হয় , তাহা অন্য শ্রুতিতে বিহিত আকাশপ্রমুখ সৃষ্টিক্রমকে বারণ করিতে সমর্থ নহে।

এখন আবার শঙ্কা হইল- কিন্তু "সর্ব্বং খলু" ইত্যাদি এই বাক্যটী শম (রাগদ্বেষাদিরাহিত্য) বিধানের জন্য, যেহেতু "তাঁহা হিতে উৎপন্ন হয় এবং তাঁহাতে বিলীন হয় এবং তদাশ্রয়েই প্রাণনক্রিয়া করে, অতএব শান্ত হয়ে উপাসনা করিবে", এইপ্রকার শ্রুত হইতেছে। সুতরাং ইহা সৃষ্টি প্রতিপাদক বাক্যই নহে। সেইহেতু শ্রুতির অন্যস্থলে বিহিত সৃষ্টির ক্রমকে ইহা নিবারণ করিবে, ইহা সঙ্গত নহে। কিন্তু " তৎ তেজোহসৃজত" ইত্যাদি ইহা সৃষ্টিপ্রতিপাদক বাক্য, সেইহেতু শ্রুতিতে যেইপ্রকার বর্ণিত হইয়াছে, সেইপ্রকার ক্রমকেই গ্রহন করা উচিত, ইত্যাদি।

তদুত্তরে কথিত হইতেছে—না, এইপ্রকার বলিতে পার না, যেহেতু তেজের (—তেজঃসৃষ্টির ) প্রাথম্যের অনুরোধে অন্য শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ আকাশপদার্থকে পরিত্যাগ করা উচিত নহে, যেহেতু ক্রম পদার্থের (দ্রব্যের) ধর্ম্ম। আর দেখ,

"তিনি তেজকে সৃষ্টি করিলেন", এই স্থলে ক্রমের বাচক কোন শব্দ নাই কিন্তু অর্থ হইতে (—তদপূর্ব্বে অন্য পদার্থের উৎপত্তি শ্রুত না হওয়ায়) ক্রম অবগত হওয়া যাইতেছে (—অনুমতি হইতেছে )।

তাহা (—অনুমতি সেই অশ্রৌত ক্রম ) কিন্তু "বায়ু হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল", শ্রুত্যন্তরে প্রসিদ্ধ তৃতীয় স্থানাপন্ন হওয়ারূপ শ্রৌত ক্রমের দ্বারা নিবারিত হইতেছে; কারণ এতাদৃশ অশ্রৌত ক্রমাপেক্ষা শ্রৌত ক্রম বলবান।

আর আকাশ ও তেজের যুগপৎ প্রথমে উৎপত্তিবিষয়ক যে বিকল্প এবং সমুচ্চয়, তাহারা অসম্ভাবনা ও অস্বীকৃতির দ্বারা নিবারিত হইয়াছে। অতএব তৈত্তিরীয় ও ছান্দোগ্য, এই শ্রুতিদ্বয়ের মধ্যে বিরোধ নাই; সুতরাং তাহারা অপ্রমান নহে।

 

No comments:

জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ-

  শ্রীভগবানুবাচ ময্যাসক্তমনাঃ পার্থ যোগং যুঞ্জন্মদাশ্রয়ঃ৷ অসংশয়ং সমগ্রং মাং যথা জ্ঞাস্যসি তচ্ছৃণু ৷৷ ১   ‘শাঙ্করভাষ্য’   অনুস...