Thursday, 29 July 2021

উপাসনা বা ধ্যান আসনে উপবেশন করিয়াই সম্ভবঃ-


বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রের আসীনাধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় হইল উপাসনাকালে আসন বা উপবেশনের আবশ্যকতা। অনেকে মনে করেন আসনাদি নিয়মের আবশ্যকতা নাই কারণ উপাসনা মানস ব্যাপার হওয়ায় শরীর স্থিতির নিয়ম নাই, যেহেতু শরীর হইতে মন ভিন্ন পদার্থ। ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

"আসীনঃ সম্ভবাৎ"-(ব্রহ্মসূত্র- ৪/১/৭)

শঙ্করাচার্য শারীরকমীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন- আসনে উপবিষ্ট হইয়াই উপাসনা করিবে। তাহাতে হেতু কি?- যেহেতু তাহা সম্ভব। সমানাকারা মানসবৃত্তির যে প্রবাহকরণ তাহার নাম উপাসনা। তাহা কিন্তু যিনি গমন করেন, বা যিনি ধাবিত হন, তাঁহার পক্ষে সম্ভব নহে; যেহেতু গতি প্রভৃতি চিত্তের বিক্ষেপকারক। যিনি দণ্ডায়মান থাকেন তাঁহার পক্ষেও দেহধারণে ব্যাপৃত মন সূক্ষ্মবস্তু নিরীক্ষণ করিতে সমর্থ হয় না। আর যিনি শয়ান থাকেন, তাঁহারও মন অকস্মাৎ নিদ্রার দ্বারা অভিভূত হইয়া পড়ে।

যিনি আসনে উপবিষ্ট থাকেন, তাঁহার পক্ষে কিন্তু এই জাতীয় বহুদোষ সহজে পরিহৃত হইয়া থাকে, এইহেতু তাঁহার পক্ষে উপাসনা সম্ভব।

আসনসিদ্ধেরই ধ্যান সিদ্ধ হয়। পতঞ্জলি যোগসূত্রে বলছেন-

স্থিরসুখামাসনম্ ।।-(পাতঞ্জল যোগসূত্র, সাধনপাদ্- ৪৬)

-যেভাবে অনেকক্ষণ স্থিরভাবে সুখে বসিয়া থাকা যায়, তাহার নাম আসন।

ভাষ্যকার ব্যাস বলছেন- তা যেমন পদ্মাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন স্বস্তিক (আসন), দণ্ডাসন সোপাশ্রয়, পর্যঙ্ক, ক্রৌঞ্চ-নিষদন, হস্তি-নিষদন, উষ্ট্র-নিষদন ও সমসংস্থান এগুলি স্থির সুখজনক ও যথা সুখকারক হলেই হলো আসন। যেভাবে উপবেশন করলে শরীর অক্লেশে স্থৈর্যসম্পন্ন হয় তাকে স্থিরসুখ বা যথাসুখ বলে।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...