শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রের (৪/১/৮) ভাষ্যে বলিতেছেন-'ধৈ' ধাতুর অর্থ ইহাই যে, সমানাকারা চিত্তবৃত্তির প্রবাহ করা।
পতঞ্জলি
বলছেন-"তত্র প্রত্যয়-একতানতা ধ্যানম্"-(পাতঞ্জল যোগসূত্র, বিভূতিপাদ-২)
অর্থাৎ
ধারণাজনিত চিত্তের প্রত্যয়ের অর্থাৎ জ্ঞানবৃত্তির একতানতা হল ধ্যান। ভাষ্যকার ব্যাস
বলছেন-সেই দেশে (যে শরীরের আভ্যন্তরীণ নাভিচক্রাদি দেশে অথবা ওঙ্কারাদি বাহ্যবিষয়ে
ধারণা অভ্যাস করার কথা বলা হয়েছে তাতে) ধ্যেয় বস্তুর আলম্বনে চিত্তের জ্ঞানবৃত্তির
একতানতা বা একরূপ প্রবাহ, যা অন্য প্রত্যয়ের দ্বারা সম্বন্ধিত নয়, তা হলো ধ্যান।
অর্থাৎ
সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান নিরন্তর একভাবে প্রবাহিত হইতে থাকিলে তাহাকে ‘ধ্যান’ বলে। ধ্যান
হলো অবিচ্ছিন্ন তৈল ধারার মতো বা বাতাসহীনতায় কম্পবিহীন দীপশিখার মত, চিত্তের সঙ্গে
বিষয়ের সংযোগ। আলোচ্যে, বিষয় হলো পুরুষের স্বরূপ, অথবা দেবদেবীর মূর্তি বা ওঙ্কারে
চিত্তের লয় হওয়া ধ্যান। যোগীযাজ্ঞবল্ক্য মতে ধ্যানই জীবকুলের বন্ধন ও মোক্ষের কারণ।
বিষয়-ধ্যান বন্ধনের আর স্বরূপ-ধ্যান ও ওঙ্কার-ধ্যান মোক্ষের কারণ।
সদানন্দ
যোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলছেন- "অদ্বিতীয় বস্তু বিষয়ে অন্তঃকরণের বিচ্ছিন্ন
বিচ্ছিন্ন বৃত্তি প্রবাহকে ধ্যান বলে।"-(বেদান্তসার-২০৭)
ধারণার
পটুতার অভাবে অদ্বিতীয় আত্মবস্তুকে, মন একতানভাবে ধরে রাখতে পারেনা, মধ্যে মধ্যে রূপ-রসাদিতে
চিত্ত ধাবিত হয়- আবার তাকে আত্মবৃত্তিতে যুক্ত করতে হয়। এরূপ বৃত্তি প্রবাহকেই ধ্যান
বলে।
অপরোক্ষানুভূতিতে
শংকরাচার্য চিত্তের একবস্তুতে স্থিতিলাভকেই ধ্যান বলে মেনেছেন। যথা-
"আমি
ব্রহ্মই হই এই সদ্বৃত্তি দ্বারা আলম্বনশূন্যভাবে অবস্থিতিই পরমানন্দদায়িনী ধ্যান শব্দ
দ্বারা বিখ্যাত।"-(অপরোক্ষানুভূতি-১২৩)
এইরূপ
অবস্থায় বাহ্যবস্তুর জ্ঞান থাকে না।.
No comments:
Post a Comment