এই প্রশ্নের উত্তরে আচার্য সদানন্দ যোগী তৎকৃত বেদান্তসারে বলেছেন যে—"বেদান্তো নাম উপনিষৎপ্রমাণং তদুপকারীণি শারীরকসূত্রাদীনি চ।" উপনিষৎ প্রমাণম্ এই কথাটির দুইপ্রকার অর্থ বোঝা যায়। প্রথম অর্থে উপনিষদের যা প্রমাণ তাই বেদান্ত, বেদান্তের অপর নাম উত্তরমীমাংসা, তর্কের আলোক সম্পাতে যে শাস্ত্রের সাহায্যে উপনিষদের অর্থবোধ সুগম হয়ে থাকে তাই উত্তরমীমাংসা বা বেদান্ত; পক্ষান্তরে যে মীমাংসার মূলে উপনিষৎ প্রমাণরূপে বিদ্যমান রয়েছে তারই নাম বেদান্ত। এইরূপে বিচার করলে দেখা যায় যে উপনিষৎই বেদান্ত শব্দের মুখ্য অর্থ, উপনিষদের অর্থবোধের সহায় হয় বলে শারীরকসূত্র (ব্রহ্মসূত্র) বা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রভৃতি বেদান্ত শব্দের গৌণ অর্থ।
ব্রহ্মবিদ্যাই
উপনিষৎ শব্দের মুখ্য অর্থ। এই ব্রহ্মতত্ত্ব উপনিষদে
প্রতিপাদিত হয়েছে এই জন্যই উপনিষদের
অপর নাম ব্রহ্মবিদ্যা বা বেদান্ত। ভগবান্
শঙ্করাচার্য বৃহদারণ্যক উপনিষদের ভাষ্যভূমিকায় বলেছেন—"সেয়ং ব্রহ্মবিদ্যা উপনিষচ্ছব্দবাচ্যা"। যারা গুরুর
সমীপবর্তী হয়ে শ্রদ্ধাপূর্বক এই ব্রহ্মবিদ্যাকে অবলম্বন
করেন তাদের জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি প্রভৃতি সাংসারিক অনর্থসমূহের বিনাশ হয়। সংসার-কারণ অবিদ্যার সমূলে উচ্ছেদ সাধিত হয় এবং পরব্রহ্মপদ লাভ হয়। এইজন্যই ব্রহ্মবিদ্যার অপর নাম উপনিষৎ।
সুতরাং
বেদের অন্তে কথিত সেই ব্রহ্মবিদ্যা অর্থাৎ উপনিষদ্ভাগই বেদান্ত; এবং তার অর্থবোধের সহায়ক বা উপকারী বলে
ব্রহ্মসূত্র, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রভৃতি অন্যান্য গ্রন্থও বেদান্ত নামের যোগ্য।
তথ্যসূত্রঃ-
১.
সদানন্দ যোগীন্দ্র বিরচিত বেদান্ত-সারঃ, নৃসিংহ সরস্বতীকৃত টীকা।
২.
ভগবান শঙ্করাচার্যের বৃহদারণ্যক উপনিষৎ ভাষ্য।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ডিসেম্বর
১৯, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment