খৃষ্টীয় ১৩শ শতকে আচার্য শঙ্করানন্দ আবির্ভূত হন। শঙ্করানন্দ বিদ্যারণ্যের গুরু ছিলেন। বিদ্যারণ্য তৎকৃত পঞ্চদশী ও বিবরণ-প্রমেয়-সংগ্রহের প্রারম্ভে গুরু শঙ্করানন্দের পাদপদ্মে তাঁর প্রণতি জানিয়েছেন। শঙ্করানন্দ (শঙ্করানন্দেন্দ্র সরস্বতী) কাঞ্চীকামকোটি সর্বজ্ঞ পীঠে ১৩৮৫-১৪১৭ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মঠাধীশ ছিলেন বলে জানা যায়। আবার অনেকের মতে তিনি শৃঙ্গেরি শারদা পীঠের মঠাধীশ ছিলেন, কিন্তু শৃঙ্গেরির প্রচলিত পরম্পরায় আচার্যের নাম উল্লেখ নেই। পূর্বাশ্রমে আচার্যের নাম ছিল মহেশ, জন্মস্থান ভারতের মধ্যার্জুনে, পিতার নাম বালচন্দ্র। তাঁর গুরু ছিলেন তৎকালীন শৃঙ্গেরি মঠাধীশ আচার্য বিদ্যাতীর্থ। তাঁর গুরুর সাথে শঙ্করানন্দ কর্ণাটক অঞ্চলে সনাতন ধর্ম ও অদ্বৈতবেদান্তের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। শঙ্করানন্দই কর্ণাটকে আটটি অদ্বৈত মঠ প্রতিষ্ঠায় প্রধানত ভূমিকা রেখেছিলেন। এরপরে তিনি হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং গুরুসেবায় মনোনিবেশ করেন, যিনি তথায় ১৫ বৎসর ধরে সিদ্ধির জন্য তপস্যা করছিলেন। গুরুর সিদ্ধির পর কাঞ্চীতে ফিরে এসে তিনি পীঠের আচার্য হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
শঙ্করানন্দ
একাধারে অসামান্য পণ্ডিত ও সাধক ছিলেন।
দ্বৈতবাদী মধ্বাচার্য তিনবার শঙ্করানন্দের সাথে বিচার করে পরাজিত হন বলে শুনা
যায়। এটা হতেই শঙ্করানন্দের অলৌকিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর "ব্রহ্ম-সূত্র-দীপিকা" ব্রহ্মসূত্রের শঙ্কর ভাষ্যানুসারী অতি সরল ও প্রাঞ্জল টীকা।
ঐ দীপিকাকে ব্রহ্মসূত্রের বৃত্তি হিসেবে গ্রহণ করা যায়। শঙ্করানন্দের ভগবদ্গীতা টীকাও অতি মনোরম। তিনি ১০৮ খানা উপনিষদের উপর বৃত্তি রচনা করে ভগবান্ শঙ্করাচার্যের ভাষ্য ধারার পুষ্টি সাধন করেছেন। এতদ্ব্যতীত তিনি আত্মপুরাণ নামে এক অতি উপাদেয়
গ্রন্থ রচনা করে অদ্বৈতবাদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত, শ্রুতির রহস্য এবং যোগবিদ্যা প্রভৃতি সাধক জীবনের বহু জ্ঞাতব্য বিষয় উক্ত পুরাণে সন্নিবেশ করেন। শঙ্করানন্দের আত্মপুরাণ আত্ম-জিজ্ঞাসুর অমুল্য রত্ন। আচার্য শঙ্করানন্দই মধ্বাচার্যের আক্রমণ প্রতিহত করে অদ্বৈতবেদান্তের বিজয় গৌরব অক্ষুণ্ন রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।....
তথ্যসূত্রঃ-
১.
বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
২.
https://www.kamakoti.org/peeth/origin.html
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ডিসেম্বর
২৭, ২০২৩ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment