পুরুষ যার দ্বারা প্রযত্নবান হয়ে কর্ম করে, তাই পুরুষার্থ।সর্বতন্ত্র-স্বতন্ত্র মহাপ্রাজ্ঞ ধর্মরাজাধ্বরীন্দ্র বেদান্ত-পরিভাষায় বলেছেন—"ধর্মার্থকামমোক্ষাখ্যেষু চতুর্বিধ-পুরুষার্থেষু।"
ইতিহাস,
পুরাণ প্রভৃতিতে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষকে পুরুষার্থ বলে উক্ত হয়েছে এবং লোকেও এরা
পুরুষার্থ বলে প্রসিদ্ধ। মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত আছে— "ধর্মে চার্থে চ কামে
চ মোক্ষে চ ভরতর্ষব। যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহাস্তি ন তৎ ক্কচিৎ।"-(মহাভারত-১.৬২.৫৩)
বিষ্ণুপুরাণে
বর্ণিত আছে—"ধর্মার্থকামমোক্ষাখ্যাঃ পুরুষার্থা উদাহৃতাঃ-(বিষ্ণুপুরাণ-১.১৮.২১)
ধর্মের স্বরূপ সম্বন্ধে আচার্যগণের মধ্যে মতভেদ আছে। সাংখ্য মতে যাগাদির অনুষ্ঠান জন্য অন্তঃকরণের বৃত্তিবিশেষই ধর্ম। ন্যায় ও বৈশেষিক মতে যাগাদি জন্য আত্মার অদৃষ্ট নামক বিশেষ গুণই ধর্ম। ভট্ট কুমারিল শ্লোকবার্ত্তিকে এই সকল মতের খণ্ডন করে শবর স্বামীর মতানুসারে বেদ বিহিত যাগ, দান, হোম প্রভৃতি কর্মকেই ধর্ম বলেছেন। শ্লোকবার্তিক ও তার টীকা কাশিকা প্রভৃতি দেখলে এ সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যাবে। ঐ কর্মগুলো স্বরূপতঃ ধর্ম নয়, শ্রেয়ঃ সাধনরূপেই ধর্ম। কর্ম স্বরূপতঃ প্রত্যক্ষ হলেও ওর ধর্ম শ্রেয়ঃসাধনত্ব প্রত্যক্ষ নয়। তাই কর্ম বা ধর্ম শ্রেয়ঃ সাধনরূপে অলৌকিক অতীন্দ্রিয়। অর্থ হল লোক প্রসিদ্ধ ধন-সম্পত্তি। ধর্ম ও অর্থ এই দুটি সুখের হেতু বলে গৌণ পুরুষার্থ। কাম হল বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধবশতঃ উৎপন্ন সুখবিশেষ। মোক্ষ হল অবিদ্যা-নিবৃত্তি-স্বরূপ আনন্দময় ব্রহ্ম। এই দুটি সুখ-স্বরূপ বলে মুখ্য পুরুষার্থ। তন্মধ্যে ব্রহ্ম-রূপ মোক্ষ পরম পুরুষার্থ। অন্য কোন পুরুষার্থ পরম পুরুষার্থ নয়।.......................
শ্রীশুভ চৌধুরী
ডিসেম্বর ২১, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment