'সর্বং ব্রহ্মেতি বিজ্ঞানাদিন্দ্রিয়গ্রামসংয়মঃ যমোঽয়মিতি সম্প্রোক্তোঽভ্যসনীয়ো মুহুর্মুহুঃ' অর্থাৎ 'সকল বস্তুই ব্রহ্ম' এই বিজ্ঞান দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহের সংযমকেই 'যম' বলা হয়েছে, তা পুনঃ পুনঃ অভ্যাস করা উচিত। এটা ভগবান্ শঙ্করাচার্যের বচন। ছান্দোগ্য শ্রুতিতে পুরুষযজ্ঞের কথনে যে তপস্যাদি রয়েছে,'অথ যত্তপো দানমার্জবহিংসা সত্যবচনমিতি...'(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৩।১৭।৪) তপস্যা, দান, সরলতা, অহিংসা ও সত্যবচন-এইসবগুলিই যম-মূলক।
'যম' সম্পর্কে যোগসূত্রের সাধনপাদে বলা হয়েছে-
"অহিংসা-সত্যাস্তেয়-ব্রহ্মচর্যাপরিগ্রহা যমাঃ" অর্থাৎ -অহিংসা, সত্য, অস্তেয় (অচৌর্য), ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ-এইগুলিকে ‘যম’ বলে। এইগুলি জাতি, দেশ, কাল ও সময় দ্বারা অবচ্ছিন্ন বা সীমাবদ্ধ না হলে সার্বভৌম মহাব্রত বলে কথিত
হয়। যোগভাষ্যকার এই বিষয়ে উদাহরণ দিচ্ছেন, দেশাবচ্ছিন্না
অহিংসা যথা—তীর্থে হনন করবে না ইত্যাদিরূপ। সময়াবচ্ছিন্ন
অহিংসা যথা— দেবব্রাহ্মণার্থে অথবা ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধেতেই
হিংসা কর্তব্য, অন্যত্র হিংসা না করা। কালাবচ্ছিন্না অহিংসা
যথা—চতুর্দশী বা পুণ্যদিনে হনন না করা ইত্যাদিরূপ।
যোগভাষ্যকার ভগবান্ ব্যাস এগুলোর অর্থ করেছেন এইভাবে— এদের মধ্যে অহিংসা হলো সমস্তপ্রকারে,
সর্বদা, সমস্ত ভূতের প্রতি অনভিদ্রোহ অর্থাৎ
বৈরিতা না করা। শ্রতি বলেন—'মা হিংস্যাৎ সর্বভূতানি'। সত্য হলো বাক্যে ও মনে যথাযথ হওয়া। মুণ্ডক শ্রুতি বলছে—'সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ'৷ স্তেয় হলো, শাস্ত্রবিধি না মেনে অপরের দ্রব্য
নিজের করা। তাই স্পৃহাশুন্যভাবে স্তেয়ের অর্থাৎ চুরির প্রতিষেধ হল অস্তেয়। এবিষয়ে
শ্রুতি—'মা গৃধ কস্যসিদ্ধনং'। ব্রহ্মচর্য
হলো গোপনীয় ইন্দ্রিয়-উপস্থের সংযম। তদ্বিষয়ে শ্রুতি যথা—'সত্যেন লভ্যস্তপসা হ্যেষ আত্মা, সম্যগ্ জ্ঞানেন
ব্রহ্মচর্য্যৈণ নিত্যম্।' বিষয়গুলির অর্জন, রক্ষণ, ক্ষয়, সঙ্গ ও হিংসাদি
অনুভবে দোষ দর্শন হেতু সেগুলির স্বীকার না করা হল অপরিগ্রহ। শ্রুতি বলেন—'ত্যাগেনৈকেনামৃতত্বমানশুঃ।'
যার অন্তরে অহিংসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সমীপে
অপরের স্বাভাবিক বৈরিতাও পরিত্যক্ত হয়। হৃদয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে কোন কর্ম না করেই
যোগী নিজের জন্য বা অপরের জন্য সেই কর্মের ফল লাভ করবার শক্তি অর্জন করেন। অচৌর্য প্রতিষ্ঠিত
হলে যোগীর নিকট সমুদয় ধনরত্নাদি এসে থাকে। ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠিত হলে বীর্য বা শক্তি
লাভ হয়। অপরিগ্রহ দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্বজন্ম স্মৃতিপথে উদিত হবে। এটাই যোগসূত্রকার
ভগবান্ পতঞ্জলির অভিপ্রায়।.........
শ্রীশুভ চৌধুরী
ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment