আচার্য বিদ্যারণ্য স্বামী "বিবরণ-প্রমেয়-সংগ্রহঃ" শীর্ষক গ্রন্থে বলছেন—"শম, দম প্রভৃতি সাধনানুষ্ঠানে তৎপর সাধকের মনন ও নিদিধ্যাসনের পরে, বেদবাক্যরূপ প্রমাণ হতে সর্বাত্মভূত ব্রহ্মবিষয়িণী যে বিশুদ্ধ মানসী বৃত্তি উৎপন্ন হয়, তাতে যে চিদভিব্যক্তি হয়ে থাকে, তা স্বতঃপ্রমাণ এবং তাই 'শাঙ্করী' বা ভগবান্ শঙ্করের প্রসাদে লব্ধ হয়। এই চিদভিব্যক্তিই ব্রহ্মবিজ্ঞান এবং এটাই জীবের সকল প্রকার অজ্ঞানকে বিনষ্ট করে থাকে।"—(পরাশর উপপুরাণ, ১৪ অধ্যায়)
তাৎপর্য
হল— শম, দম, তিতিক্ষা, উপরতি প্রভৃতি বক্ষ্যমাণ সাধন-সমূহের
অভ্যাসে যার চিত্ত বিশুদ্ধ হয়েছে, এরূপ সাধক—মনন ও নিদিধ্যাসনের ফলে তার অন্তঃকরণে বেদান্ত-প্রতিপাদ্য
অদ্বয় ব্রহ্ম বিষয়ে সর্বপ্রকার বিশুদ্ধ বৃত্তি উদিত হয়, সেই মানসীবৃত্তিতে চিদাত্মার
যে স্ফুরণ বা প্রতিবিম্ব পতিত হয়, তাই হল জীবের চরম ও স্বতঃসিদ্ধ প্রমা। ভগবান্ শঙ্করের
অনুগ্রহেই এই প্রকার চিদভিব্যক্তি ঘটে থাকে। এইরূপ চিদভিব্যক্তিকেই আচার্যগণ ব্রহ্মবিজ্ঞান
বলে থাকেন। যে পর্যন্ত এরূপ চিদভিব্যক্তি সাধকের মানসী বৃত্তিতে না হয়, সে পর্যন্ত
তার সকল অনর্থের মূলভূত যে অজ্ঞান, তার নাশ হবার সম্ভাবনা নেই। এ দ্বারা এটাই বুঝানো
হচ্ছে যে, বেদান্তবাক্য শ্রবণের দ্বারা আপাততঃ পরোক্ষ যে ব্রহ্মজ্ঞান হয়ে থাকে, তা
দ্বারা অজ্ঞান নিবৃত্তি হয় না।চিত্তকে সম্পূর্ণরূপে সাধনানুষ্ঠানের দ্বারা রাগদ্বেষ
বিমুক্ত করতে না পারলে অজ্ঞান-নাশন ব্রহ্মসাক্ষাৎকার হবার সম্ভাবনা নেই। বেদান্তের
অধ্যয়ন বা আলোচনা দ্বারা আপাততঃ যে জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তাকে ব্রহ্মজ্ঞান বলা যায়,
কিন্তু তা ব্রহ্মবিজ্ঞান নয়।
......................................................................
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ডিসেম্বর
২০, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment