ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি জীবাত্মার পরিচ্ছিন্নপরিমাণতা বুদ্ধিরূপ উপাধিকৃত, কিন্তু স্বরূপতঃ তাহা বিভু। উক্ত প্রসঙ্গেই পরবর্তী অধিকরণে আত্মার উপর আরোপিত আরেকটী ধর্ম্ম বিষয়ে আলোচনার সুত্রপাত করা হইতেছে। বেদান্ত মীমাংসাশাস্ত্রের কর্ত্রধিকরণম্ এ প্রতিপাদ্য বিষয় হইল- উপাধিযুক্ত জীবেরই কর্ত্তৃত্ব জড়া বুদ্ধির নহে। তবে জীবের এই কর্ত্তৃত্ব স্বাভাবিক নহে, পরন্তু তাহা অধ্যস্ত। এই বিষয় পরবর্তী অধিকরণে আলোচ্য। তবে এই অধিকরণে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-
কর্তা
শাস্ত্রার্থবত্ত্বাৎ ৷। ব্রহ্মসূত্র ২.৩.৩৩৷৷
শারীরকভাষ্যে
ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য ভাষ্য করিতেছেন-তদগুণসারতার প্রসঙ্গেই জীবের অপর ধর্ম্মও
বিশদরূপে ব্যাখ্যাত হইতেছে- এই জীবই কর্ত্তা। তাহার হেতু কি? যেহেতু শাস্ত্র সার্থক
হয়। আর জীব কর্ত্তা হইলেই 'যজ্ঞ করিবে', 'হোম করিবে', 'দান করিবে' ইত্যাদি এইপ্রকার
বিধিবোধক শাস্ত্র সার্থক হইয়া থাকে। অন্যথা তাহা অনর্থক হইয়া পড়িবে। যেহেতু শাস্ত্র
সৎ কর্ত্তার জন্য কর্ত্তব্য বিশেষের উপদেশ করিতেছেন। আর কর্ত্তৃত্ব না থাকিলে শাস্ত্রের
উপদেশ সঙ্গত হয় না, ইহা শ্রুতি ও অর্থাপত্তিপ্রমাণবলে অবগত হওয়া যায়।
কিন্তু
'অনশ্মন্'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-৩।১।১) অর্থাৎ 'অপর যে ঈশ্বর অর্থাৎ নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ
ও মুক্তস্বভাব বিশিষ্ট সর্বজ্ঞ ও সর্বসত্তা (মায়া) উপাধি বিশিষ্ট ঈশ্বর ভোগ করেন না।'
আবার 'অসঙ্গঃ'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪।৩।১৫) অর্থাৎ 'এই পুরুষ অসঙ্গ' ইত্যাদি শ্রুতির
বিরোধবশতঃ অর্থাপত্তি দূর্ব্বল। তদুত্তরে সিদ্ধান্তী স্বপক্ষে শ্রুতি প্রদর্শন করিতেছেন
এইপ্রকারে-
'এষ
হি দ্রষ্টা শ্রোতা মন্তা বোদ্ধা কর্তা বিজ্ঞানাত্মা পুরুষঃ'-(প্রশ্ন উপনিষৎ-৪।৯)
"ইনিই
(শরীরে প্রবিষ্ট এই আত্মাই) দ্রষ্টা, শ্রোতা, মননকর্ত্তা, বোদ্ধা (-নিশ্চয়কারী), কর্ত্তা
বিজ্ঞানাত্মা (বিজ্ঞাতৃস্বভাব) এবং পুরুষ।"
ইত্যাদি এই শাস্ত্রও সার্থক হয়।
No comments:
Post a Comment