Tuesday, 30 July 2019

পরব্রহ্ম পূর্ণ, একমাত্র প্রজ্ঞানঘন স্বভাবশুদ্ধ পরব্রহ্ম মাত্র অবশিষ্ট থাকেঃ-


শুক্লযজুর্বেদীয় বৃহদারণ্যক উপনিষদ্, পঞ্চম অধ্যায়, প্রথম ব্রাহ্মণ-
ॐ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্ পূর্ণাত্পূর্ণমুদচ্যতে .
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..

ॐ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ..(ঈশোপনিষদ্ শান্তিপাঠ)
শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ভাবার্থঃ- বাক্য ও মনের অগোচর তথা ইন্দ্রিয়ের অগোচর পরব্রহ্ম পূর্ণ অর্থাৎ সর্ব্বব্যাপী, আকাশের ন্যায় পরিব্যাপক ও উপাদিবর্জ্জিত। সেই পরোক্ষ ব্রহ্মই আবার সোপাধিক নামরূপাবস্থাপন্ন তথাপি উহা পূর্ণই কারণ নিজের প্রকৃতরূপ পরমাত্মভাবে ব্যাপকই বটে কিন্তু উপাধিপরিচ্ছিন্ন কার্যাকারে ব্যাপক নহে। পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদ্গত হন অর্থাৎ এই বিশেষাবস্থাপ্রাপ্ত কাৰ্য্যাত্মক ব্ৰহ্ম, ইহা সেই পূর্ণ—কারণরূপী পরব্রহ্ম হইতেই উৎপন্ন হয়। পুনশ্চ, কাৰ্য্যাবস্থারও স্বরূপতঃ পূর্ণ যে, কাৰ্য্য-ব্রহ্ম (সোপাধিক আত্মা) বিদ্যা বা তত্ত্বজ্ঞান প্রভাবে তাহার পূর্ণত্ব গ্রহণ করিয়া—আত্মার শুদ্ধ স্বরূপমাত্র অধিগত হইয়া অর্থাৎ পূৰ্ব্বে যে, ভৌতিক দেহেন্দ্রিয়াদি উপাধির সহিত সম্বন্ধ নিবন্ধন ব্ৰহ্ম ও আত্মার মধ্যে যে ভেদ প্রতীতি ছিল, তাহা অপনীত করিয়া, ঔপাধিক অসত্য ভেদবুদ্ধি দূরীকৃত হইলে, কেবলই পূর্ণ অন্তর-বাহির শূ্ন্য, একমাত্র প্রজ্ঞানঘন স্বভাবশুদ্ধ পরব্রহ্ম মাত্র অবশিষ্ট থাকে।


পরব্রহ্মবাচ্য প্রণব। আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
(উল্লেখ্য মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনমূলক গ্রন্থ ঈশ্বরকৃষ্ণের ‘সাংখ্যকারিকা-১’ “দুঃখত্রয়াভিঘাতাজ্জিজ্ঞাসা…” অনুসারে দুঃখ ত্রিবিধ। সাংখ্যকারিকার গৌড়পাদ ভাষ্যানুসারে দুঃখত্রয় হইল,—আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক। আধ্যাত্মিক দুঃখ দ্বিবিধ—শারীরিক অর্থাৎ বাতপিত্তশ্লেষ্মাজ্বরাদি ইত্যাদি রোগজনিত ও মানসিক অর্থাৎ প্রিয়বিয়োগাদি ইত্যাদি জাত দুঃখ। আধিভৌতিক দুঃখ মনুষ্য, পশু, পক্ষী ও স্থাবরাদি ভূত পদার্থ হইতে উৎপন্ন হয়। আধিদৈবিক দুঃখ দৈব প্রকোপে অথবা অতি শীতোষ্ণবর্ষাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপন্ন হয়।)

ॐ তথা অক্ষরের পরিব্যাপ্তি ও মহাব্যাহৃতির প্রকাশঃ-

ছান্দোগ্যের শ্রুতিতে ওঙ্কারের পরিব্যাপ্তির কথা বর্ণিত আছে-


‘প্রজাপতিঃ লোকান্ অভ্যতপ্যৎ, তেভ্যঃ অভিতপ্তেভ্যস্ত্রয়ীবিদ্যা সংপ্রাস্রবৎ, তামভ্যতপত্তস্যা অভিতপ্তায়া এতানি অক্ষরাণি সংপ্রাস্রবন্ত, ভূর্ভুবঃ স্বরিতি।। (সামবেদীয় ছান্দোগ্যোপনিষদ্-২/২৩/২)।

শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ভাবার্থঃ-লোক যাহাতে নিষ্ঠা প্ৰাপ্ত হইয়া অমৃতত্ব লাভ করে, তাহার নিরূপণের জন্য বলিতেছেন-প্ৰজাপতি- অর্থ-বিরাটপুরুষ অথবা কশ্যপ মুনি (কারণ, তিনিও প্ৰজাপতি নামে অভিহিত হন)। তিনি লোকসমূহকে উদ্দেশ্য করিয়া অর্থাৎ তাহাদের সার গ্রহণের ইচ্ছায় অভিতাপ করিয়াছিলেন, অর্থাৎ তদ্বিষয়ে ধ্যানরূপ তপস্যা করিয়াছিলেন। অভিতপ্ত সেই লোকত্ৰয় হইতে সারভুতা ত্রয়ী বিদ্যা নিঃসৃত হইল, অর্থাৎ প্রজাপতির মনোমধ্যে প্রতিভাত হইল ; পূর্বের ন্যায় তাহারও ধ্যান করিলেন; অভিতপ্ত (চিন্তিত) তাহা (ত্ৰয়ী বিদ্যা) হইতে এই অক্ষরসমূহ-ভূ, ভুবঃ, ও স্বঃ, এই ব্যাহৃতি কয়টি প্রকাশ পাইল।


তানি অভ্যতপত্তেভ্যঃ অভিতপ্তেভ্য ওঙ্কারঃ সংপ্রাস্রবৎ, তৎ যথা শঙ্কুনা সর্বাণি পর্ণানি সংতৃণ্নানি এবম্ ওঙ্কারেণ সর্বা বাক্ সংতৃণ্না, ওঙ্কার এবেদং সর্বম্, ওঙ্কার এবেদং সর্বম্’।। (সামবেদীয় ছান্দোগ্যোপনিষদ্-২/২৩/৩)।

শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ভাবার্থঃ-প্ৰজাপতি সেই অক্ষরসমূহকে লক্ষ্য করিয়া ধ্যান করিলেন ; অভিধ্যাত সেই অক্ষরসমূহ হইতে ওঙ্কার নিঃসৃত হইল, (ওঙ্কারই ব্ৰহ্ম)। সেই ব্ৰহ্ম কি প্রকার, তাহা বলিতেছেন-শঙ্কু অর্থাৎ পত্রনাল দ্বারা যেমন সমস্ত পত্র অর্থাৎ পত্ৰাবয়ব নিবন্ধ-ব্যাপ্ত থাকে, এইরূপ পরমাত্মার প্রতীকস্বরূপ ওঙ্কাররূপী ব্ৰহ্ম দ্বারাও সমস্ত বাক্ অর্থাৎ শব্দঃরাশি পরিব্যাপ্ত; যেহেতু ‘অকারই সমস্ত বাক্ স্বরূপ’ ইত্যাদি শ্রতি রহিয়াছে। অথচ যে কিছু নাম বা শব্দ, তৎসমস্তই পরমাত্মার বিকার ; অতএব, ওঙ্কারই এতৎসমস্তস্বরূপ; আদরার্থ দ্বিরুক্তি করা হইয়াছে। ওঙ্কারের স্তুতি প্ৰকাশন লোকাদি নিষ্পাদন বৰ্ণিত হইয়াছে।


অমৃতময় ব্রহ্মের বিশিষ্টপ্রকার গুণ ও শক্তি পুরস্কারে উপাসনাঃ-



ছান্দোগ্য শ্রুতির তৃতীয় অধ্যায়ের চতুর্দশ খণ্ডে বর্ণিত আছে-


 
‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম, তজ্জলানীতি শান্ত উপাসীত। অথ খলু ক্রতুময় পুরুষো যথা ক্রতুময়রর্স্মিন্ লোকে পুরুষো ভবতি তথেতঃ প্রেত্য ভবতি, স ক্রতুং কুর্বীত।। (সামবেদীয় ছান্দোগ্যোপনিষদ্-৩/১৪/১)।।


শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- 
পুনশ্চ, অনন্তগুণসম্পন্ন, অনন্তশক্তি এবং অনেক প্রকারে উপাসনীয় ত্রিপাদ অমৃতময় ব্রহ্মের বিশিষ্টপ্রকার গুণ ও শক্তি পুরস্কারে উপাসনা বিধানের জন্য (বক্ষ্যমাণ উপায়) নির্দেশ করিতেছেন—সৰ্ব্ব অর্থ-সমস্ত ; ‘খলু’ পদটি বাক্যের শোভাবৰ্দ্ধক নিপাত। ‘ইদং’ অৰ্থ-নাম ও রূপাকারে পরিণত এবং প্রত্যক্ষাদি প্রমাণের বিষয়ীভূত। এই জগৎ ব্ৰহ্মস্বরূপ-কারণস্বরূপ ; বৃদ্ধতম অর্থাৎ অতিশয় প্ৰাচীন বলিয়া ব্ৰহ্ম। ভাল, সর্ব পদার্থের ব্ৰহ্মরূপতা হয় কি প্রকারে ? এতদ্যুত্তরে বলিতেছেন-যেহেতু "তজ্জলান” তেজঃ, জল ও পৃথিবীক্রমে সমস্তই সেই ব্ৰহ্ম হইতে জাত , অতএব তজ্জ ; সেইরূপ সেই উৎপত্তিক্রমেরই বিপরীতভাবে সেই ব্ৰহ্মেই লীন হয়, অৰ্থাৎ তৎস্বরূপে মিলিত হয়, এই জন্য তল্ল; এইরূপ স্থিতিকালেও তাহাতেই প্ৰাণন বা চেষ্টা করে, এইরূপ কালত্ৰয়ই সমানভাবে ব্ৰহ্মাত্মক ; কারণ, তদ্ভিন্নরূপে জগতের, প্রতীতি হয় না। অতএব, নিশ্চয়ই এই জগৎ তৎস্বরূপ। যেরূপ এই জগতের সেই এক,অদ্বিতীয় ব্ৰহ্মাত্মতা সিদ্ধ হইতে পারে। যেহেতু এ সমস্তই ব্ৰহ্ম; অতএব, শান্ত-রাগদ্বেষাদিদোষরহিত, অর্থাৎ সংযত হইয়া সেই যে সর্বাত্মক ব্ৰহ্ম, তাঁহাকে বক্ষ্যমাণ গুণযোগে উপাসনা করিবে। কিরূপে উপাসনা করিবে?
ক্ৰতু করিবে; ক্ৰতু অর্থ-নিশ্চয় অধ্যবসায়, অর্থাৎ ইহা এইরূপই বটে, অন্যরূপ নহে, এই দৃঢ় বিশ্বাস; তাদৃশ ক্রতু করিবে ; পরবর্তী 'উপাসীত' পদের সহিত ইহার সম্বন্ধ। ক্রতুর অনুষ্ঠান দ্বারা কি প্রয়োজন সাধন করিতে হয় ? কি রূপেই বা ক্ৰতু করিতে হয় ? আর ক্রতুর অনুষ্ঠানই বা অভিপ্ৰেত প্ৰয়োজনের সাধক হয় কি প্রকারে ? এই বিষয় প্রতিপাদনার্থে 'অথ' ইত্যাদি গ্ৰন্থ আরব্ধ হইতেছে।
অথ খলু শব্দ হেত্বর্থে প্রযুক্ত, যেহেতু ক্ৰতুময়-ক্রতুবহুল, অর্থাৎ অধ্যবসায়াত্মক (সংকল্প-প্ৰধান) পুরুষ অর্থাৎ জীব ইহলোকে (বৰ্ত্তমান দেহে ) যথাক্রতু-যাহার যে প্রকার ক্রতু, সে যথাক্রতু-যেরূপ অধ্যবসায়-সম্পন্ন অর্থাৎ যে প্রকার নিশ্চয়বান হয়। এই দেহ হইতে প্ৰয়াণ করিয়া-মরিয়া সেইরূপ হয়; অর্থাৎ স্বকৃত ক্রতুর অনুরূপ ফলভাগী হইয়া থাকে । "জীব দেহান্তকালে যে যে বিষয় স্মরণ করত কলেবর পরিত্যাগ করে, হে কৌন্তেয়, সর্বদা তদ্ভাবে ভাবিত ( সেই চিন্তায় তন্ময়) থাকায় মৃত্যুর পর সেই সেই পদার্থকেই প্ৰাপ্ত হয়"- ইত্যাদি শাস্ত্ৰ হইতেও ইহা এইরূপ জানা যায়। যেহেতু এই প্রকার ব্যবস্থা শাস্ত্রদৃষ্ট, অতএব, সেই পুরুষ এই প্রকার অবগত হইয়া-আমরা যাদৃশ ক্রতুর কথা বলিব, তাদৃশ ক্ৰতু করিবে। যেহেতু শাস্ত্রের প্রামাণ্যানুসারেই ক্রতুর অনুরূপ এইপ্রকার ফলনিষ্পত্তি উপপন্ন হইতেছে, অতএব, তথাবিধ ক্রতু (উপাসনা) অবশ্য কৰ্ত্তব্য।


ছান্দোগ্য শ্রুতিতে ওঙ্কার উপসনায় অমৃতত্ব প্রাপ্তিঃ-




‘ত্রয়ো ধর্মস্কন্ধা যজ্ঞোহধ্যয়নং দানমিতি প্রথমস্তপ এব দ্বিতীয়ো ব্রহ্মচার্যাচার্যকুলবাসী, তৃতীয়োহত্যন্তম্ আত্মানম্ আচার্যকুলে অবসাদযন্ । সর্ব এতে পুণ্যলোকা ভবন্তি ব্রহ্মসংস্থোহমৃতত্বমেতি’।। -(সামবেদীয় ছান্দোগ্যোপনিষদ্-২/২৩/১)।

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- ওঙ্কারের উপাসনা বিধানের উদ্দেশ্যে “ত্ৰয়ঃ ধৰ্ম্মস্কন্ধাঃ” ইত্যাদি গ্ৰন্থ আরব্ধ হইতেছে। এরূপ মনে করা উচিত হয় না যে, কেবল সামাবয়বভুত উদগীথাদিস্বরূপ ওঙ্কারের উপাসনা হইতে যে ফল লাভ করা যায়, ইহা হইতেও সেই ফলই প্ৰাপ্ত হওয়া যায় ; তবে কি ? না-সমস্ত সামোপসনা ও সমস্ত কৰ্ম্মানুষ্ঠান দ্বারা যে অমৃতত্ব ফল লাভ করা যায় না ; সেই অমৃতত্ব-প্রাপ্তিরূপ ফলটি একমাত্র এই ওঙ্কারোপাসনা হইতেই লব্ধ হয়। তাহার প্রশংসা জ্ঞাপনার্থই সামোপাসনা-প্রকরণে তাহার উপন্যাস করা হইয়াছে।

“ত্ৰয়ঃ” অর্থ-ত্রিসংখ্যক ; ধৰ্ম্মস্কন্ধ অর্থ-ধৰ্ম্মের বিভাগ ; তাহারা কি কি ? এই আকাঙক্ষায় বলিতেছেন, যজ্ঞ-অগ্নিহোত্ৰপ্রভৃতি, অধ্যয়ন-নিয়ম পূর্বক ঋক্ প্রভৃতি বিদ্যার অভ্যাস; দান-বেদীর বাহিরে অর্থাৎ যজ্ঞভিন্ন সময়ে যে, যাচকগণকে যথাশক্তি দ্রব্য প্ৰদান করা; ইহাই প্রথম ধৰ্ম্মস্কন্ধ; ইহা গৃহস্থে আশ্রিত বলিয়া, এতৎ-নিষ্পাদক গৃহস্থের সহযোগে নির্দিষ্ট হইতেছে। তপস্যাই দ্বিতীয় (ধৰ্ম্মস্কন্ধ); “তপঃ’ অর্থ- কৃচ্ছ অর্থাৎ প্রাজাপত্য ব্ৰতের অপর নাম কৃচ্ছ, তাছাড়া ক্লেশসাধ্য ব্ৰতমাত্রকেও কৃচ্ছ বলে, চান্দ্ৰায়ণ প্রভৃতি ব্রত; কেবল নিয়মিতভাবে আশ্ৰম-ধৰ্ম্মমাত্রে অবস্থিত সেই তপঃসম্পন্ন – তাপস কিংবা পরিব্রাজকই (তপঃ শব্দে বুঝিতে হইবে, কিন্তু) একেবারে ব্ৰহ্মসংস্থ, অর্থাৎ ব্ৰহ্মনিষ্ঠ অর্থনহে ; কেন না, ব্ৰহ্মসংস্থের সম্বন্ধে স্বতন্ত্রভাবেই অমৃতত্ব-ফলের উল্লেখ রহিয়াছে ; অতএব ইহাই দ্বিতীয় ধৰ্ম্মস্কন্ধ। আচাৰ্য্যকুলে (গুরুগৃহে) বাস করা যাহার স্বভাব, সেই আচাৰ্যকুলাবাসী এবং আচাৰ্য্যকুলেই অত্যন্ত অর্থাৎ যাবজ্জীবন নিয়মপূর্বক আপনার অবসাদনকারী অর্থাৎ দেহক্ষয়কারী (নৈষ্ঠিক) ব্ৰহ্মচারী তৃতীয় ধৰ্ম্মস্কন্ধ। এখানে “অত্যন্তং” ইত্যাদি বিশেষণ হইতে, প্ৰতীতি হইতেছে যে, এই ব্ৰহ্মচারী ‘নৈষ্ঠিক” ব্ৰহ্মচারী। কেননা, “উপকুর্ব্বাণের যে ব্ৰহ্মচৰ্য্য, তাহা কেবল বেদশিক্ষার্থ কিন্তু তাহা দ্বারা কোনও পুণ্যলোক লাভ হয় না। ব্রহ্মচারী দুই প্ৰকার-(১) উপকুৰ্ব্বাণ, (২) নৈষ্ঠিক। তন্মধ্যে যাঁহারা উপনয়নের পর দ্বাদশ বৎসর কাল ব্ৰহ্মচৰ্য্যপালন করিয়া-গুরুগৃহে বাস, গুরুশুশ্রুষা ও বেদবিদ্যাদি শিক্ষা করিয়া গুরুর অনুমতিগ্রহণপূর্বক সমাবৰ্ত্তন করে-গৃহে প্ৰত্যাগমনপূর্বক দারপরিগ্রহ করে তাঁহারা উপকুৰ্ব্বাণ ব্রহ্মচারী। আর যাঁহারা যাবজ্জীবন নিষ্ঠাপূর্ব্বক ব্রহ্মচর্য পালন করে অর্থাৎ সমাবৰ্ত্তনপূর্বক আর গৃহাশ্রমে প্রবেশ করে না, তাহাঁরা নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী।
ইহারা সকলেই অর্থাৎ উক্ত তিনপ্রকার আশ্রমীই উক্তপ্রকার ধৰ্ম্ম দ্বারা পুণ্যলোকভাগী হয়, অর্থাৎ, যাহাঁদের লোক (ভোগস্থান) পুণ্য (পবিত্র), তাহারা ‘পুণ্যলোক” পদবাচ্য। উক্ত আশ্রমিগণ সকলেই ঐ রূপ পুণ্যলোকগামী হইয়া থাকেন। উক্ত স্কন্ধ ত্ৰয়ের মধ্যে অনুক্ত অবশিষ্ট এবং (উক্ত স্কন্ধ ক্রয়াপেক্ষা) চতুর্থ পরিব্রাজকই (সন্ন্যাসীই এখানে) “ব্ৰহ্মসংস্থ’ শব্দের অর্থ, অর্থাৎ সেই পরিব্রাজকই সম্পূর্ণরূপে ব্ৰহ্মেতে অবস্থিত থাকেন, তজ্জন্য ঐ রূপ স্বৰ্গাদি পুণ্যলোক হইতে ভিন্নপ্রকার আত্যন্তিক অমৃতত্ব প্ৰাপ্ত হন ; কিন্তু, দেবগণের ন্যায় আপেক্ষিক (প্ৰলয়কাল পৰ্য্যন্ত জীবিত থাকারূপ) অমৃতত্ব নহে। অভিপ্ৰায় এই যে, এই অমৃতত্ব যদি পুণ্যলোকেরই উৎকৃষ্টাবস্থা হইত, তাহা হইলে কখনই তাহাকে পুণ্যলোক হইতে পৃথক করিয়া নির্দেশ করিতেন না।
প্ৰণবোপাসনার প্রশংসাৰ্থ এখানে আশ্রমগত ধৰ্ম্ম-ফলের উল্লেখ করা হইয়াছে মাত্ৰ, কিন্তু প্ৰকৃতপক্ষে তাহাদের ঐরূপ ফলবিধানার্থ নহে। স্মৃতিশাস্ত্রে, যে সমস্ত আশ্রম-ফল প্ৰসিদ্ধ আছে, এখানে তৎসমুদয়েরই অনুবাদ করিয়া প্ৰণবপোসনার ফল যে অমৃতত্বপ্ৰাপ্তি, ইহা জ্ঞাপন করত প্রণবসেবারই স্তুতি করিতেছেন। ব্ৰহ্মের ‘প্রতীক’ বলিয়া এই প্রণবই সেই সত্যস্বরূপ পরব্রহ্ম। কঠোপনিষদেও “এই অক্ষরই (প্ৰণবই) ব্ৰহ্ম, এবং এই অক্ষরই পর, অর্থাৎ ব্ৰহ্মপ্রতীক বলিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ”, এইরূপ কথা থাকায় প্ৰণবসেবায় যে, অমৃতত্ব ফল প্ৰাপ্তি, তাহা যুক্তিযুক্তই বটে৷


বৈদিক শান্তিপাঠঃ-





ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থ-

এই মন্ত্রত্রয়ে যে অর্থ প্রতিপাদিত হইয়াছে, শুক্ল যজুর্ব্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের অংশ বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম অধ্যায় তৃতীয় ব্রাহ্মণের শ্রুতি নিজেই সেই সমুদয় অর্থ প্রকাশ করিয়া বলিতেছেন -‘অসতঃ মা সৎ গময়’ ইতি, মৃত্যুই অসৎ ; এখানে মৃত্যু শব্দে স্বাভাবিক জ্ঞান ও কৰ্ম্ম অভিহিত হইয়াছে । অত্যন্ত অধঃপতনের কারণ বলিয়া উহাই অসৎ ; আর ‘সৎ’ হইতেছে অমৃত ; শাস্ত্রোপদিষ্ট জ্ঞান ও কৰ্ম্ম মৃত্যুভয় নিবারণের হেতু বলিয়া, তাহারা সৎ-পদবাচ্য। অতএব ইহার অর্থ হইতেছে যে, অসৎ হইতে অর্থাৎ অসৎ কৰ্ম্ম ও জ্ঞান হইতে আমাকে সতে অর্থাৎ শাস্ত্রানুযায়ী কৰ্ম্ম ও জ্ঞানের দিকে লইয়া যাও, অর্থাৎ দেবভাব লাভের উপায়ভূত আত্মভাব লাভ করাও। বাক্যের তাৎপৰ্য্যাৰ্থ বলিতেছেন—আমাকে অমৃত কর ; এই অর্থই প্রথম মন্ত্রটা বলিয়াছেন। সেইরূপ, তমসঃ মা জ্যোতিঃ গময়’ এই মন্ত্রে ও অর্থ বলিতেছেন—‘তমঃ’ অর্থ—মৃত্যু ; কেন না, অজ্ঞানমাত্রই বোধশক্তির আবরক, আবরক বলিয়াই তমঃশব্দবাচ্য ; তাহাই আবার মৃত্যুর হেতুভূত বলিয়া মৃত্যুস্বরূপ ; আর ‘জ্যোতিঃ অর্থ—অমৃত, অর্থাং তমের বিপরীত দৈব রূপ। জ্ঞান স্বভাবতই প্রকাশাত্মক, এই কারণে জ্যোতিঃ-শব্দবাচ্য ; তাহাই আবার অবিনাশাত্মক বলিয়া অমৃত ; সেই তমঃ হইতে আমাকে জ্যোতিতে লইয়া যাও।‘মৃত্যোঃ মা অমৃতং গময়’ ইত্যাদির অর্থও পূর্ববৎ, অর্থাৎ আমাকে অমৃত কর, দিব্য প্রাজাপত্য ( প্রজাপতিত্বরূপ ) ফল আমাকে লাভ করাও, ইহাই ঐ মন্ত্রে বলা হইয়াছে। -(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৩।২৮)




পরব্রহ্মবাচ্য প্রণব। আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
(উল্লেখ্য মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনমূলক গ্রন্থ ঈশ্বরকৃষ্ণের ‘সাংখ্যকারিকা-১’ “দুঃখত্রয়াভিঘাতাজ্জিজ্ঞাসা…” অনুসারে দুঃখ ত্রিবিধ। সাংখ্যকারিকার গৌড়পাদ ভাষ্যানুসারে দুঃখত্রয় হইল,—আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক। আধ্যাত্মিক দুঃখ দ্বিবিধ—শারীরিক অর্থাৎ বাতপিত্তশ্লেষ্মাজ্বরাদি ইত্যাদি রোগজনিত ও মানসিক অর্থাৎ প্রিয়বিয়োগাদি ইত্যাদি জাত দুঃখ। আধিভৌতিক দুঃখ মনুষ্য, পশু, পক্ষী ও স্থাবরাদি ভূত পদার্থ হইতে উৎপন্ন হয়। আধিদৈবিক দুঃখ দৈব প্রকোপে অথবা অতি শীতোষ্ণবর্ষাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপন্ন হয়।)

কামাদি দ্বারা প্রমাদের বন্ধহেতুত্বঃ-


মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস প্রণীত শ্রীমহাভারতের উদ্যোগপর্বের দ্বি-চত্বারিংশোহধ্যায়ের সনৎ-সুজাতীয় সম্বাদে ব্রহ্মার মানসপুত্র চিরকুমার পরমপ্রাচীন সনাতন ঋষি সনৎ-সুজাত কর্তৃক ধৃতরাষ্ট্রের বিবিধ প্রশ্নোত্তরে বলিতেছেন-
আস্যাদেষ নিঃসরতে নরাণাং ক্রোধঃ প্রমাদো মোহরূপশ্চ মৃত্যুঃ।
অহংগতনৈব চরন্ বিমার্গান্ ন চাত্মনো যোগমুপৈতি কিঞ্চিৎ।।৭।।
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- প্রমাদাখ্য মৃত্যু প্রথমতঃ সামান্য অহঙ্কারূপে মনুষ্য-চিত্তে প্রকটিত হইয়া থাকে। তৎপর উহাই বিশেষ অহঙ্কার রূপ ধারণ করে। ঐ অহঙ্কার হইতে কাম উৎপন্ন হয়, কাম প্রতিহত হইলেই ক্রোধরূপ ধারণ করে এবং তদ্ বশে মনুষ্য হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হইয়া মহামূঢ় অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অতঃপর অহঙ্কার-মমকাররূপ বৃত্তিতে অর্থাৎ অজ্ঞানবশত 'আমি,আমার'-এতাদৃশ বৃত্তিতে চিদাভাসরূপে প্রতিফলিত হইয়া ঐ জীব কুমার্গে অর্থাৎ বিষয়াভিমুখী বিপরীতমার্গে গমনপূর্বক আত্মযোগ হইতে বঞ্চিত হয়, অর্থাৎ পরমাত্মলাভে অসমর্থ হইয়া পুনঃ পুনঃ সংসারগতি লাভ করে।

Monday, 29 July 2019

উপাসকগণের জন্য অসীম পরমেশ্বর বিশেষ বিশেষরূপে অভিব্যক্ত হনঃ-


প্রশ্ন এই, পরমাত্মা ব্রহ্ম নির্গুণ, অরূপ, বিভু বিশ্বব্যাপক; কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ঠিক এর বিপরীত; তিনি সগুণ, তাঁর শরীর দৃশ্য, মথুরা, গোকুল, বৃন্দাবনাদি স্থানের একাংশে তাঁর স্থিতি, প্রাকৃত ব্যক্তির ন্যায় তাঁর অনুরাগ ক্রোধ বর্তমান, তিনি পরমাত্মা হবেন কিরূপে?

তদুত্তরে ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য প্রবোধসুধাকরে বলেছেনঅপর সকল দৃশ্যপদার্থই এই চক্ষু দ্বারা দৃশ্য হয়ে থাকে, কিন্তু ভগবান্ এই চক্ষু দ্বারা দৃষ্ট হন না, তিনি জ্ঞাননেত্রে দৃশ্য। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বরূপ প্রদর্শনকালে অর্জুনকে যে দিব্যচক্ষু প্রদান করেছিলেন, তা হতেই নরহরির অদৃশ্যতা সিদ্ধ হয়। কিন্তু তার প্রমাণ কোথায়? স্বয়ং ভগবান্ শ্রীগীতায় বলেছেন

তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা৷

দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্৷৷

-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ১১/)

তুমি নিজের প্রাকৃত স্থূল চক্ষু দ্বারা আমার বিশ্বরূপ দর্শন করতে সমর্থ হবে না। তোমাকে অপ্রাকৃত জ্ঞানচক্ষু দিচ্ছি। এই দিব্যচক্ষু দ্বারা আমার অঘটনঘটনসামর্থ্যরূপ যোগ-শক্তি দর্শন কর।

যেমন সূর্যমণ্ডল গগনের এক অংশে গোলাকারে দৃশ্যমান হন, কিন্তু সমগ্র বিশ্বকেই প্রকাশিত করেন এবং সকল লোক তাঁকে নানাস্থানে এককালে দর্শন করে থাকে, সেরূপ যদুনাথ যদ্যপি সাকার এবং একদেশে অবস্থিত বলে প্রতীয়মান হন, তথাপি তিনি সর্বব্যাপক সচ্চিদানন্দস্বরূপ সর্বাত্মা। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ এক হলেও যুগপৎ অনেক গোপিকার সহিত যুগলরূপে ক্রীড়া করেছিলেন। একই সূর্য, বহুস্থানস্থিত বহুলোকের যেরূপ যুগপৎ দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকেন, সেরূপ শ্রীকৃষ্ণ এক হয়েও যুগপৎ বিভিন্ন স্থানস্থিত বিভিন্ন ব্যক্তির প্রত্যক্ষ হয়েছিলেন। রাসলীলায় প্রত্যেক গোপীই যে এক সময়ে শ্রীকৃষ্ণসঙ্গ সুখ লাভ করেছিলেন, এর প্রমাণ বিষ্ণুপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতাদি গ্রন্থে রয়েছে। তাছাড়া বিদেহরাজ জনক এবং শ্রুতদেবনামক ব্রাহ্মণ নিজ নিজ গৃহে একই সময়ে তাঁর আতিথ্য সৎকার স্তব করে কৃতার্থ হয়েছিলেন। এই বিবরণ বিস্তৃতভাবে শ্রীমদ্ভাগবতের ১০ম স্কন্ধের ৮৬ অধ্যায়ে আছে।

পরমাত্মা অসীম হলেও উপাসকদিগের প্রতি কৃপা পরবশ হয়েই বিশেষ বিশেষরূপে প্রকাশিত হন। 'অতিমাত্রস্যাপি পরমেশ্বরস্য প্রাদেশমাত্রত্বমভিব্যক্তিনিমিত্তং স্যাত্৷ অভিব্যজ্যতে কিল প্রাদেশমাত্রপরিমাণঃ পরমেশ্বর উপাসকানাং কৃতে৷ প্রদেশবিশেষেষু বা হৃদযাদিষূপলব্ধিস্থানেষু বিশেষেণাভিব্যজ্যতে৷ অতঃ পরমেশ্বরেপি প্রাদেশমাত্রশ্রুতিরভিব্যক্তেরুপপদ্যত্।'-(ব্রহ্মসূত্র-..২৯,শাঙ্করভাষ্য) অর্থাৎ অতিমাত্র অসীমবিভু হলেও পরমেশ্বরের যে প্রাদেশমাত্রতা, তা অভিব্যক্তিরূপ নিমিত্তবশতঃ হবে। উপাসকগণের জন্য পরমেশ্বর প্রাদেশমাত্র পরিমাণযুক্তরূপে অভিব্যক্ত হন। অথবা হৃদয় প্রভৃতি উপলব্ধিস্থানভূত প্রদেশসকলে পরমেশ্বর বিশেষভাবে অভিব্যক্ত হন। অতএব অভিব্যক্ত হন বলে পরমেশ্বরেও প্রাদেশমাত্র শ্রুতি সঙ্গত।

ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ কুরুপাণ্ডবের সন্ধিস্থাপন-মানসে হস্তিনাপুরে গমন করলে, দূর্যোধন তাঁকে একাকী মনে করে কর্ণাদির মন্ত্রণানুসারে বন্ধন করবার আয়োজন করেন, তখন দুর্যোধন দেখলেনশ্রীকৃষ্ণের বিশাল দেহে যুধিষ্ঠিরাদি পাণ্ডবগণ, বলরাম, প্রদ্যুম্ন অস্ত্র-শস্ত্র-সমন্বিত সৈন্যসমেত যদুকুলের উপস্থিতি। এই বিবরণ মহাভারতের উদ্যোগপর্বের ১৩১ অধ্যায়ে রয়েছে। এইসব উদাহরণে দেখা যায়, একই শ্রীকৃষ্ণ যুগবৎ অনেকবৎ দৃষ্ট হয়েছেন, যা অপর কোন দৃশ্যমান পরিচ্ছিন্ন শরীরে নেই। শ্রীবৎস, যখন শ্রীকৃষ্ণকে বক্ষঃস্থলে আঘাত করেন, তখনও তিনি কি শ্রীকৃষ্ণের দ্বেষের পাত্র হয়েছিলেন? অসুর এবং অপর যারাই ভক্ত তাদের সমান ফল হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণের কেউই শত্রু নয়, কেউই মিত্র নয়। নরহরি যদুনাথ উত্তম-পথ-পার্শ্ববর্তী ফলবান্ বিটপীর তুল্য। তাই শত্রুমিত্রে সমান সদ্গতি দাতা শ্রীহরির অনুরাগ বিদ্বেষ কল্পনা করা অনুচিত। অতএব ভগবান্ শ্রীহরি কৃষ্ণ সাক্ষাৎ ঈশ্বর। সর্বভূতের অন্তর্য্যামী, সচ্চিদানন্দ, জ্ঞানস্বরূপ, প্রকৃতির অতীত বা তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যে পরমাত্মা, তিনিই এই যদুকুলতিলক শ্রীকৃষ্ণ।

তথ্যসূত্রঃ-

১. ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত "প্রবোধসুধাকর"
২. ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত শারীরকমীমাংসা ভাষ্য।




Sunday, 28 July 2019

প্রমাদই মৃত্যু, অপ্রমাদই অমরত্বঃ-



মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস প্রণীত শ্রীমহাভারতের উদ্যোগপর্বের দ্বি-চত্বারিংশোহধ্যায়ের সনৎ-সুজাতীয় সম্বাদে ব্রহ্মার মানসপুত্র চিরকুমার পরমপ্রাচীন সনাতন ঋষি সনৎ-সুজাত কর্তৃক ধৃতরাষ্ট্রের বিবিধ প্রশ্নোত্তরে বলিতেছেন-
....মোহো মৃত্যুঃ সম্মতো যো কবীণাম্। প্রমাদং বৈ মৃত্যুমহং ব্রবীমি সদাহপ্রমাদমমৃতত্বং ব্রবীমি।।৪।।
শাঙ্করভাষ্য ও নীলকন্ঠের টীকানুসারে ভাবার্থঃ- কোন কোন বিদ্বানের মতে অনাত্মবস্তুতে আত্মাভিমানরূপ মিথ্যাজ্ঞানই মোহ, আর মোহই মৃত্যু। আমি কিন্তু প্রমাদকেই মৃত্যু বলিয়া অভিহিত করি। স্বাভাবিক ব্রহ্মভাব হইতে বিচ্যুতিই প্রমাদ। এই প্রমাদ, পূর্বোক্ত মিথ্যা-জ্ঞানেরও কারণ, আত্মবিষয়ক অজ্ঞান। অজ্ঞানরূপী প্রমাদই মৃত্যু অর্থাৎ জন্মমরণাদি সর্ব অনর্থের বীজ মূল অজ্ঞান। আবার অপ্রমাদকেই অমরত্ব বলিয়া থাকি। অপ্রমাদ অর্থাৎ সম্যক অবেক্ষণ বা জ্ঞান অমৃতত্বের হেতু।

মহাভারতের বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্ শাঙ্করভাষ্যে 'মাধব' নাম মাহাত্ম্যঃ-


মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস প্রণীত শ্রীমহাভারতের অনুশাসন পর্ব্বের ১৪৯ তম অধ্যায়ে বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্ এ শ্রীভগবানের এক নাম 'মাধব' নামের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে। ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য ২১ শ্লোক অনুসারে-
'ইনি মায়া অর্থাৎ শ্রীলক্ষ্মীর পতি (ধব) এই হেতু ইনি মাধব। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ২।৫ ব্রাহ্মণে বর্ণিত মধুবিদ্যা তথা আত্মবিদ্যা দ্বারা তাহাকে জানা যায় বলিয়া তাহার নাম মাধব। মহাভারতের উদ্যোগপর্বের ৭০।৪ অনুসারে- মা শব্দের অর্থ বুদ্ধিবৃত্তি; তিনি মৌন, ধ্যান ও যোগ দ্বারা আমার উপাধিভূত সেই বুদ্ধিবৃত্তি দূরীকৃত করিয়াছেন বলিয়া তাহার নাম মাধব।'

বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য ৩১ শ্লোক অনুসারে-
'ইনি অবিদ্যার পতি, এই নিমিত্ত মাধব বলা যায়। হরিবংশের ৩।৮৮।৪৯ এ বর্ণিত আছে-মা শব্দে হরির মায়া, ধব শব্দে স্বামী। যেহেতু তুমি মায়ার অধীশ্বর সেইহেতু তোমাকে মাধব বলা হয়।'

বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য ৯১ শ্লোক অনুসারে-
'ইনি মধুকুলোৎপন্ন বলিয়া মাধব নামে অভিহিত হন।'


'বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্' শাঙ্করভাষ্যে 'কৃষ্ণ' নাম মাহাত্ম্যঃ-



মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস প্রণীত শ্রীমহাভারতের অনুশাসন পর্ব্বের ১৪৯ তম অধ্যায়ে বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্ এ শ্রীভগবানের এক নাম 'কৃষ্ণ' নামের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে। 
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য-২০ এ বর্ণিত আছে-'কৃষি শব্দ ভূমিবাচক এবং ন শব্দ নিবৃত্তিবাচক, বিষ্ণু এই উভয় ভাব সংযুক্ত হেতু শাশ্বত কৃষ্ণ নামে অভিহিত।'-(মহাভারত উদ্যোগপর্ব ৭০।৫) 
ব্যাস বলছেন-সচ্চিদানন্দাত্মক কৃষ্ণ, কৃষ্ণবর্ণহেতু কৃষ্ণ নামে খ্যাত।

'হে অর্জুন, যেহেতু আমি 'কার্ষ্ণায়স' অর্থাৎ লৌহনির্মিতহল-স্বরূপ হয়ে পৃথিবী কর্ষণ করি এবং আমার বর্ণ কৃষ্ণ, সেই হেতু আমি কৃষ্ণ।'-(মহাভারত শান্তিপর্ব ৩৪২।৭৯)



'বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্' শাঙ্করভাষ্যে 'গোবিন্দ' নাম মাহাত্ম্যঃ-


শ্রীমহাভারতের অনুশাসন পর্ব্বের ১৪৯ তম অধ্যায়ে বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রম্ এ শ্রীভগবানের এক নাম 'গোবিন্দ' নামের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে।ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের বিষ্ণুসহস্রনাম শাঙ্করভাষ্য-৩৩ এ বর্ণিত আছে-

'মোক্ষধর্মে লিখিত আছে যে, শ্রীহরি বলেছেন-আমি প্রনষ্টা ধরণীকে উদ্ধার করেছিলাম বলে দেবগণ আমাকে গোবিন্দ নামে স্তব করে থাকেন।'-(মহাভারত, শান্তিপর্ব- ৩৪২।৭০)

হরিবংশে আছে-'আমি দেবতাদের অধিপতি ইন্দ্র, কিন্তু হে কৃষ্ণ তুমি পৃথিবীর আধিপত্য প্রাপ্ত হয়েছ, এইজন্য লোকে চিরকাল তোমাকে গোবিন্দ বলে স্তব করবে।'-(হরিবংশ ২।১৯।৪৫)

হরিবংশে আরও আছে-'গো' শব্দে বাণী, হরি সেই বাণীকে লাভ করেছেন, এই হেতু দেবগণ ও মুনিগণ তাঁকে গোবিন্দ বলে স্তব করেছেন।-(হরিবংশ ৩।৮৮।৫০)


ছান্দোগ্য উপনিষদ্ শাঙ্করভাষ্যে ॐ তথা প্রণব মাহাত্ম্যঃ-

সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ্ এর প্রারম্ভেই-


‘ওম ইত্যেদক্ষরম্ উদ্গীথম্ উপাসীতোমিতি হি উদ্গায়তি তস্যোপব্যাখ্যানম।। (ছান্দোগ্যোপনিষদ্-১।১।১)।।

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- 

'ওম্' এই অক্ষরকে উদ্গীথরূপে উপাসনা করিবে।'ওম' এই অক্ষরটি পরমাত্মার সন্নিহিত অভিধান অর্থাৎ বাচক নাম;প্রিয় নাম গ্ৰহণ করিলে অর্থাৎ উচ্চারণ করিলে, যেমন সাধারণ লোক সন্তুষ্ট হয়, তেমনি সেই ওঙ্কার-নাম উপাসনায় প্ৰযুক্ত হইলে, তিনিও (পরমাত্মাও) প্ৰসন্ন হইয়া থাকেন। যদিও ওঙ্কার পরমাত্মার বাচক হউক, তথাপি এখানে “ইতি’ শব্দ সহযোগে প্ৰযুক্ত হওয়ায়, সেই ওঙ্কারই বাচকভাব হইতে ব্যাবৃত্ত হইয়া কেবল ‘ওম্' এই শব্দস্বরূপমাত্র প্রতিপাদন করিতেছে। তাহার ফলে, প্রতিমাদির ন্যায় ইহাও পরমাত্মার ‘প্রতীক'-ভাব প্রাপ্ত হইতেছে।

ওঙ্কারই যে, এই প্রকারে নাম ও প্রতীকরূপে উপাসনার উৎকৃষ্ট সাধন, ইহা সমস্ত বেদান্তশাস্ত্রে জানা গিয়াছে; এবং জপ, কৰ্ম্ম ও বেদপাঠের আদি ও অন্তে প্রয়োগবাহুল্য বশতও ইহার (ওঙ্কারের ) শ্রেষ্ঠত্ব প্ৰসিদ্ধ রহিয়াছে৷ অতএব বর্ণাত্মক এই অক্ষরই (ওঙ্কারই) “উদ্গীথ’ ভক্তির অবয়ব বা অংশভূত; এই জন্য 'উদ্গীথ’ শব্দবাচ্য;অর্থাৎ উদ্গীথরূপে ইহার উপাসনা করিবে।অর্থাৎ কৰ্ম্মাঙ্গ, উদগীথের অবয়বস্বরূপ পরমাত্ম-প্রতীক ওঙ্কারে একাগ্রতারূপ দৃঢ়বুদ্ধি বৃদ্ধি করবে। স্বয়ং শ্রুতিই ওঙ্কারের উদগীথত্ব কথনের হেতু বলিতেছেন “ওমিতি” ইত্যাদি। যেহেতু ওঙ্কারকে আরম্ভ করিয়াই উদ্গীথ গান করিয়া থাকেন, এই কারণে ওঙ্কার উদ্‌গীথ স্বরূপ। সেই অক্ষরের উপব্যাখ্যান-ব্যাখ্যা,অৰ্থাৎ এই প্রকার উপাসনা, এইপ্ৰকার বিভূতি (মহিমা), এইপ্ৰকার ফল ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণন প্ৰবৃত্ত ক্রিয়াপদ হইতেছে।


বেদান্তদর্শন শাস্ত্র ব্রহ্মসূত্র শাঙ্করভাষ্যে ওঙ্কার মাহাত্ম্যঃ-



মহর্ষি বাদরায়ণের উত্তরমীমাংসা বেদান্ত দর্শনের তৃতীয় অধ্যায়ের তৃতীয় পাদে বর্ণিত আছে-
'ব্যাপ্তেশ্চ সমঞ্জসম্'।-(ব্রহ্মসূত্র ৩।৩।৯)

শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী বঙ্গানুবাদঃ- এবং যেহেতু 'ওম্' সকল বেদেই পরিব্যাপ্ত হইয়া আছে, সেইহেতু উদ্গীথ বিদ্যার উপাসনায় 'ওম্'-কে বিশেষরূপে গ্রহণ করিলেই সামঞ্জস্য বিধান করা হইবে।

শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ব্যাখ্যাঃ- যেহেতু 'ওম্' সকল বেদেই সাধারণভাবে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছে, সেই জন্য আমাদিগকে বুঝিতে হইবে আমরা কোন্ বিশেষ 'ওম্'- এর উপসনা করিব। উদ্গীথের অংশবিশেষ সেই 'ওম্'-কে বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়া আমাদিগকে উদ্গীথ উপাসনা করিতে হইবে-আমরা এই 'ওম্' কে সামবেদের 'ওম্' বলিয়াই জানিয়া থাকি। সামবেদীয় ছান্দোগ্য শ্রুতিতেই আছে-
‘ওম ইত্যেদক্ষরম্ উদ্গীথম্ উপাসীতোমিতি.......।।অর্থাৎ পরমাত্মার সন্নিহিত অভিধান অর্থাৎ বাচক নাম 'ওম্' এই অক্ষরকে উদ্গীথরূপে উপাসনা করিবে। অতএব বর্ণাত্মক এই অক্ষরই (ওঙ্কারই) “উদ্গীথ’ ভক্তির অবয়ব বা অংশভূত; এই জন্য 'উদ্গীথ’ শব্দবাচ্য;অর্থাৎ উদ্গীথরূপে ইহার উপাসনা করিবে।-(ছান্দোগ্যোপষদ্-১।১।১)।।

ব্রহ্মসূত্র শাঙ্করভাষ্যে শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ-



শাস্ত্রযোনিত্বাৎ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র- ১।১।৩৷৷

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- প্রদীপের ন্যায় সর্বার্থপ্রকাশক মহৎ যে ঋগ্বেদ বেদান্তাদি শাস্ত্র, যাহা বেদাঙ্গ, পুরাণ, স্মৃতি ধর্ম্মশাস্ত্র প্রভৃতি অনেক বিদ্যাস্থান দ্বারা পুষ্ট এবং যাহা সর্বজ্ঞকল্প অর্থাৎ সর্ব্বপ্রকার জ্ঞানের আকর হইলেও অচেতন হওয়াই যাহাকে প্রায় সর্বজ্ঞ বলা যায়, তাহার যোনি অর্থাৎ উপাদান এবং নিমিত্ত কারণ ব্রহ্ম। 'অস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বসিতং যদেতদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদঃ অর্থবাঙ্গিরসঃ।' অর্থাৎ এই যে ঋগ্বেদাদি চতুর্বেদ ইহারা এই মহৎভূতের নিঃশ্বসিত তথা নিঃশ্বাসের ন্যায় ব্রহ্মের বিনাপ্রযত্নে অভিব্যক্ত।- (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২.৪.১০)এই প্রকার শ্রুতি আছে বলিয়া ঋগ্বেদাদি শাস্ত্র সর্ব্ববিধ জ্ঞানের আকর স্বরূপ, তাহা বিনাপ্রযত্নে লীলান্যায়ে পুরুষের নিঃশ্বাসের ন্যায় মহৎ ভূত ব্রহ্মরূপ যোনি কারণ হইতে উৎপন্ন। শাস্ত্ররূপ প্রমাণ হইতেই জগতের জন্মাদির কারণরূপে ব্রহ্ম অধিগত হন, ইহাই অভিপ্রায়।

ছান্দোগ্যোপনিষদ্ শাঙ্করভাষ্যে ওঙ্কার মহিমাঃ-


‘তেনেয়ং ত্রয়ী বিদ্যা বর্ততে ওমিতি-আশ্রাবয়তি, ওমিতি শাসতি, ওম্-ইত্যুদ্গায়তী, এতস্যৈবাক্ষরস্য অপচিত্যৈ মহিম্না রসেন’।।- (সামবেদীয় ছান্দোগ্যোপনিষদ্-১/১/৯)।।
শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- অতঃপর এখন উপাস্যত্ব নিবন্ধন লোকের রুচি সমুৎপাদনার্থ এই অক্ষরের স্তুতি করিতেছেন। কি প্রকার? সেই এই প্রকৃত (ওঙ্কার) অক্ষর দ্বারা এই ঋগ্বেদাদিরূপ ত্রয়ীবিদ্যা অর্থাৎ বেদ-বিহিত কৰ্ম্ম, কেননা, ত্রয়ী বিদ্যা যে, [ বক্ষ্যমাণ ] আশ্রবণাদি বিশিষ্টরূপে কখনও প্ৰবৃত্ত হয়, তাহানহে ; পরন্তু, কৰ্ম্মই সেইরূপে প্ৰবৃত্ত হয়, ইহাই প্ৰসিদ্ধ। কি প্রকারে ? ‘ওম্' বলিয়াই আশ্রবণ করে (শ্রবণ করায়), ওম্ বলিয়াই শংসন অর্থাৎ স্তোত্ৰ পাঠ করে ; “ওম্" বলিয়াই উদ্‌গান করে ; ইত্যাদি চিহ্ন দর্শনে ইহা সােমযাগ বলিয়াই প্রতীতি হইতেছে। সেই কৰ্ম্মও এই অক্ষরেরই পূজার জন্য ; কেননা, উহা পরমাত্মারই প্রতীক; সুতরাং যাহা তাহার পূজা, প্রকৃত পক্ষে তাহা পরমাত্মারই পূজা। "মানব স্বীয় কৰ্ম্ম দ্বারা তাহার অৰ্চনা করিয়া সিদ্ধি লাভ করিয়া থাকে।” এই স্মৃতিই ইহার প্রমাণ। অপিচ, মহিমা ও রস দ্বারা-এই অক্ষরেরই মহিমা মহত্ত্ব অর্থাৎ, ঋত্বিক (যজ্ঞে ব্ৰতী) ও যজমানপ্ৰভৃতির প্রাণ সমূহ দ্বারা যজ্ঞ সম্পাদিত হয়। সেইরূপ এই অক্ষরেরই রস দ্বারা অর্থাৎ ব্রীহি-যবাদি-রস-নিষ্পন্ন হবি দ্বারা নিষ্পাদিত হয়। অক্ষর দ্বারা যাগ হোমাদি কৰ্ম্ম অনুষ্ঠিত হয়; তাহা আবার আদিত্য মণ্ডলে উপস্থিত হয়, তাহা হইতেই ক্ৰমে বৃষ্টি প্রভৃতি রূপে প্ৰাণ এবং অন্ন উৎপন্ন হইয়া থাকে; এই জন্য কথিত হইতেছে যে, অক্ষরের মহিমা ও রস দ্বারা ॥


আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...