আচার্য্য শঙ্কর ভগবৎপাদ্ বিরচিত এই 'পরাপূজা' পরমার্থদর্শী আত্মজ্ঞানী পরব্রহ্মবাদীদের জন্য একটি জনপ্রিয় রচনা। আচার্য্য বলছেন- "পরমার্থদর্শনে যখন দ্বিতীয় কিছুই নাই, একমাত্র নির্ব্বিকল্প সচ্চিদানন্দ স্বরূপ আনন্দে যখন স্থিতি হয়, তখন আর দ্বৈতভাব থাকে না"। নির্গুণমানসপূজার অনেক পঙক্তি এই রচনাতে দৃশ্যমান। আচার্য্যের লিখনীতে সেই অদ্বৈত ব্রহ্মজ্ঞান ও নির্গুণমানসপূজা প্রস্ফুটিত হইয়াছে এইভাবে-
অখণ্ডে সচ্চিদানন্দে নির্বিকল্পৈকরূপিণি ।
স্থিতেঽদ্বিতীয়ভাবেঽস্মিন্ কথং পূজা বিধীয়তে ॥ ১॥
যখন দ্বিতীয় কিছুই নাই, সৰ্ব্ব সঙ্কল্প রহিত সচ্চিদানন্দ স্বরূপ আনন্দে যখন স্থিতি হয় তখন বিধি পূর্বক পূজা কিরূপে হইবে ?
পূর্ণস্যাবাহনং কুত্র সর্বাধারস্য চাসনম্ ।
স্বচ্ছস্য পাদ্যমর্ঘ্যং তু শুদ্ধস্যাচমনং কুতঃ ॥ ২॥
পুর্ণের আবাহন কোথায় ? সকল বস্তুর আধার যিনি তার আবার আসন কি ? যিনি নিতান্ত নিৰ্ম্মল তাহার পাদ্য অর্ঘ্য কিরূপ ? যিনি বিশুদ্ধ তাহার আচমনে প্রয়োজন কি ? তুমি যে তিনিই। তবে এ সব কি ?
নির্মলস্য কুতঃ স্নানং বস্ত্রং বিশ্বোদরস্য চ ।
নিরালম্বস্যোপবীতং রম্যস্যাভরণং কুতঃ॥ ৩॥
তুমি চেতন সদা নিৰ্ম্মল তোমার স্নান কোথায় ? যাহার উদরের এক দেশে মাত্র অনন্ত কোটি বিশ্ব তাহাকে কোন বস্ত্র পরাইবে ? যিনি আপনিই আপনি কোন কিছুতে যিনি লগ্ন হন না। তাঁহাকে কোন উপবীত পরাইবে ? যাহা অপেক্ষা সুন্দর আর কিছুই নাই তাহাকে কোন আভরণ পরাইয়া সুন্দর করিবে ?
নির্লেপস্য কুতো গন্ধঃ পুষ্পং নির্বাসনস্য চ । ।
নির্গন্ধস্য কুতো ধূপং স্বপ্রকাশস্য দীপকম্ ।। ৪॥
যিনি নির্লিপ্ত তাহার গন্ধলেপ কি? যাহার কোন বাসনা নাই তাঁহাকে পুষ্প দিয়া কোন আঘ্রাণ বাসনা জাগাইবে ? যিনি কোন গন্ধ গ্ৰহণ করেন না। তাহাকে ধূপ কি দিবে ? যিনি স্বপ্ৰকাশ তাহাকে দীপ দিবে কি ?
নিত্যতৃপ্তস্য নৈবেদ্যং নিষ্কামস্য ফলং কুতঃ ।
তাম্বূলং চ বিভোঃ কুত্র নিত্যানন্দস্য দক্ষিণা ॥ ৫॥
নিত্যতৃপ্তকে নৈবেদ্য, নিষ্কামকে ফল, সৰ্ব্বগত প্ৰভুকে তাম্বুল, নিত্যানন্দকে দক্ষিণা এ সবে কি হয় ?
স্বয়ং প্রকাশমানস্য কুতো নীরাজনবিধিঃ ।
প্রদক্ষিণা হ্যনন্তস্য চাদ্বিতীয়স্য কা নতিঃ ॥ ৬॥
যিনি আপনি আপনি প্ৰকাশ স্বরূপ তাঁহাকে আরতি কি করিবে ? যিনি সীমা শূন্য তাঁহাকে প্ৰদক্ষিণ কিরূপে করিবে ? যিনি ভিন্ন আর কিছুই নাই তাহাকে প্ৰণাম কে করিবে ?
অন্তৰ্ব্বহিশচ পূর্ণস্য কথং মুদ্রাসনং ভবেৎ।।
ইয়মেব পরাপূজা বিষ্ণোঃ সত্ত্বস্বরূপিণী ৷৷
যিনি ভিতরে বাহিরে পূর্ণ তাঁহার সম্বন্ধে মুদ্রা আসন কি ? যদি পূজাই কর তবে সৰ্ব্বব্যাপী বিষ্ণুর সাত্বিকী পরাপূজা এইরূপে করিও ।
দেবো দেবালয়প্রোক্তো জীবো দেবঃ সদাশিবঃ ।
ত্যজেদজ্ঞাননির্মাল্যং সোহংভাবেন পূজয়েত্ ॥ ৮॥
দেহ হইতেছে দেব মন্দির, জীব চৈতন্যই সদাশিব ; অজ্ঞানরূপ নিৰ্ম্মাল্য ত্যাগ করিয়া সেই আমি এই ভাবে পুজা করিবে ।
তুভ্যমহমনন্তায় মহ্যং তুভ্যং শিবাত্মনে ।
নমো দেবাধিদেবায় পরায় পরমাত্মনে ॥ ৯॥
তুমি আমি অনন্ত, তুমি আমি শিব স্বরূপ তোমাকে আমাকে নমস্কার। আদিদেব পরম পুরুষ পরমাত্মাকে নমস্কার।
য়োগী দেহাভিমানী স্যাদ্রোগী কর্মণি তত্পরঃ ।
জ্ঞানী মোক্ষাভিমান্যেব তত্ত্বজ্ঞেনাভিমানিতা ॥ ১০॥
যোগী দেহে অভিমান রাখেন, যাহারা ভোগী তাহারা কৰ্ম্মে তৎপর, জ্ঞানী করেন মোক্ষে অভিমান ; যিনি তত্ত্বজ্ঞ তারই কোন অভিমান নাই ।
কিং করোমি ক্ব গচ্ছামি কিং গৃহ্ণামি ত্যজামি কিম্ ।
আত্মনা পূরিতং সর্বং মহাকল্পাম্বুনা সদা ॥ ১১॥
করা, যাওয়া, গ্ৰহণ করা, ত্যাগ করা এ সব কোথায় ? মহা প্ৰলয়ে জল রাশি যেমন নিখিল বিশ্ব ব্যাপিয়া রাখে সেইরূপ আত্মা দ্বারাই সমস্ত পূর্ণা; পূর্ণ আত্মাই সৰ্ব্বত্র অন্য কিছুই নাই।
॥ ইতি পরা পূজা সমাপ্তা ॥
No comments:
Post a Comment