ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থ-
এই মন্ত্রত্রয়ে যে অর্থ প্রতিপাদিত হইয়াছে, শুক্ল যজুর্ব্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের অংশ বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম অধ্যায় তৃতীয় ব্রাহ্মণের শ্রুতি নিজেই সেই সমুদয় অর্থ প্রকাশ করিয়া বলিতেছেন -‘অসতঃ মা সৎ গময়’ ইতি, মৃত্যুই অসৎ ; এখানে মৃত্যু শব্দে স্বাভাবিক জ্ঞান ও কৰ্ম্ম অভিহিত হইয়াছে । অত্যন্ত অধঃপতনের কারণ বলিয়া উহাই অসৎ ; আর ‘সৎ’ হইতেছে অমৃত ; শাস্ত্রোপদিষ্ট জ্ঞান ও কৰ্ম্ম মৃত্যুভয় নিবারণের হেতু বলিয়া, তাহারা সৎ-পদবাচ্য। অতএব ইহার অর্থ হইতেছে যে, অসৎ হইতে অর্থাৎ অসৎ কৰ্ম্ম ও জ্ঞান হইতে আমাকে সতে অর্থাৎ শাস্ত্রানুযায়ী কৰ্ম্ম ও জ্ঞানের দিকে লইয়া যাও, অর্থাৎ দেবভাব লাভের উপায়ভূত আত্মভাব লাভ করাও। বাক্যের তাৎপৰ্য্যাৰ্থ বলিতেছেন—আমাকে অমৃত কর ; এই অর্থই প্রথম মন্ত্রটা বলিয়াছেন। সেইরূপ, তমসঃ মা জ্যোতিঃ গময়’ এই মন্ত্রে ও অর্থ বলিতেছেন—‘তমঃ’ অর্থ—মৃত্যু ; কেন না, অজ্ঞানমাত্রই বোধশক্তির আবরক, আবরক বলিয়াই তমঃশব্দবাচ্য ; তাহাই আবার মৃত্যুর হেতুভূত বলিয়া মৃত্যুস্বরূপ ; আর ‘জ্যোতিঃ অর্থ—অমৃত, অর্থাং তমের বিপরীত দৈব রূপ। জ্ঞান স্বভাবতই প্রকাশাত্মক, এই কারণে জ্যোতিঃ-শব্দবাচ্য ; তাহাই আবার অবিনাশাত্মক বলিয়া অমৃত ; সেই তমঃ হইতে আমাকে জ্যোতিতে লইয়া যাও।‘মৃত্যোঃ মা অমৃতং গময়’ ইত্যাদির অর্থও পূর্ববৎ, অর্থাৎ আমাকে অমৃত কর, দিব্য প্রাজাপত্য ( প্রজাপতিত্বরূপ ) ফল আমাকে লাভ করাও, ইহাই ঐ মন্ত্রে বলা হইয়াছে। -(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৩।২৮)
পরব্রহ্মবাচ্য প্রণব। আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
(উল্লেখ্য মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনমূলক গ্রন্থ ঈশ্বরকৃষ্ণের ‘সাংখ্যকারিকা-১’ “দুঃখত্রয়াভিঘাতাজ্জিজ্ঞাসা…” অনুসারে দুঃখ ত্রিবিধ। সাংখ্যকারিকার গৌড়পাদ ভাষ্যানুসারে দুঃখত্রয় হইল,—আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক। আধ্যাত্মিক দুঃখ দ্বিবিধ—শারীরিক অর্থাৎ বাতপিত্তশ্লেষ্মাজ্বরাদি ইত্যাদি রোগজনিত ও মানসিক অর্থাৎ প্রিয়বিয়োগাদি ইত্যাদি জাত দুঃখ। আধিভৌতিক দুঃখ মনুষ্য, পশু, পক্ষী ও স্থাবরাদি ভূত পদার্থ হইতে উৎপন্ন হয়। আধিদৈবিক দুঃখ দৈব প্রকোপে অথবা অতি শীতোষ্ণবর্ষাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপন্ন হয়।)
No comments:
Post a Comment